আজ ব্লগে ঢুকে নির্বাচিত পোস্ট পড়ার সময় একটি পোস্ট আমার নজর কাড়ল। পোস্টটির শিরোনাম "যারা কথা বলার সময় বাংলার সাথে ইংরেজী মিশায় - তাদের কেন যেন বাটপার ধরনের মানুষ মনে হয়" । পোস্টটি আপনারা এখান থেকে পড়তে পাড়েন।
লেখক আবু সাঈদ জিয়াউদ্দিন খুব জ্ঞান রাখেন বলে আমার ধারনা। ধারনা বলছি কারন আমি নিশ্চিত নই তিনি কত বড় জ্ঞানসাগর। তিনি প্রচুর জ্ঞানের কথা বলেছেন। প্রশংসাও পেয়েছেন। তবে তিনি যে ভুল বিষয়ে ব্লগিং করছেন হয়ত তিনি বুঝতে পারেন নি।
যে কোন ভাষার সাফল্য নির্ভর করে এটি অন্য ভাষা হতে কত সহজে এবং কত শব্দ গ্রহন করতে পারে তার উপর। যে ভাষা যত বেশি সম্মৃদ্ধ সে ভাষার ভিত তত বেশি পোক্ত। প্রচীনকালে আমাদের উপমহাদেশে একটি ভাষা ছিল। যার নাম সংস্কৃত। এর অনেকগুলো বৈশিষ্ট্রের মধ্যে একটি ছিল এটি অন্য ভাষা হতে কোন শব্দ গ্রহন করত না। বলা যায় এটা ছিল শিক্ষিত সমাজের সিন্দুকে তোলা সম্পত্তি। যারা একে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারবে না তাদের এর উপর কোন অধিকার নেই। অর্থাৎ একাই একশ হতে চেয়েছিল আর কি। আর তার ফল বিলুপ্তি ছাড়া কিছুই হতে পারে না। আর হয়েছেও তাই।
ইংরেজী ভাষা সম্মৃদ্ধ ভাষাসমূহের মধ্যে অন্যতম। এই ভাষা থেকে আমারা যত বেশি শব্দ গ্রহন করতে পারব আমাদের ভাষা তত সম্মৃদ্ধ হবে, ধ্বংস নয়। ভাষা মানুষকে সৃষ্টি করে নি। বরং মানুষই ভাষাকে সৃষ্টি করেছে। তাই মানুষের সুবিধা অনুসারে ভাষাকে ব্যবহার করার অধিকার মানুষের আছে।
আপনি যদি এর সাথে দ্বিমত পোষন করে থাকেন তাহলে একটি কাজ করুন আমাদের দেশ থেকে সকল আঞ্চলিক ভাষা আইন করে বন্ধ করে দিন। কারন এই আঞ্চলিক ভাষাও কিন্তু আপনার মতে বাংলা ভাষার মধ্যে পড়ে না। কারন আঞ্চলিক ভাষায় এমন সব শব্দ ব্যবহার করা হয় যা আপনার বাংলাভাষার অভিধানে নেই। অনেক আঞ্চলিক ভাষা শুনলে বোঝাই যায় না এটি বাংলা ভাষা।
আমারা এমন অনেক শব্দ ব্যবহার করি যার বাংলা প্রতিশব্দ জানিই না। যেমন :- টেবিল, চেয়ার, টিভি, রেডিও ইত্যাদি ইত্যাদি। এমনকি
আমরা যেখানে লিখছি অর্থাৎ ব্লগ শব্দটিও কিন্তু ইংরেজী থেকে আগত। তাহলে কি আমরা এসব শব্দ ব্যবহার করা ছেড়ে দেব। এখন আমি যদি বলি আঙ্গরাখার উপর পুস্তক রেখে কেদারায় বসে আমি পড়ছি তাহলে হয়ত অনেকেই বুঝতে পারবেন না আমি কি বুঝাতে চেয়েছি। বরং আমি যদি ইংরেজী ভাষাকে ব্যবহার করে লিখতাম টেবিলের উপর বই রেখে চেয়ারে বসে আমি পড়ছি তাহলে বুঝতে পারবেন না এমন কেউই বোধহয় নেই।
যিনি এই প্রবন্ধটি লিখেছেন তিনিও কিন্তু তার লেখায় অনেকবার ইংরেজী শব্দ ব্যবহার করেছেন। হয় তিনি বাংলা জানেন না অথবা তিনি মনে করেছেন "যাতে কঠিন শব্দের আড়ালে তার আসল কথাগুলো মানুষ ধরতে না পারে" । আমার প্রশ্ন, আপনি যদি আপনার লেখাটি সম্পূর্ন বাংলায় লিখতে নাই পারেন তাহলে এই বিষয়ে লেখার অধিকার আপনি কোথা থেকে পেয়েছেন ???
আমরা আজ যাকে বাংলা ভাষা বলছি সেই ভাষা কিন্তু হাজার হাজার বছর আগে ঠিক আজকের মত ছিল না। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ভাষা দ্বারা সম্মৃদ্ধ হয়ে আজ বর্তমান অবস্থায় পৌছেছে। যারা এই গতিকে রুখে দিতে চাইছেন তারা কি জানেন না এর ফল কি হবে।
ভাষাকে আইন করে বন্ধ না করে একে তার নিজের গতিতে চলতে দিন। প্রকৃতির নিয়মে বাধা আনলে প্রকৃতি তা মেনে নেয় না। বাধ দিয়ে নদীর গতিকে নিয়ন্ত্রন করতে গিয়ে আজ আমাদের নদীগুলোর অবস্থা কারো অজানা নয়। অনেক নদীর স্মৃতিচিহ্ন পর্যন্ত নেই। ভাষার এমন অবস্থা নিশ্চয় আমরা কেউই চাই না। তাহলে কেন আমরা ভাষার গতীকে রোধ করার স্পর্ধা দেখাই।
[-ব্লগ বাংলা]
View this link
যারা মনে করেন আমার লেখাটির বিষয় আলাদা তাদের জন্য:
কোন কিছুই আগে থেকে হয়ে থাকে না। তাকে শুরু করতে হয়। আর শুরু করলেই তা প্রথম হয়ে যায়। দ্বিতীয় বা তৃতীয় হবার কোন সুযোগই থাকে না। আমরা যেসকল শব্দ বাংলাভাষায় গ্রহন করেছি সেগুলোতো প্রথমে কেউ না কেউ ব্যবহার করা শুরু করেছিল । হয়ত তারা আপনাদের মত কিছু লোকের বিরোধিতার স্বীকারও হযেছিল। কিন্তু এতে তারা থেমে যায়নি বলেই আজ এসব শব্দকে আমরা আমাদের সম্পদ বলতে পারছি।
দ্বিতীয় সংস্করন:
যারা তাদের কথিত বাংলিশ ভাষার বিপক্ষে যুক্তি দেখাচ্ছেন তাদেরকে অনুরোধ করছি তারা যেন নিজেরা এই বাংলিশ ভাষা ব্যবহার না করেন। অর্থাৎ বাংলার মাঝে ইংরেজী না মিশিয়ে লেখেন। তাহলে তাদের যুক্তির গ্রহনযোগ্যতা বৃদ্ধি পাবে। যেখানে বাংলাভাষায় ভালো প্রতিশব্দ আছে সেখানে অন্য ভাষা ব্যবহার আপনাদের মানায় না । একটা কাজ করুন এস্কিমোর কথা মেনে নিন। লেখার সময় আপনারা প্রত্যেকে অভিধান নিয়ে বসুন।
আমি তার প্রবন্ধের অর্থ বুঝতে পারি নি বলে তার একটি অংশ তুলে দিলাম, " ভাষার মাসে সবার উচিত বাংলা ভাষার সর্বোচ্চ উন্নতির লক্ষ্যে কাজ করা - সেটা ব্যক্তিগত পর্যায় থেকে শুরু করা। লেখার সময় একটা অভিধান হাতের কাছে রাখা। একটা ইংরেজী শব্দের যায়গায় যদি একটা যুতসই বাংলা শব্দ ব্যবহার করা যায় - সেইটাই হবে শহীদদের প্রতি উপযুক্ত সন্মান জানানো।"
আসুন আপনার এখন থেকেই চেয়ার কে কেদরা, টেবিলকে আঙ্গরাখা, সাইকেলকে দ্বিচক্রযান, গাড়ীকে শকটযান বলুন।
সবাইকে ধন্যবাদ।