somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সুন্দরবন ধ্বংসের পেছনে যাদের স্বার্থ আছে!!

২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১৯৯৮ সালে বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিম জেলাগুলোর গ্রোথ সেন্টার ও ফিডার রোড উন্নয়ন প্রজেক্টে আমি কাজ করেছিলাম। তখন গোটা খুলনা জেলা, যশোর জেলা, নড়াইল জেলা ও সাতক্ষীরা জেলায় যতো রাস্তা ও বাজারঘাট পাকা হয়েছিল, সবগুলো আমি ভিজিট করেছিলাম। তখন সুন্দরবনে দীর্ঘ এক মাস কাটানোর সুযোগ আমার হয়েছিলাম। এর আগে আমি সুন্দরবন দেখতে গিয়েছিলাম দু'বার ১৯৯০ ও ১৯৯২ সালে, বন্ধুদের সঙ্গে স্রেফ বেড়াতে গিয়ে। সুন্দরবনের গহীন অরণ্যের মধ্যে না ঢুকলে সুন্দরবন সম্পর্কে আসল ধারণা কারোরই হবার কথা নয়। খুবই সেনসিটিভ আমাদের এই প্রাকৃতিক ম্যানগ্রোভ সুন্দরবন। বাংলাদেশকে সুন্দরবন শুধু প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, বন্যা থেকে শুধু রক্ষাই করে না, বরং সে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট যে কোনো ঝড়কে রুখে দেয়।
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের প্রায় ১০ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকা এই সুন্দরবন কেন্দ্রীক। দেশের গোটা দক্ষিণ পশ্চিম অঞ্চলের প্রায় আড়াই কোটি মানুষের বসত বাড়ির ছাউনি'র যোগান দেয় সুন্দরবনের গোলাপাতা। প্রায় ৫০ লাখ মানুষ সুন্দরবন ও আশেপাশের খাল-নালা ও নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। আমাদের বন্যপ্রাণীর অধিকাংশের বসবাস সুন্দরবনে। আমাদের জাতীয় প্রতীক রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারেরর বসবাস এই সুন্দরবনে। আমাদের চিত্রা হরিণ, বলগা হরিণ, বানর, বনমোরগ, কাঠবিড়ালি, অসংখ্য প্রজাতির পাখি'র বসবাস সুন্দরবনে। 'বন্যেরা বনে সুন্দর শিশুরা মাতৃক্রোড়ে' কথাটির উৎপত্তি এবং যথার্থ অবলম্বন এই সুন্দরবনকে ঘিরেই। সুন্দরবন পৃথিবীর কোনো বিজ্ঞানের অবদানে সৃষ্ট কোনো জঙ্গল নয়। মানুষ সৃষ্ট কোনো অরণ্যও নয়। এটা স্রেফ প্রকৃতির নিঃস্বার্থ অবদান। পৃথিবীর বৃহৎতম ম্যানগ্রোভ আমাদের এই ভালোবাসার সুন্দরবন।
সেই সুন্দরবনকে আমরা সুন্দর মন নিয়েই রক্ষা করব। আমাদের সরকারগুলো ৪২ বছরে দেশের প্রায় সকল রাষ্ট্রীয় যন্ত্রগুলো ধ্বংস করেছে। প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার পরিবর্তে বিদ্যমান প্রতিষ্ঠান ধ্বংসের ইতিহাসই আমরা কেবল দেখতে পাই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে বলা হত এক সময় প্রাচ্যের অক্সফোর্ড। আর এখন সেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গোটা এশিয়ার মধ্যেই শিক্ষামানে অনেক নিচে। আমাদের আদমজি পাটকল আমাদের সরকারগুলো ধ্বংস করেছে। আমাদের নিউজপ্রিন্ট আমাদের সরকারগুলো ধ্বংস করেছে। বিনিময়ে এখন সকল খাবারে পর্যন্ত ভেজালের উৎপাত। যে জাতি খাবারে বিষাক্ত ফরমালিন মেশাতে পারে, সে জাতি'র ধ্বংস রোধ করবে কে? তাহলে সরকার ব্যবস্থার দরকার কোথায়? যে জাতি নিজেদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নষ্ট রাজনীতির বীজ বপন করে, সে জাতির ধ্বংস রোধ করবে কে? যে জাতি মহামান্য আদালতে দলীয় লোকজন দিয়ে বিচারক কোঠা পূরণ করে, সে জাতির অন্যায় কাজের বিচার করবে কে?
বিগত ৪২ বছরে বাংলাদেশ শুধু অদক্ষ ও স্বার্থন্বেসী কিছু দুবৃত্তদের কবলে পরে কেবল পেছনের দিকে হেঁটেছে। বাংলাদেশে যেদিন এনজিও'র আমদানি ঘটেছে, সেদিন থেকেই বিদেশি স্বার্থের কর্মকাণ্ডের অবাধ উন্নয়ন ঘটেছে। আমাদের ছোট্ট এই দেশে এনজিও'র নামে অসংখ্য ভুইফোর দুষ্ঠু লোকের নানামুখী কুকর্মের কেবল প্রসার ঘটেছে। আমি প্রায় দীর্ঘ ১০ বছর দেশের অনেক বড় বড় এনজিও'র নানান কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করেছি। আমার অভিজ্ঞতা মোটেও সুখকর নয়। গরিব মানুষের নানান বৈষম্যের চিত্র তুলে ধরে এরা হাজার হাজার কোটি টাকার পাহাড় গড়ে তুলেছে। ব্যক্তি স্বার্থ মেকাপ করলেও এনজিও কর্মকাণ্ড থেকে সামষ্টিক স্বার্থ কেবল দুর্ভোগের শিকাড় হয়েছে। সুশীল সমাজের নামে এখানে তথাকথিত একশ্রেণীর এনজিও মার্কা শ্রেণীচরিত্রের উদ্ভব ঘটেছে। এই শ্রেণী নানাভাবে দেশের ও বিদেশের নানান কুকর্মের সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে সুর মিলিয়েছে। নিজেদের পকেট ভরে গেলে এদের আর খুঁজে পাওয়া যায় না।
আমাদের সমাজে দুই শ্রেণী'র বুদ্ধিজীবী'র উৎপাতে দেশের বারোটা বেজেছে। একশ্রেণী'র বুদ্ধিজীবী হল আওয়ামী বুদ্ধিজীবী। এরা আওয়ামী লীগের সকল কুকর্মের বিরুদ্ধে প্রপাগাণ্ডা করে বেড়ায়। আর শ্রেণী'র বুদ্ধিজীবী হল জাতীয়তাবাদী বুদ্ধিজীবী। এদের চোখে বিএনপি'র কোনো কুকর্ম ধরা পড়ে না। এরা বিএনপি'র ছুড়ে ফেলা ঝোল উষ্ঠা খেয়ে সমাজে আজ প্রতিষ্ঠিত। এই দুই শ্রেণী বুদ্ধিজীবীদের নানামুখী প্রপাগাণ্ডায় বাংলাদেশ অনেক দুর্ভোগ সহ্য করছে। এই বুদ্ধিজীবী শ্রেণী দুইটি কিন্তু উভয় দল থেকে নানা ধরনের সুযোগ সুবিধা নিয়ে আখের গুছিয়ে নাকে তেল দিয়ে ঘুমোচ্ছে।
আমাদের যারা কৃষক, তাদের উৎপাদিত ফসলের ন্যায়্য দাম নেই। আমাদের যারা শ্রমিক, তাদের ন্যায্য মজুরি নেই। আমাদের যারা কামার-কুমার-ছুতার, তাদের কর্মকাণ্ডের কোনো ন্যায্য মূল্যায়ন নেই। আমাদের যারা মেহনতি মানুষ, তাদের রাষ্ট্রের কোথাও কলকে নেই। আর আমাদের রাজনীতিতে পরিবারতন্ত্রের খড়গের কবলে গোটা দেশের রাজনৈতিক নের্তৃত্ব আজ অদক্ষ, অদূরদর্শী, অযোগ্য আর দুর্বল নের্তৃত্ব সংকটে নিপতিত। রাজনীতিতে এখন পেশি শক্তিই আসল শক্তি। সেই সুযোগে আসল রাজনীতি থেকে মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। সেখানে বাসা বেধেছে অবৈধ পথে টাকা কামানো সাবেক আমলা, অবৈধ ব্যবসার শিল্পপতি, কালোবাজারী। তারা রাষ্ট্রের প্রতিটি সেক্টরে সিন্ডিকেট চালু করেছে। এই সিন্ডিকেট পরিচালনা করে কিছু দুবৃত্ত। এরা ইচ্ছে করলে চালের দাম বাড়ে। পিঁয়াজের দাম বাড়ে। গাড়ির ভাড়া বাড়ে। এরা ইচ্ছে করলে পরিবহণ ধর্মঘট হয়। এরা ইচ্ছে করলে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের গোপন মজুদ গড়ে তোলে। গোটা দেশ এই সিন্ডিকেটের দৌরাত্মে বিভিষিকার দুরারোগে নিপতিত।
আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো এই সিন্ডিকেট থেকে নির্বাচনকালীন চাঁদা পায়। তোরণ নির্মাণের চাঁদা পায়। গাড়ি কেনার চাঁদা পায়। পোস্টার ছাপানোর চাঁদা পায়। কোরবানীর গরু কেনার চাঁদা পায়। রাতের আঁধারে লাল পানি গেলার চাঁদা পায়। বিদেশে নিজেদের ছেলেমেয়েদের পড়ার খরচ চালানোর চাঁদা পায়। বিদেশ ভ্রমণের বিমানের টিকেটের জন্য চাঁদা পায়। এতো এতো সুলভে পাওয়া পাওনা থেকে বঞ্জিত হয়ে কে যাবে রাষ্ট্রের মেহনতি মানুষের সেবা করতে? তাই তারা কথায় কথায় জনগণের নাম নেয়। এটাতে জনগণের সাপোর্ট আছে। ওটাতে জনগণের রায় আছে। অমুকে জনগণের অংশগ্রহন আছে। কতো ফালতু আবদার রে ভাই। জনগণ ওসব বিষয়ে কিছুই জানেই না। অথচ জনগণের নাকি সায় আছে! আজব দেশ একখান। সবকিছু জনগণের নামে চালিয়ে দেওয়া যায় এখানে। এই কালচার বাংলাদেশকে তীলে তীলে কেবল ধ্বংস করছে।
এখন সুন্দরবন ধ্বংস করতে পারলে, আখেরে এই সিন্ডিকেট ব্যবসা আরো প্রসার লাভ করবে। তখন নানান দুর্যোগে বিদেশি ত্রাণ আসবে। তা লুটপাট করা যাবে। একেবারে পাকাপাকি বন্দোবস্ত। থিউরিতে কোনো ভুল নেই। সুন্দরবন ধ্বংস হোক, তবু আমাদে ওই ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ লাগবে। যে বিদ্যুৎ দিয়ে রামপাল থেকে মংলা পর্যন্ত এই সিন্ডিকেটের যারা জমি দখল করেছেন, সেখানে শিল্প কারখানা গড়ে উঠবে। সেই কারখানায় তো বিদ্যুৎ লাগবে? সেই বিদ্যুৎ তো আর সুন্দরবনের গোলপাতা কুড়ানিরা দিয়ে যাবে না? সেই বিদ্যৎ তো আর ওখানের জেলেরা দিয়ে যাবে না? সেই বিদ্যুৎ তো আর ওখানের কৃষকরা দিয়ে যাবে না? সেই বিদ্যুৎ তো আর রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারে দিয়ে যাবে না? সো, কাটো গাছ, বানাও কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ। কার বাপের কি?
বাংলাদেশ টা এই সিন্ডিকেটের হাতে বিগত ৪২ বছরে নানাভাবে ভাগ হয়েছে। সেই ভাগের ভাগ ছেড়ে দিয়ে কার বাপের সাধ্য সুন্দরবন রক্ষা করে? পারলে সুন্দরবনে পেট্রোল ঢেলে আগুন লাগিয়ে হলেও বিদ্যুৎ বানাবে এরা। কারণ, তাদের কারখানার জন্য যে বিদ্যুৎ লাগবে। সেই বদ্যুৎ তো আর সুন্দরবন দেবে না? সো, কার বাপের কি?
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:০৮
৮টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আইনের ফাঁকফোকর-০৩

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪২

যেকোনো চাকরির নিয়োগের পরীক্ষা চলছে। সেটা পাবলিক সার্ভিস কমিশন, বিভিন্ন সংস্থা, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক বা উপজেলা পর্যায়ের কোনো কার্যালয়ে হতে পারে। এই নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস হতে পারে। একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সিকান্দার রাজার চেয়ে একজন পতিতাও ভালো।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৭

সিকান্দার রাজা কোকের বোতল সামনে থেকে সরিয়ে রাতারাতি হিরো বনে গেছেন! কিন্তু তাকে যারা হিরো বানিয়েছেন, তারা কেউ দেখছেন না তিনি কত বড় নেমকহারামি করেছেন। তারা নিজেদেরকে ধার্মিক বলে দাবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×