somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কালো টাকা সাদা এবং অর্থনীতির সুফল কুফল।। রেজা ঘটক

১০ ই জুন, ২০১৩ সকাল ১১:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে বিগত ৪২ বছরে ১৩ হাজার ৫১৬ কোটি টাকার কালো টাকা সাদা করা হয়েছে। আর বাংলাদেশ ন্যাশনাল বোর্ড অব রেভিনিউ (এনবিআর) -এর হিসাব অনুযায়ী সেই টাকার বিনিময়ে সরকারি কোষাগারে ট্যাক্স জমা হয়েছে মাত্র ১৪০৭ কোটি টাকা। ১৯৭১ সাল থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত দেশে কালো টাকা সাদা করা হয়েছে ২ কোটি ২৫ লাখ টাকা। আর এথেকে কর পাওয়া গেছে মাত্র ১৯ লাখ টাকা। ১৯৭৬ সাল থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত দেশে কালো টাকা সাদা করা হয়েছে ৫০ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। আর এথেকে কর পাওয়া গেছে মাত্র ৮১ লাখ টাকা। ১৯৮১ সাল থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত দেশে কালো টাকা সাদা করা হয়েছে ৪৫ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। আর এথেকে কর পাওয়া গেছে মাত্র ৪ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। ১৯৯১ সাল থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত দেশে কালো টাকা সাদা করা হয়েছে ১৫০ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। আর এথেকে কর পাওয়া গেছে মাত্র ১৫ কোটি ৮ লাখ টাকা। ১৯৯৭ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত দেশে কালো টাকা সাদা করা হয়েছে ৯৫০ কোটি ৪১ লাখ টাকা। আর এথেকে কর পাওয়া গেছে মাত্র ১৪১ কোটি ২৪ লাখ টাকা। ২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত দেশে কালো টাকা সাদা করা হয়েছে ৮২৭ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। আর এথেকে কর পাওয়া গেছে মাত্র ১০২ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। ২০০৭ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত দেশে কালো টাকা সাদা করা হয়েছে ৯,৬৮২ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। আর এথেকে কর পাওয়া গেছে মাত্র ৯১১ কোটি ৩২ লাখ টাকা। ২০০৯ সাল থেকে ২০১৩ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত দেশে কালো টাকা সাদা করা হয়েছে ১,৮০৫ কোটি ১ লাখ টাকা। আর এথেকে কর পাওয়া গেছে মাত্র ২৩০ কোটি ৪১ লাখ টাকা।
উপরের চিত্র থেকে এনবিআর-এর হিসাবকে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, ১৯৭৬ সাল থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত দেশে আসলে সেনা শাসন ছিল। আর ২০০৭ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত দেশে সেনা সমর্থিত সরকার ক্ষমতায় ছিল। এই ১৬ বছরে কালো টাকা সাদা করা হয়েছে ৯,৭৭৯ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। আর তা থেকে সরকারের কোষাগারে কর জমা হয়েছে মাত্র ৯১৬ কোটি ৩২ লাখ টাকা। এর বিপরীতে ২৬ বছর দেশ শাসন করেছে গণতান্ত্রিক সরকার। তারা কালো টাকা সাদা করেছে ৩,৬৩৬ কোটি ২ লাখ টাকা। আর তা থেকে সরকারের কোষাগারে কর জমা হয়েছে মাত্র ৪৮৯ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। অর্থ্যাৎ ১৬ বছরের সেনা শাসন বা সেনা সমর্থিত শাসনের সময় দেশে বেশি কালো টাকা সাদা হয়েছে। যা অন্তঃত ২৬ বছরের গণতান্ত্রিক সরকারের তুলনায় প্রায় তিন গুন বেশি। আর কর আদায়ের ক্ষেত্রে তা প্রায় দ্বিগুন বেশি।
এনবিআর বলছে, কালো টাকা হল সেই টাকা যা বৈধভাবে প্রদর্শণ করা হয় না। মানে অপ্রদর্শিত টাকা হল কালো টাকা। আর একটি আরামদায়ক হারে কর প্রদান করে তাকে বৈধ করলে তা সাদা টাকায় পরিণত হবে। তাহলে কালো টাকার সংজ্ঞায় খোদ এনবিআর একটি তামাশা করছে। কালো টাকা বা ব্ল্যাকমানি হলো অবৈধ পথে কামানো টাকা। দেশের প্রচলিত আইনে অবৈধ পথে টাকা কামালে আইনের চোখে তা বেআইনি। বেআইনি ভাবে টাকা কামাই করে কর দিলেই তা জায়েজ হওয়ার অর্থই হল, অবৈধ পথে টাকা কামানোর জন্য কালোবাজারীকে উৎসাহিত করা। কর দিয়ে টাকা জায়েজ করায় কালো টাকার মালিকদের তাই উৎসা তেমন নেই। বরং করের টাকাই তারা লস মনে করেন। যদিও এনবিআর-এর ধারণা, দেশে মোট জিডিপি'র অন্তঃত শতকরা ৮২ ভাগ সমান কালো টাকা রয়েছে। এটা ধারণা মাত্র। সত্যিকার অর্থে দেশে কালো টাকার পরিমাণ দেশের জিডিপি'র চেয়ে কয়েকগুন বড়। মানে দেশে কালো টাকার চেয়ে সাদা টাকার পরিমাণ নিশ্চিত ভাবেই কম। ৮২% বলা মানে হতে পারে ৮২% বেশি বা ১৮২% বেশি। কিন্তু কম হবে না এটা নিশ্চিত করেই বলা যায়।
এই কালো টাকার মালিক কারা?
কালো টাকার মালিক মন্ত্রী, এমপি, সচিব, আমলা, ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক দলগুলোর নেতানেত্রীরা। তারা কি সবাই আইন মানেন? জবাব হল- না, আইন তাদের জন্য মানার বিষয় নয়। আইন তারা বানায় সাধারণ জনগণের মানার জন্যে। আইন মানলে তো তারা কালো টাকার মালিক হতে পারেন না। কালো টাকার প্রধান উৎস কালোবাজারী, চাঁদাবাজি, খুন. গুম, মাদক ব্যবসা, মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ, বাজার সিন্ডিকেট, সীমান্ত পথে চোরাচালান, খেয়াঘাট, ফেরিঘাট, লঞ্চঘাট, এয়ারপোর্ট, রেলপথ, নৌপথের ঠিকাদারী, ঘাট ব্যবসা, টেন্ডারবাজি, ক্ষমতার অপব্যবহার, জমি দখল, সরকারি খাস জমি দখল, চর দখল, ব্যবসা দখল, মার্কেট দখল, নির্বাচনী নমিনেশান পাবার লেনদেন, দলীয় পদ দখলের লেনদেন, বিদেশে অর্থ পাচার, নারী ও শিশু পাচার, অবৈধ ব্যবসা, দুর্নীতি, অবৈধ ও বেআইনিভাবে অর্জিত এমন সকল আয়ই হল এক কথায় কালো টাকা। আইনের চোখে যার প্রত্যেকটি অপরাধ। একজন অপরাধী রাষ্ট্রের কাছে কর প্রদান করে কিভাবে তার অপরাধ থেকে মুক্তি পায়? এই দ্বৈত আইন যে দেশে প্রচলিত, সেখানে অন্তঃত আইনের শাসন কোনোদিন বাস্তবায়িত হবে না। জোর যার মুল্লুক তার। এটা যেনো মগের মুল্লুক।
কালোবাজারীর ধর্ম কি?
কালোবাজারীর কোনো দেশাত্ববোধ নেই। যে কোনো পথেই টাকা কামাই তার একমাত্র ধর্ম। তার কোনো রাজনৈতিক দাল নাই। নামে সে রাজনৈতিক দলের প্রশ্রয়ে এসব করে। তার কোনো সামাজিক দায়দয়িত্ব নেই। সে সামাজিকতার নামে যা করে সেখানেও চাঁদাবাজি একটা বিশাল ফ্যাক্টর। এদের তারা প্রশ্রয় ও লালন পালন করে? আমাদের মন্ত্রী, এমপি, সচিব, আমলা, পুলিশ, রাজনৈতিক নেতানেত্রীরা, সবাই। কেনো এদের লালন পালন করে? সেখানেও সেই লেনদেনের মামলা। সবই অবৈধ ব্যাপার স্যাপার। তারা কেনো তা সমর্থণ করেন? কারণ, অবৈধ পথে শর্টকাট টাকা কামনো যায়। কেবল কোথাও কোথাও একটু পার্সেন্টেজের ব্যাপার স্যাপার। সেই পার্সেন্টেজের সর্বশেষ বলি কো্থায়? স্বপ্নের পদ্মা সেতুতে।
সো, কালো টাকা সাদা হবে। দেশে কালোবাজারীর দৌরাত্মে যেহেতু সব কিছুই চলছে। সো আইন তো তাদের হাতে মোয়া। যখন খুশি সেই মোয়া যেভাবে পারে চাটে পোটে আর খায়। আর আমরা আমজনতা সেসব দেখে করি শুধু হায় হায়। আহারে কালো টাকা ....তুই যদি আমার হইতি রে, তোরে নিয়া উড়াল দিতাম, রাজস্ব অফিসে। সেখান থাইকা সাদা কইরা, শেয়ার বাজার ধ্বংস কইরা, খেয়াঘাটে গিয়া মুই গান ধরিতাম, ওরে কালো টাকা....তুই যদি আমার হইতি রে...
৮টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কোরআন কী পোড়ানো যায়!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৮

আমি বেশ কয়েকজন আরবীভাষী সহপাঠি পেয়েছি । তাদের মধ্যে দু'এক জন আবার নাস্তিক। একজনের সাথে কোরআন নিয়ে কথা হয়েছিল। সে আমাকে জানালো, কোরআনে অনেক ভুল আছে। তাকে বললাম, দেখাও কোথায় কোথায় ভুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেঞ্চুরী’তম

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


লাকী দার ৫০তম জন্মদিনের লাল গোপালের শুভেচ্ছা

দক্ষিণা জানালাটা খুলে গেছে আজ
৫০তম বছর উকি ঝুকি, যাকে বলে
হাফ সেঞ্চুরি-হাফ সেঞ্চুরি;
রোজ বট ছায়া তলে বসে থাকতাম
আর ভিন্ন বাতাসের গন্ধ
নাকের এক স্বাদে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরানের প্রেসিডেন্ট কি ইসরায়েলি হামলার শিকার? নাকি এর পিছে অতৃপ্ত আত্মা?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯


ইরানের প্রেসিডেন্ট হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত!?

বাঙালি মুমিনরা যেমন সারাদিন ইহুদিদের গালি দেয়, তাও আবার ইহুদির ফেসবুকে এসেই! ইসরায়েল আর।আমেরিকাকে হুমকি দেয়া ইরানের প্রেসিডেন্টও তেমন ৪৫+ বছরের পুরাতন আমেরিকান হেলিকপ্টারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভণ্ড মুসলমান

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:২৬

ওরে মুসলিম ধর্ম তোমার টুপি পাঞ্জাবী মাথার মুকুট,
মনের ভেতর শয়তানি এক নিজের স্বার্থে চলে খুটখাট।
সবই যখন খোদার হুকুম শয়তানি করে কে?
খোদার উপর চাপিয়ে দিতেই খোদা কি-বলছে?

মানুষ ঠকিয়ে খোদার হুকুম শয়তানি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসবে তুমি কবে ?

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪২



আজি আমার আঙিনায়
তোমার দেখা নাই,
কোথায় তোমায় পাই?
বিশ্ব বিবেকের কাছে
প্রশ্ন রেখে যাই।
তুমি থাকো যে দূরে
আমার স্পর্শের বাহিরে,
আমি থাকিগো অপেক্ষায়।
আসবে যে তুমি কবে ?
কবে হবেগো ঠাঁই আমার ?
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×