বার বার ঘুঘু তুমি খেয়ে যাও ধানঃ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে রাতভর হামলা, ছাত্রহত্যা হামলাকারীদের সঙ্গে যোগাযোগে ছিলেন জামায়াত-শিবির নেতারা
৮ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে আটটার দিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরের প্রথম দফা হামলার অন্তত দেড় ঘণ্টা আগে সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতারা ঘটনাটি সম্পর্কে জানতেন।
আর ছাত্রলীগের ওপর গভীর রাতে দ্বিতীয় দফা আক্রমণ চলাকালে শিবির নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগের মধ্যে ছিলেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতারা।
ওই রাতে রাজশাহীতে আক্রমণ পরিচালনাকারী মাঠ পর্যায়ের ও কেন্দ্রীয় শিবির নেতাদের টেলিফোনের যোগাযোগের তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
৮ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা ছয়টা ৫০ মিনিট থেকেই শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজাউল করিম সংগঠনের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক-বর্তমান নেতা ও গুরুত্বপূর্ণ ক্যাডারদের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ শুরু করেন।
আরিফুল ইসলামের সঙ্গে ঢাকায় অবস্থানকারী শিবির নেতাদের প্রায় সারা রাতই দফায় দফায় ফোনে যোগাযোগের প্রমাণ মিলেছে।
শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজাউল পরদিন সকাল পর্যন্ত মোবাইল ফোনে রাজশাহীর শিবির নেতা-ক্যাডার ও জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগের মধ্যে ছিলেন।
এ ছাড়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরের সাবেক নেতা দোলোয়ার হোসেন ওই রাতে হামলার আগ মুহূর্ত থেকে শেষ পর্যন্ত মাঠপর্যায়ের ক্যাডারদের দিক-নির্দেশনা দেন
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান সভাপতি সামছুল আলম ওরফে গোলাপও কিছুক্ষণ পর পর কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজাউলের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন।
ওই রাতে ঢাকা থেকে শিবিরের ক্যাডার কাফিকে রাজশাহী পাঠানো হয়। কাফি রাজশাহী পৌঁছান পরদিন সকালে। কিন্তু তিনি রাজশাহী যাওয়ার সময় রাতভর ফোনে আক্রমণকারী ক্যাডার ও কেন্দ্রীয় সভাপতির সঙ্গে যোগাযোগের মধ্যে ছিলেন।
পর্যালোচনা হচ্ছে, দেলোয়ার ও কাফি আক্রমণের সার্বিক তদারক করেন মোবাইল ফোনে। ঘটনার প্রতি মুহূর্তের অবস্থা জানান কেন্দ্রীয় সভাপতিকে।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সামছুল আলম, আবদুল্লাহ আল মামুনসহ (বর্তমানে সান্ধ্যকালীন এমবিএ করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে) অন্যদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজাউল যোগাযোগ করে দফায় দফায় কথা বলেন এবং একই সঙ্গে তিনি জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতাদেরও সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
সাড়ে ১২টা থেকে এই মধ্যবর্তী সময়ে শিবিরের কেন্দ্রীয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান নেতাদের মধ্যেও ফোনে কথাবার্তা অব্যাহত ছিল।
গভীর রাতে শাহ মখদুম হলের ছাত্রলীগ কর্মী ফারুককে নৃশংসভাবে হত্যা ও লাশ গুমের ঘটনার সময় বা আগে-পরে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গেও শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি মোবাইল ফোনে যোগাযোগের মধ্যে ছিলেন।
শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজাউল রাত দুইটা ২৩ মিনিটে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুজাহিদকে ফোন করেন। এরপর রেজাউল একাধিকবার জামায়াতের ঢাকা মহানগর আমির রফিকুল ইসলাম খানের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন।
আবার তার আগে রাত দুইটা ১৭ মিনিটে রফিকুল ইসলাম ফোন করেছিলেন জনাব মুজাহিদকে। তখন কথা বলেন প্রায় তিন মিনিট।
মুজাহিদ নিজেও শিবির সভাপতিকে ফোন করেন ৯ ফেব্রুয়ারি ভোর সোয়া ছয়টায়।
রাত দুইটা ১৭ মিনিট, দুইটা ২৩ মিনিট ও ভোরে রেজাউল ও রফিকুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলার প্রমাণ আছে বলা হলে জনাব মুজাহিদ বলেন, ‘আমার ফোনটা আমার এপিএসের কাছেও থাকে। সে ওই রাতে কারও সঙ্গে কথা বলেছে কি না, তা আমি জানার চেষ্টা করব।’অবশ্য আরেক প্রশ্নের জবাবে জনাব মুজাহিদ বলেন, তাঁর অনুমতি ছাড়া এপিএস (একান্ত ব্যক্তিগত সহকারী) কারও সঙ্গে কথা বলার কথা নয়।
এ ছাড়া শিবিরের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতির সঙ্গেও রফিকুল ইসলাম ও জামায়াতের প্রচার সম্পাদক তাসনিম আলমের ফোনে যোগাযোগের প্রমাণ পেয়েছে তদন্তকারী সংস্থাগুলো।
ঢাকা মহানগর আমির রফিকুল ইসলাম খান ওই রাতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা নিয়ে কারও সঙ্গে কথা বলার বিষয়টি অস্বীকার করেন। তিনি পরদিন পত্রিকা পড়ে ও টেলিভিশন দেখে রাজশাহীর ঘটনা সম্পর্কে প্রথম জেনেছেন বলে জানান।কিন্তু রাতে মুজাহিদ ও শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতির সঙ্গে টেলিফোনে তাঁর যোগাযোগের সুনির্দিষ্ট সময় উল্লেখ করে জানতে চাইলে রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কিছু বলতে চাই না।’ শিবির সভাপতির বক্তব্য জানার জন্য বারবার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তাঁর ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
শিবিরের এসব সাবেক ও বর্তমান নেতা-কর্মীর মধ্যে রয়েছেন মো. আমিনুল, জুলকার নাইন, মিজানুর রহমান, গাজী মামুন, মো. কাদের, গোলাম আরিফ, আতিকুল ইসলাম, আবদুল্লাহ আল মামুন, অহিদুল ইসলাম, সিরাজুল ইসলাম, আজিবুল হক, আনারুল ইসলাম, একরাম হোসাইন, মতিন।
শিবিরের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক দুই সভাপতি নুরুল ইসলাম ও ইমাজ উদ্দিন মণ্ডল ওই রাতে আক্রমণকারী ক্যাডারদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগের মধ্যে ছিলেন।
ইমাজউদ্দিন রাজশাহীতে ছিলেন। ইমাজ বর্তমানে জামায়াতের রাজশাহী মহানগর শাখার প্রচার সম্পাদক, তিনি জামায়াতের মহানগর আমির আতাউর রহমানের মেয়ের জামাই। তিনি ওই রাতে শ্বশুরের বাসার টিঅ্যান্ডটি ফোনেও অনেকবার যোগাযোগ করেন। ইমাজের ফোন নম্বরটি এখন বন্ধ রয়েছে।
সাবেক শিবির নেতাদের মধ্যে মো. আলাউদ্দিন, মোতাহার হোসেন ও নজরুল ইসলামও ওই রাতে কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগের মধ্যে ছিলেন।
Click This Link