রিভিউ:
যথেষ্ট আয় সামাজিক অবস্থান সত্ত্বেও যখন শুধুমাত্র নির্দিষ্ট (শাসকগোষ্ঠীর) বেঞ্চিতে বসার অপরাধে ধাক্কা খেয়ে উপুড় হয়ে পড়া লাগে তখনি আসলে স্বাধীনতার প্রয়োজন টা টের পাওয়া যায়।সেই স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে সব্যসাচী ওরফে ডাক্তার সাহেব বার্মা মুল্লুকে গড়ে তোলেন পথের দাবী নামক সংগঠন। যার উদ্দেশ্য কারখানার গরীব শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন এবং তাদের দ্বারা বিপ্লবের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন। এতে রক্তের গঙ্গা বয়ে গেলেও তার ভ্রুক্ষেপ করার সময় নেই।
কিন্তু বাধ সাধে পথের দাবীর সদস্য, উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র ভারতী।সে রক্তারক্তি চায় না,সে চায় শুধুই কারখানার শ্রমিক দের জীবন মান উন্নয়ন,কৃষকের শিক্ষা প্রভৃতি। যেগুলো ডাক্তারের চোখে শুধুই ভালো কাজ,তার দৃষ্টি তারও উপরে, সেটা হচ্ছে স্বাধীনতা, দ্রুত আমূল পরিবর্তন, রক্তস্নাত বিপ্লবের মাধ্যমে।ভারতীর যথেষ্ট বিশ্বাস রাজনীতিবিদদের উপর,তারা একটু হলেও সচেতন ভারতবর্ষের স্বাধীনতার ব্যাপারে।ভারতীর এই বিশ্বাস ডাক্তারের নিকট নিতান্তই হাস্যবস্তু!
মূলত ভারতী এবং ডাক্তারের কথোপকথনের মাধ্যমে লেখক শরৎচন্দ্র দুইটি ভিন্ন দর্শনকে ফুটিয়ে তুলেছেন সুনিপুণভাবে।যেখানে ডাক্তারের যুক্তিসমূহই যথেষ্ট শক্তিমান বলে বিবেচিত হয়েছে আমার কাছে।তৎকালীন ব্রিটিশ সরকারের শাসনব্যবস্থার সামাজিক অবস্থার প্রেক্ষিতে যেকোন সচেতন লেখকই যেকোন মূল্যে স্বাধীনতা অর্জনের যুক্তিটাই আঁকড়ে ধরবে সেটাই স্বাভাবিক। যার মূল্য দিতে হয়েছিল 'পথের দাবী' উপন্যাস কে।নিষিদ্ধ হয়েছিল ব্রিটিশ সরকার দ্বারা।
ওদিকে ক্রীশ্চান ভারতী ভালোবাসে কুসংস্কারাচ্ছন্ন অপূর্ব বাবুকে।যার কাছে সর্বসাকুল্যে ব্রাক্ষ্মন হয়ে টিকে থাকাটাই সার্থকতা।যার ভেতর দেশপ্রেম আছে,তেজ নেই।পরাধীনতার অভিশাপ কৃতঘ্নতা আছে।ভারতীর প্রতি ভালোবাসাও আছে কিন্তু সেটা বোঝার বোধশক্তি নেই।তারপরেও এই অপূর্ব বাবুকে ভালোবাসে ভারতী।মায়ের মৃত্যুর পর ভারতীর 'ভালো কাজের' সঙ্গী হয় অপূর্ব।
ওদিকে সব্যসাচী নেমে পড়েন স্বাধীন ভারতবর্ষ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে।
উপন্যাস : পথের দাবী
লেখক:শরৎচন্দ্র চট্রোপাধ্যায়
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ১১:৫৮