শিরোনাম দেখে অনেকের চোখ কপালে উঠেছে দেখতে পাচ্ছি। কি মনে হয় আমি সিনেমা পরিচালনা করতে পারি না? না পারলে করছি ক্যমনে হ্যা? হোক না সেটা মঞ্চে! কি? মঞ্চে? এতক্ষনে বুঝি আপনাদের চোখ জায়গামত আসল। হ্যা, ভাই (ও বোন) মঞ্চে। ভাবছেন মঞ্চে আবার সিনেমা কি করে হয়? করলেই হয়। তাহলে ঘটনায় আসি।
ঘটনার শুরু আরেক ঘটনার পরে। আমাদের ডিপার্টমেন্টে নবীন বরণ ও বিদায়ী অনুস্ঠান। আমরা তখন ফাইনাল ইয়ারে। তাই নবীন বরনের দ্বায়িত্ব আমাদের ওপর। অন্যান্য ব্যাচও অংশগ্রহন করবে। আমাদের ব্যাচের কয়েকজন ঠিক করল অভিনয় করবে। নাটক ঠিক করেছে, একটি টিভি নাটকেরই মঞ্চায়ন। ওরা রিহার্সেল করছিল। আমরাও ছিলাম, দেখছিলাম। মনে হচ্ছিল নাটকটা ক্ষুব একটা ভাল হবে না। বললাম, “এটা ছেঁড়ে দিয়ে চল অন্য আইডিয়া বের করি।” দুপুরে সবাই বসলাম আইডিয়া বের করতে। নাওয়া খাওয়া ফেলে আইডিয়ার পিছনে ছুটছি। অনেক রকমই মাথায় আসছে কিন্তু ঠিক যেন জমছিলা না। একসময় এক বন্ধু বলল, “পেয়ে গেছি আইডিয়া।” সবাই ঝুকলাম ওর দিকে। ওদিকে ওর চোখ চকচক করছে। বললাম, “আরে বলে ফেল।” ও বেশ উচ্ছসিত হয়ে বলল, “বাংলা সিনেমা।” এটুকু বলা মাত্রই কাজ হয়ে গেল। একেকজন টিপিকাল বাংলা সিনেমার ডায়লগ ছাড়তে লাগল। আর তাদের ডায়লগের সাথে সাথে অভিনয় দেখে হাসতে হাসতে পেট খারাপ। তৎক্ষনাৎই ঠিক করলাম এটা করব। আরেক বন্ধুর আবার মঞ্চে বেশ অভিজ্ঞতা। ও পরিচালনা করবে বলে ঠিক হল। আমি ও আমার বান্ধবী হব সহকারী পরিচালক। বাকি ছিল স্ক্রীপ্টের।
সেদিন বিকেলে বান্ধবীর সাথে হাঁটছি আর গল্প করছি। ও বলল, “আয় না আমরা দুজন মিলে স্ক্রীপ্টটা লিখে ফেলি।” আমিও ভাবলাম মন্দ না। খাতা কলম বের করে জায়গায় বসেই আমরা স্ক্রীপ্ট লেখা শুরু করলাম। স্ক্রীপ্ট লেখার সময় ডায়লগ লিখছি। হাসির দমকে হাত কেপে কেপে উঠছে। ঠিকভাবে লিখতেও পারছি না। এক বড় আপু আসলেন। উনাকে বেঁছে বেঁছে কয়েকটা ডায়লগ শুনালাম। উনিও দেখলাম হেসে খুন হচ্ছেন। ভাবলাম, ঠিকই আছে তাহলে, শুধু তো আমরা নিজেরা হাসছি না, অন্য কাউকে শুনালে সেও হাসছে। তারমানে মজারই হবে। পুরো স্ক্রীপ্ট লিখতে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হল। পরিচালককে ফোন দিলাম স্ক্রীপ্ট রেডী, এসে নিয়ে যাও। ও চটপট চলে এলো। ফটোকপি করে এক কপি নিল। বললাম, “আমি স্ক্রীপ্টটা রাতে আবার চেক করব। তুমি কাস্টিং কল কর।” তাছাড়া আমরা স্ক্রীপ্টের পাশে আমাদের ক্লাসের ছাত্র-ছাত্রী দের মধ্যে মানাবে এমন কয়েকজনকে বিভিন্ন চরিত্রের সাথে রেফার করে দিয়েছিলাম। ওদেরকে পেলে ভাল, না পেলে আর কেউ রাজি হয় কিনা দেখতে হবে। স্ক্রীপ্ট নিয়ে পরিচালক চলে গেল।
নায়ক হিসেবে আমরা আমাদের ক্লাসের সবচেয়ে লালটু ছেলেটাকে রেফার করেছিলাম। আর নায়িকা হিসেবে পাংকিস মেয়েটাকে। পুলিশ হাবিলদার সব ঠিক করেছিলাম ক্লাসের একটু পেট মোটা ভারি শরীরের দুজন। এছাড়াও ছিল নায়কের বন্ধু-নায়িকার বান্ধবী, নায়িকার বাবা, নায়কের মা। ভিলেন ছিল ক্লাসের মজার দুজন ছেলে। আমাদের সিনেমার জন্য ছোট একটি বাচ্চারও প্রয়োজন ছিল। বাচ্চা ঠিক করেছিলাম আমাদের ক্লাসেরই একজনের দুবছর বয়সী ছেলেকে। পিচ্চিটা বেশ বুদ্ধিমান ছিল।
মুটামুটি আমারা স্ক্রীপ্ট রাইটাররা নাম লিখে দিয়েছিলাম যে এই এই চরিত্রে একে একে মানাবে, পরিচালক ঠিক তাদেরকেই কল করল। প্রথমে সাবাই একটু আধটু আগ্রহ দেখালেও পরবর্তীতে বেশির ভাগই গাঁইগুই করা শুরু কল। মঞ্চে অভিজ্ঞতা নাই, ক্যাম্নে কি করবে এই সেই। শেষে বেচাড়া কাস্টিং কল করল। আগ্রহীরা যোগাযোগ করতে লাগল। বেশ কিছু চরিত্র পাওয়া গেল। সঙ্কট পড়ল নায়িকার। কল করল আমাকে। না না। আমাকে নায়িকা হইতে বলে নাই। বলছে হল থেকে যাকে পারি ধরে আনতে। নায়িকা বানাবে। আমি এর রুমে যাই, তার রুমে যাই। শক্রুবার বেশিরভাগই ডেটিং এ বের হইছে। আর যাদের পাইলাম তাদের আবার বয়ফ্রেন্ডের না আছে, নায়িকার পার্ট পুট নেওয়া যাবে না (তবে তারা বেশ ভাল অভিনয় করে এটা স্বীকার করতেই হবে।আমাদের হলের ফাংশন গুলো এরাই ভাল জমায়) পাওয়া গেল আমাদের ক্লাসের একদম সাদাসিধা মায়েটাকে। বললাম, “নায়িকা হবি?” বেচারী দেখি আকাশ থেকে পড়ে। বসাইয়া ভাল করে বুঝাইয়া বললাম। বুঝল। বেশ আগ্রহ দেখাইল। আমাকে আর পায় কে? নিয়া ছুটলাম শুটিং স্পটে থুক্কু রিহার্সেলে।
আমাদের ক্লাসের লালটু মত ছেলেটাও হাজির। কেন জানি লজ্জায় সে সবসময় লাল হয়ে থাকে। ওদিকে নায়িকা বেশ সাবলীল। ওর অভিনয় দেখে আমি টাব্বুস। “এতদিন কোথায় ছিলে” অবস্থা। কিন্তু নায়ক সাবলিল হইতে পারতেছে না। নায়িকার হাত ধরতে গেলেই তার নাক মুখ কান-টান সব লাল হয়ে যাচ্ছে। পরিচালক বলল, হচ্ছে না। আর হবেও না। ভেঙ্গে পড়লাম। নায়কও বলল তারে দিয়ে হবে না। মঞ্চে অভিজ্ঞতা নাই। মঞ্চে অভিজ্ঞতা নাই বললে ভুল হবে, সে আবার খুব ভাল আবৃতি করে (একবার আমরা ওর আবৃতি শুনে হা। ওর মধ্যে যে এই প্রতিভা আছে জীবনে কল্পনাও করি নাই)। শেষে সব ভেস্তে গেল। নায়িকা নিয়ে ভয়ে ছিলাম সেই নায়িকারই পার্ফরমেন্স দেখে আমরা খুশিতে আটখানা কিন্তু হইল না। যদিও তখন পর্যন্ত সব চরিত্র পাওয়াও যায় নাই। শুটিং ঐখানেই সমাপ্ত। মন খারাপ সবার। পরে অবশ্য খবর পাইছিলাম সেই নবীন বরণের দ্বায়িত্বে যে ম্যাডাম ছিল সে ম্যাডাম কোন বড় লেন্থের কিছু অনুষ্ঠানে ঢুকাবে না। তাই এমনিতেও হত না ওমনিতেও হত না।
মন খারাপের দিন বহু আগেই শেষ। নবীন বরণ দেখে আমাদের সাথে ছিল যারা সাবাই রাগে নানা রকম স্টেটাস মারছিল। কারোরই নবিন বরন পছন্দ হয় নাই। আমাদের নাটকটা (সিনেমা) গেলে পুরো অনুষ্ঠানের লুকটাই নাকি চেঞ্জ হয়ে যেত। (আসলে আমরা সিনেমাটা করতে পারি নাই বলে সবাই মন খারাপ করে এসব বলেছিল, নবীন বরণ অনুষ্ঠান বেশ ভালই হয়েছে)। যাহোক দিন পার হয়ে গেছে, সব ভুলে গেছি। মনের মধ্যে আর এসব নাই।
এরপরের ঘটনা। গত বছর ডিসেম্বরের দিকে আমাদের অনার্স শেষ হতে যাচ্ছে। সবাই প্ল্যান করলাম র্যাগ ডে করব। র্যাগ ডে মানেই মজা। সারাদিন মজা করা, কারো কোন বাঁধা নাই। কি কি করা হবে সব কিছু পরিকল্পনা করছি। র্যাগ ডে কে দুইটা পার্ট করা হবে। একটা র্যালি আরেকটা কালচারাল ফাংশন। এর মধ্যে সেই বান্ধবী আমার কানে কানে বলল, “করবি নাকি ঐটা?” আমি চমকে তাকালাম, “কোনটা?” ও বলল, “ঐ যে আমাদের সিনেমাটা?” ঠিক তখনি মনে হইল করা যায়। আমরা আমরা অনুষ্ঠান করব এখানে কারো কোন কিছু বাদ দেওয়ার ঝামেলা নাই। করাই যায়। আমি আর ও লেগে গেলাম কাজে। পুরানো বৈ খাতার ঘেটে আগের স্ক্রীপ্টটা বের করলেম। ধুলা পড়ে গেছে, নতুন করে লিখলাম আগেরটা দেখে।
কাস্টিং কল। এবার আর পুরানো কাওকে বলা হয়নি। তবে নায়িকাকে কল করেছিলাম সে অসম্মত হয়েছে। যাক অন্যদের খুজছি এর মধ্যে ক্লাসে একটা এনাউন্স করলাম সিনামাটার ব্যাপারে। অনেকেই সারা দিল। এবার হল গতবারের ঠিক উল্টোটা। নায়ক সংকট। তো একদিন এক ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলছিলাম (ও আমাদের প্ল্যানটার কথা জানত না) যে আমরা এরকম এরকম একটা সিনেমা বানাবো, তুই একটু কাউরে রাজী করাতে পারবি নায়ক হতে? ও কয় কিনা, “কেন? কাউরে লাগব কেন? আমারে কি নায়ক নায়ক লাগে না?” আমি চোখ কপালে তুলে বললাম “তুই হবি নায়ক?” পুরোটাই মজা করছিলাম। কিন্তু সে দেখি পুরাই সিরিয়াস। নিয়ে নিলাম নায়ক। রিহার্সেলের দিন নায়কের অভিনয় দেখে সবাই টাস্কি খাই খাই অবস্থা। কিন্তু নায়িকা তখনো সাবলীল না। হাত ধরতে বললে আঙ্গুল বাড়াইয়া দেয়! ওদিকে নায়কের বন্ধু আর নায়িকার বান্ধবি দূর্দান্ত অভিনয় করছে। নায়িকার কারনে একপর্যায়ে নায়কও বেকে বসল। সে নাকি নায়িকার সাথে সাবলিল হতে পারছে না। রাগ ধরে গেল। আমরা দুই স্ক্রিপ্ট রাইটারই ছিলাম পরিচালক। অবশ্য অনেকেই হেল্প করছিল। অভিনয় শিখিয়া দিচ্ছিল। তাদের কয়েকজন বলল, “ক্যরেক্টার বদলাইয়া ফেল।” আমি বললাম, “মানে?” ওরা নায়ক-নায়িকার জায়গায় নায়ক-নায়িকার বন্ধু-বান্ধবীকে রিপ্লেস করতে বলল। আমি রাজী হলাম না। এমনিতে কেউ অভিনয় করতে চায় না। ক্যারেক্টার বদলাইয়া দিলে কেউই করবে না আর। তখন আম-ছালা দুইটাই যাবে। যা হবে হবে আমি এদের দিয়েই অভিনয়ের পক্ষপাতি ছিলাম। এর মধ্যে অনেক ঝামেলা গেল। কেউ কেউ আমারে ফোন দিয়াই বলে “দোস্ত রাগ করিস না। আমি চরিত্রটা করতে পারছি না। কাজ আছে ব্যাস্ত থাকব।” আবার অনেকে বলে, “আমার চরিত্রটা আমার পছন্দ হয় নাই। আমাকে অন্য রোল দে।” আমি পুরাপুরি শক্ত ছিলাম। ঝারি দিছি বিশাল। ভাবছি এর পর থেকে আমার সাথে আর কথাই বলবে না। ওমা দেখি আমার সেই প্রাণপ্রিয় বন্ধুগুলা ঠিকই পরদিন রিহার্সেলে যথাসময়ে এসে হাজির। ওদিকে নায়ক-নায়িকাকে নিয়ে ঝামেলায় পরছি। একদিন নায়ক দেরী করে তো আরেকদিন নায়িকা। কান্না পাইছে আমার অপেক্ষা করতে করতে। ঝাড়ি মারছি (এজন্য পরে অবশ্য আমি বেশ লজ্জিত হইছি। মেজাজ ঠিক রাখতে না পারলে কি করব?)।
সবচেয়ে মনে রাখার মত দিন হচ্ছে নাচ প্র্যাক্টিসের দিন গুলো। টিপিকাল বাংলা সিনেমার নাচের স্টেপ শিখাইয়া দিসি কয়েকজন মিলে। নাচের ক্ষেত্রে কয়েকজনই হেল্প করে ছে। কিন্তু কোন স্টেপই ঠিক মত হয় না। শেষ্পর্যন্ত আমি বললাম, “ভাই তোরা সকাল বেলা ব্যায়াম করিস না? ঐ সকাল বেলার ব্যায়ামেরই কিছু স্টেপ দে তাইলেই হবে।” পরে অবশ্য তারা সকাল বেলার ব্যয়ামের স্টেপ দেয় নাই। নাচ প্র্যক্টিস করছে ভালমতই। সবই ঠিক ঠাক মত আগাইছে। নায়ক-নায়িকা দুজনেই সাবলীল হইছে। আমরা আগের দিন রাত ও অনুষ্ঠানের দিন অনুষ্ঠানের আগেও রিহার্সেল করেছি। শেষ্পর্যন্ত সেই দিন আসল। আমরা দু পরিচালক ঠিকঠাক কাজ এগিয়ে নিয়ে গেছি। অবশেষে সিনেমা মঞ্চে উঠেছে। সিনেমার ডাক পরলে আমরা আগে থেকে ঠিক করে রেখেছিলাম কে কোন ডোর দিয়ে ইন করবে। আমি মিউজিকের ওখানে আর আরেক পরিচালক স্ক্রিপ্ট নিয়ে একটা ডোরে দাঁড়িয়ে থাকবে। ও যথাসময়ে যার যার রোল তাঁকে মঞ্চে পাঠাবে। আমি মিউজিক নিয়ে ল্যপ্টপের সামনে বসে আছি। কখন কোন সাউন্ড প্লে করা হবে এগুলো আগে থেকেই ঠিক করা হয়েছে। এখানে বলে রাখি মিউজিক ঠিক করা ছিল আরেকটি মজার অভিজ্ঞতা। আমরা মনের মত গান পাচ্ছিলাম না। পরে নাচের জন্য “অনন্ত প্রেম তুমি দাও আমাকে” এটা সিলেক্ট করেছি। কিন্তু এটার ভাল কোন অডিও পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে ভিডিও অডিওতে কনভার্ট করলাম (এই সিনেমার পর অনেকদিন এই গানটি আমার পছন্দের গানের তালিকার এক নাম্বারে ছিল :p )। আরেকটা নিয়েছিলাম “পরে না চোখের পলক” গানটি। এই গানটি নাচের জন্য না। অন্য একটি দৃশ্যের জন্য ব্যাকগ্রাউন্ড হিসেবে দরকার ছিল। মিউজিক নিয়ে ল্যপ্টপের সামনে বসে আছি। একের পর এক দৃশ্য যাচ্ছে। বিশ্বাস করুন আমার পিছনে দর্শকদের হাসির জন্য আমি বসে থাকতে পারছিলাম না। খুব আনন্দ লাগছিল। তখন মনে হয়েছে আমরা যেভাবে চেয়েছিলাম সেভাবেই হয়েছে।
আমার বিবেচনায় এই সিনামায় দূর্দান্ত রোল প্লে করছে নায়িকার বাবা আর নায়িকার মা। ওদের জন্যই পুরো সিনেমার অর্ধেক খুত-টুত সব ঢাকা পড়ে গেছে। নায়িকার বাবার ডায়লগ দেওয়ার ধরন ছিল বেশ মজার। ওরা রিহার্সেলে সবসময় যথাসময়ে উপস্থিত ছিল। আর গুন্ডাদের কথা কি-ইবা বলব ওরা ছিল সিনেমার গুন্ডা+জোকার। ওদের অভিনয়টা ছিল দেখার মত। রিহার্সেলের সময় সবাই মজার অভিনয় করেছিল। আর ওগুলো দেখে প্রথম প্রথম হাসলেও দেখতে দেখতে সয়ে গেছিল, পরে আর তেমনটা হাসি নাই। কিন্তু গুন্ডাদের রোল যেসব বন্ধুরা প্লে করেছিল তাদের অভিনয় যতবার দেখেছি ততবার হেসেছি।আর পুলিশ বাহিনীর ওরা একবারো রিহার্সেল করে নি। প্রথম মঞ্চেই করেছে, ওদের অভিনয় ও গেট আপ সবই ছিল একদম পারফেক্ট। কস্টিউম সব যার যা ছিল তাই, তবে ক্যামনে ক্যামনে সব জানি সিনেমার কাস্টদের মতই হয়েছিল। পুলিশের ড্রেস একটা ঝামেলা ছিল। এজন্য ডিপার্টমেন্টের অনুমতি লাগছে।
ও আচ্ছা সবচেয়ে মজার পার্ট টা তো এখনো বলাই হয়নি। আমাদের সিনেমায় একটা বাচ্চার চরিত্র ছিল এটা আগেই বলেছি। কিন্তু আমরা কোন বাচ্চাই পাচ্ছিলাম না। কি করা যায় ভাবতে ভাবতে ঠিক করলাম একটা বালিশ কাথা দিয়ে পেচিয়ে বাচ্চা বানাবো। যদিও আমাদের বাচ্চাটার একটা ডায়লগ ছিল, কেটে দিয়েছি উপায় না পেয়ে। আলোচনার একপর্যায়ে এক বন্ধু বলল, আমাদের ক্লাসের সবচেয়ে ছোট মত মেয়েটার কথা, ওকে বাচ্চা বানালে কেমন হয়? ও পুরা মজা করেই বলেছিল। কিন্তু আমরা মজাটাকেই লুফে নিলাম। ওকেই বাচ্চার রোলটা দিব। এটা নিয়ে অবশ্য হাসতে হাসতে জান শেষ। আমি ভাবছিলাম ও এরকম একটা রোল নিতে কখনই রাজি হবে না। ওমা দেখি একপায়ে খাড়া। আমরাও হাফ ছেঁড়ে বাচলাম। দু-একবার রিহার্সেল করেছিল। শেষে মঞ্চায়নের দিনই ও লাপাত্তা! আমাদের তো মাথায় বাড়ি। কি করি কি করি। টীমের সবাই বাচ্চা খুজতে লেগে গেল। ওরে ফোন দেই, ফোন ধরার কোন নাম নাই। শেষে আমাদের নায়ক সাব তার এক বন্ধুকে বাচ্চা ঠিক করল, ওদিকে আরেকজন ঠিক করল আরেকটা মেয়েকে। বাচ্চার রোলের সময় মঞ্চের দিকে তাকাতেই আমার চোখ বের হয়ে যায় যায় অবস্থা। দু বাচ্চাই মঞ্চে হাজির। কয়েক মিলি সেকেন্ডের জন্য সব কিছু থেমে গেল। সব দেখেশুনে ছেলে বাচ্চাটা (নায়কের বন্ধু, সে আমাদের ক্লাসমেট এবং বন্ধু) মঞ্চ থেকে সরে গেল। ওর বুদ্ধির জন্য সব ঠিক ঠাক মত শেষ হল। আমাদের এই বাচ্চা রোলটা অল্প কিছুক্ষনের জন্য হলেও এর নামেই সিনেমার নাম। শেষ দৃশ্যে নায়িকার বাবা যখন জেল থেকে বের হয় তখন নায়ক-নায়িকা তাদের সন্তানকে নিয়ে বাবাকে বরণ করতে জেলে যায়। বাবা বের হলে নায়িকার তার সন্তানকে দেখিয়ে বাবার উদ্দেশ্যে ডায়লগ ছিল এরকম “দেখ ড্যাডি। এ হচ্ছে আমাদের ভালবাসার ফুল।” আর আমাদের সিনেমার নাম ছিল “ভালবাসার ফুল”।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৫:৫৫