somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মধ্যবিত্ত (ক্ষুদে বুর্জোয়া) চরিত্র

০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৯ দুপুর ১২:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঢাকা শহরে বাসে চলাচল বিভীষিকা হয়ে উঠেছে। লোকাল বাস তো বটেই টিকেট কেটে যেসব বাসে উঠতে হয় সেগুলোর অবস্থাও বহুদিন ধরেই খুব খারাপ। জ্যাম আর বাসের স্বল্পতার কারণে এসব বাসে যাতায়াতকারী প্রত্যেক যাত্রীরই জীবন ওষ্ঠাগত হয়। সকালে অফিসে আসা বা কোন কাজে যেতে হলেই যে কথাগুলো মনে হয় তা হলো, 'আজ সময়মত বাস পাব তো', 'বাসে উঠতে পারবো তে', 'সময় মতো পৌছতে পারব তে', ইত্যাদি। মহিলাদের জন্য তো বাসে ওঠা আরো কঠিন। মোটের ওপর সকলের জন্যই (যারা এসব বাসে যাতায়াত করি) অফিস টাইমে বা ঘরে ফেরার সময় বাসে ওঠাটা বেশ হয়রানিমূলক।

এসবের মধ্যেই একেক বাসের যাত্রীদের ব্যবহার, চরিত্র একেক রকম। টিকেট কেটে ওঠা বাস আর লোকাল বাসে ভীড়, ঠেলাঠেলি, ইত্যাদি একরকম হলেও বাসের ভিতরের ব্যাপারটা একটু অন্যরকম। বলাই বাহুল্য, এই পার্থক্য অবশ্যই শ্রেণীগত।

টিকেট সিস্টেমের বাসগুলো যাত্রীরা বেশ সুশৃঙ্খলভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে সুশৃঙ্খলভাবেই বাসে ওঠার চেষ্টা থাকে। তবে বাসের অবস্থা ভেদে এই শৃঙ্খলার কিছুটা ব্যাঘাত ঘটে। অন্যদিকে, লোকাল বাসে লাইন বলতে কিছু নেই। আগলে পারলে, আগে পাবেন ভিত্তিতে বাসে উঠতে হয়। তাই বাস আসলে হুড়োহুড়িটা লোকাল বাসের ক্ষেত্রে একটু বেশিই হয়। তাই টিকেট সিস্টেমে লোকালের চেয়ে ভাড়াও অনেক বেশী। লোকাল বাসের একটা বিষয় ভালো টিকেট বাসের চেয়ে। টিকেট সিস্টেমের বাসে লোকজন সাধারণত লাইনে দাঁড়িয়ে ১০/১৫ (বা তারও বেশী) মিনিট অপেক্ষা করে বাসে উঠে। এই বাসগুলোতে বাসের দরজায় যত ভীড়ই থাকুক না কেন, এমনকি গেটের হ্যান্ডেলে লোকজন ঝুলে থাকলেও, বাসের মাঝামাঝি (টু-ডোরের ক্ষেত্রে) বা মাঝ হতে পেছন পর্যন্ত (ওয়ান ডোরের ক্ষেত্রে) মানুষের ঘনত্ব বেশ হাল্কা থাকে এবং মানুষজন সামনের দিকের তুলনায় বেশ আয়েশেই দাঁড়িয়ে থাকে বলতে হয়। সামনে থেকে বা বাসের সামনের লাইন থেকে যতই ভিতরের লোকজনকে একটু চেপে দাঁড়াতে বলা হোক না কেন কেউই তাতে কর্ণপাত করেন না। হয়ত সামান্য নড়েচড়ে দাঁড়ালেও, নিজে দাঁড়িয়ে আরকজনকে জায়গা করে দেওয়ার অভ্যাসটা আমাদের একেবারেই নেই। যে ব্যক্তি কিছুক্ষণ আগে হ্যান্ডেলে ঝুলছিলেন, বাসের ভেতরে এসে তিনি তা বেমালুম ভুলে যান এবং তিনিও তার চিৎকার (ভাই একটু চেপে দাঁড়ান) শুনতে পান না। যাত্রীরা আবার ভদ্রসমাজে বসবাসকারী হওয়ায় হেলপার বা কাউন্টারম্যান ধমক দেওয়ার সাহস দেখায় না, বরং অনুরোধ করে চেপে দাঁড়াতে বলে। কিন্তু যাত্রীরা তা খুব একটা পাত্তা দেই না। যার ফলে, অনেক সময় বাসে দু'একজন বেশি উঠতে পারলেও যাত্রীদের অসহযোগিতামূলক অন্যদিকে, লোকাল বাসও সংখ্যায় অপর্যাপ্ত। ফলে ভীড়, অপেক্ষা, অনিশ্চয়তা সবই বেশী। কিন্তু লোকাল বাসে দরজা এবং ভেতরের ভীড় সমান। কেউই ঝুলে আর কেউ কিঞ্চিত আরামে যেতে দেখা যায় না। একজন বাসে উঠলে তাকে যথাসম্ভব চেপে দাঁড়াতে হয় যাতে আরেকজন উঠতে পারে। তবে এক্ষেত্রে কন্ডাক্টারদের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। কারণ তারা লোকাল বাসের যাত্রীদেরকে ধমক দিয়ে চেপে দাঁড়াতে বলতে পারে। এই পার্থক্যটা মূলত এই দুই ধরনের বাসে যাতায়াতকারী যাত্রীদের শ্রেণীগত পার্থক্যের মধেই নিহিত। সাধারণত, টিকেট সিস্টেমের বাসে মধ্যবিত্ত (ক্ষুদে বুর্জোয়া) শ্রেণীর মানুষের আধিক্য। এই শ্রেণী বরাবরই স্বার্থপর হয়। এর কারণ হলো রাজনৈতিক ব্যবস্থা কর্তৃক তাদের মধ্যে সামষ্টিক চর্চার পরিবর্তে ব্যক্তি চর্চা গড়ে তোলা। আবার এই শ্রেণী যে ধরনের উৎপাদন কর্মকান্ডের মাধ্যমে জীবীকা নির্বাহ করে তা অনেক বেশি ব্যক্তিনির্ভর বা ব্যক্তিনির্ভর হিসেবে দেখানো হয়। তাই ব্যক্তি চর্চা এই শ্রেণীর অভ্যস্ততায় পরিণত হওয়ার ফলে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই এর প্রতিফলন পাওয়া যায়। অন্যদিকে, লোকাল বাসের অভ্যন্তরের মানুষগুলোর মধ্যে নিম্নবিত্ত (প্রলেতারিয়েত)-এর আধিক্য বেশি। এদের উৎপাদন কর্মকান্ড সামষ্টিকতার ওপর নির্ভরশীল। যেমন, এসেম্বলি উৎপাদন ব্যবস্থায় কোন পণ্য এককভাবে কোন শ্রমিক উৎপাদন করে না। একটি পণ্য উৎপাদনে অনেক শ্রমিকের শ্রম প্রযুক্ত থাকে। আবার একজনের কাজ আরকজনের কাজকে প্রভাবিত করে। উৎপাদন কর্মকান্ডের এই অভ্যাসই তাদের জীবনযাপনের পদ্ধতি হিসেবে গড়ে ওঠে। তাই প্রলেতারিয়েত শ্রেণী ক্ষুদে বুর্জোয়া শ্রেণী অপেক্ষা অনেক বেশি সুশৃঙ্খল এবং সামষ্টিক। এর প্রতিফলন আমরা আমাদের যাতায়াতের পথ কিংবা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই দেখতে পাই।
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×