এখনো মনে করতে পারি আমার পড়া তার প্রথম বই "ভয়ঙ্কর ভূতুড়ে", ক্লাস সিক্স এ পড়ি তখন। ঐ ছোট্ট বয়সে ততদিনে অনেক বই পড়েছিলাম, কিন্তু এই "ভয়ঙ্কর ভূতুড়ে" পড়ে ঘোর লেগে গেলো। তারপরই পড়েছিলাম "বোতল ভুত"। নেশা ধরে গেলো। খুঁজতে শুরু করলাম হুমায়ুন আহমেদ এর বই। আমাদের ছোট্ট শহরটাতে একটা গ্রন্থাগার ছিল যেখানে একটা সাইড ছিল শুধু হুমায়ুন আহমেদ এর বই এর জন্য। গোগ্রাসে গিলতে শুরু করলাম।
"ময়ূরাক্ষী" তে পরিচয় ঘটে গেলো হিমুর সাথে। নিজেকে হিমু ভাবতে শুরু করলাম। এরপর যখন মিসির আলি কে পেলাম, মনে হল আমি ই মিসির আলি। কখনো মনে হতো আমি আনিস, কখনো শুভ্র। রুপা যে কেন ছন্নছাড়া হিমু কে এতো ভালোবাসে ভেবে খুব হিংসে হতো। "তোমাদের জন্য ভালোবাসা" পড়ে জানলাম বিজ্ঞান নিয়ে এতো দারুণ উপন্যাস কেউ লিখতে পারে। সেটাই নাকি বাংলা সাহিত্যের প্রথম সায়েন্স ফিকশান। আমি নির্দ্বিধায় বলতে পারি আমাকে জোছনা চিনিয়েছেন হুমায়ুন, আমাকে বৃষ্টি চিনিয়েছেন হুমায়ুন। মনে আছে স্কুল পাস করতে করতে গ্রন্থাগারে থাকা হুমায়ুন আহমেদ এর সবগুলো বই আমার পড়া হয়ে গেছে !
এরপর ও তাকে ছাড়িনি। ততদিনে বিশ্ব-সাহিত্যের সাথে পরিচয় হল। গোরকি, নিকোলাই, সুনীল, বুদ্ধদেব, শরৎচন্দ্র, ইভান, শমরেশ সব ই পড়ি কিন্তু হুমায়ুন যেন অনন্য। হুমায়ুন চুম্বকের মতো ধরে রাখেন আমাকে। ১০ টা ভালো বই দিলে আমি প্রথম যে বইটা পড়ার জন্য হাতে তুলে নেবো সেটার লেখক হুমায়ুন। মানুষের মন, ব্যাক্তিগত সম্পর্কের টানাপোড়ন, মানবিক অস্থিরতা, বিজ্ঞান, মুক্তিযুদ্ধ--কতো বিচিত্র বিষয় উঠে এসেছে তার কলমের ডগায়।
হুমায়ুন এর উপন্যাস কাল জয় করতে পারবে কিনা সেটা কালের উপর ই ছেড়ে দেওয়া হোক। কিন্তু আমার মতো লক্ষ্য যুবকের মনন জয় করে নিয়েছেন হুমায়ুন সুচতুর ভাবে। হুমায়ুন, কতো পাপী বেঁচে থাকে দশকের পর দশক, বড় অকালে চলে গেলেন আপনি। যেখানে থাকবেন ভালো থাকবেন।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জুলাই, ২০১৩ বিকাল ৩:৩৭