somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রথমআলোর অন্যায় সিদ্ধান্ত না মেনে সাংবাদিকের পদত্যাগ

০৩ রা এপ্রিল, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথমআলোর অন্যায় সিদ্ধান্ত না মেনে সাংবাদিকের পদত্যাগ
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: ‘বদলে যাও, বদলে দাও’ স্লোগানসর্বস্ব দৈনিক প্রথম আলোর এক সাংবাদিক তার ওপর দৈনিকটির কর্তৃপক্ষের চাপিয়ে দেওয়া অন্যায় সিদ্ধান্ত মানতে না পেরে চাকরি ছেড়েছেন। পদত্যাগী এ সাংবাদিক হলেন দৈনিকটির রোববারের ক্রোড়পত্র ‘ঢাকায় থাকি’ বিভাগের অন্যতম প্রতিবেদক আলী আসিফ।

গত ৩০ মার্চ, ২০১১ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে দৈনিক প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার এবং বারাক ওবামা ও রাবার্ট ব্লেইকের কুশপুতুল দাহ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থীদের পরিচালিত ‘যোগাযোগ ইশকুল‘ নামের একটি সংগঠনের সদস্যরা।

আলী আসিফ ওই সংগঠনটির সভাপতি।

এরই মধ্যে তিনি সামাজিক যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম ফেসবুকে একটি একটি বার্তা ছেড়েছেন। এই বার্তায় তিনি তার ওপর চাপিয়ে দেওয়া প্রথমআলোর অন্যায় সিদ্ধান্ত মানতে না পেরে পদত্যাগের পটভূমি তুলে ধরেন।

আসিফ এতে জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ওই কর্মসূচির পরদিন দৈনিক প্রথম আলোর পক্ষ থেকে তাকে বলা হয়, যোগাযোগ ইশকুলের সভাপতির পদ ছেড়ে তবেই প্রথম আলোতে কাজ করতে হবে।

‘ঢাকায় থাকি’র বিভাগীয় সম্পাদক তাকে দুটির মধ্যে যেকোনও একটিকে বেছে নিতে বলেন। তাকে বলা হয়, ‘হয় প্রথম আলোর চাকরি অথবা যোগাযোগ ইশকুলের সভাপতির পদ।’ এ অবস্থায় বাধ্য হয়েই চাকরি ছাড়লেন আলী আসিফ ।

দৈনিক প্রথম আলো সম্পাদক, মতিউর রহমানের উদ্দেশ্যে লেখা তার পদত্যাগপত্রেই বিষয়টি উল্লেখ করেছেন তিনি। সেখানে আসিফ বলেছেন,‘আমি যোগাযোগ ইশকুলের সভাপতি হয়েই থাকতে চাই। আমি পেটের দায়ে আমার স্বপ্ন বিক্রি করতে পারি না। তাই আমি আপনার প্রথম আলো ছেড়ে দিচ্ছি ।‘

আসিফ আলী তার দেওয়া পদত্যাগপত্রটি হুবহু ছেড়ে দিয়েছেন ফেসবুকে। নিচে হুবহু তা উল্লেখ করা হলো:


বরাবর
মতিউর রহমান
সম্পাদক,
দৈনিক প্রথম আলো,
১০০ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ,
কারওয়ান বাজার, ঢাকা ১২১৫।

বিষয়: অব্যাহতি প্রসঙ্গে।

জনাব,
আমি নিম্নস্বাক্ষরকারী আপনার পত্রিকার রোববারের ক্রোড়পত্র ‘ঢাকায় থাকি’ বিভাগে জুন ২০০৯ থেকে কাজ করছিলাম। শুরু থেকে এ পর্যন্ত ‘ঢাকায় থাকি’ বিভাগের অন্যতম প্রধান প্রতিবেদক হিসেবে অসংখ্য প্রতিবেদনের কাজ সম্পন্ন করেছি। নান্দনিক কাজের পরিবেশ এবং সহকর্মীদের সহযোগিতার কারণে আমি স্বাচ্ছন্দ্যেই কাজ করছিলাম। কিন্তু এখন আর আমার পক্ষে আপনার প্রতিষ্ঠানে কাজ করা সম্ভব নয়।

আমি আপনার স্বনামধন্য পত্রিকার কাজের দায়িত্ব থেকে কেন অব্যাহতি চাচ্ছি সেই কারণ নিচে ব্যাখ্যা করছি।

আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী। পড়ালেখার পাশাপাশি বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার তাগিদ বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পর থেকেই ছিল। গণযোগাযোগের শিক্ষার্থী হিসেবে একটি সত্যিকারের গণমাধ্যমের স্বপ্ন বরাবরই দেখতাম। যেখানে প্রকৃতপক্ষেই গণমানুষের কথা লেখা হবে। শ্রেণীমাধ্যম নয় গণমাধ্যমের চর্চা কিভাবে বাংলাদেশে সম্ভব এই ব্রত শুরু থেকেই ছিল।
সেই উদ্দেশ্যেই ‘যোগাযোগ চর্চা এবং গণমাধ্যমের সমালোচনামূলক বিশ্লেষণ’ লক্ষ্য নিয়ে সহপাঠী এবং বন্ধুরা সম্মিলিতভাবে ‘যোগাযোগ ইশকুল’ নামের একটি সংগঠন গড়ে তুলেছিলাম পহেলা সেপ্টেম্বর ২০০৮। সংগঠনের সদস্যদের পছন্দে যোগাযোগ ইশকুলের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলাম। শুরু থেকে এ পর্যন্ত ‘যোগাযোগ ইশকুল’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশ কিছু সফল কর্মসূচির আয়োজন করেছে। দৈনিক প্রথম আলোসহ দেশের প্রায় সব কয়টি গণমাধ্যম কর্মসূচির খবর ছাপিয়ে আমাদের কাজে সহযোগিতা করেছে। সর্বশেষ ৩০ মার্চ, ২০১১ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে দৈনিক প্রথম আলো, ডেইলি স্টার এবং বারাক ওবামা ও রাবার্ট ব্লেকের কুশপুত্তলিকা দাহ করে যোগাযোগ ইশকুলের সদস্যরা। গণমাধ্যমের কল্যাণে বিষয়টা নিশ্চয়ই আপনার অজানা নয়।

এবার আসি মূল প্রসঙ্গে। যোগাযোগ ইশকুলের অন্যান্য কর্মসূচির মতো সর্বশেষ কর্মসূচিতেও আমার সম্মতি ছিল। তবে, ব্যাক্তিগতভাবে প্রথম আলোর নিয়মিত বেতনভুক্ত কর্মী হওয়ার কারণে ৩০ মার্চ ২০১১ এর কর্মসূচিতে আমি সরাসরি অংশগ্রহন করতে পারি নি। মাইক হাতে নিয়ে বক্তৃতা দিতে পারি নি। ম্যাচের কাঠি জ্বেলে পোড়াতে পারি নি প্রথম আলো, ডেইলি স্টার, বারাক ওবামা এবং রবার্ট ব্লেকের কুশপুত্তলিকা। কেবলই দর্শক হয়ে চেয়ে চেয়ে দেখেছি।

তারপরও, কর্মসূচির পরদিন দৈনিক প্রথম আলোর পক্ষ থেকে আমাকে বলা হয়, যোগাযোগ ইশকুলের সভাপতির পদ ছেড়ে প্রথম আলোতে কাজ করতে হবে। আমার বিভাগীয় সম্পাদক আমাকে দুটির মধ্যে যেকোন একটিকে বেছে নিতে বলেন। আমাকে বলা হয়, ‘হয় প্রথম আলোর চাকরি অথবা যোগাযোগ ইশকুলের সভাপতি।’

আমি যোগাযোগ ইশকুলের সভাপতি হয়েই থাকতে চাই। আমি পেটের দায়ে আমার স্বপ্ন বিক্রি করতে পারি না। তাই আমি আপনার প্রথম আলো ছেড়ে দিচ্ছি। আপনাদের কারো প্রতি আমার কোন অভিযোগ নেই জানিয়ে আমি আমার কর্ম থেকে অব্যাহতি চাচ্ছি।

আলী আসিফ
অ্যাসাইনমেন্ট রিপোর্টার
ঢাকায় থাকি
দৈনিক প্রথম আলো
১০০ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ
কারওয়ান বাজার, ঢাকা ১২১৫।

লিংক -

http://www.facebook.com/notes/ali-asif-shawon/



সাংবাদিক আলী আসিফ শাওন তার প্রতিক্রিয়ায় বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমি সাংবাদিকতার ছাত্র । আমি সাংবাদিকতা বুঝি। আমি মত প্রকাশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি। তাই প্রথম আলো ছাড়লাম। তবে এটা আমার ব্যক্তিগত বিষয়। ঘনিষ্টজনদের জানাতে ফেসবুকে দিয়েছি সত্য ঘটনা। অন্যায়ের সঙ্গে আপস না করা, পেশার প্রতি সৎ থাকা আমার উদ্দেশ্য।

শনিবার বিকেল ৫ টা ৫৩ মিনিটে ফেসবুক ওয়ালে আমি কেন প্রথম আলো ছেড়ে চলে আসলাম ...? শিরোনামে বার্তাটি পোস্ট করেন আলী আসিফ।


বাংলাদেশ সময় ২১০০ ঘণ্টা, এপ্রিল ০২, ২০১১
৫টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেসবুক বিপ্লবে সেভেন সিস্টার্স দখল—গুগল ম্যাপ আপডেট বাকি

লিখেছেন মহিউদ্দিন হায়দার, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৩০




কিছু তথাকথিত “বাংলাদেশি বিপ্লবী” নাকি ঘোষণা দিয়েছে—ভারতের সেভেন সিস্টার্স বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে! সহযোগী হিসেবে থাকবে বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী আর পাকিস্তানি স্বপ্ন।শুনে মনে হয়—ট্যাংক আসবে ইনবক্সে। ড্রোন নামবে লাইভ কমেন্টে। আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গু এনালিস্ট কাম ইন্টারন্যাশনাল সাংবাদিক জুলকার নায়েরের মাস্টারক্লাস অবজারবেশন !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২৬

বাংলাদেশের দক্ষিণপন্থীদের দম আছে বলতে হয়! নির্বাচন ঠেকানোর প্রকল্পের গতি কিছুটা পিছিয়ে পড়তেই নতুন টার্গেট শনাক্ত করতে দেরি করেনি তারা। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ ঘিরে নতুন কর্মসূচি সাজাতে শুরু করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৫৭

একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।

কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।

ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×