somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের প্রেমময় জীবন-১

০৬ ই আগস্ট, ২০১০ রাত ৮:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বছর দুই আগে "সাইন্স ওয়ার্ল্ড" মাসিক পত্রিকায় এমন একটা আর্টিক্যাল পড়েছিলাম। সেখানকার সেই কলামটাকেই কাটছাট করে আরো কিছু যোগ করে আপনাদের সাথে এটা শেয়ার করলাম। তবে অধিকাংশই "সাইন্স ওয়ার্ল্ড" পত্রিকার ঐ কলাম থেকে নেয়া।

ভুমিকা:
ধবধবে সাদা চুলের বিখ্যাত বিজ্ঞানী আইনস্টাইনকে নিয়ে আগ্রহের কমতি নেই কারো। মৃত্যুর এত বছর পরও আইনস্টাইন তাই রীতিমত তারকা। তাকে নিয়ে মানুষের এই আগ্রহ যে কেবল তার বৈজ্ঞানিক কাজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ তা নয়; তার ব্যক্তি জীবন নিয়েও আগ্রহের কমতি নেই। সাধারণ মানুষের চোখে এই অতিমানব ব্যক্তিটিও আশপাশের আর দশটি মানুষের মতোই আবেগী, সাধারণ, নির্ঝঞ্ঝাট জীবনযাপন করতেন। ব্যক্তি মানুষ ও চারপাশের জগৎ নিয়ে আবিষ্কারে মেতে ওঠা আইনস্টাইনের জীবনটা বেশ প্রেমময়। শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী ছাড়াও তাকে প্রেমিক পুরুষ হিসেবে আক্ষায়িত করলেও অত্যুক্তি হবেনা।

আইনস্টাইনের প্রথম প্রেম:
১৮৯৫ সালের ২৬ অক্টোবর সুইজারল্যান্ডের আরাউয়ের একটি টেকনিক্যাল স্কুলে থার্ড ইয়ারে ভর্তি হয়ে আইনস্টাইন পড়ালেখায় মনোযোগ দিলেন। যদিও মিউনিখে পরিবার ছেড়ে একাকি থাকাটা ছিল তার জন্য বড়ই কষ্টকর। থাকতেন স্কুলেরই প্রফেসর জর্জ উইন্টেলারের বাড়িতে, অনেকটা আমাদের দেশের লজিং সিস্টেমের মত।

বিশাল বাড়ি একা একা কতক্ষনই বা আর ভাল লাগে? তাই নিঃসঙ্গতা কাটাতে মাঝে মাঝে বেহালা নিয়ে বসেন। অন্যদের সমস্যা ভেবে দরজা ভেজিয়ে বেহালায় সুর তুলতেন। ঘন্টার পর ঘন্টা কেটে যেত বেহালায় সুর তুলে। হুশ থাকত না আইনস্টাইনের। তাই তিনি জানতেনও না যে বাইরে দাঁড়িয়ে কেউ তার বেহালা বাজানো শুনছে।

প্রফেসর জর্জ উইন্টেলারের ছোট মেয়ে মেরি। দারুণ মনযোগ পিয়ানো বাজানোতে। কিন্তু দুঃখ একটাই- এখন পর্যন্ত তার পিয়ানো শোনার সমঝদার শ্রোতা পাওয়া গেল না। একসময় বুঝতে পারলেন, আইনস্টাইনই বোধহয় বুঝতে পারবে তার সুর। এই সুত্র ধরেই পরিচয় এবং বেজে উঠল আইনস্টাইন-মেরির যুগল বেহালা-পিয়ানোর সুর। বাইরের সুরটা সবাই শুনতে পেলেও ভেতরের সুরটা বাজতে থাকে তাদের নিজেদের মনের ভেতরে।

চাকরি নিয়ে মেরি ওলসবার্গ চলে যাওয়ার পর নিঃসঙ্গ আইনস্টাইন আরো নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েন। মেরি প্রতি সপ্তায় সপ্তায় চিঠি দিলেও তিনি প্রবল অনীহায় আর উত্তর দেননা। অবশেষে না পেরে একটি চিঠি লিখলেন, যার শেষ প্যারায় ছিল “আমি তোমার সাথে আর কোন যোগাযোগ রাখতে চাই না।

ক্লাসের একমাত্র মেয়েঃ
প্রথমবার পরীক্ষা দিয়ে সাধারণ জ্ঞানে বিশ্রি রেজাল্ট করার পর দ্বিতীয়বার ঠিকই ফেডারেল ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে ভর্তি হলেন। সপ্ন সত্যি হয়েছে তার। তাই গোগ্রাসে লেখাপড়া চালিয়ে যেতে থাকেন। কাঠখোট্ট শব্দটির অর্থ ভাল করেই জানেন তিনি। কিন্তু মিলেভাকে দেখার পর তার মনে হল, ডিকশনারিতে এই শব্দটির অর্থ পরিবর্তন করা উচিৎ। এই মেয়েকি পড়াশোনা ছাড়া আর কিছুই জানেন? মিলেভা মেরিনকে কেউ সুন্দরী বলবেনা। তার উপর এক পা খোড়া। খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলেন। আইনস্টাইন মেরির সাথে মিলেভাকে তুলনা করে দেখলের যে, বাহ্যিক সৌন্দয্যের দিক দিয়ে মেরি কে ১০০ দিলে মিলেভা পারে ১০। তারপরও তিনি কেন যেন তার প্রতি দুর্বলতা অনুভব করেন।

মিলেভা মেরিনের কথাঃ
তৎকালীন সময় অনেক বাধা বিপত্তী পেরিয়ে তাকে পরাশোনা করতে হয়েছে। পদার্থ ও গণিতে ভালো রেজাল্ট করার পরও ইনস্টিটিইটে ভর্তির সময় বিশেষ অনুমতি নিতে হয়েছে। বাবা মিলোস মেরিক একজন উচ্চপদস্থ অফিসার।

মিলেভা জানতেন এই স্কুলে খুব কম মেয়েরাই পড়তে আসে। তার ভর্তির আগে মাত্র চার জন মেয়ে এই স্কুলে পড়াশোনা করেছেন, তিনি পঞ্চম। পদার্থ ও গণিত মিলেভার আগ্রহের বিষয়। পারত পক্ষে ক্লাসের কারো দিকে তাকাতেন না। মাঝে মাঝে লাইব্রেরীতে বসে পূর্ববর্তী দিনগুলোর কথা মনে করতেন। স্কুলের লেখাপড়া শেষ করে ভর্তী হয়েছিলেন জুরিখ ইউনিভার্সিটির মেডিকেল স্কুলে। কনজেনিটাল হিপ ডিফরমিটির কারণে তাকে খুঁড়িয়ে হাঁটতে হত এবং ক্লাসের ছেলেরা যেন এ নিয়েই মেতে উঠল। ক্লাসের একমাত্র মেয়ে, কিই বা করার আছে তার! তারপরও সব অত্যাচার সহ্য করে মিলেভা মেডিকেলে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে লাগলেন। কিন্তু অ্যানাটমির ক্লাসে যখন ছাত্র-শিক্ষকরা নারী শরীর নিয়ে নোংরা আলোচনায় মেতে উঠলো, তখন আর ধৈর্য ধরতে পারলেন না। মেডিকেল ছেড়ে ভর্তি হলেন পলিটেকনিকে। প্রতিজ্ঞা করলেন ছাত্রতো দুরের কথা, পারত পক্ষে কোন শিক্ষকের সাথেও কথা বলবেন না। কিন্তু আইনস্টাইন নামের ওই ঝাঁকড়া চুলের ছেলেটার সাথে কী তিনি কথা না বলে থাকতে পারবেন? ছেলেটা যে পদার্থবিজ্ঞানে আর অংকে অনেক ভাল। ভদ্রওতো বেশ। তাকে কতদিন ঠেকিয়ে রাখবেন?
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই আগস্ট, ২০১০ রাত ৮:০৮
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অনির্বাণ শিখা

লিখেছেন নীলসাধু, ০৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



রাত ন’টার মত বাজে। আমি কি যেন লিখছি হঠাৎ আমার মেজো মেয়ে ছুটতে ছুটতে এসে বলল, বাবা একজন খুব বিখ্যাত মানুষ তোমাকে টেলিফোন করেছেন।

আমি দেখলাম আমার মেয়ের মুখ উত্তেজনায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

=ইয়াম্মি খুব টেস্ট=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৪



©কাজী ফাতেমা ছবি
সবুজ আমের কুচি কুচি
কাঁচা লংকা সাথে
ঝালে ঝুলে, সাথে চিনি
কচলে নরম হাতে....

মিষ্টি ঝালের সংমিশ্রনে
ভর্তা কি কয় তারে!
খেলে পরে একবার, খেতে
ইচ্ছে বারে বারে।

ভর্তার আস্বাদ লাগলো জিভে
ইয়াম্মি খুব টেস্ট
গ্রীষ্মের... ...বাকিটুকু পড়ুন

অণু থ্রিলারঃ পরিচয়

লিখেছেন আমি তুমি আমরা, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৭


ছবিঃ Bing AI এর সাহায্যে প্রস্তুতকৃত

১৯৪৬ কিংবা ১৯৪৭ সাল।
দাবানলের মত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়েছে সারাদেশে।
যে যেভাবে পারছে, নিরাপদ আশ্রয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। একটাই লক্ষ্য সবার-যদি কোনভাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পেইন্টেড লেডিস অফ সান ফ্রান্সিসকো - ছবি ব্লগ

লিখেছেন শোভন শামস, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:১৯

"পেইন্টেড লেডিস অফ সান ফ্রান্সিসকো", কিংবা "পোস্টকার্ড রো" বা "সেভেন সিস্টারস" নামে পরিচিত, বাড়িগুলো। এটা সান ফ্রান্সিসকোর আলামো স্কোয়ার, স্টেইনার স্ট্রিটে অবস্থিত রঙিন ভিক্টোরিয়ান বাড়ির একটি সারি। বহু... ...বাকিটুকু পড়ুন

এশিয়ান র‍্যাংকিং এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান !!

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:২০

যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী 'টাইমস হায়ার এডুকেশন' ২০২৪ সালে এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে। এশিয়ার সেরা ৩০০ তালিকায় নেই দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়।তালিকায় ভারতের ৪০, পাকিস্তানের ১২টি, মালয়েশিয়ার ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×