কথোপকথন একঃ
-হ্যালো দোস্ত আজকে ফেসবুকে ওই পোলা ওই জিনিস শেয়ার করছে দেখছস। ওইটা নিয়া আবার সামুতেও আজকে একজন ব্লগিং করছে লেখাটা পড়িস।
-শালার বা***ত পুলাপাইন কেমনে পারে বাপ মা রে বৃদ্ধা আশ্রমে রাইখা আসতে!
কথোপকথন দুইঃ
- জান, কি কর তুমি? আজকে না আমার মনটা খারাপ জানো। আজকে ফেইসবুকে আমার এক ফটোগ্রাফার বন্ধু একটা ছবি শেয়ার দিয়েছে। একজন লোক ডাস্টবিন থেকে ময়লা খাবার কুড়িয়ে খাচ্ছে...... ..... ব্লা ...ব্লা ......ব্লা............জান দেখেই মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল।তাই তোমাকে ফোন দিলাম।
কথোপকথন তিনঃ
-দোস্ত আজকে ব্লগে একটা লিখা দিছি, পড়িস।
- কি লিখছস।
- আরে কইসা না, আজকা হালায় মগবাজারে গেসিলাম। বাসায় আওনের সময় কুন রিক্সা নাইক্কা। অনেকক্ষন খাড়াইয়া থাকবার পর দেখি এক বুইড়া চাচা রিক্সা চালাইয়া আইতাছে............কি আর করুম রিক্সা পাইন দেইখা উইঠা পড়লাম। পড়ে জিগাইলাম চাচা এত বয়সে তুমি রিক্সা চালাও কেন? পরে চাচার কাহিনী শুনলাম। ওইটা লইয়াই লিখছি।
ঊহ! আহ! শীট ম্যানঃ
আহা বেচারাদের সে কী কষ্ট। এই বলিয়া কেউ কেউ কমেন্ট করিলেন, কেঊ বা আবার গার্লফ্রেন্ডের মন ভাল করার জন্য তাকে নিয়া কে এফ সি তে খাওয়ার আয়োজন করিল, আর অন্যজন তার বন্ধুর লিখাটি ফেইসবুক শেয়ার দিয়া আর বিকালে বিড়ির আড্ডায় বন্ধুর পিঠে বাহবা সুলভ কয়েকখানা চাপড় দিয়াই তাদের দায়িত্ব শেষ করিল।
আমি প্রায়ই ফেইসবুকে এই ধরনের শেয়ার দেখি। যাও দেখি তার বেশিরভাগই মি। এক্স তার ফেইসবুকের পেইজ এর লাইক এর সংখ্যা বাড়ানোর জন্য দিয়া থাকেন, আর তাতে আমরা প্রায়ই লাইকাই............ভাল লাগলে শেয়ার ও দিই। আর কমেন্ট এর কথা না হয় বাদ ই দিলাম।
আর এইভাবেই হতে থাকে পোস্ট, বাড়তে থাকে শেয়ার আর লাইকের সংখ্যা, আর তার সাথে বেড়ে চলে কতিপয় মি। এক্স দের পরিচিতি আর ফোনে মিস ওয়াই এর সাথে কথা বলার একটি উপলক্ষ্য মাত্র।
এবং অতঃপরঃ
অতঃপর আমরা আর কিছুই করি না বা আমাদের আর করা হয়ে উঠে না। বড়জোর কেউ কেউ বলেনঃ ভাই আমি অমুকের জন্য ৫০০/১০০০/২০০০ টাকা দিতে রাজি আছি, কেউ কি আমাকে বলবেন টাকা টা ওদের কাছে কিভাবে দিব? কিন্তু আমি নিজে কখনও সেই ক্ষুধার্ত লোকটিকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করিনি, আমরা কেউই কখনও সেই বৃদ্ধ বাবা-মা কোথায় আছেন কেমন আছেন সেটা জানতে চেষ্টা করিনি, কখনও আমরা ক'জনা এইটা ভাবিনি ওই বুড়ো রিক্সাওয়ালার কোন উপার্জনের ব্যবস্থা করা যায় কিনা।
আর এভাবেই এগিয়ে যায় দিন।
বৃদ্ধাশ্রমের সেই লাল রেজিস্টার খাতার কোন এক কোণায়,
লিখা হয় আর এক জোড়া বুড়ো শালিকের নাম।
ক্ষুধার্ত সেই লোকটি আজও ছুটে চলে
খাবারের খোজে, এক ডাস্টবিন থেকে অন্য ডাস্টবিনে।
সেই রিক্সাটি আজও চলে ঢাকার রাস্তায়,
শুধু বুড়ো চালকটি মরে গেলে পালা বদল হয়
রিকশাওয়ালার। অথচ বদলায় না কিছুই।
আমরা আজও সেই একইভাবে ব্লগিং করি,
মি এক্স নিরন্তর ফেইসবুকে পেইজ খুলে থাকেন।
কে এফ সি থেকে বের হওয়া কোন এক রমণী
তার হাতে ধরে থাকা,
আর্ধেক খালি গ্লাস টি ছুড়ে ফেলে দেন রাস্তার এক কোণায়।
আর অতঃপর ছুটে আসে গুটিকয়েক ক্ষুধার্ত কুকুর।
তা দেখে কেউ বলে উঠে ঃ শীট ম্যান,
জায়গাটার স্ট্যাটাসই গেল।
তারপর কোন এক ললনার হাত ধরে বলে উঠেন:
এখানে না
চল অন্য কোথাও চল।