প্রসঙ্গ : ৫৭ ধারা নামক ব্লাসফেমি
৫৭ ধারা, পাকি ব্লাসফেমি আইন অথবা সেদিনকার এসপিইএ আইনের চেয়েও জঘন্য। নালিশ, আটক গ্রেফতার আর নির্যাতনের জন্য এইটার আর জুড়ি নাই। আপন স্বার্থে অনুভুতি (!) আহত করাতে পারলেই ওই ব্যবস্থা। ব্যক্তিগত, রাজনৈতিক বা দলগত যা’ই হোক। লিখলেই ধর মার্ ব্যবস্থা। সরকার দলের জন্য সবচেয়ে সহজ ও আইনসিদ্ধ ব্যবস্থা। সরকারের এই অসীম ক্ষমতায় তারা নাগরিকের সেবকের বদলে প্রভূ হয়ে বসে আছে। নাগরিক যে দেশের মালিক এই কথাটা ওরা ক্ষমতার দম্ভে গিলে বসে আছে। জঘন্য।
কিছুদিন আগে ভারতীয় সংবাদপত্রে একটা মজার ঘটনার কথা এসেছিল। জনৈক ভারতীয় নাগরিক রাস্তার পাশের ধাবায় বসে চা-পানের সময় পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন। পুলিশের অভিযোগ তার চা-পানের ভঙ্গিটি সন্দেহজনক ছিল। নিরাপত্তা-জনিত কারণে কারও গতিবিধি সন্দেহজনক মনে হলে পুলিশ তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে, কিন্তু কেবল কারও চা-পানের ভঙ্গি পুলিশের পছন্দ না হওয়ায় গ্রেফতারের ঘটনা সম্ভবত বিরল। চা পানের সময় কিভাবে কাপটি ধরতে হবে, শব্দ করে নাকি নিঃশব্দে চা পান করতে হবে, বসে না দাঁড়িয়ে পান করতে হবে, চা পানের সময় এদিক ওদিক তাকানো যাবে কিনা, এসবের কোনটি চা-পান কে সন্দেহজনক করে তুলবে তা সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ না করে যদি কেবল আইন করা হয় যে সন্দেহজনকভাবে চা পান করা দণ্ডনীয় অপরাধ এবং যার চা-পানের ভঙ্গি সন্দেহজনক মনে হবে পুলিশ তাকেই গ্রেফতার করতে পারবে তাহলে যে কেউই যত্রতত্র হয়রানির শিকার হবেন। অশ্লীলতা, ধর্মানুভূতি, অপরাধ সংঘটনের সম্ভাবনা ইত্যাদির বোধ ব্যক্তি-বিশেষে ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। যেহেতু আইন এসব আচরণের কোন আদর্শ সংজ্ঞা ঠিক করে দেয় নি, তাই আলোচ্য ধারার প্রয়োগেও অস্পষ্টতা থাকতে বাধ্য। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে মানুষকে আতঙ্কিত করে তোলা ছাড়া এর মাধ্যমে আর কিছু অর্জন হবে বলে মনে হয় না।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১০:৪৯