গল্পের নামঃ উৎসর্গ
গতকাল রাতে ও বাসায় ফিরার আগেই চট করে দোকান থেকে এক দিস্তা হোয়াইট প্রিন্ট ও একটি জেল পেন কিনে নিয়ে এলাম। বাসায় যদিও কাগজ কলমের অভাব নেই তবুও ওর জিনিসে আমি হাত দিতে চাই না। আমার গুলো আমার, ওর গুলো ওর। টেবিল ভর্তি ওর কাগজ কলম - অগোছালো, সেলফ ভর্তি বই - আরো অগোছালো। থাকুক অগোছালো, ওগুলো আমার দেখার বিষয় না। কিসব ছাইপাশ লেখালেখি করে বসে বসে, তাই দিয়েই ইদানিং ওর বই বের হয়। বিভিন্ন ম্যাগাজিন/পত্রিকা আসে ওকে অনুরোধ করতে। মানুষ যে এতরকমের পাগল হতে পারে, তা ওর ফ্যানদের না দেখলে বোঝা যায় না। একেকবার ওর একেকটা বই বের হয় আর একগাদা চিঠি এসে ঘর ভরে যায়। মাঝে মাঝে দু একটা চিঠি চুপিচুপি খুলে পড়েছি। ওগুলো আর ওকে দেখাইনি। এত চিঠি, কে কয়টার খবর রাখে। কিছু চিঠিতে অনেকে নিজেই কবিতা লিখে পাঠায়। কেউ কেউ গল্প লিখে জানতে চায় কেমন হয়েছে। হায়রে মানুষ! কেউ কেউ আবার প্রেম নিবেদনও করে। ওকে করে প্রেম নিবেদন! ওর প্রেমে কেউ পড়েও! ভাবতেই ভালো লাগছে যে আমার মত বোকাও পৃথিবীতে আরো কিছু আছে।
আমিও ওর প্রেমে পড়েছিলাম! কিন্তু তখন জানতাম না, ও একজন লেখক। তাহলে ভুলেও ওর দিকে ফিরে তাকাতাম না। কিন্তু তখন বয়স অল্প ছিল। ও ছিল আমার হোম টিউটর। কঠিনভাবে ওর প্রেমে পড়েছি। "তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচব না" টাইপ প্রেম। যেদিন ওকে বলেছি "আমি তোমাকে ভালবাসি", সেদিন কি রকম বোকার মত আমার দিকে তাকিয়ে ছিল ফ্যাল ফ্যাল করে। যেন আমি হিব্রু ভাষায় ওকে অকথ্য কিছু বলেছি। ওর এই ফ্যালফ্যালানি বেশিক্ষণ সহ্য করতে না পেরে রুমে ঢুকে খিল দিলাম। ওটাই ছিল আমার ভুল। বাড়ির সবাই যখন হাজার ধাক্কিয়েও দরজা খোলাতে পারছিল না, তখন ও এসে বলল, "দরজা খুলো"। আমিও বোকার মত দরজা খুলে দিলাম। আধা ঘন্টার মধ্যে আব্বা কাজী এনে বিয়ে পড়িয়ে দিয়েছে। এটা আব্বা কোন কাজ করল? অল্প বয়সে ছেলেমেয়েরা ভুল করবেই; সেটাকে প্রশ্রয় দিতে আছে?
তাও চলছিল ভালোই। ওকে ভালোবাসতে বাসতে আমিই পাগল হয়ে যাচ্ছিলাম। ওর বাসায় এসে বাসা ভর্তি বই দেখে একটুও অবাক হই নি। জানতাম ও পড়ুয়া ছেলে। কিন্তু যখন জানলাম বেশির ভাগ বই-ই ওর লেখা, তখন অবাক হওয়ার পাশাপাশি খুশিও হয়েছিলাম। একজন গুণীর সাথে আমার বিয়ে হয়েছে; ভালোবেসে ভুল করিনি তাহলে। দুদিন পরেই টের পেলাম "কী মস্ত ভুল করেছি"! আমার বই পড়ার তেমন কোনো অভ্যাস নেই। তবুও ও একদিন বাসায় ছিল না, ওর লাইব্রেরীতে গিয়ে পড়ার জন্য বই দেখছিলাম। একটা ছোট-খাটো সুন্দর মলাটের বই হাতে নিয়ে খুললাম। এই প্রথম ওর কোন বই খুলেছি আমি। প্রথম পাতায় উত্সর্গটা দেখে "মাথা নষ্ট" - উত্সর্গ আমার প্রিয় তমাকে। "তমা"! সে কে? কোনোদিন শুনিনি তো! রাগে দুঃখে তখনই বই বন্ধ করে লাইব্রেরী থেকে বের হয়ে আসলাম। নাহ্, ওকে কিচ্ছুটি বলব না। ভুল তো আমিই করেছি। ও তো আমাকে ভালোবাসি বলেনি। আমিই মনে হয় তমার কাছ থেকে ওকে আলাদা করে নিয়েছি। সেদিনই আমি বুঝেছি ও কেন উদাস থাকে। ও কেন আমাকে ভালোবাসি বলেনি, সেদিন কেন ও শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে ছিল।
যা হোক, আমি কেন কাগজ কলম আনলাম তা তো বলা হয়নি। আমিও লিখব। ওর মত নয়। ওর চেয়ে ভাল লিখব। উত্সর্গ করব শাওন, সুদীপ, নির্ঝর, কাজল, সজল, মানিক-রতন সবাইকে। ওদেরকে আমি চিনি না, তবুও ওকে দেখিয়ে দেখিয়ে অন্য ছেলেদেরকে উত্সর্গ করে আমি বই লিখব।
দু ঘন্টা হলো কাগজ কলম নিয়ে বসে আছি। এর মাঝে কিছুই লিখতে পারিনি। আম্মা দুবার ফোন করেছিল। আম্মার সাথে কথা বলতে বলতে অন্যমনস্ক হয়ে কাগজে কিসব ছাইপাশ আঁকিবুকি করেছি। কাগজ নষ্ট করেছি অনেক। এবার লিখতে হবে। বিছানার ওপর একটা বই পড়ে আছে। ওর বই। গতরাতে আমাকে গিফট করেছে। উপলক্ষ আমার জন্মদিন। বইটা খুলেও দেখিনি। দেখতেই মন চাচ্ছে না। কিন্তু আমি যে কিছুই লিখতে পারছি না। আচ্ছা একটা লেখা কিভাবে শুরু করতে হয়? কিভাবে সাজাতে হয়? একটু দেখি তো। বইটা হাতে তুলে নিলাম। খুলতেই নজরে এল-উত্সর্গ আমার প্রিয়তমা স্ত্রীকে। উহ্ ঢং। হঠাত্ ই মাথাটা ক্যাচ করে উঠল। কি দেখেছিলাম সেদিন আমি? দৌড়ে লাইব্রেরীতে গেলাম। চোখ বুলাচ্ছি বইগুলোর উপর। নাহ্ পাচ্ছি না- গেল কোথায়? সময়মত কিচ্ছু পাওয়া যায় না। চট করে নজরে এল একদম কোনায় রাখা বইটা। দ্রুত হাতে তুলে নিলাম। খুললাম-আরে প্রথম পৃষ্ঠাটা কই-উত্সর্গ কোথায়? দ্রুততায় সব এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। হ্যাঁ পেয়েছি। কি লেখা? উত্সর্গ আমার প্রিয়তমাকে। কিন্তু সেদিন যে দেখলাম "প্রিয় তমাকে"-মাঝখানে স্পেসটা গেল কোথায়? দ্রুত ভিতরটা খুললাম। ওমা, এ যে আমাকে নিয়েই লেখা বই!
বেল বাজছে। টুং টাং....টুং টাং। ও অফিস থেকে চলে এসেছে। দৌড়ে ঘরে এলাম।কাগজ কলম লুকাতে হবে। আরে লুকাবো কি? এগুলো ময়লার ঝুড়িতেই ফেলে দেব। ইচ্ছে করছে দরজা খুলে ওর গলা জড়িয়ে ধরে আরো একবার বলি "আমি তোমাকে ভালবাসি, ভালবাসি, ভালবাসি"।
আলোচিত ব্লগ
ভণ্ড মুসলমান
ওরে মুসলিম ধর্ম তোমার টুপি পাঞ্জাবী মাথার মুকুট,
মনের ভেতর শয়তানি এক নিজের স্বার্থে চলে খুটখাট।
সবই যখন খোদার হুকুম শয়তানি করে কে?
খোদার উপর চাপিয়ে দিতেই খোদা কি-বলছে?
মানুষ ঠকিয়ে খোদার হুকুম শয়তানি... ...বাকিটুকু পড়ুন
আসবে তুমি কবে ?
আজি আমার আঙিনায়
তোমার দেখা নাই,
কোথায় তোমায় পাই?
বিশ্ব বিবেকের কাছে
প্রশ্ন রেখে যাই।
তুমি থাকো যে দূরে
আমার স্পর্শের বাহিরে,
আমি থাকিগো অপেক্ষায়।
আসবে যে তুমি কবে ?
কবে হবেগো ঠাঁই আমার ?
... ...বাকিটুকু পড়ুন
(রম্য রচনা -৩০কিলো/ঘন্টা মোটরসাইকেলের গতি )
একজন খুব পরিশ্রম করে খাঁটি শুকনো সবজি( দুষ্টু লোকে যাকে গাঁ*জা বলে ডাকে) খেয়ে পড়াশোনা করে হঠাৎ করে বিসিএস হয়ে গেলো। যথারীতি কষ্ট করে সফলতার গল্প হলো। সবাই খুশি। ক্যাডারের... ...বাকিটুকু পড়ুন
কোথাও ছিলো না কেউ ....
কখনো কোথাও ছিলো না কেউ
না ছিলো উত্তরে, না দক্ষিনে
শুধু তুমি নক্ষত্র হয়ে ছিলে উর্দ্ধাকাশে।
আকাশে আর কোন নক্ষত্র ছিলো না
খাল-বিল-পুকুরে আকাশের ছবি ছিলো না
বাতাসে কারো গন্ধ ছিলোনা
ছিলোনা... ...বাকিটুকু পড়ুন
#প্রিয়তম কী লিখি তোমায়
আমাদের শহর ছিল।
সে শহর ঘিরে গড়ে উঠেছিল অলৌকিক সংসার।
তুমি রোজ তাঁকে যে গল্প শোনাতে সেখানে ভিড় জমাতো বেলা বোস, বনলতা কিংবা রোদ্দুর নামের সেই মেয়েটি!
সে কেবল অভিমানে... ...বাকিটুকু পড়ুন