somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছোটবেলার বৈশাখ

১৫ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১২:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছোট থাকতে বৈশাখে কখনও ঘটা করে কোন কাপড় কিনেছি বলে ঠিক মনে পড়ে না। একে তো আব্বাকে খুব ভয় পেতাম, তার উপর নিজে একটু লাজুক প্রকৃতির ছিলাম। দিলে দিলো, না দিলে নাই।
কিন্তু বৈশাখের একটা স্মৃতি বেশ মনে পড়ে, ছোটবেলায় বৈশাখী মেলা হতো। পাবলিক লাইব্রেরী মাঠে।
যেতাম।
আকর্ষণ মূলত একটাই।
এখানে হরেক রকমের খেলনা পাওয়া যেতো। হাতে বানানো খেলনা। মাটির হাড়ি-পাতিল, ঘোড়া, গরু ।
এগুলোর একেকটার আকার আসল গরু -ছাগলের মতো না। অনেকটা শাহবাগীদের মতো। নামে গরু বা ছাগল , কিন্তু আসলে দেখতে মনে হয় না।
এই মেলাগুলোতে হয়তো আরো অনেক কিছু পাওয়া যেতো, কিন্তু আমার সেগুলো খেয়াল করার সময় কই।
আমি তো খালি যে পঞ্চাশ টাকা নিয়ে যেতাম সেটা দিয়ে কি কি খেলার জিনিস কেনা যায় সেই ধান্দায় থাকতাম।
ছোটদের এই খেলনাগুলোর মাঝে সবচেয়ে বেশি আকর্ষণীয় ছিলো , হাতওয়ালা একধরণের গাড়ি। এগুলোর কাঠের হাতল। সর্বশেষ মাথায় একটা চাকা, তার উপর পাখি অথবা অন্যকোন একটা কিছুর মুর্তি বসানো থাকতো। পাখিটার নীচে একটা পাখার মতো থাকতো। গাড়িটা চালালে পাখির নিচে পাখাটা ঘুরতো।
এই ঘুরানি কেনার জন্য সে কি চিন্তা!
এই মেলাগুলোতে আরেকটা জিনিস থাকতো, নানারকম মিষ্টি আর মিঠাই। গুড়ের জিলাপি অনেক প্রিয় । মফস্বল আমার শহরে এই জিনিস পাওয়া যায় না। মেলাগুলোতে পাওয়া যেতো।
জিলাপির এই দোকানটাও একটা কারণ ছিল।
তারপর, ক্লাস সিক্সে যখন উঠি তখন আব্বা আমাকে একটা আবাসিক স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিলেন। ক্লাস নাইনে আবার আমার শহরে ফিরে আসলাম। ততোদিনে অনেক কিছু পাল্টেছে। বৈশাখী মেলা হয় না।
এখন মঙ্গল শোভাযাত্রা হয়, মঙ্গলপ্রদীপ জ্বালানো হয়, পান্তা-ভাত আর ইলিশ দিয়ে দিন শুরু করা হয়। বলা হয় এগুলো আবহমান বাংলার সংস্কৃতি।
১৬০০০ টাকা হালি ইলিশ মাছ।
আবহমান বাংলার সংস্কৃতি!
বাংলা সন চালুর ইতিহাসটা একটু পুরাতন। চৌদ্দ শ শতকের দিকে সম্রাট আকবরের সময়।
৯৬৩ হিজরী সনকে ভিত্তি ধরে বাংলা সন শুরু হয়। এবং বাংলা নববর্ষের প্রথম বছর টা ছিলো ৯৬৩ বঙ্গাব্দ। মূলত হিজরী সনই বাংলা নববর্ষের ভিত্তি। যদিও চন্দ্রবছর ও সৌরবছরের মাঝে ১১ দিন তফাতের কারণে এই সমতা পরে রক্ষা করা সম্ভব হয়নি।
খাজনা আদায়ের জন্য তখন অনেক বেশি জরুরী ছিলো হয়তো। কিন্তু এখন আর খাজনা আদায় মুখ্য না, বাজনা বাজানোয় মুখ্য।
বাংলা সনের গুরুত্ব বেড়ে যায়, ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের সময়। মুসলিম তরুণদের মাঝে ব্রিটিশ বিরোধী মনোভব সৃষ্টি এবং নিজ্স্ব কৃষ্টি কালচারের সাথে পরিচিত করানো ছিলো।
স্বাধীনতার পরে, ১৯৮৮ সালে বাংলা নববর্ষের প্রথম তারিখ এপ্রিলের ১৪ তারিখ হিসাব করে ইংরেজি সনের সাথে চালুর ব্যবস্থা করা হয়। কাকুর আমলে।
বেশিদিন আগের কথা না, আমি নিজেও দেখেছি, পহেলা বৈশাখে অধিকাংশ দোকানদার ,ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান হালখাতা খুলতো। এদিন তারা খদ্দেরদের মিষ্টিমুখ করাতো, কোরআনখানির ব্যবস্থা করতো। যাতে করে সারাবছর বরকত থাকে।
পহেলা বৈশাখ যতো বেশি না বাঙ্গালী সংস্কৃতি তার চেয়ে বেশি বাংলার মুসলমানদের । এজন্য আগে নববর্ষের ব্যাপারে এতো কথা বলা হতো না।
কিন্তু এখন আমরা কোথায় আছি? আর আমরা কোথায় যাচ্ছি?
আমার তো আর বৈশাখের মেলায় যেতে ইচ্ছা করে না।
এটা আমার কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হচ্ছে।
পহেলা বৈশাখে মঙ্গলশোভাযাত্রা সহ্ আরো যে কৃষ্টিগুলো আমাদের সংস্কৃতি বলে চালানোর চেষ্টা করা হচ্ছে আদৌ সেটা আমাদের না।
আমাদের সংস্কৃতির মাঝে আনন্দ ছিলো, সুখ-দুঃখের মিশেল ছিলো।
ছিলো আন্তরিকতা। ছিলো সৌহার্দ্য।
যাহোক, প্যাচাল শুনতে কারোই ভালো লাগে না।
আসরের সময় বের হওয়ার জন্য রেডি হতেই ভাগিনা আমার পাঞ্জাবীর কোণা ধরে কান্না জুড়ে দিলো। কান্না থামাতে বাধ্য হয়েই , সমস্ত কাজ ফেলে ভাগিনাকে নিয়ে রিক্সাভ্রমণে বের হলাম। রাস্তার দুইপাশে সারি সারি মানুষ। সবাই নিজের পরিবারকে সাথে নিয়ে কোথাও ঘুরতে যাবে। অধিকাংশ সীবিচ যাবে। ব্যস্ত এই জীবনে নিজের পরিবারের সাথে কোথাও ঘুরতে যাওয়া আসলেই অনেক কঠিন হয়ে গিয়েছে।
বৈশাখ এদের কাছে পরিবারের সাথে শান্তি।
এটা দেখে মনে হলো, যারা আমাদের সংস্কৃতি কেড়ে নিতে চাচ্ছে, তারা কিন্তু এই একটা ক্ষেত্রে বিফল। মুসলিমদের পারিবারিক বন্ধনটা এখনও অটুট আছে।
এদের দেখেই, মন থেকে বের হয়ে আসলো ,শুভ নববর্ষ।
নোংরামি দূর হোক, আমাদের সংস্কৃতি রক্ষা পাক।
সো, রিডার্স ইউ হেভ বিন ওয়ার্নড।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১২:২২
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে আপনি হাদিস শুনতে চান?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৪৫


,
আপনি যদি সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে হাদিস শুনতে চান, ভালো; শুনতে থাকুন। আমি এসব প্রফেশানেলদের মুখ থেকে দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজনীতি, বাজেট,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×