পর্ব – ০১
“তোকে এখানে কেন নিয়ে আসলাম, বলতো?”, ভার্সিটির সবচেয়ে প্রিয় জায়গায় বসে স্নেহা, নীলাম্বরীকে জিজ্ঞেস করল।
ওহ… তার আগে ভার্সিটির সবচেয়ে প্রিয় জায়গার ব্যাপারে তো জানানো দরকার! ভার্সিটির শহিদুল্লাহ কলা ভবনের ছাদটা অসাধারণ সুন্দর। ভবনটাকে ভার্সিটির প্রাণকেন্দ্র বললেও খুব একটা ভুল হবে না। এখানে বসে ভার্সিটির বড় বড় বিল্ডিং, উঁচু উঁচু গাছ, বালি আর ঘাসে ভরা কাঁচা-পাকা রাস্তা, টুকিটাকির ঝুপড়ি… উপর থেকে টুকিটাকি চত্বরকে ঝুপড়িই মনে হয় কিন্তু নিচে এসে দেখলে বোঝা যায়, এটাই ভার্সিটির প্রাণ।
শহিদুল্লাহ কলা ভবনের ছাদ, জায়গাটা অদ্ভুত! ছাদের চারপাশে দৈত্যাকার ভবন, এর ফাঁকে ফাঁকে কয়েকটা ক্ষুদে বৃক্ষ উঁকি দেয়! শহিদুল্লাহ কলা ভবনের উত্তর দিকে তাকালে দেখা যাবে, টুকিটাকি ঝুপড়ির ব্যস্থ কর্মচারীরা। কেউ বাসন-কোসন মাজছে, কেউ রান্না করছে, কেউ খাবারগুলো চুলা পার থেকে নিয়ে এসে বাফেটের মত সাজিয়ে রাখছে। ছোট্ট ক্যাশ রিসিপ্সন টেবিলে বসে দোকানের মালিকগুলো টাকা গুনছে। পূর্ব পার্শ্বের রাস্তায় ছাত্রছাত্রীদের ব্যস্ত ও ক্লান্তিহীন ছুটাছুটি! দক্ষিণে তাকালে দেখা যায় তাদের অবসর আড্ডায় চায়ের কাপের ঝড়, গিটারের টুংটাং ও অলস সময়। আর পশ্চিমের রাস্তা অধিকাংশ সময় ফাঁকা থাকে। মাঝে মাঝে আইসক্রিম ওয়ালা, বারোভাজাওয়ালা ও ছাত্রছাত্রীদের আনাগোনা দেখা যায়।
এখন শীতের শুরু! আকাশে মেঘ ও রোদের খেলা চলছে; সাথে হুহু বাতাস বয়ছে। যে কোন সময় বৃষ্টি নেমে শীতকে পাকাপাকিভাবে রাজশাহীবাসির মাঝে বিলিয়ে দিয়ে যাবে তা খুব ভালোই বোঝা যাচ্ছে। তবুও ভালো লাগছে কারণ এখন প্রায় ১২টা বাজে, সূর্য একদম মাথার উপর তাই ঠাণ্ডা বাতাসটা তেমন আঁকড়ে ধরছে না।
একবছর আগে জায়গাটা তামিম আবিষ্কার করেছিল।
তামিম, স্নেহা ও নীলাম্বরী ৩ বন্ধু। হঠাৎ একদিন আড্ডার মাঝে তামিম, স্নেহা আর নীলাম্বরীকে বলল, “চল, তোদেরকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর জায়গা দেখাই।“ বরাবরের মত এইবারও ওরা দু’জন নিশ্চিত, তামিম তাদের যে জায়গায় নিয়ে যাচ্ছে সেইটা মোটেও সুন্দর জায়গা না কারণ তামিমের পছন্দের সাথে তাদের ২জনের পছন্দ কখনই মিলে না। এই জন্য তারা যেতে চাচ্ছিল না। এবং যখন জানলো, শহিদুল্লাহ কলা ভবনের ছাদে যেতে হবে তখন তারা আরও পিছপা হলো কারণ এই ছাদে তালা দেওয়া থাকে। কেউ যদি তাদেরকে তালা ভাঙতে দেখে নেয় তাহলে তাদের কপালে শনির দশা আছে! কিন্তু তামিম নাছোড়বান্দা হয়ে বলল, “তোদের কি মনে হয়, যেখানে তোদের ক্ষতি হবে সেখানে আমি তোদের নিয়ে যাব!?”
মাথা নামিয়ে তামিমকে সমীহ করে ওরা ২জন বলল, “না।“
”তাহলে এত ভয় করছিস কেন!”
স্নেহা ও নীলাম্বরী একে অপরের মুখের দিকে চাইল। স্নেহা নীলাম্বরীকে “প্লিজ বল” সূচক ইশারা করে মাথা মানিয়ে নিলো। নীলাম্বরী তামিমের দিকে তাকিয়ে শান্ত কণ্ঠে বলল, “তারপরেও…”
“আরে বাবা, কিচ্ছু হবে না। এত ভয় করলে হয়!”
এবার স্নেহা তামিমের দিকে তাকিয়ে বলল, “যদি নিরাশ হই!? তাহলে তোর কি করব বল।“
‘আমি এইবার বাজি ধরে বলতে পারি, তোরা নিরাশ হবি না। আর যদি হোস তাহলে আর কোন দিন আমার কথা মানিস না।“, তামিমের এই কথা শুনে ওরা ২জন বুঝতে পারল তামিম ওদের আজ রেহাই দিচ্ছে না। সে ওদেরকে আজ ঐ ছাদে নিয়ে গিয়েই কেবল মানবে। তাই তামিমের প্রস্তাবতা মেনে নিয়ে নীলাম্বরী বলল, “সিওর তো?”
তামিমের রাগটা একটু বেশি। সে যদি রাগের মাথায় বলে “এই কাজটা করব না” তাহলে সে কাজটা তাকে দিয়ে করানো খুব কঠিন। তাই তামিমকে রাগিয়ে দিয়ে শহিদুল্লাহ কলা ভবনে যাওয়া ঠেকানোর শেষ চেষ্টা করলো স্নেহা। বলল, “যদি নিরাশ হয় তাহলে তোকে আমরা ২জন লাত্থি দিয়ে ছাদ থেকে ফেলে দেবো। এবং মরার আগে তুই লিখে দিবি, ছাদ থেকে পড়ার পেছনে আমার বান্ধবীগণ না, আমি নিজেই দায়ী।“
“এই তো আমার বান্ধবী!”, বলে স্নেহাকে জড়িয়ে ধরে সমর্থন জানালো নীলাম্বরী।
কিন্তু ওদের হতাশ করে তামিম বলল, “আচ্ছা, মেনে নিলাম।“
“দেখ… ভেবে বলছিস তো?“, নীলাম্বরীর এই প্রশ্ন শুনে স্নেহা ওর দিকে তাকিয়ে মিটমিট করে হাসলো। কারণ ওরা নিশ্চিতভাবে জানে, এখন তামিম রেগে গিয়ে বলবে, “থাক, যাস না।“
কিন্তু তাদের চমকিয়ে দিয়ে তামিম বলল, “হ্যাঁ, আম্মাজান। আমি ভেবেই বলছি। এইবার আপনারা চলেন।“
শহিদুল্লাহ কলা ভবনের সিঁড়ি বেয়ে উঠতে উঠতে তামিম বলল, “আমি বুঝতে পেরেছিলাম, তোরা তখন ট্রিক্স খাটাচ্ছিস। তাই আমি রাগটা প্রকাশ করিনি। তবে সত্যি বলতে, আমি রেগে গেছিলাম।“
“আমাদের সাথে থেকে যে তোর একটু জ্ঞান-বুদ্ধি বাড়ছে তা মানছিস তাহলে নাকি?”, নীলাম্বরী তামিমকে বলল।
“ওরে আমার জ্ঞানীর দল!”, ফোঁড়ন কেটে বলে তামিম।
“আচ্ছা, তামিম! তুই একটা ভালো ছেলে, ভালো মানুষ নিঃসন্দেহে। যদিও সরাসরি কারো গুণগান করতে হয় না তবুও বলেই ফেললাম। কিন্তু… তোর মাথা সব সময় গরম থাকে কেন! একটুতেই রেগে যাস কেন?”, স্নেহা বলল।
“এটা আমারও প্রশ্ন, স্নেহা। তামিম, উত্তর দে।“
“দেখ… এখন সাবধানে উঠ। এখন কেউ দেখলে বিপদ আছে।“, তামিম সাবলীলভাবে বলল কথাগুলো যেন আগের কোন কথা সে একটুও শুনতে পায় নি।
৩তলা পর্যন্ত খুব সহজেই উঠা যায়। সমস্যা হয় এর পরে। ৪তলায় ছাদ, ছাদের সিঁড়িটা মাড়ানোই শুধু কষ্টকর। কিন্তু ওরা দেখেশুনে চুপ করে উঠে পড়ল ছাদে। ছাদটা দেখে স্নেহা, নীলাম্বরী কারোই হা বন্ধ হয় না।
সুযোগ বুঝে তামিম বলল, “এইবার আয়, আমার পা ধরে সালাম কর।“
নীলাম্বরীঃ Actually, you deserve it. কিন্তু… লাত্থি খেতে না চাইলে সরে যা।
“ওহ, যখন তোমার কেউ ছিল না, বন্ধু ছিলাম আমি; এখন তোমার সব হয়েছে, পর হয়েছি আমি! ছি, তোরা কত নিমকহারাম!”
“ওহ হো… আবার শুরু হলি তুই!”
“আচ্ছা, একটা মজার ঘটনা শুন।“
“বল।”, দু’জনে একসাথে বলে উঠল।
“এখানে একটা বড় তালা ছিল জানিস?”
স্নেহা বলল, “হুম জানি তো। কিন্তু ঐটা কোথায় গেল? গিলে খেয়ে ফেলেছিস?
স্নেহার কথায় ও আর নীলাম্বরী হাসিতে ফেটে পড়ল।
তামিম বিরক্ত হয়ে বলে, “উফ… তোরা না! (গম্ভীর গলায়)কাহিনি আছে।“
আবারও ২জনে একসাথে বলল, কি?
“এখন ভর্তির সিজন চলছে না?”
স্নেহাঃ হুম…
“পরশু অনেক গরম ছিল তাই আমাদের হলের কয়েকজন হাঁটতে বের হয়েছিল। অবশ্যই আমিও ছিলাম তাদের সাথে cause I am the legend!”
নীলাম্বরী বলল, “এহ… আইসে লেজেন্ড!”
“এভাবে underestimate করলি তো! দেখবি এই লেজেন্ড ছাড়া তোদের কাজই চলবে না।“
“এই তোরা থামত। তারপর কি হল, বল?”। স্নেহা বলে।
তামিম আবার বলতে শুরু করল, “তোহ.. মনে কর, তখন রাত ১-১.৩০টা বাজে। আমরা দেখছি, শহিদুল্লাহর দরজা খোলা; শুধু তা-ই না, রুমগুলোতেও আলো জ্বলছে। এইটা দেখে রোমি ভাইয়া বলল, “সালারা, প্রতি বছর কত ইনকাম করে তারপরেও ভার্সিটির কোন উন্নতি নাই। হলের সুযোগ সুবিধা বাড়ায় না! এত টাকা ব্যাটারা কি করে!! কোথায় রাখে এত টাকা!”
রোমি ভাইয়ের এই কথা শুনে আসিফ বলছে, “ভাই, ছাদে মনে হয়।“
তামিমের কথায় বাঁধা দিয়ে নীলাম্বরী বলল, “খেয়ে বলছিলো না ফান করে বলছিলো?”
“আগে শুন তো পুরোটা।“, তামিম উত্তর দেয়।
তামিমের কথায় আবার বাঁধা পড়ল। স্নেহা জিজ্ঞেস করল, “খেয়ে বলছিলো মানে!?”
নীলাম্বরী স্নেহাকে খোঁচা দিয়ে বলে, “আব্বে… LED এর জিরো লাইট, তুই জানিস না ঐ গাঞ্জা খায়!?”
“কিহ!”
“এই, কি করব এর বলত? তুই এই দুনিয়ার মানুষ!”
“হুম তো।“, নির্বোধ বাচ্চার মত করে উত্তর দিলো স্নেহা।
সে কথা শুনে তামিম বলে, “তে এইটা জানিস না! এনিওয়ে, LED এর জিরো লাইট! এই ডায়ালগ কই পাইলি?”
“কেন! আমার… স্বনির্মিত।“
“এই ডায়ালগের তাৎপর্য কি?”
“LED এর জিরো লাইটগুলো অনেক ব্রাইট না? কিন্তু যতই ব্রাইট হোক আর যতই আলো দিক, আল্টিমেটলি তো জিরো লাইট-ই। এই ছেমড়ির অবস্থা হয়েছে তাই। আমরা যতই ভাবি না কেন, ও জ্ঞান খুলেছে তবুও ঐ জিরোই থাকবে।“
নীলাম্বরীর কথা শেষ হতেই তামিম নীলাম্বরীর এক হাতে তালি দিয়ে হাসিতে ফেটে পড়লো। ওরা খেয়ালই করল না, তাদের এই আচরণে স্নেহা কষ্ট পাচ্ছে।
স্নেহাঃ হলো তো। আর কত হাসবি তোরা! আমার খারাপ লাগছে।
নীলাম্বরী স্নেহার বাম গালটা আলতো করে ধরে বলে, “এত মাইন্ড খাস কেন, বাবু! আমরাই তো। তোকে পচানো আমাদের জন্ম সিদ্ধ অধিকার কারণ আমরা ফেরেন-ড।“
মাথাটা নাড়িয়ে একটু আহ্লাদ করে স্নেহা বলল, “তারপরেও… বলবি না এইভাবে।“
তামিম বলল, “আচ্ছা, কমু না। এখন বাকি কাহিনী শুন। থ্রিলিং কাহিনী, না শুনলেই মিস!“
স্নেহা পরিবেশটা স্বাভাবিক করে বলল, “হুম… গো অন।“
তামিম আবার শুরু করল।
আসিফ ঐ কথা বলার পর আমরাও তোর মতই ভেবেছিলাম এবং একে অন্যের দিকে চাওয়া-চাওয়ি করছিলাম, নীলা। আমাদের সাড়া না পেয়ে আসিফ কথাটা ভেঙ্গে বলল, “দেখেন না ভাই, ছাদের গেট সবসময় লাগানো থাকে? সব বিল্ডিং-এর ছাদ খোলা, শুধুমাত্র এই বিল্ডিং-এর ছাদে উঠাই নিষেধ, কেন!? এইটা একটা কেমন কথা না, বলেন?”
জানিসই তো আমি লেজেন্ড মানুষ, আমার মাথায় সবসময় ইউনিক আইডিয়া ঘুরে! সেই আইডিয়ার ব্যক্ত করলাম সবার সামনে। বললাম, “চলেন ভাই, ছাদে যায়!”
আমার কথা শুনে রোমি ভাই অনেকটা খেঁকিয়ে উঠল, “এই তুই কি পাগল!”
কিন্তু কে শুনে কার কথা! সবাই আমার প্রস্তাবে সায় দিয়ে রোমি ভাইকে মত পাল্টানোর জন্য জোরাজোরি শুরু করলো। রোমি ভাই তখন রাজি না হয়ে যায় কোথায় বল?
চললাম আমরা ৫ লেজেন্ড ছাদের উদ্দেশ্যে।
প্ল্যান ছিল দারোয়ান চাচাকে চা-বিড়ি খাওয়ার টাকা দিয়ে রাজি করাবো কিন্তু আমাদের কপাল এতই ভালো যে, আমরা শহিদুল্লাহর কাছে যেতেই শুনতে পেলাম, দারোয়ান চাচা চিল্লায়ে বলছে, “আসছি, স্যার।“
চাচা তার বেঞ্চ থেকে উঠে যেতেই আমরা হাতে স্যান্ডেল নিয়ে সিঁড়ির দিকে দৌড় দিলাম। আমরা যখন দোতলার ব্যাক ঘুরে ৩ তলায় উঠছি তখন ঐ যে মোটু, রাসেদ?
রাসেদের কথা শুনে নীলাম্বরী ও স্নেহা একটু ভ্রু কুচকালো, তামিম সেইটা খেয়াল করে বলল, “রাসেদকে চিনিস নি?”
ওরা ২জন একসাথে মাথা নাড়িয়ে “না” বলল। তামিম ওদেরকে রাসেদের পরিচয় দেওয়ার জন্য বলল, “ আরে ঐ যে, ইকো-র ঐ ছেলেটা। মাঝে মাঝে ডিপার্টমেন্টের পাশের পুকুর পাড়ে দেখা যায় না? আমাকে দেখলেই সালাম দেয়।“
স্নেহা বলল, “ও আচ্ছা।“
নীলাম্বরী বলল, “চিনেছি।“
তামিম আবার বলতে শুরু করলো, “আমরা যখন ৩ তলার ব্যাক ঘুরে ৪তলায় উঠছি তখন ঐ মোটু ৩তলায় উঠছে! এই সময় চাচা খেয়াল করেছে রাসেদকে। ওকে দেখে চাচা টর্চ বের করে ৩তলায় টর্চ মারতে যাচ্ছিল তখন মামার আবার ডাক পড়ল।“
স্নেহা অবাক হয়ে বলল, “ভালোই বাঁচা বেঁচেছিস তোরা!”
“হুম… যদি মামা দেখে নিত তাহলে যে আমাদের কি হতো! আমাদের বহিষ্কৃতও করতে পারতো যেহেতু রাতে ছাদে যাচ্ছিলাম।“
নীলাম্বরী আগ্রহ নিয়ে বলে, “তারপর?”
তামিম কাহিনীর বাকি অংশ বলতে শুরু করলো।
চাচার ভয়ে তো আমরা সবাই শুয়ে পড়েছিলাম সিঁড়িতে; চাচা যাওয়ার পর উঠে চুল ঝেড়ে তাড়াতাড়ি ৪ তলায় উঠলাম। উঠে দেখি, ছাদের গেটে এত্ত বড় একটা তালা! তালা দেখে আমরা সবাই রাগে গো গো করছি কারণ সকালের আগে এখান থেকে নামা যাবে না, এখানে বসেই মশার কামড় খেতে হবে। তখন ঐ মোটু ৪তলায় উঠল! ৪ তলায় ওকে দেখে বললাম, “শুয়ে ছিলি; ভালোই তো ছিলি। আবার উঠে আসলি ক্যান অযথা!?”
রাসেদ বলল, “ক্যান, ভাই? কি হয়েছে!”
রোমি ভাই বিকট রেগে বলল, “আগেই বলেছিলাম এই সব ঝামেলায় যাস না। কিন্তু কে শোনে কার কথা!”
রোমি ভাইয়ের রাগ দেখে ঐ বেচারা আমাকে ইশারা করে জিজ্ঞেস করলো, “কি হয়েছে?” আমি ফিসফিসয়ে বললাম, “তালা দেওয়া রে ভাই। আর এখন তালা ভাঙতে গেলে তো ফেঁসে যাব কারণ দারোয়ান চাচা অলরেডি সন্দেহ করছে উপরে কেউ আছে।“
এই কথা শুনে রাসেদ মুচকি হেসে বলল, “থামেন ভাই।“ অতঃপর পকেট হাতড়ায়ে কি যেন একটা বের করে বলল, “এই যে ভাই। এবার এইটা দিয়ে খুলেন।“
এত টেনশনের একটা কথা শুনেও যখন ঐ ব্যাটা দাঁত বের করলো তখন ইচ্ছা হচ্ছিল, এক কিলে ব্যাটার দাঁত ভেঙ্গে দেই কিন্তু পরে যখন ও পকেট থেকে এক পাতা কালো ক্লিপ বের করে দিলো তখন ওকে স্যালুট করতে ইচ্ছা হচ্ছিল।
কালো ক্লিপ দেখে রোমি ভাই বলল, “এইটা তুই কোথায় পেলি!?” মোটু তখন লজ্জায় লাল হয়ে উত্তর দিলো, “ভাই, এইটা কান চুলকানোর জন্য খুব উপকারী একটা জিনিস। আজ গার্লফ্রেন্ডের কাছ থেকে নিয়েছিলাম।“
“আরে ব্যাটা, তুই তো বস!“- এই বলে আসিফ নিঃশব্দে ওর পিঠ চাপড়ালো। এরপর ওর হাত থেকে কালো ক্লিপের পাতাটা নিয়ে তালা খুলল।
তালাটা খুলে বুঝলাম আসলেই ছাদটা বন্ধ রাখা উচিত। এখন তো কিছুই দেখছিস না! রাতের পরিষ্কার আকাশে যখন বড় বিল্ডিং-এ আলো জ্বলতে দেখা যায় শুধু তখন আরও সুন্দর লাগে। সেইদিন আমরা গোটা রাত এখানে আড্ডা দিয়ে কাটিয়েছি। কীভাবে যে ভোর হয়ে গেল বুঝতেই পারলাম না! এই ছাদে বসে ভোর হওয়া দেখা আরও মজার। কি সুন্দর করে আলোটা এসে পরে ডাব গাছটার উপর। আসলেই ভোরের আলো একটা নষ্টা মেয়ের মত যে আমাদের ছুয়ে যায় কিন্তু ধরা দেয় না!
নীলাম্বরী বলল, “অদ্ভুত একটা কথা বললি তো! কথাটা আমার খুব পছন্দ হয়েছে।“
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১২:০৮