না লিখে আর পারলাম না। সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম এসব বিষয় নিয়ে লিখে আর কারো বিরাগভাজন হবো না। কিন্তু না। না লিখে পারা গেল না। সদ্য প্রয়াত সাংবাদিক জগললুল আহমেদ চৌধুরীকে নিয়ে তামাশা করা হল। মৃত্যুর পরও তিনি উপহাসের শিকার হলেন। রাষ্ট্রের অপসিস্টেমের গ্যাড়াকলে প্রাণ গেছে তার। গরু-ছাগল চিনলেই ড্রাইভারির লাইসেন্স দেওয়ার অনুমতি দেন যে দেশের মন্ত্রী, সে দেশে দূর্ঘটনাকে হত্যাকাণ্ড বলা যায় নির্দ্বিধায়। সে হিসেবে জগলুল আহমেদ চৌধুরীকে হত্যা করেছে ওই বাসের চালক। আর ওই বাসের বেপরোয়া অবিবেচক চালককে অনুমোদন দিয়েছে আমাদের সরকার, রাষ্ট্র। হিসাব পরিস্কার। এ অপসিস্টেম একদিনে গড়ে উঠেনি। এ দায় শুধু আওয়ামী লীগ বা বিএনপির নয়; আমাদেরও। আমরাই লাই দিয়ে মাথায় তুলেছি এ সিস্টেমের কারিগরদের। নইলে প্রয়াত একজন সাংবাদিককে তারই শোকসভায় আমন্ত্রন জানিয়ে চিঠি পাঠানো হতো না। একটি শোকাতুর পরিবারকে নিয়ে ফের উপহাস করা হতো না। (প্রসঙ্গত, এমন একটি চিঠি গত কয়েকদিন ধরে নিউজফিডে ঘুরছে।)
আপনি বলবেন, চিঠি যারা বিলি করেছেন, তারা ঠিকানা আপডেট করেননি। বা চিঠি বিলি করা মন্ত্রীর কাজ না...ইত্যাদি, কেউ কেউ বলছেন, চিঠি ফটোশপ করাও হতে পারে... ইত্যাদি এবং...।
এ কথাগুলো কতটুকু ধোপে টেকে? মন্ত্রী যদি এটুকু নজরদারি না করতে পারেন, কয়েকদিন ধরে বিষয়টি নিয়ে বলাবলি হচ্ছে, তিনি যদি বিহীত করতে না পারেন, কিভাবে তিনি মন্ত্রী হন? সমাজকল্যাণ মন্ত্রনালয়েরই যদি এই হাল হয়, অন্য কল্যান মন্ত্রনালয়গুলোর অবস্থা কি?!
সাংবাদিকতার মান এই সময়ে তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। তারা এসব নিয়ে লিখলে দেশ-জাতিরই উপকার হতো। তার নিজের পরিবারের উপকার হতো। মন্ত্রীর উপকার হতো। যারা সাধারণত ক্ষমতায় থাকেন, তারা সমালোচনা সহ্য করতে পারেন না। মোসাহেবরা তাই শাসকদের কাছে ভিড়তে পারেন। এ কথা সত্যি। কিন্তু সমালোচনা না করলে শাসক তার ভুল ধরতে পারবেন না। যারা এই কাজ করবেন সেই সাংবাদিকরা আজ একেকজন মোসাহেব নামের আগাছায় পরিণত হয়েছেন। এখন যিনি যতো বড় সাইনবোর্ডধারী সাংবাদিক তিনি ততো বড় মোসাহেব। এই আগাছা দিয়ে সমাজ-রাষ্ট্রের কি উপকার হবে? অথচ অনেক মেধাবী সাংবাদিক আছেন, যাদের সাইনবোর্ড বড় নয়। কিন্তু তারা যা জানেন, বড় সাইনবোর্ডওয়ালারা তা জানেন না।
গত শনিবার (২০ ডিসেম্বর) আমি রাত আটটায় পান্থপথ দিয়ে আসছিলাম হেঁটে। স্কয়ার হসপিটালের কিছুদূর সামনের ফুটপাত দিয়ে চলা যাচ্ছিল না। ফুটপাতে তখন গরম চুলায় জিলাপি, সমুচা, পুরি, সিঙ্গারা বানানোর হিড়িক। আমি রাস্তা সামাণ্য ফাঁকা পেয়ে বাঁ পাশ ঘেঁষে হাঁটছিলাম। হঠাৎ লম্বা জ্যাম। সামনে সিএনজি, পেছনে এসে দাঁড়ালো একটি মোটর সাইকেল। দুপাশেও প্রাইভেট কার। কোনোভাবেই বের হতে পারছিলাম না ওই ফাঁদ থেকে। মোটরসাইকেল আরোহী আমার দিকে ব্যাঙ্গাত্মক এক হাসি দিয়ে নির্দেশের মতো করে বলল, ওখানে ফুটপাত আছে, চোখে পড়ে না? আমি মোটরসাইকেলের দিকে তাকালাম। দেখলাম যুবকের মোটরসাইকেলে ৭১টিভির স্টিকার লাগানো। বললাম, আপনি সাংবাদিক হয়ে এভাবে বলতে পারলেন?! আপনার তো জানা থাকা উচিৎ, আমি পথচারি, আমার ফুটপাত আজ কার দখলে? কেন আমি জীবনের ঝুকি নিয়ে রাস্তায়? আপনি কিসের সাংবাদিক? গাড়িতে স্টিকার লাগালেই সাংবাদিক হওয়া যায় না। সেটা বড় জোড় মোসাহেব হওয়া যায়, দুর্বলদের জিম্মি করে মাস্তানি করা যায়।
সাংবাদিক নামের মোসাহেব এবং আমাদের কল্যাণমন্ত্রী
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে
তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন
ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না
সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন
লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা
ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।
মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন
জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না
নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন
দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে
বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন