somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রেজাউল করিম সাগর
হাড্ডি খিজিরের মত ঠোঁটকাটা হইতে চাই শেষমেশ ওসমান অরফে রঞ্জু হয়াই দিন কাটে। রোগা শালিকের বিবর্ণ ইচ্ছা কী আছিলো সেইটা অনুভব করার খুব শখ আছিলো, জীবনদা তো আর নাই। তার কথা মনে হইলেই শোভনার ব্যর্থ প্রেমিক, লাবণ্যের ব্যার্থ স্বামী মনে হয়।

ঢাকার বুদ্ধদেব বসু - সৈয়দ আবুল মকসুদ

১৪ ই এপ্রিল, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



গত কয়েকদিন ধরে কয়েকটি বইয়ের পাশাপাশি পড়ছিলাম সদ্য প্রয়াত সৈয়দ আবুল মকসুদ স্যারের বই ঢাকার বুদ্ধদেব বসু। তিরিশের কবি, বাংলা কবিতার পঞ্চপাণ্ডব সম্পর্কে ধারণা হবার পর থেকেই প্রগতি এবং কবিতার মত পত্রিকার সম্পাদক বুদ্ধদেব বসু আমার আগ্রহের কেন্দ্রে ছিলেন। উনার সাহিত্য সমালোচনার সাথেই পরিচয় প্রথম। এত সুন্দর এবং গল্পের মত করে এর আগে আমি আর কাউকে সাহিত্য সমালোচনা করতে দেখিনি। অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে থাকাকালীন বুদ্ধদেব বসুর 'সাহিত্যচর্চা' বইটি কিনি চারুকলার সামনে থেকে। এরপর রামায়ণ-মহাভারতের মত সাহিত্যের আলোচনা, বাংলা কবিতার ছন্দ, সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত, উপেন্দ্রকিশোর রায় এর রামায়ণ-মহাভারত সম্পর্কে এত ভালো আলোচনা পড়ে আরাম পেয়েছি। লকডাউনে 'কালের পুতুল' বইটাও পড়া হয়েছে। হাতে লেখা প্রগতি পত্রিকা কিনছিলাম পল্টনের ফুটপাথ থেকে । উনার উপন্যাস 'রাতভরে বৃষ্টি' আর শ্রেষ্ঠ কবিতা পড়া হয়েছে। আর জীবনানন্দ দাশ সম্পর্কিত আলোচনায় জীবনানন্দ দাশের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে বুদ্ধদেব বসুর বেশকিছু প্রবন্ধ পড়া হয়েছে। আরেকটা বিরাট জিনিস যেটা না বললেই নয় তা হলো বুদ্ধদেব বসুর অনুবাদ কবিতাগুলো! বোদলেয়ারের আশ্চর্য মেঘদল কবিতার মোহ কাটেনি এখনো! এছাড়াও বিশ্বের অনেক বিখ্যাত কবির অনুবাদ এবং অনুবাদের আগের ভূমিকাগুলো আমার মত স্বল্পজ্ঞ মানুষের জন্য একেকটা কবিতার ক্লাস। এইটুকুই আমার বুদ্ধদেব বসুকে জানার দৌড়।



বোদলেয়ারের কবিতার অনুবাদ

সৈয়দ আবুল মকসুদ স্যারের এই বইটা এত অসাধারণ যে বিশের দশক থেকে শুরু করে ষাটের দশক পর্যন্ত বুদ্ধদেব বসু এবং ঢাকা কেন্দ্রীক বেশ সুন্দর আলোচনা পাওয়া যায় এতে। অগ্রজ বিখ্যাত কোন লেখকের সম্পর্কে লিখতে গেলে প্রায় অনুজ জীবনীকারই উক্ত লেখক সম্পর্কে অতিশয়োক্তি করে আর নিজের মুগ্ধতা, শ্রদ্ধা এইসব ছড়িয়ে ছিটিয়ে তাঁকে দেবতার আসনে বসিয়ে ফেলেন। আর এক দল লেখক আছেন যারা সমালোচনা করে একেবারে তুলোধুনো করে দেন। কিন্তু দুইটার কোনটাই তো আসলে কাম্য না। এই ইতিবাচক-নেতিবাচক সমালোচনার মিশেলে একজন লেখক সম্পর্কে ভালো আলোচনা কেমন হতে পারে তার নিদর্শন বোধ করি 'ঢাকার বুদ্ধদেব বসু'। বইয়ে সেই সময়ের বুদ্ধদেব বসুর আশেপাশের বাংলা সাহিত্যের অনেক দিকপালকেই পাওয়া যায় যার মধ্যে আছেন রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, জীবনানন্দ, শরৎচন্দ্র, সত্যেন্দ্রনাথ, ফররুখ আহমদ, জসীমউদ্দীন, আব্দুল কাদির, আবুল হুসেন, শামসুর রাহমান, অচীন্ত্যকুমার, বিষ্ণু দে, সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ, সুধীন দত্ত, শঙ্খ ঘোষ, প্রেমেন্দ্র মিত্র, সুকান্ত প্রমুখ ।


লেখক - সৈয়দ আবুল মকসুদ

এখানের সকলেই এখন পর্যন্ত বিখ্যাত। কিন্তু এমন অনেকেই তো ছিলেন যারা প্রগতি, কল্লোল, কবিতা, কালি ও কলম গোষ্ঠীর তুমুল জনপ্রিয় ছিলেন কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় তাঁদের এখনকার মানুষ মনে রাখেনি। কিন্তু একজন সচেতন ইতিহাস লেখক আবুল মকসুদ সেইসব কম জনপ্রিয় কিন্তু বুদ্ধদেব বসু, প্রগতি তথা বাংলা কবিতার উত্থানে অবদান রেখেছেন কিংবা বিরোধিতা করেছেন সেরকম লোকদেরও আলোচনায় সম্পৃক্ত করেছেন যার জন্য আমার কাছে বইটির বয়ান অনেক প্রামাণ্য মনে হয়েছে।
কেননা এক একজন রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, জীবনানন্দ, বুদ্ধদেব বসুদের পিছনে এমন কত লোকের অবদানই তো ছিলো যাদের ইতিহাস মনে রাখেনি? কিংবা মনে রাখেননি সেইসব বিখ্যাত লোকেরাও! ঢাকা- কলকাতা, বিখ্যাত-কুখ্যাত-অখ্যাতদের যুক্ত করে সামগ্রিক একটি চিত্র ফুটিয়ে তুলতে চাইলে সেটা প্রামাণ্য না হয়ে যায় না। এছাড়াও বুদ্ধদেব বসুর সাথে অনেকের চিঠিগুলো তুলে দেয়ায় লেখকের বর্ণনাটা আরো বেশি করে সাবলিল লেগেছে। পাশপাশি এইসব চিঠি বা বয়ানের মাঝে যেখানে যেখানে অসংলগ্নতা ছিলো সেসব জায়গায় লেখকের বক্তব্য আমাদের সঠিক তথ্যটি জানায়।
.
একজন লেখক যেমন রবীন্দ্রনাথ, তাঁকে বাঙালি এমনভাবে আলোচনা করে যেন একেবারে দেবতার কাতারে নিয়ে যায়। তাঁর মানবিক দোষ-ত্রুটি, লেখক হিসেবে সীমাবদ্ধতাকে আড়াল করেই মনে হয় তাঁকে ধরাছোঁয়ার বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়। বুদ্ধদেব বসুর ব্যাপারে আবুল মকসুদ এই কাজটি করেন নি। একজন ব্যাক্তি হিসেবে, কবি হিসেবে, লেখক, বন্ধু হিসেবে বুদ্ধদেব বসুর অনেক অসঙ্গতি আলোচনা-সমালোচনা যেমন করেছেন, বুদ্ধদেবের বড়ত্বের জায়গাগুলোও যথাযথ সম্মানপূর্বক আলোচনা করেছেন।
একজন বুদ্ধদেব বসুর কবিতা আমরা এখন হয়তো সেভাবে পড়িনা যতটা রবীন্দ্র-নজরুল-জীবনানন্দ ত্রয়ীর পড়া হয় তাঁর তুলনায়। কিন্তু বাংলা কবিতার ইতিহাসে বুদ্ধদেব বসু অনেক বিশাল একটা তারকাখচিত নাম যিনি বাংলা কবিতার একনিষ্ঠ কর্মী হিসেবে অনেক প্রতিভাকে স্বীকৃতি জুটিয়েছেন, উৎসাহ দিয়েছেন, কবিতার প্রতি একনিষ্ঠ সততার-নিষ্ঠার-ভালোবাসার জায়গা থেকে কাজ করে গেছেন আজীবন!


সাহিত্য সমালোচনা - সাহিত্যচর্চা

আমার মাঝে মাঝেই মনে হয় বাংলা সাহিত্যের জন্য আরেকজন বুদ্ধদেব বসু প্রয়োজন অন্তত এই শূন্যতার সময়ে। এমন একজন কষ্টিপাথর, আশ্রয় আমাদের আসলেই দরকার যিনি হাজারো কাকের দল থেকে কবিদের আলাদা করে তুলে আনতে পারবেন। আনকোরা নতুনের দলকে নতুন অভিযানে সাহস-প্রশ্রয় যুগিয়ে যেতে পারবেন। নতুনের জন্য একটি আশ্রয়কেন্দ্র ( প্রগতি, কবিতার মত) সযত্নে আগলে রাখবেন, নতুন কোন জীবনানন্দ দাশকে শনিবারের চিঠির মত গালাগালি করাদের কথার জবাব দিবেন তীব্রভাবে। বাংলা সাহিত্যের খরার পিছনে এমন সাহিত্য সংগঠক, সাহিত্য পত্রিকার অভাব অনেক বেশি করেই বোধ হয়! এই সময়ের অনেকেই হয়তো এমন প্রভাব রাখতে পারেন চাইলে, কিংবা এমন অনেকেই হয়তো আছেন ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও ক্ষমতার ল্যাজ ধরে ঝুলে আছেন, আবার এমন অনেকেই আছেন যাদের ইচ্ছা থাকলেও প্রতিভাহীনতা, পড়াশোনার অভাব প্রধান বাধা হয়ে দাড়াচ্ছে।
আমি জানিনা কি কারণ। শুধু জানি একজন বুদ্ধদেব বসুর খুব দরকার ছিলো এই সময়ে।


বাংলা সাহিত্য সম্পর্কে আগ্রহ আছে এমন যে কারোর জন্যই বইটি অনেক ভালো লাগার কথা।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই এপ্রিল, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:৩১
২টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×