
চৈত্রের আগুণঝরা রোদ মাথায় নিয়ে খালি গায়ে ছাদে পাটি পেতে বসে আছি আমি আর ভাইয়া।আমার নাম টগর।ধানমণ্ডি টিউটোরিয়াল স্কুলে স্ট্যান্ডার্ড সিক্সে পড়ি।আর ভাইয়ার নাম নিভৃত।বুয়েট থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ
করে এখন ঘরে বসে আছে।ভাইয়ার কাজ হচ্ছে উদ্ভট সব এক্সপেরিমেন্ট করা।এখন ভাইয়ার মহাপুরুষ হওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।এ জন্যই রোদের মধ্যে বসে থাকা।আমি সবসময় ভাইয়াকে অনুকরণ করি ভাইয়ার প্রথম
শিষ্য বলা যেতে পারে তবে সব করতে পারি না ভাইয়া বলে বড় হ তারপর পারবি।আজ স্কুল থেকে এসেই শুনেছি ভাইয়া ছাদে তাই ইউনিফর্ম খুলে দৌড়ে ছাদে চলে এসেছি।ভাইয়া কথা বলতে নিষেধ করেছে তারপরও
টুকটাক কথা হচ্ছে।
-আমরা এভাবে খালি গায়ে বসে আছি কেন ভাইয়া?
-শুদ্ধ হওয়ার জন্য।সূর্যের আলো গায়ে যত ভালোভাবে লাগবে আমরা তত শুদ্ধ মানবে পরিণত হব।সবচেয়ে ভালো হয় জামাকাপড় সব খুলে নাংগা সন্ন্যাসী হয়ে গেলে।গায়ে একটা সুতাও থাকবে না।তুই তো ছোট
আছিস তোর থ্রি কোয়াটারটা খুলে ন্যাংটা হয়ে যা ভালমত শুদ্ধ হতে পারবি।
-যাও কি যে বলো ভাইয়া।লজ্জায় কান লাল হয়ে গেল।খুব বলতে ইচ্ছা করল আগে তোমার ট্রাউজারটা খুলো তারপর আমারটা।বললে অবশ্য ভাইয়া মাইন্ড করতো না কারণ মহাপুরুষদের সবকথা ধৈর্য ধরে শুনতে হয়
এবং সহ্য করতে হয়।উত্তরে তারা শুধু একটু মুচকি হাসি দিবে।
-আর কতক্ষণ বসে থাকব ভাইয়া?
-বলা যায় না,নিয়ম হচ্ছে পুরো মধ্য দুপুর,দেখি আর আধঘণ্টা।আস্তে আস্তে সময় বাড়াতে হবে বুঝলি।মহাপুরুষ হওয়ার সাধনা কঠিন সাধনা।
ভাইয়ার আর আধঘণ্টা বসা হল না নছিমন এসে বলল বাইজান আফনের কল আইছে।নছিমন আমাদের নতুন কাজের মেয়ে।নানু গ্রামের বাড়ি থেকে পাঠিয়েছে।
-চল টগ আজ এখনেই ইস্তফা।ভাইয়া ব্যস্ত মুহূর্তে আমার নাম সংক্ষিপ্ত করে ফেলে শুনতে ভালোই লাগে।
-------------
খাওয়ার টেবিলে আমি আর ভাইয়া পাশাপাশি বসে আছি।হিমশীতল পানিতে গোছল করায় নিজেকে খুব হালকা লাগছে কেমন অদ্ভুত এক সুখানুভূতি হচ্ছে নিজের মধ্যে।ভাইয়া আগেই বরফ আনিয়ে রেখেছিল ফ্রিজে।
বাবা ভাইয়ার মুখামুখি বসে আছে।বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস নেয়া শেষ করে ঘরে ফিরেই মার কাছ থেকে ভাইয়ার কাণ্ডকীর্তির কথা সব শুনেছেন।বাবার ভাবভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছে তিনি আজ ভাইয়াকে কড়া বকাঝকা করবেন।
তিনি নিজের মধ্যে রাগের ভাব ফুটিয়ে তুলতে চাইছেন কিন্তু পারছেন না।ভাইয়া নির্বিকার ভাবে খেয়ে যাচ্ছে আর এটা ওটা বাবার পাতে তুলে দিচ্ছে।হেসে হেসে ভার্সিটির কথাও জিগ্যেস করছে।বাবার অগ্নিমূর্তি
নিমেষেই ছাই হয়ে গেল কারণ বাবা এই টপিক খুব পছন্দ করেন কিন্তু বাসার কেউ বাবার সাথে এই নিয়ে কথা বলে না।
-বুঝলি নিভরু আজ ক্লাসে দেখলাম একটা মেয়ে বেঘোরে ঘুমাচ্ছে।কাছে গিয়ে বেঞ্চে ডাস্টার দিয়ে বাড়ি মারতেই মেয়েটি তড়াক করে লাফিয়ে উঠে বলল,স্লামালাইকুম স্যার।হা হা হা বাবা ঘর কাপিয়ে হাঁসতে লাগলেন।
হাসতে হাসতে তরকারি নিতে গিয়ে ঝোল খানিকটা সাদা পাঞ্জাবিতে পড়ে গেল এরপরও বাবার হাসি থামল না।খাবার টেবিলের প্রথম দিকের থমথমে পরিবেশ অনেক সহজ হয়ে গেল।বাবা একের পর এক মজার কথা
বলছেন আর হাসছেন।ভাইয়ার এই ম্যানেজ করার ক্ষমতা দেখে অভিভূত হয়ে গেলাম।মহাপুরুষরা বুঝি এমনি হয়।
----------
আজ রোববার।কি একটা দিবস উপলক্ষে স্কুল বন্ধ।বাসায় বসে হোমওয়ার্ক করছিলাম।এমন সময় কলিংবেল বাজলো।বাসায় কেউ আসলে বেশিরভাগ সময় দরজা আমিই খুলে দিই।
-এটা নিভৃতের বাসা না?
দরজা খুলে হকচকিয়ে গেলাম।দরজার ওপাশে গোলগাল মায়াবী চেহারার এক মেয়ে।
-জী ভাইয়া একটু বাজারে গেছে।আপনি ভেতরে আসুন।
-না থাক।তোমার নাম কি রগট।
-না,আমি টগর।
-ও আচ্ছা বুঝতে পেরেছি।আমি যাই আর আমি যে এসেছি তোমার ভাইয়াকে বোলো না।
-জী আচ্ছা।
দরজা লাগিয়ে দিলাম।মা এসে জিগ্যেস করল কিরে কার সাথে কথা বলেছিস।বললাম ভাইয়ার এক বন্ধু এসে খোঁজ করল।মাকে আসল কথা বল্ললাম না।বললে মা ভাইয়াকে এইকথা সেইকথা জিগ্যেস করে অতিষ্ঠ
করে রাখত।মা আবার ভাইয়ার জন্য পাত্রী খুঁজছেন।সেদিন মার এক দুঃসম্পর্কের খালার মেয়ের ননদের দেখিয়ে বললেন,দেখতো টগর মেয়েটা সুন্দর না? ছবিতে দেখলাম ফর্সামতো একটা মেয়ে বড় বড় চোখ করে
তাকিয়ে আছে।আমি বললাম সব ঠিক আছে কিন্তু একটু ট্যাঁরা ট্যাঁরা লাগে না? মা বললেন ট্যাঁরাই তো ভালো এরা বউ হিসেবে খুব লক্ষ্মী হয়।তুই এইসবের কি বুঝবি? যা রান্নাঘর থেকে মেয়েছেলেদের মত খালি রান্নাঘরে ঘুরঘুর করে।মেয়েদের ব্যাপারে আমি একটু খুঁতখুঁতে স্বভাবের।তবে আজ যে মেয়েটি এসেছে সে দেখতে খুব ভালো।আমার কেন জানি মনে হচ্ছে মেয়েটি ভাইয়াকে পছন্দ করে।
আচ্ছা, ভাইয়া কি মেয়েটিকে পছন্দ করে??
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৩:৩৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



