somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

খালিদ বিন ওয়ালিদ রা.

৩০ শে জুন, ২০১৫ ভোর ৫:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


“উমার যখন আমাকে পদচ্যুত করেন, আমি মর্মাহত হই। কিন্তু আমি এখন বুঝতে পারছি, উমার যা করেছেন সঠিক করেছেন। কারণ উমার শুধুমাত্র ঈমানদারদের কল্যাণ চেয়েছেন। এবং উমারের জন্য আমার মনে কোন রকম কালিমা নেই।”
যখন তিনি মৃত্যুশয্যায় তখন লোকজন তাকে দেখতে আসতো। তিঁনি তাদেরকে তাঁর হাত দেখাতেন। তাঁর শরীরে এমন এক বিঘত জায়গাও ছিলো না, যেখানে তরবারীর আঘাত ছিলো না।তিঁনি তাঁর ডান হাত দেখাতেন, তাঁর বাম হাত দেখাতেন , তাঁর বুক খুলে দেখাতেন তার ডান পা দেখাতেন।
আর বলতেন,
“ আমার দিকে দেখো, আমি শতাধিকবার দন্দ্বযুদ্ধে জড়িয়েছি। অসংখ্য যুদ্ধে অংশ নিয়েছি। আর দেখো ,আমি আমার বিছানায় মৃত্যুবরণ করছি?”
খালিদ বিন ওয়ালিদ র.তার বিছানায় মৃত্যুবরণ করছেন?
একজন বললো
“ ওহে খালিদ! ,তুমি কী বুঝতে পারোনি? যেদিন রাসুল স. তোমাকে আল্লাহর তরবারী উপাধি দিয়েছেন, সেদিন হতে যুদ্ধের ময়দানে তোমার মৃত্যুবরণ করা অসম্ভব হয়ে উঠেছে? যদি তুমি যুদ্ধের ময়দানে মুত্যূবরণ করতে তাহলে এটার মানে হতো আল্লাহর তরবারী একজন অবিশ্বাসী ভেঙ্গে ফেলেছে। আর নিশ্চয়ই আল্লাহর তরবারী কখনো ভাংতে পারে না।”

তাঁর আন্তরিক ইচ্ছা স্বত্ত্বেও খালিদ বিন ওয়ালিদ রা. তার বিছানায় মৃত্যুবরণ করেন। অথচ , মু’তার যুদ্ধে খালিদ বিন ওয়ালিদ রা. নয়টি তরবারী ভেঙ্গে ফেলেছেন।
কেন?
কারণ সেগুলো ছিলো খালিদের তরবারী।
অন্যদিকে, খালিদ রা. ছিলেন আল্লাহর তরবারী। তাই তিনি কখনও ভাঙতে পারেন না।
আর এই হলো সেই ব্যক্তি, যিনি তৎকালের দুটো সুপার পাওয়ারকে পদানত করেছেন।
আর তিঁনি তাঁর বিছানায় মৃত্যুবরণ করছেন?

কেন তিঁনি এটা নিয়ে আক্ষেপ করবেন না? কেন তিঁনি শাহাদাত চাইবেন না?
শহীদের মর্যাদা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা নিজেই দিবেন।

রাসুল স. বলেছেন,
“শহীদকে গোসল দিয়ো না। কেননা তার রক্ত আল্লাহর কাছে সাক্ষ্য দিবে। তাঁর জামা পরিবর্তন করো না, কারণ তার জামা আল্লাহর কাছে সাক্ষ্য দিবে।”
কেন খালিদ বিন ওয়ালিদ রা. শাহাদাতের মৃত্যু কামনা করবেন না?
কেন তিঁনি তাঁর রক্তকে সাক্ষ্য হিসেবে চাইবেন না?
বস্তুত , খালিদের রা. রক্ত , তাঁর জামা তাঁর শাহাদাতের সাক্ষ্য দিবেন না। কিন্তু যারা এই পর্যন্ত আল্লাহর রাস্তায় শহীদ হয়েছেন, তারা প্রত্যেকে খালিদের জন্য সাক্ষ্য দিবেন। কারণ এমন কোন শহীদ পাওয়া যাবে না, যিনি খালিদ সাইফুল্লাহর রা. দ্বারা প্রভাবিত হন নি। যারা সাইফুল্লাহ রা. এর দ্বারা উজ্জীবিত হননি।
বর্ণিত হয়েছে, তিঁনি তাঁর ঘোড়া এবং তরবারী হযরত উমারের রা. কাছে পাঠিয়ে দেন। যখন হযরত উমার রা. এগুলো দেখেন, তখন তিঁনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন।
“আবু বকর , আমার চেয়ে মানুষকে ভালোভাবে চিনেছেন। তিঁনি খালিদ বিন ওয়ালিদের উত্তম গুণ সম্বন্ধে বুঝতে পেরেছিলেন।”
চিন্তা করা যায়!
এমন কোন লোক পাওয়া যাবে যে খালিদের রা. ঘোড়ায় আরোহণ করবে? এমন কেউ কি আছে যে খালিদের রা. তরবারী হাতে নেবে?না, নেই।কারণ কেউই এই জিনিসের হ্বক খালিদের রা. মতো আদায় করতে পারবে না।বর্ণিত হয়েছে,যখন খালিদ রা. মৃত্যুবরণ করেন, তখন বনু মাখযুমের নারীরা বিলাপ করা শুরু করেন। হযরত আবুবকর রা. মৃত্যুবরণ করার পর হযরত আয়িশার রা. বাড়িতে নারীরা বিলাপ করছিলো। হযরত উমার রা. এদেরকে তীব্র ভৎর্সনা করেন । এবং বিলাপ করার বিরুদ্ধে কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন।
কিন্তু যখন খালিদ বিন ওয়ালিদের রা. জন্য বিলাপ করা হচ্ছিলো, তখন এক ব্যক্তি হযরত উমারের রা. নিকট এসে অভিযোগ করলেন,
“হে উমার , বনু মাখযুমের নারীরা খালিদের জন্য বিলাপ করছে”
জবাবে উমার রা. বললেন,
“তোমার মা তোমাকে হারিয়ে ফেলুক। খালিদের মতো ব্যক্তিদের জন্য যারা কান্না করছে তাদের কাঁদতে দাও। ওয়াল্লাহি, পৃথিবীতে আর কোন নারী খালিদের মতো পুরুষের জন্ম দিবে না।”
এটাই হলো আমাদের পূর্বসূরীদের অবস্থা।
আর, আমরা কোথায় যাচ্ছি?فَأَيْنَ تَذْهَبُونَ [٨١:٢٦] অতএব, তোমরা কোথায় যাচ্ছ?
বলছি না যে, আমি ভালো। অথবা আমরা অন্য সবার চেয়ে উত্তম।
وَمَا أُبَرِّئُ نَفْسِي ۚ إِنَّ النَّفْسَ لَأَمَّارَةٌ بِالسُّوءِ إِلَّا مَا رَحِمَ رَبِّي ۚ إِنَّ رَبِّي غَفُورٌ رَّحِيمٌ [١٢:٥٣] আমি নিজেকে নির্দোষ বলি না। নিশ্চয় মানুষের মন মন্দ কর্মপ্রবণ কিন্তু সে নয়-আমার পালনকর্তা যার প্রতি অনুগ্রহ করেন। নিশ্চয় আমার পালনকর্তা ক্ষমাশীল, দয়ালু।
কিন্তু, আমরা কোথায় যাচ্ছি?আমরা যুবকরা আজ কোথায় যাচ্ছি।

ওয়াল্লাহি যদি আমরা খালিদ বিন ওয়ালিদের রা. দিকে তাকাই , দেখতে পাবো,চেঙ্গিস খান, নেপোলিয়ান বোনাপার্ট, তৈমুর লং, ফ্রেডরিক দি গ্রেট সবার গুণ এই এক খালিদ বিন ওয়ালিদ রা. এর ভিতর পাওয়া যাবে।
খালিদ বিন ওয়ালিদ রা. পলায়নপর বাইজেন্টাইন সৈন্যদের উদ্দেশ্য করে বলেন,
“যদি তোমরা মেঘের উপর থাকো, তাহলে আল্লাহ আমাদের উর্ধ্বে আরোহণ করাবেন, অথবা তোমাদেরকে নীচে নামাবেন , যাতে আমরা যুদ্ধ করতে পারি।”
ওয়াল্লাহি, আল্লাহ আমাদেরকে অবশ্যই বিজয়ী করবেন। আমাদের শুধু খালিদের রা. মতো মনোবল চাই।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুন, ২০১৫ সকাল ১০:৫১
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×