somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সফলতা স্বার্থকতা নয়। । ।

১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ভোর ৬:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হঠাতই হাক ছেড়ে গান জুড়ে দেন মোহন , স্বরচিত গান । মোহনের কাব্য প্রতিভা বিখ্যাত না হলে ও পাড়ার লোকের কাছে পরিচিত । তিনি স্বভাব-কবি , কখন ও বড় ভাবীকে দুষ্টুমী করে খেপানোর জন্য কখনো ছোট বাচ্চাদের আনন্দ দেয়ার জন্য অথবা বউকে বিরক্ত করার মোহনের গানের জুরি নেই ।

এই অজপাড়াগায়ে তেমন শিক্ষিত কিংবা সামাজিক ভাবে প্রভাবশালী লোক ও নেই যে মোহনের এই প্রতিভা বাহিরে উদ্ভাসীত করবে । অবশ্য মোহনের এই গান গুলো আদৌ মহান হবার যোগ্যতা রাখে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ণ করা যায় ।
কিন্তু একথা সত্য পাড়ার স্কুল পড়ুয়া কিশোর-কিশোরীদের নিকট বাবার বয়সের একজন অভাব জর্জরিত মোহন খুবই জনপ্রিয় তার কাব্য প্রতিভার জন্য ।

তো এই মোহন এক অলস বর্ষার বিকেলে , বারান্দায় মাদুর বিছিয়ে আপনমনে গান করছিলো , হঠাত তার বউ বাজখাই গলায় রে রে করতে করতে ছুটে এলো " হুনছাও গানে কি পেট ভরবো ? যাও বেপারী বাড়ি খোজ নিয়ে আসো , হেদিন কইছিলো পাট কাটার মজুর নাগবো ।"

মোহন তার আমুদে চরিত্রের জন্য যেমন জনপ্রিয় , পরিশ্রমী হবার জন্য ঠিক তেমন তার কাজের চাহিদা । জনশ্রুতি আছে সে এক ডুবে ২০ টা পাট কেটে আনতে পারেন , আর জোক নাকি তাকে কামড়ায় না ! আবার কার্তিক মাসে যখন আই পি এল এর মতো ইটের ভাটার কর্মীদের নিলাম উঠে মোহন সব সময় সর্দারদের প্রথম পছন্দের থাকেন তার সততা আর কর্মঠতার জন্য ।
তো এই মোহন কে যখন বউ কাজের খোজ নিতে বলে , সে উত্তর দেয় স্বভাবসুলভ দুষ্টুমিতে ,

"ও বউ , ওরে আমার বউ ,
তোর কথায় এত ঝাজ কেন রে-
যেন বকনা বাছুর আসছে তেড়ে ,
তুই একটুখানি বয় , ও বউ একটু খানী বয় --
কারো বাড়ি কাজ থাকিলে এই মোহনরেই সবাই কয় ...
ওরে মোরেই আগে কয় । "

এহেন উপস্থিত গানে , বউয়ের মেজাজ আরো চরমে উঠে গজ গজ করতে করতে চলে যায় । বলে রাখা ভালো পুরো গ্রামে যেমন মোহনের সারল্য আর ভালো ব্যবহার জনপ্রিয় , উল্টো তার বউ এর বাজখাই গলার বদনাম ও আলোচিত।

সহসা এরকম ভাবুক মানুষের সংসারের কাজে উদাসীন্য থাকতে দেখা যায় , কিন্তু মোহন প্রচন্ড পরিশ্রমী এবং সেই সাথে একজন অভিযোগহীন মানুষ । তিনি গান করেন মনের আনন্দে , এত অভাব জর্জরিত এই লোকটাকে কখনো কেউ দু:খী যেমন দেখেনি তেমনি কারো কাছে কখনো করুনাও তিনি আশা করেছেন বলে প্রমাণ পাওয়া যায় না । উদাহরণ স্বরুপ বলা যায় একটা ঘটনা ,
পাশের বাড়ীর আলতাফ সরদার একদিন মোহন কে বলছে সংসারতো বড় হইছে মোহন ভবিষ্যত নিয়া কিছু ভাবো না মোহন মিয়া ? একজন মানুষের কামাই ৫ জন খানেও্য়ালা ।
মোহন হেসে উত্তর দেয় , " আল্লাহর অশেষ রহমত , আজ মারা গেলেও কাল কেউ এসে বলবে না আমার কাছে টাকা পায় । যেমনে আমারে আল্লায় চালাইতে আছে সন্তানগো আল্লায় চালাইবো । "
সরদার আর কথা বাড়ায় না , কারণ দেনায় জর্জরিত আলতাফ সরদার পায়ে বাটা স্যান্ডেল পড়লেও রাতে শান্তিতে ঘুমাতে পারেনা পাওনাদারদের যন্ত্রনায় ।

মোহনের একটি বিশেষ ব্যপার ছিলো তিনি প্রচুর বোকা বোকা কাজ করতেন , সেটা তিনি সবাইকে মজা দেয়ার জন্যই করতেন - নাকি আসলেই বোকামী এ বিষয় অজানা । এই যেমন একবার কাজে শহরে গেলেন ট্রলার থেকে নামলেন তরা ব্রিজের নিচে তারপর সকলকে অবাক করে দিয়ে ব্রীজের থাম ধরে ঝাকুনি দিতে চেষ্টা করলেন এবং স্বভাবতই নাড়াতে ব্যর্থ হয়ে তিনি অত্যন্ত অবাক স্বরে বললেন " বাপপস রে মজবুত বানাইছেরে ব্রিজটা !!!! "

আবার জনশ্রুত আছে কিন্তু প্রমাণ সংগ্রহ করা যায় নি, একবার তার জ্বর হলো গেলেন গ্রামের হাতুরে ডাক্তার এর কাছে , তো ডা: সাহেব তার মুখে থার্মোমিটার দিয়ে একটু অন্য দিকে তাকিয়েছেন এদিকে থার্মোমিটার কামড়ে ভেংগে ফেলেছেন মোহন ওটাকে ওষুধ ভেবে !!! অথবা তাকে সর্দি জ্বরের সিরাপ দেয়া হয়েছে সে বাড়ি এসে তা মুড়ি দিয়ে মেখে খেয়েছে !! যদি ও এসব রসালো গল্পের সত্যতা যাচাই সম্ভব হয় নি কিন্তু এসব গল্পের সাথে বাস্তবিক ভাবেই মোহনের চরিত্রের সাদৃশ্য মিলে ।

এই মোহন বিস্ময়কর স্মৃতিশক্তির অধিকারী বর্ষার অলস রাতে পুরো গ্রামের লোকজন জড়ো হয়ে মোহনের গাজির কিসসা / বেহুলা লক্ষিন্দরের গল্প কিংবা রহিম-রুপবান এর কিসসা শুনতো , যেখানে সে এক লাইন ও মিস করতো না কোন বার গান গুলো ও গাইতো পুরোটা , সবাই এমন ভাবে শুনতো যেন পর্দায় সিনেমা দেখছে ! গল্প গুলো এত বড় কখনো সকাল হয়ে যেত শেষ হতে হতে !!


নির্বাচনের আমেজ চলছে তখন । গ্রামে সবাই ব্যস্ত প্রার্থীকে অভাবের ফিরিস্তি দিয়ে কিছু নগদ ধান্দায় ব্যস্ত , তেমনি এক দিনে প্রবল ক্ষমতাশালী চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী এসেছে মোহন মিয়ার বাড়িতে , চেয়ারম্যানের সাগরেদ মতন এক লোক তার হাতে গুজে দিতে গেল এক প্যাকেট সিগারেট ।

সে জিহবা কামড়ে বললো "চেয়ারম্যান সাব , আমারে মাফ করেন ।"

"কেনরে ? কি হইছে ? " চেয়ারম্যানের অবাক প্রশ্ণ ।

"না অই ওবায়দুর এর সাথে বাজারে দেখা হইছিল , শিক্ষিত পোলা - আমার মতো চাষার হাত ধইরা ভোট চাইলো । তারে আমি কথা দিয়া ফালাইছি - ভোটটা ওরেই দিমু । আপনের দেয়া বিড়ি আমার জন্য হারাম ।" কাচু মাচু কইরা উত্তর ।
চেয়ারম্যান শুকনো হাসলেন , " আইচ্ছা তুই তো দিবি ই না , তোর বউকে বলিস আমাকে ভোট দিতে ।" বলে তিনি হেটে চলে গেলেন ।

এমনই অকপট মোহন , যাকে কেউ কখনো দু:খ করতে দেখে নি তার অভাবের সংসার নিয়ে । কখনো অনুনয় করতে দেখেনি কোন মেম্বার-চেয়ারম্যানের কাছে ।

সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ভোর ৬:১৬
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জুমার নামাজে এক অভূতপূর্ব ঘটনা

লিখেছেন সাব্বির আহমেদ সাকিল, ১০ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০



মসজিদের ভেতর জায়গা সংকুলান না হওয়ায় বাহিরে বিছিয়ে দেয়া চটে বসে আছি । রোদের প্রখরতা বেশ কড়া । গা ঘেমে ভিজে ওঠার অবস্থা । মুয়াজ্জিন ইকামাত দিলেন, নামাজ শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। হরিন কিনবেন ??

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৯



শখ করে বন্য প্রাণী পুষতে পছন্দ করেন অনেকেই। সেসকল পশু-পাখি প্রেমী সৌখিন মানুষদের শখ পূরণে বিশেষ আরো এক নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এবার মাত্র ৫০ হাজার টাকাতেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঠিক কোন বিষয়টা মৌলবাদী পুরুষরা শান্তি মত মানতে পারে???"

লিখেছেন লেখার খাতা, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:২৭


ছবি - গুগল।


ফেসবুক আর ইনস্টাগ্রাম এখন আর শুধু সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম নয়, রোজগার এর একটি চমৎকার প্ল্যাটফর্মও। একটু স্মার্ট এবং ব্রেন থাকলে ফেসবুক/ইনস্টাগ্রাম থেকে রোজগার করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধখানা ভ্রমন গল্প!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৩৯


২০০২ সাল বান্দারবানের রিগ্রিখ্যাং-এর এই রিসোর্ট আজ সকালেই আমরা আবিস্কার করলাম! পাহাড়ের এত উপরে এই মোড়টাতে একেবারে প্রকৃতির মাঝে এমন একটা রিসোর্ট থাকতে পারে তা আমরা সপ্নেও কল্পনা করিনি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১১ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৫

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না
অহনা বলেছিল, আমি জানি আমি তোমাকে পেয়েছি সবখানি
আমি তাই নিশ্চিন্তে হারিয়ে যাই যখন যেখানে খুশি

অহনা বলেছিল, যতটা উদাসীন আমাকে দেখো, তার চেয়ে
বহুগুণ উদাসীন আমি
তোমাকে পাওয়ার জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

×