সিলেটের জাফলং সৃষ্টির রহস্যে পরিপূর্ণ একটি জায়গা।
সিলেট থেকে জাফলং-এ যাত্রা পথে অদূরে বিশাল পাহাড় দেখা যায় যেইটা ভারতের মেঘালয়, আসাম এইসব অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত। এই পথ দিয়ে যাওয়ার সময় বোঝা যায়, কেন মানুষ পাহাড় জয় করতে চায়, আর কেনই বা এত মানুষ জীবনের ঝুকি নিয়েও এভারেস্টের চূড়ায় উঠতে তৎপর। অদ্ভুদ একটা রহস্য আছে পাহাড়ের মধ্যে যা সব সময় দুহাত বাড়িয়ে বলে, “কাছে আয়... কাছে আয়।“ বর্ষাকাল-শীতকাল এই পাহাড়ের গাঁ বেয়ে অবিরত ঝরণা ঝরে।
জাফলং শহরে প্রবেশের পর মনে হবে, কোন বালির রাজ্যে আসলাম!! :/
বালির রাস্তা(খুবই বন্ধুর পথ। মনে হচ্ছিল, বুলরাইড করছি :p ) দিয়ে যখন গাড়ি যাচ্ছিল তখন দেখি রাস্তার পাশে কিছু ট্রাক থেকে পাথর নামানো হচ্ছে, আবার কোথাও পাথর কাটা হচ্ছে।
গাড়ি থেকে নেমে দেখলাম, জাফলং পিকনিক স্পট যা আমাকে পুরোপুরি হতাশ করেছিলো। তবুও একটু ধৈর্য ধরে, সিঁড়ি বেয়ে ডাওকি নদীর তীরে গেলাম... নদীর তীরে গিয়ে আমার অনুভুতি, “ধুলোবালি মেখে, এত ঝক্কি(বুলরাইড) সামলায়ে এইখানে আসলাম এই দেখার জন্য!! এর চেয়ে আমাদের পানিবিহীন পদ্মা তুলনাহীন সুন্দর। >_< “
দাঁত খিঁচিয়ে অবশিষ্ট ধৈর্যটুকু ধরে আছি এই সময় শুনছি, নৌকা করে জিরো পয়েন্টে যেতে হবে। জিরো পয়েন্টে গিয়ে জানলাম, জাফলং-এর সৌন্দর্য কেন মন ভোলানো। ওহ... বলা হয়নি, জাফলং পিকনিক স্পট থেকে জিরো পয়েন্টে যেতে নৌকা ভাড়া নেয় ২০০-৩০০টাকা।
ডাওকি নদীর গভীরতা বেশি নয়, সর্বোচ্চ হাঁটু পর্যন্ত তাই পানির মধ্যে হেঁটেও জিরো পয়েন্টে যাওয়া যায়। জিরো পয়েন্টের স্বচ্ছ পানির ভেতর দিয়ে চোখে পড়ে অজস্র পাথর। জিরো পয়েন্টে পৌঁছে বামদিকে তাকালে দেখা যায় ডাওকির স্রোত। এই স্রোতের উৎপত্তি কোথায় তা বলা মুশকিল। এই স্রোতে পা/গা না ভেজালে জাফলং-এর সুখটা মিস করবেন।
জিরো পয়েন্টে নেমে সোজা তাকালে যা দেখা যায় সেইটা হচ্ছে জৈন্তা পাহাড়। পাহাড়টি ভারতে অবস্থিত কিন্তু এই পাহাড় বেয়ে নেমে আসা ঝরণা পড়ে বাংলাদেশের ডাওকি নদীতে।
জিরো পয়েন্টের ডানদিকে একটু ভালোভাবে লক্ষ করলে একটা সিঁড়ি দেখা যায়। এই সিঁড়িটা যেখানে শুরু হয়েছে সেখান থেকেই ভারতের বর্ডার শুরু। মজার ব্যাপার হচ্ছে, এই বর্ডারে কোন সীমান্তরক্ষী থাকে না। পারস্পরিক সমঝোতা থেকেই বাঙ্গালীরা ঐদিকে এবং ভারতীয়রা এইদিকে আসেনা।
সিঁড়ির একটু বামে একটা ব্রিজ আছে যা দুইটা পাহাড়কে এক করেছে, সেটিও ভারতের। ডাওকি নদী ছাড়া সিঁড়ি থেকে বামদিকে যা কিছু দেখা যায় সব ভারতের এলাকা।
ভারত-বাংলাদেশের সন্ধিস্থলে জিরো পয়েন্ট মনের জিরো গ্রাভিটি হিসেবে কাজ করে।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ১২:১৭