somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শুভ জন্মদিন কবি নির্মলেন্দু গুন।। রেজা ঘটক

২১ শে জুন, ২০১৩ রাত ২:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১৯৪৫ সালের ২১ জুন (আষাঢ় ৭, ১৩৫২ বঙ্গাব্দ) কবি নির্মলেন্দু গুণ নেত্রকোণা জেলার বারহাট্টা থানার কাশবনে জন্মগ্রহন করেন। বাংলাদেশ ও বাংলা ভাষার গুরুত্বপূর্ণ কবিদের মধ্যে তিনি অন্যতম। বর্তমানে জীবিত কবিদের মধ্যে তিনি প্রবল জনপ্রিয়দেরও একজন। মাত্র ৪ বছর বয়সে কবি মা বীণাপনিকে হারান। মা মারা যাবার পর তাঁর বাবা আবার বিয়ে করেন৷ কবি'র পড়াশুনা শুরু হয় বারহাট্টা করোনেশন কৃষ্ণপ্রসাদ ইন্সটিটিউটে ভর্তির মাধ্যমে। ১৯৬২ সালে কবি দুই বিষয়ে লেটারসহ মেট্রিক পরীক্ষায় প্রথম বিভাগ পান। কবি'র স্কুল থেকে তখন মাত্র ৩ জন প্রথম বিভাগ পেয়েছিল। তখন তাঁর বাবা কবি'র মাথায় হাত রেখে বলেছিলেন- “কৃষ্ণ কৃপাহি কেবলম''।
মেট্রিক পরীক্ষার আগেই নেত্রকোণা থেকে প্রকাশিত ‘উত্তর আকাশ’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয় নির্মলেন্দু প্রকাশ গুণের প্রথম কবিতা ‘নতুন কান্ডারী’৷ মেট্রিকের পর আই.এস.সি. পড়তে কবি চলে আসেন ময়মনসিংহের আনন্দমোহন কলেজে৷ মেট্রিক পরীক্ষায় ভালো রেজাল্টের সুবাদে পাওয়া রেসিডেন্সিয়াল স্কলারশিপসহ পড়তে থাকেন সেখানে। তখন থেকেই ময়মনসিংহ-যাওয়া আসার মধ্যে ‘উত্তর আকাশ’ পত্রিকা ও আড্ডায় অনেক কবি বন্ধু জুটে যায়। নেত্রকোণার মনোরম সাহিত্যিক পরিমন্ডলে তাঁর সময় কাটতে থাকে। ১৯৬৪ সালের জুন মাসে অনুষ্ঠিত আই.এস.সি. পরীক্ষায় ঢাকা বোর্ডের ১১৯ জন প্রথম বিভাগ অর্জনকারীর মাঝে নির্মলেন্দু গুনই একমাত্র নেত্রকোণা কলেজের ছাত্র৷ বাবা চাইতেন পুত্রধন ডাক্তারি পড়ুক। কিন্তু কবি চান্স পান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসী বিভাগে৷ ভর্তির প্রস্তুতি নেন নির্মলেন্দু গুণ ৷ তখন ঢাকায় হঠাৎ শুরু হয় হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গা। সেই দাঙ্গার কারণে কবি ফিরে যান গ্রামে৷ ঢাকার অবস্থার উন্নতি ঘটলে ফিরে এসে দেখেন, তাঁর নাম ভর্তি লিষ্ট থেকে লাল কালি দিয়ে কেটে দেওয়া হয়েছে৷ আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া হলো না৷ কবি ফিরে গেলেন গ্রামে৷ আই.এস.সি.-তে ভালো রেজাল্ট করায় তিনি ফার্স্ট গ্রেড স্কলারশিপ পেয়েছিলেন৷ মাসে ৪৫ টাকা, আর বছর শেষে আরও ২৫০ টাকা৷ তখনকার দিনে সেটা অনেক টাকা৷ পরে ১৯৬৯ সালে প্রাইভেটে পরীক্ষা দিয়ে বি.এ. পাশ করেন কবি নির্মলেন্দু গুন। যদিও কবি নাকি আজ পর্যন্ত সেই বি.এ. পাশের সার্টিফিকেট তোলেননি! মাঝখানে অবশ্য ১৯৬৫ সালে আবার বুয়েটে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। কিন্তু কবি কি আর ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ারের দিকে সহজে যায়!! কবি রহস্যময় এক কারণে পড়েন নি সেই বিলম্বিত চাণ্স পাওয়া বুয়েটের ইজ্ঞিনিয়ারিং৷
স্বাধীনতার পূর্বে কবি এক সময় সমাজতান্ত্রিক রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। পাশপাশি জড়িত ছিলেন সাংবাদিকতায়ও। আর সেই সঙ্গে চালাতেন তুমুল সাহিত্য চর্চা। কবি নির্মলেন্দু গুন প্রধানত একজন আধুনিক কবি। শ্রেণীসংগ্রাম, স্বৈরাচার-বিরোধিতা, প্রেম ও নারী তাঁর কবিতার মূল-বিষয় হিসেবে অসংখ্যবার এসেছে। কবিতার পাশাপাশি তিনি ভ্রমণ কাহিনীও লিখেছেন। নিজের লেখা কবিতা এবং গদ্য সম্পর্কে তাঁর নিজের বক্তব্য হলো- “অনেক সময় কবিতা লেখার চেয়ে আমি গদ্যরচনায় বেশি স্বচ্ছন্দ বোধ করি। বিশেষ করে আমার আত্মজৈবনিক রচনা বা ভ্রমণকথা লেখার সময় আমি গভীরভাবে বিশ্বাস করি যে, আমি যে গদ্যটি রচনা করতে চলেছি, তা আমার কাব্য-রচনার চেয়ে কোনো অর্থেই ঊনকর্ম নয়। কাব্যকে যদি আমি আমার কন্যা বলে ভাবি, তবে গদ্যকে পুত্রবৎ। ওরা দুজন তো আমারই সন্তান। কাব্যলক্ষ্মী কন্যা যদি, গদ্যপ্রবর পুত্রবৎ।”
কবি নির্মলেন্দু গুনের বহুল আবৃত্ত কবিতাসমূহের মধ্যে - হুলিয়া, অসমাপ্ত কবিতা, মানুষ (১৯৭০ প্রেমাংশুর রক্ত চাই), আফ্রিকার প্রেমের কবিতা (১৯৮৬ নিরঞ্জনের পৃথিবী) অন্যতম। কবি নির্মলেন্দু গুন বাংলা সাহিত্যে অবদানের জন্য ১৯৮২ সালে 'বাংলা একাডেমী পদক' এবং ২০০১ সালে 'একুশে পদক' লাভ করেন।

কবি নির্মলেন্দু গুনের প্রকাশিত গ্রন্থ:
কাব্যগ্রন্থ:
'প্রেমাংশুর রক্ত চাই' (১৯৭০), 'না প্রেমিক না বিপ্লবী' (১৯৭২), 'কবিতা, অমিমাংসিত রমণী' (১৯৭৩), 'দীর্ঘ দিবস দীর্ঘ রজনী' (১৯৭৪), 'চৈত্রের ভালোবাসা' (১৯৭৫), 'ও বন্ধু আমার' (১৯৭৫), 'আনন্দ কুসুম' (১৯৭৬), 'বাংলার মাটি বাংলার জল' (১৯৭৮), 'তার আগে চাই সমাজতন্ত্র' (১৯৭৯), 'চাষাভুষার কাব্য' (১৯৮১), 'অচল পদাবলী' (১৯৮২), 'পৃথিবীজোড়া গান' (১৯৮২), 'দূর হ দুঃশাসন' (১৯৮৩), 'নির্বাচিতা' (১৯৮৩), 'শান্তির ডিক্রি' (১৯৮৪), 'ইসক্রা' (১৯৮৪), 'প্রথম দিনের সূর্য' (১৯৮৪), 'আবার একটা ফুঁ দিয়ে দাও' (১৯৮৪), 'নেই কেন সেই পাখি' (১৯৮৫), 'নিরঞ্জনের পৃথিবী' (১৯৮৬), 'চিরকালের বাঁশি' (১৯৮৬), 'দুঃখ করো না, বাঁচো' (১৯৮৭), '১৯৮৭' (১৯৮৮), 'যখন আমি বুকের পাঁজর খুলে দাঁড়াই' (১৯৮৯), 'ধাবমান হরিণের দ্যুতি' (১৯৯২), 'কাব্যসমগ্র, ১ম খণ্ড' (১৯৯২, সংকলন), 'কাব্যসমগ্র, ২য় খণ্ড' (১৯৯৩, সংকলন), 'অনন্ত বরফবীথি' (১৯৯৩), 'আনন্দউদ্যান' (১৯৯৫ ), 'পঞ্চাশ সহস্র বর্ষ' (১৯৯৫ ), 'প্রিয় নারী হারানো কবিতা' (১৯৯৬), 'শিয়রে বাংলাদেশ ইয়াহিয়াকাল' (১৯৯৮ ), 'আমি সময়কে জন্মাতে দেখেছি' (২০০০), 'বাৎস্যায়ন' (২০০০), 'মুঠোফোনের কাব্য'।

গল্পগ্রন্থ:
'আপন দলের মানুষ'

ছড়ার বই:
'১৯৮৭ সোনার কুঠার'

আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ:
'আমার ছেলেবেলা' 'আমার কণ্ঠস্বর' 'আত্মকথা ১৯৭১'(২০০৮)

অনুবাদ:
'১৯৮৩ রক্ত আর ফুলগুলি'

ভ্রমণ কাহিনী:
'পুনঃশ্চ জাপান যাত্রা'

আজ কবি নির্মলেন্দু গুনের ৬৯তম জন্মদিন। কবিকে অন্তরের শুভেচ্ছা...
৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×