গতকাল রবিবার ১০ ই ফেব্রুয়ারি ২০১৩ ।
সময় আনুমানিক রাত সাড়ে ৯ টা ।
আমি শাহবাগ - প্রজন্ম চত্বর এ । আমার মোবাইল এ আমাকে কেউ একজন কল দিচ্ছে। শ্লোগান এর শব্দে মোবাইল এর রিং এর শব্দ শুনতে পাচ্ছিলাম না । পাশে থাকা এক আপু বলল , এই তোর কল এসেছে । তাকিয়ে দেখলাম আমার মা এর নাম্বার । ফোন রিসিভ করলাম । মা বলছে, তুমি কোথায় ? আমি বললাম শাহবাগ এ ।উনি বললেন , এইভাবে ওইখানে পড়ে থাকলে হবে ? খাওয়া দাওয়া'র তো কোন ঠিক নেই, ঠিকমতো ঔষধও নিশ্চয় খাচ্ছ না । (বলে রাখা ভাল যে , হার্টের সমস্যার কারনে আমি নিয়মিত হার্টের ঔষধ সেবন করি) , তোমার কিছু একটা হয়ে গেলে কে দেখবে তোমাকে ? কেন এভাবে টেনশান এ রাখছো আমাকে ?
কথাগুলো চুপচাপ শোনার পরে হঠাৎ করেই সাহস করে বলে ফেললাম , মা আমি অনেক ভাল আছি । মা তুমি দেখো আমার কিচ্ছু হবেনা । এখানে আমার চেয়ে অনেক বেশি অসুস্থ ছেলেমেয়ে রা আন্দোলন করছে। আর আমার যদি কিছু হয়ে ও যায় তাহলে এখানে হাজার হাজার তোমার মত মায়ের সন্তানেরা আছেন যারা তার ভাই এর কিছু হলে নির্দ্বিধায় সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসবে।
আমার মা তার কান্না বিজড়িত কণ্ঠে প্রচণ্ড রাগ নিয়ে শুধু একটা কথাই আমাকে বললেন, ঠিক আছে থাক তুই শাহবাগ এ । বিজয়ী না হয়ে ঘরে ফিরবি না । যেভাবে রাতের আঁধারে আমাকে না বলে আন্দোলন করার জন্য চুপচাপ বাসা থেকে বের হয়ে চলে গিয়েছিলি , ঠিক সেইভাবেই বিজয় অর্জন করে একজন সাহসী যোদ্ধার মত আমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলবি , দেখো মা দেখো আজ আমাদের বিজয় হয়েছে। আমরাই জয়ী হয়েছি ।
কথাটা শুনে গর্বে বুকটা ভরে উঠলো । আসলে বলে বুঝাতে পারবনা কি রকম এক আনন্দের অনুভুতি। বাংলার প্রত্যেক ঘরে ঘরে যেন এইরকম একজন মা থাকে ।
এই শাহবাগ এ আন্দোলন করতে এসে অনেকের সাথেই পরিচয় হল । একজনের খাবার আরেকজন শেয়ার করে খাচ্ছি , একজনের পানির বোতলে ৫ জন মুখ লাগিয়ে পান করছি। কারো কোন অহংকার নেই , নেই কোন অহমিকা । ধনী-গরীব একত্রে কি সুন্দর করেই না আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি । সত্যিই আমরা বাঙ্গালীরা অনেক সুন্দর মনের মানুষ।
সৃষ্টিকর্তা কে ধন্যবাদ যে আমি একজন বাঙ্গালীর সন্তান । আমি আজ গর্ব করে বলতে পারি আমি রিসাদ একজন বাঙ্গালী । আমরা শুধু ফেসবুক এ লাইক মারিনা, আমরা শুধু ব্লগিং ই করিনা । আমরা রাজপথে ও নামতে পারি এবং আন্দোলন ও করতে পারি ।
আমি গর্বিত আমি বাঙ্গালী ।
জয় বাংলা । জয় বাংলা।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




