somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হে আল্লাহ আমাদের রক্ষা করুন! একই দিনে সারা পৃথিবীতে (সৌদি আরবের সঙ্গে) একই সঙ্গে ঈদ-সিয়াম পালন - তর্ক বিতর্ক / যায়েজ না জায়েজ

১২ ই অক্টোবর, ২০১৪ রাত ৯:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রোযা, ঈদ, কুরবানীসহ চাঁদের তারিখ নির্ভর সকল ইবাদত ও ইসলামী পর্বসমূহ
পালনে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের সাথে বাংলাদেশের দিন-তারিখের পার্থক্য চলে
আসছে। বর্তমানে এ সকল ইবাদত ও ইসলামী পর্বসমূহ বাংলাদেশে পৃথিবীর অন্যান্য
দেশের এক/দুই দিন পরে পালিত হওয়া প্রতিষ্ঠিত রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। চাঁদের
তারিখ নির্ভর সকল ইবাদত ও ইসলামী পর্বসমূহ পালনের দিন তারিখ পার্থক্যের
কারণ হলো পৃথিবীর ভ‚-প্রকৃতির কারণে চান্দ্রমাসের ১ম তারিখের পূর্বসন্ধায়
সমগ্র পৃথিবীতে নতুন চাঁদ দৃশ্যমান না হয়ে বরং ১ম তারিখে পশ্চিম গোলার্ধের
দেশসমূহে হিলাল বা নতুন চাঁদ এবং পরের দিন পূর্ব গোলার্ধের দেশসমূহে ২য়
দিনের “ক্বামার” বা চাঁদ দৃশ্যমান হওয়া। চাঁদ উদয়ের এ ভিন্নতার বিষয়ে ইসলাম
ও বিজ্ঞান সম্পূর্ণ একমত। কিন্তু প্রশ্ন হলো চান্দ্রমাসের তারিখ গণনার
ক্ষেত্রে নতুন চাঁদ দৃশ্যমান হওয়ার এ ভৌগলিক ভিন্নতা ইসলামি শরীয়তে গৃহীত
হবে কি না? যদি গৃহীত হয় তবে নতুন চাঁদ দৃশ্যমান হওয়ার ভিন্নতায় একই
চান্দ্রমাসের প্রতিটি তারিখ হবে দু’টি। অর্থাৎ দু’টি ১ তারিখ, দু’টি ২
তারিখ, দু’টি ৩ তারিখ…… এমনি করে দু’টি ৩০ তারিখ। আর যদি নতুন চাঁদ
দৃশ্যমান হওয়ার ভিন্নতা ইসলামি শরীয়তে গৃহীত না হয় তবে বিশ্বে সর্ব প্রথম
নতুন চাঁদ দৃশ্যমান হওয়ার ভিত্তিতে সমগ্র পৃথিবীতে বিশ্বজনীন (টহরাবৎংধষ)
একক চান্দ্রতারিখ গণনা করতে হবে। ফলে চাঁদের তারিখ নির্ভর সকল ইবাদত সমগ্র
পৃথিবীতে একই চান্দ্রতারিখে, একই দিনে ও বারে স্থানীয় সৌর সময় অনুযায়ী
পালিত হবে।

উপরোক্ত প্রশ্নের জবাবে পবিত্র কুরআনের ঘোষণা হল:-

يَسْأَلُونَكَ عَنِ الأهِلَّةِ قُلْ هِيَ مَوَاقِيتُ لِلنَّاسِ وَالْحَجِّ

“(হে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লোকেরা আপনাকে নতুন চাঁদসমূহ
(১২ মাসের ১২টি নবচন্দ্র) সম্পর্কে জিজ্ঞেস করছে। আপনি বলে দিন এগুলো সমগ্র
মানব জাতির জন্য সময়নির্ধারক (ক্যালেন্ডার) এবং হজের সময় নির্ধারণকারী।”
(আল কুরআন, সূরা বাকারা, আয়াত ১৮৯)

এখানে লক্ষণীয় যে, আয়াতে الأهِلَّةِ শব্দের উল্লেখ করা হয়েছে যার অর্থ কয়েক
মিনিটের নতুন চাঁদ। প্রতি চান্দ্রমাসে চাঁদ একদিনই নতুন থাকে এবং সে নতুন
চাঁদকে হিলাল (هلال) (ঈৎবংবহঃ, ঘবি সড়ড়হ)

বলে। পরবর্তী দিনগুলোর চাঁদ কখনই নতুন চাঁদ নয়। পরবর্তী চাঁদকে কামার (قمر) গড়ড়হ বলে।

আরো লক্ষণীয় যে, অত্র আয়াতের মধ্যে لِلنَّاسِ শব্দের শুরুতে ال টি الف لام
جنسى বা জাতি বোধক ال, যাকে ইংরেজীতে ঈড়সসড়হ ঘড়ঁহ হিসেবে গ্রহণ করা হয়।
তাহলে আয়াতের অর্থ হচ্ছে নতুন চাঁদ সমগ্র মানব জাতির জন্য সময় নির্ধারক।
অতএব নতুন চাঁদের নির্দেশিত এ নতুন মাসের ১ম তারিখ দেশ-মহাদেশের ভিন্নতায়
কখনই আলাদা হবে না। কারণ চাঁদ উদয়ের দিনে সকল দেশের অধিবাসীরা মানুষই
থাকেন। আর পবিত্র কুরআন বলছে নতুন চাঁদ সমগ্র মানব জাতির জন্য সময়
নির্ধারক।

কার উপর রোযা রাখা ফরয, এর সিদ্ধান্ত দিয়ে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ইরশাদ করেছেন ঃ

فَمَن شَهِدَ مِنكُمُ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ.

“তোমাদের যে কেউ এ (পবিত্র রমযান) মাস পাবে সে যেন এ মাসে রোযা রাখে।” (আল-কুরআন, সূরা আল বাকারা, আয়াত ১৮৫)

অত্র আয়াতের মাধ্যমে রমযান মাসের রোযা ফরয করা হয়েছে। আর রোযা ফরয হওয়ার
কারণ নির্ধারণ করা হয়েছে شهود شهر বা রমযান মাসে উপণিত হওয়াকে। অর্থাৎ যে
ব্যক্তি রোযা রাখার সামর্থ সহকারে পবিত্র রমযান মাসে উপণিত হবে তার জন্যই
রমযানের রোযা রাখা ফরয। অত্র আয়াতে উল্লিখিত من (যে কেউ) শব্দটি দেশ মহাদেশ
নির্বিশেষে عام বা ব্যাপক অর্থ বোধক শব্দ। তাই অত্র শব্দকে দেশ-মহাদেশের
সীমারেখায় সীমিত করা উসুলে তাফসীরের মূলনীতি বিরোধী। অতএব আয়াতে من (যে
কেউ) শব্দটির মাধ্যমে ব্যাপকার্থে গোটা পৃথিবীর যে কোন মুসলিম সম্বোধিত।

লক্ষণীয় যে, মহাবিজ্ঞ আল্লাহ তায়ালা রোযা ফরয হওয়ার কারণ নির্ধারণ করেছেন
شهود شهر বা মাসের উপস্থিতিকে। আর মাসের উপস্থিতি প্রমাণিত হয় নতুন চাঁদ
উদয়ের মাধ্যমে। অর্থাৎ পৃথিবীর আকাশে কোথাও চাঁদ দেখা গেলেই সমগ্র পৃথিবীতে
মাসের উপস্থিতি প্রমাণিত হবে। আর মাসের উপস্থিতি প্রমাণিত হলে সকল
মুসলিমের উপর ঐ দিন থেকেই রোযা রাখা ফরয হবে।

উল্লিখিত আয়াতদ্বয় দ্বারা স্পষ্টই বুঝা যাচ্ছে যে, চান্দ্রমাসের তারিখ
গণনার ক্ষেত্রে নতুন চাঁদ দৃশ্যমান হওয়ার ভিন্নতা ইসলামে গৃহীত নয়।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, صوموا لرؤيته
وافطروا لرؤيته“চাঁদ দেখার ভিত্তিতে তোমরা রোযা রাখ এবং চাঁদ দেখার
ভিত্তিতে তোমরা রোযা ছাড়, ঈদ কর।” (সহীহ মুসলিম, পৃ. ৩৪৭)

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও ইরশাদ করেন –

عن أبي هريرة ؓ أن النبي صلى الله عليه و سلم قال الصَّوْمُ يَوْمَ
تَصُومُونَ وَالْفِطْرُ يَوْمَ تُفْطِرُونَ وَالأَضْحَى يَوْمَ تُضَحُّونَ

হযরত আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “রোযা হবে একই
দিনে, যে দিন তোমরা সকলেই রোযা রাখবে। ঈদ হবে একই দিনে, যে দিন তোমরা সকলেই
ঈদ করবে। কুরবাণী হবে একই দিনে, যে দিন তোমরা সকলেই কুরবাণী করবে।”

(সুনান আত-তিরমিযী, হাদীস নং ৬৯৭, সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ২৩২৪, সুনানে
ইবনু মাজাহ ১৬০৭, সুনান আল-বায়হাকী ৭৯৯৭, মুসান্নাফু আব্দির রাজ্জাক ৭৩০৪,
দায়লামী ৩৮১৯, দারুকুতনী ৩৫, মাযমাউ ফাতওয়া ইবনে বায, খণ্ড ১৫, পৃ. ৭৭/৭৮,
কানযুল উম্মাল, খণ্ড ৮, পৃ. ৪৮৮)

অত্র হাদীস দু’খানায় ‘তোমরা’ বলে সম্বোধন কোন নির্দিষ্ট ভ‚খন্ডের নির্দিষ্ট
জনগোষ্ঠির জন্য নয় বরং সমগ্র বিশ্বের সকল উম্মতকে সাধারণ সম্বোধন করা
হয়েছে। অতএব, হাদীসদ্বয় হতেও বুঝা যাচ্ছে চান্দ্রমাসের তারিখ গণনার
ক্ষেত্রে নতুন চাঁদ উদয়স্থানের ভিন্নতা ইসলামে গৃহীত নয়।

বোখারী শরীফের বিখ্যাত শরাহ “ফতহুল বারী”তে উল্লেখ করা হয়েছে –

فلا يتوقف الحال على رؤية كل واحد فلا يتقيد بالبلد

“মাস প্রমাণের জন্য এ শর্ত করা যাবে না যে, প্রত্যেক ব্যক্তিকেই চাঁদ দেখতে
হবে, আবার এ শর্তও করা যাবে না যে, প্রত্যেক দেশ থেকেই চাঁদ দেখতে হবে”।
(ফতহুল বারী, খণ্ড ৪, পৃ. ১৫৪)

পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহের আলোকে তিন মাযহাবের ইমাম, ইমাম জাফর সাদেক, ইমাম
ফখরুদ্দীন রাযী, ইমাম কুরতুবী রাহিমাহুমুল্লাহ এবং ফাতওয়ায়ে শামী, ফাতওয়ায়ে
আলমগীরি, ফতহুল কাদীর, কাযীখান, ফাতওয়ায়ে ইবনু তাইমিয়া, আল ফিকহ আলা
মাজাহিবিল আরবায়া, ফিকহুস্ সুন্নাহ, আলমুগনী, বাহরুর রায়েক, মায়ারেফুস
সুনান, আল মুনতাকা ফি শরহিল মুয়াত্তা, তাবয়িনুল হাকায়েক, আল বাযযাযিয়া,
নূরুল ইযাহ, মজমুয়ায়ে ফাতওয়া, মিশরের গ্রান্ড মুফতী জাদুল হক, সৌদি আরবের
বিশিষ্ট শায়খ মুহাম্মদ আস ছাবুনীসহ সারা বিশ্বের পূর্বাপর প্রায় সকল ইমাম,
মুজতাহিদ ও ফকীহগণ এ মতের পক্ষে জোরালো বক্তব্য রেখেছেন। পাক ভারত
উপমহাদেশের মনীষীগণও একই মত পোষণ করেছেন- যেমন ফাতওয়ায়ে রাজাবিয়্যায় হযরত
আল্লামা আহমদ রেযা খান বেরেলভী, দেওবন্দের মুরুব্বী আল্লামা রশীদ আহমদ
গাংঙ্গুহী, আল্লামা আশরাফ আলী থানবী, আল্লামা শাব্বীর আহমদ উসমানী,
দেওবন্দের গ্রান্ড মুফতী আযিযুর রহমান, ফরফুরা দরবারের মুফতী আবু জাফর,
ছারছীনা দরবারের প্রতিষ্ঠাতা হযরত মাওলানা নেছার উদ্দিন, মুফতী আহমদ ইয়ার
খান, হযরত হোসাইন আহমদ মাদানী, হাটহাজারী মাদারাসার শায়খুল হাদীস মাওলানা
হাফেজ আবুল হাসান রাহেমাহুমুল্লাহুসহ শত শত মনীষী তাদের ফাতওয়া গ্রন্থে
বক্তব্য পেশ করেছেন যে, (ক) চান্দ্রমাসের তারিখ গণনার ক্ষেত্রে
নতুন চাঁদ উদয়স্থানের ভিন্নতা ইসলামে গৃহীত নয়। (খ) নতুন চাঁদ পরে দেখার
কারণে এক দেশের মানুষ রোযা রাখল ২৯টি এবং অন্য দেশের মানুষ নতুন চাঁদ ১ দিন
আগে দেখার কারণে রোযা রাখল ৩০টি। তাহলে ২৯ রোযা আদায়কারী দেশবাসী ৩০ রোযা
আদায়কারী দেশবাসীর সাথে ঈদ করবে এবং মাসের শুরুর ছুটে যাওয়া ১টি রোযা কাযা
করবে।

ভৌগলিক কারণে নতুন চাঁদ দৃশ্যমান হওয়ার ভিন্নতা গৃহীত না হওয়া সম্পর্কে ও.
আই. সি (ঙ.ও.ঈ)- এর আন্তর্জাতিক ফিকহ একাডেমী ১৯৮৬ সালে জর্ডানের রাজধানী
আম্মানে শতাধিক ফকীহ ও শরীয়াহ বিশেষজ্ঞদের সর্বসম্মতিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ
করেন যে,

ঋরৎংঃ: ওভ ংরমযঃরহম ড়ভ ঃযব পৎবংপবহঃ রং বংঃধনষরংযবফ রহ ড়হব পড়ঁহঃৎু, ধষষ
গঁংষরসং সঁংঃ ধনরফব নু রঃ. ঞযব ফরভভবৎবহপব রহ যড়ৎরুড়হ রং হড়ঃ ৎবষবাবহঃ
নবপধঁংব ঃযব ড়ৎফরহধহপব ভড়ৎ ংঃধৎঃরহম ধহফ বহফরহম ঃযব ভধংঃরহম রং ঁহরাবৎংধষ.

ঝবপড়হফ: ওঃ রং সধহফধঃড়ৎু ঃড় ধপপবঢ়ঃ ঃযব ংরমযঃরহম. ঐড়বিাবৎ, ড়হব সধু মবঃ
ধংংরংঃধহপব ভৎড়স ধংঃৎড়হড়সরপধষ পধষপঁষধঃরড়হ ধহফ ড়নংবৎাধঃড়ৎরবং রিঃয ফঁব
পড়হংরফবৎধঃরড়হ ঃড় ঃযব ংধুরহমং ড়ভ ঃযব চৎড়ঢ়যবঃ (চইটঐ) ধহফ ংপরবহঃরভরপ ভধপঃং.

অনুবাদ

প্রথম : যদি কোন দেশে নতুন চাঁদ উদয় প্রমাণিত হয়, তবে বিশ্বের সকল মুসলিমকে
অবশ্যই ইহা মেনে চলতে হবে। চাঁদের উদয়স্থলের ভিন্নতা গ্রহণীয় নয়। কারণ
রোজা শুরু এবং শেষ করার বিধান বিশ্বজনীন।

দ্বিতীয় : চাঁদ দেখার বিষয়টি মেনে নেয়া বাধ্যতামূলক। তবে “মহানবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বাণী এবং বৈজ্ঞানিক বাস্তবতা”-কে
বিবেচনায় রেখে যে কেউ জ্যোতির্বিজ্ঞানের হিসাব এবং বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণ
কেন্দ্রসমূহের সহায়তা নিতে পারেন।

কুরআন, সুন্নাহ, ফিকহে ইসলামী এবং ঙ.ও.ঈ এর পূর্বোল্লেখিত সিদ্ধান্ত
বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে প্রসংঙ্গত যে দু’টি প্রশ্ন প্রনিধানযোগ্য তা হলো :-

এক. যদি সমগ্র পৃথিবীতে একই চান্দ্র তারিখে, একই দিনে রোযা, ঈদ, কোরবানীসহ
চাঁদের তারিখ নির্ভর সকল ইবাদত পালিত হওয়া শরীয়তের বিধান, তাহলে সকলে কেন
একই সাথে সাহরী-ইফতার গ্রহণ করেন না? বা পৃথিবীর সবাই একই সাথে নামাজ আদায়
করেন না?

জবাবে বলব প্রতিটি আমলেরই দুটি দিক রয়েছে। এক ঃ আমলটি ফরয হওয়া, দুই ঃ ফরয
হওয়া উক্ত আমলকে কার্যের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা। রোযার বিষয়টিও অনুরূপ।
প্রথমত ঃ রোযা ফরয হওয়া, দ্বিতীয়ত ঃ রোযাকে কাজের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা।

প্রথমটি অর্থাৎ রোযা ফরয হওয়া নির্ভর করে চাঁদ দেখার মাধ্যমে মাসের
উপস্থিতির উপর। ফলে পৃথিবীর আকাশে পবিত্র রমযান মাসের চাঁদ দেখার মাধ্যমে
রমযান মাস প্রমাণিত হওয়ার সাথে সাথে সমগ্র পৃথিবীর সকল মু’মিন নারী পুরুষের
উপর একই সাথে রোযা ফরয হওয়া সাব্যস্ত হয়ে যায়। এ সম্পর্কে পবিত্র কুরআনের
ঘোষণা হলো- فمن شهد منكم الشهر فليصمه অর্থাৎ তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তিই
রমযান মাসে উপণিত হবে, সে যেন এ মাসে রোযা রাখে। (আল কুরআন, সুরা বাকারা,
আয়াত ১৮৫)

এখন প্রশ্ন হলো এ ফরয হওয়া রোযা আমরা কিভাবে আদায় করব। যা রোযার দ্বিতীয়
দিক অর্থাৎ রোযাকে কার্যের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা। যা শুরু হয় সাহরী খাওয়ার
মাধ্যমে এবং শেষ হয় ইফতারের মাধ্যমে।

সাহরী ও ইফতারীর মাধ্যমে রোযা বাস্তবায়ন করা নির্ভর করে সূর্যের পরিভ্রমনের উপর। এ সম্পর্কে পবিত্র কুরআনের ঘোষণা হলো-

وَكُلُوا وَاشْرَبُوا حَتَّى يَتَبَيَّنَ لَكُمُ الْخَيْطُ الْأَبْيَضُ
مِنَ الْخَيْطِ الْأَسْوَدِ مِنَ الْفَجْرِ ثُمَّ أَتِمُّوا الصِّيَامَ
إِلَى اللَّيْلِ

অর্থাৎ তোমরা পানাহার কর যতক্ষণ না কালো রেখা থেকে (পূর্ব আকাশে) ভোরের
শুভ্র রেখা পরিস্কার হয়। অতপর রোযা পূর্ণ কর রাত পর্যন্ত। (আল কুরআন, সুরা
বাকারা, আয়াত ১৮৭)

অত্র আয়াতের ঘোষণা থেকে পরিস্কার বুঝা যাচ্ছে, রোযা কার্যের মাধ্যমে
বাস্তবায়ন করার শুরু হচ্ছে সুবহি সাদিক এবং রোযা সমাপ্ত হবে রাতের শুরুতে
যা ইফতারের সময়। সুবহি সাদিক এবং রাত হওয়া অবশ্যই সূর্যের পরিভ্রমনের সাথে
সম্পর্কিত, চাঁদের সাথে নয়।

তাহলে উপরোক্ত দু’টি আয়াতের সার কথা এ দাড়ালো যে, পৃথিবীর কোথাও নতুন চাঁদ
উদয় প্রমাণিত হওয়ার সংবাদ গ্রহণযোগ্য মাধ্যমে পাওয়ার সাথে সাথে সকল প্রাপ্ত
বয়স্ক মু‘মিন মু’মিনার উপর রোযা ফরয হবে। আর ফরয হওয়া উক্ত রোযা বাস্তবায়ন
করতে হবে সূর্যের পরিভ্রমনের দ্বারা। তাই সূর্যের পরিভ্রমনের প্রতি লক্ষ
রেখেই স্থানীয় সময়ানুপাতে পৃথিবীর ভিন্ন ভিন্ন স্থানে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে
সাহরী, ইফতার ও নামায আদায় করতে হয়। যেহেতু বাংলাদেশে সূর্য উদয়-অস্ত মধ্য
প্রাচ্যের মক্কার উদয়-অস্তের সময় থেকে ৩ ঘন্টা অগ্রগামী সে কারণেই
বাংলাদেশে সাহরী, ইফতার ও নামাযের সময় মধ্যে প্রাচ্যের স্থানীয় সময়ের চেয়ে ৩
ঘন্টা আগে হবে।

দুই. পৃথিবীর সকল স্থানে একই সাথে রাত বা দিন হয় না বরং এক স্থানে যখন রাত,
অন্য স্থানে তখন দিন। তাহলে একই দিনে সমগ্র বিশ্বে রোযা, ঈদ, কুরবাণী পালন
করা কিভাবে সম্ভব?

প্রথমতঃ সহজ জবাব দিতে বলতে হয়, শুক্রবারের জুমার নামাজ জাপান হতে আলাস্কা
পর্যন্ত সমগ্র পৃথিবীতে শুক্রবারেই আদায় করা হয়। কোথাও শনিবার বা
বৃহস্পতিবারে আদায় করা হয় না। জুমার নামাজ যেভাবে সারা বিশ্বে একই দিনে
পালন করা সম্ভব ঠিক একই ভাবে রোযা, ঈদ ও কুরবাণী একই দিনে সমগ্র বিশ্বে
পালন করা সম্ভব।

দ্বিতীয়ত ঃ আমরা যে বিষয়ে সম্ভব্যতার প্রশ্ন তুলছি, বিশ্ববাসী সে বিষয়টি
একই দিনে বাস্তবে পালন করে প্রমাণ করে দিয়েছেন কী ভাবে তা সম্ভব। যেমন-
২০১৪ সনে ২৮ জুলাই সোমবার প্রাচ্যের জাপান থেকে পাশ্চাত্যের আলাস্কা
পর্যন্ত ১৮২টি দেশে একই দিন ও বারে স্থানীয় সৌর সময় অনুযায়ী ঈদুল ফিতরের
নামায অনুষ্ঠিত হয়েছে। উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার সুবাদে এটা আজ আর কারও
অজানা নয়। এর পরেও এ ব্যপারে প্রশ্ন করা অজ্ঞতা বৈকি?

তৃতীয়ত ঃ এ বিষয়টি বিস্তারিত বুঝার জন্য সূর্য, পৃথিবী ও চাঁদের নিজ নিজ
কক্ষ পথে আবর্তন, দ্রাঘিমাংশ, অক্ষাংশ, প্রতিপাদস্থান (অহঃরঢ়ড়ফবং) প্রত্যেক
চান্দ্রমাসের ১ম তারিখের নতুন চাঁদ সর্ব প্রথম দৃশ্যমান হওয়ার স্থান
ইত্যাদি বিষয়ে যথেষ্ট জ্ঞান থাকা জরুরী। যা আমরা ফাতওয়ার যথা স্থানে
সবিস্তারে আলোচনা করেছি।

কেউ কেউ প্রশ্ন উত্থাপন করেন রাষ্ট্রীয় আইনের বাহিরে রোযা, ঈদ, পালন করা কতটুকু সঠিক হবে?

জবাবে এতটুকু বলাই যথেষ্ট যে, রোযা রাখা না রাখার বিষয়ে আমাদের বাংলাদেশে
কোন রাষ্ট্রীয় আইন আছে বলে আমাদের জানা নেই। যেখানে রোযা না রাখলে বা
প্রকাশ্যে ¯^য়ং আল্লাহ তায়ালাকে অ¯^ীকার করলেও রাষ্ট্রীয়ভাবে শাস্তির কোন
নূন্যতম বিধান নেই। সেখানে রোযার দিন তারিখের বিশুদ্ধতার বিষয়ে রাষ্ট্রীয়
আইনের প্রসঙ্গ উত্থাপন অহেতুক বাক-বিতন্ডা ছাড়া আর কিছুই নয়। মুসলিম
সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ বিধায় সরকার মুসলিমদের বিভিন্ন ধর্মীয় কাজে সহযোগীতা
করছেন মাত্র। তদূপরি ¯^য়ং সরকার বা তার প্রতিনিধি যদি সঠিক বিষয় হতে
বিচ্যুত হয় তবে তা সংশোধনের দায়িত্ব অবশ্যই কাউকে না কাউকে পালন করতে হবে।
আমরা সে দায়িত্ব পালন করার নিয়ম-তান্ত্রিক চেষ্টা করে যাচ্ছি। আলোচনার
মাধ্যমে জাতীয় চাঁদদেখা কমিটিকে বিষয়টি শুরাহা করার আহŸান জানাচ্ছি।

কেউ কেউ বলে থাকেন পূর্ব যুগের আলেমগণ একই দিনে, একই চান্দ্রতারিখে
বিশ্বব্যাপী উক্ত আমলগুলো করেছেন এমন কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। সম্মানিত
ভাইদের এ দাবি ঠিক নয়। কারণ তখন আজকের মত রেডিও, টেলিভিশন, মোবাইল ও
ইন্টারনেট ছিল না। যোগাযোগের মাধ্যম ছিল শুধুমাত্র উট, ঘোড়া ইত্যাদি। তাদের
ফাতওয়া ঠিক রেখে উট, ঘোড়া ইত্যাদি কে বাহন করে নতুন চাঁদ উঠার সংবাদ
যতটুকু দুরত্বে পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে ততটুকু এলাকায় রোযা ঈদ ও অন্যান্য
পর্বসমূহ পালন করেছে মুসলিম উম্মাহ। কোন একজন ফকীহ বা আলেম এর বাহিরে কোন
আমল করেছেন তার প্রমাণ নেই। “শতাব্দির পর শতাব্দি ধরে আলেমগন বর্তমান নিয়মে
আমল করেছেন, আমরা পুরাতন ফাতওয়া বর্তমান ঙ.ও.ঈ এর সিদ্ধান্ত মোতাবেক আমল
করতে পারি না” এ যুক্তি যারা দেখাচ্ছেন, তারা মূলতঃ পূর্বেকার আলেমগণের উপর
অপবাদ দিচ্ছেন। কারণ একজন বিজ্ঞ আলেম বা মুফতীকে পাওয়া যায়নি, যারা সঠিক
সূত্রে চাঁদ উঠার সংবাদ পেয়ে রোযা রাখেন নি বা রোযা রাখার পর সঠিক সূত্রে
সংবাদ পাওয়ার পর রোযা ভেঙ্গে ঈদ করেন নি। পার্থক্য শুধু এতটুকু যে, তখন
সীমিত এলাকায় সংবাদ পাওয়া যেত। আর বর্তমানে সমগ্র দুনিয়ায় নতুন চাঁদ দেখার
সংবাদ এক মূহুর্তে পাওয়া সম্ভব। সংবাদ পৌাছানোর অসুবিধা বিবেচনা করে
শুধুমাত্র ইমাম শাফেয়ি রহমাতুল্লাহি আলাইহি ওজর হিসেবে ৩০দিনে ঘোড়া ৪৮০
মাইল পৌছতে পারে এ হিসাব করে এলাকা ভিত্তিক চাঁদ দেখে আমল করার কথা বলেছেন।
উল্লেখ্য এ বিষয়ে তার তিনটি মত রয়েছে। কিন্তু বর্তমানে বিজ্ঞানের
অগ্রযাত্রায় পূর্বের মত কোন ওযর না থাকায় শাফেয়ি মাযহাবের বর্তমান
অনুসারীগণও ঙ.ও.ঈ এর সিদ্ধান্ত মোতাবেক বাস্তবতার আলোকে ইমাম শাফেয়ী
রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর পূর্বের মত কে পরিহার করে একই চান্দ্রতারিখে সমগ্র
বিশ্বে রোযা, ঈদ, কোরবানীসহ চাঁদের তারিখ নির্ভর সকল ইবাদত পালনের
সিদ্ধান্তকে আমল করছেন। অথচ কতিপয় আলেম ও ফকীহ নিজেদেরকে হানাফী মাযহাবের
অনুসারী দাবি করেও শাফেয়ী মাযহাবের পূর্বেকার দিনের ওযর সম্বলিত মতটির
অনুসরণ করছেন! মোটকথা, বর্তমানে নতুন চাঁদ দেখার সংবাদ মুহুর্তে বিশ্বময়
পৌছে দেয়ার উন্নত ব্যবস্থার উপস্থিতিতে কুরআন, সুন্নাহ ও ফিকহের মূল
সিদ্ধান্তের বিপরীতে সামাজিক রেওয়াজ-রীতি আঁকড়ে থাকার কোন সূযোগ নেই।

সার্বিক পর্যালোচনায় কুরআন সুন্নাহ, মাযহাবের ইমাম, বিশ্ববিখ্যাত ফকিহ,
মুফতীগনের সম্মিলিত রায় এবং ও. আই. সি (ঙ.ও.ঈ)-র সিদ্ধান্ত ও বাস্তবতার
আলোকে ভিন্ন ভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন দিন তারিখে রোযা রাখা বা ঈদ পালন করার
কোন সুযোগ বর্তমানে নেই। দীর্ঘকাল ব্যাপী দেশে দেশে আলাদা রোযা ও ঈদ পালন
করা ভ‚ল ছিল না। সংবাদ যতটুকু পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে ততটুকুই আমল করা হয়েছে।
বর্তমানে সংবাদ পৌঁছানোর অসুবিধা না থাকায় কুরআন সুন্নাহর নির্দেশ
অনুযায়ী ইমামগণের ফাতওয়া বাস্তবায়ন করাই একজন মুকাল্লিদের দায়িত্ব। এ
বিষয়ে কোন কিছু বুঝে না আসলে বিজ্ঞ আলেমগণের পারস্পারিক আলোচনার মাধ্যমে
সুরাহা করাই বাঞ্চনীয়। ইয়াওমুল আরাফার হজ্জের ইবাদত টেলিভিশনে সরাসরি দেখেও
যারা বলেন বাংলাদেশে আজ ৮ই জিলহজ্ব, হেরেম শরীফে তারাবীহ জামাত সরাসরি
দেখেও যারা বলেন বাংলাদেশে রমজান মাস শুরু হয় নি, সারা বিশ্বের ঈদুল ফিতরের
ঈদের জামায়াতের দৃশ্য টেলিভিশনে দেখার পরেও যারা বলেন বাংলাদেশে শাওয়াল
মাস শুরু হয় নি, সমগ্র বিশ্বে শবে কদর, শবে বরাত, ঈদে মিলাদুন্নবী, আশুরা
উদযাপনের সংবাদ সরাসরি দেখেও যারা বলেন বাংলাদেশে ১ দিন বা ২ দিন পরে আলাদা
শবে কদর, আলাদা পর্ব অনুষ্ঠিত হবে, ফেরেশতা ও রুহ ভিন্ন একদিনে বাংলাদেশে
অবতরণ করবে- তাদের এ ধারণা যে অবাস্তব ও অগ্রহণযোগ্য এ কথা অপরিহার্য।
কিন্তু দূর্ভাগ্যের বিষয় বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ যখন কুরআন, সুন্নাহ, মহান
ইমামগণের সম্মিলিত রায় এবং ১৪শত বছরের বিখ্যাত ফকীহ মুজতাহিদগণের ফাতওয়াকে
বাস্তবায়ন করে সঠিক তারিখে প্রতিটি কাজ সম্পাদন করে যাচ্ছেন তখন বাংলাদেশের
জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটি ও কতিপয় ওলামায়ে কেরাম বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে
চাচ্ছেন না। বারবার অনুরোধ, আবেদন, নিবেদন করেও বিষয়টি নিয়ে শীর্ষস্থানীয়
আলেমদের বৈঠক করানোও সম্ভব না হওয়ায় আর্ন্তজাতিক চাঁদ দেখা কমিটি, একক
হিজরী ক্যালেন্ডার বাস্তবায়ন পরিষদ এবং চান্দ্রমাসের সঠিক তারিখ নির্ধারণ ও
বাস্তবায়ন জাতীয় কমিটিসহ এ বিষয়টি সমাজে বাস্তবায়নে প্রচেষ্টারত অন্যান্য
সংস্থা ও ব্যক্তিবর্গের সম্মিলিত সিদ্ধান্ত মোতাবেক এ বিষয়ে পূর্ব লিখিত
ফাতওয়াকে আরো দলীল আদিল্লার ভিত্তিতে ব্যাপকাকারে লেখা ও প্রকাশের উদ্যোগ
গ্রহণ করা হয়। এ প্রয়াসের মূল উদ্দেশ্য হলো দেশবাসীকে শরীয়তের বিধান
অনুযায়ী সঠিক চান্দ্রতারিখে ফরয, ওয়াজিব আমল করতে সহযোগিতা করা, হারাম আমল
থেকে দুরে রাখা এবং শবে বরাত, শবে কদর, শবে মেরাজ, দুই ঈদের রাত, দুই ঈদ,
ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আশুরা, তাকবিরে তাশরীক,
আইয়্যামে বিযের নফল রোযা পালনের বরকত, সওয়াব ও রহমত থেকে বঞ্চিত মুসলমানদের
বঞ্চনা থেকে রক্ষা করা। আমরা আশা করব বিজ্ঞ মুফতি, ফকিহ, আলেম,
বুদ্ধিজীবি, সাংবাদিকসহ মুসলিম ভাই-বোনেরা বাস্তবতার আলোকে এ অতিব
গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সুচিন্তিত দলীল ভিত্তিক মতামত ব্যক্ত করে এই জাতীয়
সমস্যাটির সমাধানে সব রকম সংকীর্ণতা পরিহার করে এগিয়ে আসবেন এবং সরকার
বিজ্ঞ আলেমদের মতবিনিময় সভার আয়োজন করে বিষয়টি সমাজে বাস্তবায়ন করার
ব্যবস্থা করবেন। আল্লাহ আমাদেরকে হক বিষয়ে জানার, বুঝার ও আমল করার তাওফিক
দিন।

এ ফাতওয়া রচনা, সম্পাদনা ও প্রকাশনায় যাঁরা ‘ইলমী, আর্থিক ও শারীরীক
সহযোগীতা করেছেন আমরা তাদের কাছে কৃতজ্ঞ। এ মহান কাজে সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থা
ও ব্যক্তিবর্গের সার্বিক সহযোগিতা স্মরণীয় হয়ে থাকবে। এ বিষয়ে দলীল
ভিত্তিক ও যৌক্তিক যে কোন মতামত আমাদের কাছে প্রেরণ করলে তা আন্তরিকতার
সাথে বিবেচনা করা হবে। আমীন

লেখক

ফাতওয়া
কই দিনে সারা পৃথিবীতে (সৌদি আরবের সঙ্গে) একই সঙ্গে ঈদ-সিয়াম পালন শিরোনামে ময়মনসিংহ সদর উপজেলার দাপুনিয়া গোষ্টা মার্কাস মসজিদে এ বিতর্ক অনুষ্ঠান -
প্রশ্ন ঃ

মুহতারাম ফকিহগণের নিকট জিজ্ঞাসা; সর্বপ্রথম নতুন চাঁদ দেখার ভিত্তিতে
বাংলাদেশে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের সাথে একই চান্দ্র তারিখ ও বারে স্থানীয়
সৌর সময় অনুযায়ী রোযা, ঈদ, কুরবানীসহ চাঁদের তারিখ নির্ভর সকল ইবাদত এবং
ইসলামী পর্বসমূহ পালন সঠিক? নাকি জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির ঘোষণা মোতাবেক
বাংলাদেশের ভৌগলিক সীমার মধ্য হতে চাঁদ দেখেই এ দেশে রোযা, ঈদ, কুরবাণী ও
ইসলামী পর্বসমূহ পালন করা সঠিক? দলীল ভিত্তিক জবাব প্রত্যাশা করছি।

জবাব ঃ

কুরআন, সুন্নাহ ও ফিকহের দৃষ্টিতে বিষয়টি উপস্থাপনের পূর্বে কয়েকটি বিষয় স্মরণ রাখতে হবে।

(১) রোযা কোন সাধারণ ইবাদত নয়। পবিত্র ইসলাম ধর্মের একটি রোকন যা ফরয
ইবাদত। একটি রোযা ইচ্ছাকৃত ভেঙ্গে ফেললে ৬০টি রোযা কাফ্ফারা হিসেবে আদায়
করতে হয়। তাই রোযা শুরু ও শেষ করার দিন তারিখ হের-ফের করার অধিকার ইসলাম
কোন আলেম, ফকিহ, সংস্থা বা সরকারকে দেয় নি।

(২) পবিত্র কুরআনের নির্দেশনা এবং জ্যোতির্বিজ্ঞানের হিসাব অনুযায়ী
হিলাল বা নতুন চাঁদ ভৌগলিক কারণে সব সময় ৩০ ডিগ্রী পূর্ব দ্রাঘিমা হতে ৪৫
ডিগ্রী দাঘিমার মধ্যবর্তী স্থান হতেই দেখা শুরু হবে। ইয়েমেন, সৌদি আরব,
কুয়েত, সিরিয়া, ইরাক যে কোন দেশে দেখা যেতে পারে যা কোন দেশের জন্য
নির্ধারিত নয়। কখনই বাংলাদেশসহ প্রাচ্যে নতুন চাঁদ সর্ব প্রথম দেখা যাবে
না। রোযা, ঈদ اسبق الروية সর্বপ্রথম নতুন চাঁদ দেখা এবং بطريق موجب
গ্রহণযোগ্য সুত্রে পাওয়া সংবাদের ভিত্তিতে পালিত হবে।

(৩) চান্দ্রমাস ২৯ বা ৩০ দিনেই হবে, কোন অবস্থায়ই ২৭, ২৮ বা ৩১, ৩২ দিনে হবে না।

(৪) চান্দ্রদিন বা চান্দ্রতারিখের শুরু ও শেষ, সূর্যাস্ত হতে সূর্যাস্ত
পর্যন্ত। বাংলা দিন তারিখের শুরু ও শেষ সূর্যোদয় হতে পরের দিনের সূর্যোদয়
পর্যন্ত। ইংরেজী বা সৌর দিন তারিখের শুরু ও শেষ হচ্ছে রাত ১২টা ১মিনিট হতে
পরের দিন রাত ১২টা পর্যন্ত। অত্র ফাতওয়ার সকল স্থানে দিন তারিখ বলতে শুধু
মাত্র চান্দ্রদিন, চাঁন্দ্রতারিখ বুঝানো হয়েছে।

(৫) যে বিষয়ে মাযহাবের ইমামগণের সুস্পষ্ট ফাতওয়া রয়েছে। উক্ত ফাতওয়া
বাস্তবায়ন করাই মুকাল্লিদ বা অনুসারী হিসাবে বর্তমান আলেমগণের দায়িত্ব। যে
মাসয়ালায় ইজতিহাদের কোন প্রয়োজন নেই, ইমামগণের ফাতওয়া আমল করা সম্ভব,
তাতে মুকাল্লিদ বা অনুসারীগণের কোন মতামত দেয়ার সুযোগ নেই।

(৬) রোযা, ঈদ, কুরবানীসহ চান্দ্র তারিখ নির্ভর সকল ইবাদত ও ইসলামী
পর্বসমূহ ফরয হয় নতুন চাঁদের আবর্তনে। কিন্তু বাস্তবায়ন করতে হয় সূর্যের
পরিভ্রমনের সাথে মিলিয়ে। তাই এসব ইবাদত ও পর্ব সমূহ একই চান্দ্র তারিখে,
একই বারে নিজ নিজ সৌর সময় অনুযায়ী পালিত হবে। যেমন – শুক্রবারের জুমার
নামাজ সমগ্র পৃথিবীতে নিজ নিজ সৌর সময় অনুযায়ী শুক্রবারেই পালিত হয়। কোথাও
শনিবার বা বৃহস্পতি বারে পালিত হয় না।

আমি আপনাদের ্প্রতি চ্যালেঞ্জ করছি।........ আপনারা যদ সত্যিকারার্থে সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হতে চান তাহলে আসুন আমরা একসাথে বসি,,,,,,,, এবং সেটা বসবো প্রেসক্লাবে। এবং সেখানে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে তা-ই বাংলাদেশের রোজা রাখার জন্য প্রযোজ্য হবে।.....

কোন এককঘরে বসে নয়... বরং পুরো মিডিয়ার সামনে বৈঠক হবে এবং তা টেলিভিশনে প্রচার করা হবে। যদি সত্যিকারার্থেিই ইসলামের প্রেমিক হয়ে থাকেন তাহলে আসুন একসাথে বসি (প্রসক্লাবে, লুকিয়ে নয়) এবং সঠিক মাসআলা বাস্তবায়ন করি।

সূত্রঃ
http://www.banglanews24.com/beta/fullnews/bn/330927.html
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সিকান্দার রাজার চেয়ে একজন পতিতাও ভালো।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৭

সিকান্দার রাজা কোকের বোতল সামনে থেকে সরিয়ে রাতারাতি হিরো বনে গেছেন! কিন্তু তাকে যারা হিরো বানিয়েছেন, তারা কেউ দেখছেন না তিনি কত বড় নেমকহারামি করেছেন। তারা নিজেদেরকে ধার্মিক বলে দাবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×