somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আসুন জাতে উঠিঃ আজকের বিষয়-প্রবাসে বাঙ্গালী

১৩ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৩:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণঃ এই লেখাটি নিজেদের স্বজাতির সমালোচনা নিয়ে লেখা। কারও সাথে মিলে গিলে লেখকের কিছু করার নাই; কারণ আপনার মত এমন অনেক ছেঞ্চিতিভ মানুষদের আচার আচরণের ফলাফল এই লেখা।

কোথায় জানি পড়েছিলাম-"বিদেশী চোর স্বদেশে এসে হয়ে যায় প্রভু" ঠিক খেয়াল নেই কিন্তু এই রকমই বলা ছিল। আর প্রবাসে বাঙ্গালীদের (সবার না তবে সংখ্যাটা নেহায়েত কম না) আচার আচরণ দেখে মাঝে মাঝে মনে হয়, তারাই কেবল আগরতলার বাসিন্দা, আর আমরা বাদ বাকীরা মনে হয় ভাসনতলার অধিবাসী। তবে আমার নিজের দেখা কিছু অসাধারণ মানুষও আছে, যদিও তাদের সংখ্যা নেহায়েত কম।

যারা একসময় ইমিগ্রেশন নিয়ে ইউ এস এ কিংবা কানাডায় এসেছেন, তাদের সাথে মিশার অভিজ্ঞতা আমার কম। যাও মিশার অভিজ্ঞতা আছে সবাই হল সিনিয়র সিটিজেন টাইপের। সুতরাং এই লেখায় কেবলই যারা পড়া শোনা খাড়া করতে বিদেশে এসেছেন তাদেরই কথা বলা হবে।

১)আমন্সটাইন (আই এম আইন্সটাইন) সমাজঃ এরা হলেন সবজান্তা শমসের টাইপের। এইটা ঠিক বিদেশে যারা আসেন তারা সবাই নিজ নিজ ফিল্ড এ যথেষ্ট পারদর্শী কিংবা কমবেশি সবাই টপার কিংবা ভাল রেজাল্টধারী। সে পর্যন্ত ঠিক আছে, কিন্তু যে কোন আলোচনা এদের জ্ঞান কপচানো চাই। সহজ কথাকে এরা হিব্রু ভাষায় বলতে পছন্দ করে বেশি। আর কোন গুরুগম্ভীর আলোচনায় এদের শরীরের রেডিয়েশন এর হার সেই আলোচনায় অংশ নেয়া মানুষের সংখ্যার সাথে কিউব আকারে সমানুপাতে পরিবর্তিত হয়, আর মেয়ে মানুষ থাকলে ত কথাই নাই।

২)ফেস-প্রেমিকঃ যাদের দেশপ্রেম কেবলই ফেইসবুকে সীমাবদ্ধ। ফেইসবুকে আসলেই এদের দেশপ্রেম আমাদের পোলাদের শরীরের অনৈচ্ছিক পেশীর মত খাড়াইয়া যায়, যাহাকে নামাইতে হইলে রীতিমত তেল দিয়া মালিশ করা লাগে। ঘন্টায় ঘন্টায় ডায়বেটিস রোগীর মূত্র বিসর্জনের মতই এরা ফেইসবুকে দেশপ্রেমের গন্ধযুক্ত স্টাটাস প্রসব করবে; আর তাহা মূলত হয় নিজের জি এফ কিংবা বউ এর সামনে নিজেকে খাটি দেশপ্রেমিক থুক্কু ফেস-প্রেমিক প্রমাণ করার নিমিত্তার্থে।

৩) ছেলেবিতি সমাজ (টাল সামলানো)ঃ এরা ভদ্র জনগোষ্ঠী। এরা দেশে থাকতে নিজেদের ভার্সিটির পোলাপাইনরে দেইখা শুইনা রাখত, বাইরে আইসাও এরা তাই করে। দুনিয়ার যেই চিপায়ই এরা থাকুক না কেন, দেশের পোলাপাইনের জন্য এদের জান প্রাণ হাজির। তাই ত ফেইসবুকের কল্যাণে গুনোত্তর ধারার অনুপাতেই এদের সুনাম চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। আমি মাঝে মাঝে চিন্তা করি এরা যেই পরিমাণ টাইম অন্তত নিজের ভার্সিটির পোলাপাইনের প্রশ্নোত্তর এর পিছনে দেয়, সেই সময়রে তাদের প্রতি ঘন্টায় পাওয়া স্যালারী দিয়া গুণ করলে সবাই বছরে একটা কইরা সেকেন্ড হ্যান্ড গাড়ি আরামসে কিনবার পারত। আমি এদের খুব ভালা পাই।

৪) ছেলেবিতি সমাজ (টাল না সামলানো)ঃ এদের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নিয়ত ভালই থাকে, কিন্তু ছেলেবিতি ভাবের হিট খাইয়া এরা আর টাল সামলাইতে পারে না। তখন এরা শুধু ফেইসবুকেই উষ্ঠা খায় জায়গায় জায়গায়। এদের কথা শুইনা মনে হয় নিজেই ঠিক, বাকী সবাই বেঠিক। আর সেই বেঠিক রে ঠিক করার জন্য এদের টেনশন এর শেষ নাই। কখনও কখনও এরা নিজের মতাদর্শরে অন্যের উপর চাপাইয়া দেয়ার চেষ্টা করে, অনেকটা দল ভারী করা টাইপের আর কি, আফটার অল গোয়ালে একা একা আর কয়দিন থাকব। কার কী মতামত জানি না, আমি আপাতত এদেরকে এড়াইয়া চলার চেষ্টা করি।

৫) সেলফিটাস সমাজ (সেলফি+ইসটাটাস প্রসব করা সমাজ)ঃ এদের কাজই হইল উৎ হইয়া কাইত হইয়া চিত হইয়া হাত পাও চ্যাগাইয়া ছবি তুলা আর কী প্লাম গীবনে, কী আচা গীবনে এই টাইপ কথা কইয়া ফেইসবুকে স্টাটাস আর ছবি পোস্টানো। এদের কাজ কাম দেখলে মনে হয় বাচার জন্য পাচটি মৌলিক চাহিদার সাথে ছয় নম্বরটা যোগ হইছে ঃ ফেইসবুকে ল্যাদানো। এদের না পারবেন আপনে আনফ্রেন্ড করতে, না পারবেন কিছু কইতে। কারণ এরা আপনারই ভাই বেরাদার। আরে তোর ফুপাতো বোনের বাসার কামের বুয়া তোর ছোট খালার দুই নম্বর মেয়েরে গোসল করাইয়া দিছে- এই কথা জাইনা আমি কী করুম - অথচ ফেইসবুকে এরা এই টাইপের জিনিসপাতি ল্যাদায়।

৬) চেকিনিস্টঃ এদের কাজই হল জায়গায় জায়গায় চেক ইন দেয়া। দেইখা মনে হয় ফেইসবুক ওনাদের চেক ইন দেয়ার জন্য ট্যাকাটুকা দেয়। মুতিং ইন ভিক্টোরিয়া সিক্রেটস বাথরুম, হাগিং ইন হোটেল হলিডে ইন, খায়িং ইন স্টারবাক্স এইটাইপের চেক ইন প্রসব করাই এদের কাজ। আরে ব্যাটা/ব্যাটি যখন ওয়ালমার্টে যাস তখন কি চেক ইন দেস, যখন ম্যাক এ যাইয়া ওয়ান ডলার স্যান্ডউইচ ঠুসস তখন কী চেক ইন দেস। তখন ত চেক ইন দিলে ভাব মারা যাইব না, তাই তারা তখন চেক ইন দেন না। শুরুতে শুরুতে আমি নিজেও দিতাম, নতুন আসা জুনিয়র পোলাপাইনও দেয় - কিন্তু যখন বুড়া বুড়ি রা লুথাগিরি করা শুরু করে তখন মনে হয় দেই দুইটা।

৭) হিপোক্রেট সমাজঃ এরা হইল সবচেয়ে ভয়ংকর টাইপের প্রজাতি। এদের নিয়া আমার একটাই কথা " আপনি তখনই ভাত এর অভাব অনুভব করবেন, যখন আপনি ভাত খাবেন না"। এরা রাত দশটা বাজে ঠিক ভাত খাবে না, কিন্তু আটটা বাজে ঠিকই রেস্টুরেন্ট এ গিয়া বিরিয়ানী খাবে আর মানুষকে বলবে দেখ আমি ভাত খাওয়া ছাড়া কত্ত ভাল আছি। এরা হইল দুমুখো সাপের মত, নিজের ডাবল স্টান্ডার্ড টাইপ লাইফ লীড করব, আর কচি কচি পোলামাইয়া লাইফের বারোটা বাজাইব। এদের কথা হইল, "একলা আছি ভাল আছি"- যদিও এরা কেউ ভাত খায় না, কিন্তু বিরিয়ানী ঠিকই খায়। তবে খুব বেশিদিন বিরিয়ানী খাইয়া এরা চলতে পারে না; কারণ জীবনে ভাতটা প্রয়োজন আর বিরিয়ানী টা বিলাসিতা। আমার দেখা অভিজ্ঞতা বলে একটা সময়ে এদের ঠিকই বদহজম শুরু হয়, তখন এরা আবার ভাতের জন্য কান্নাকাটি করে। আর তখন ভাত না পাইলে সব দোষ সমাজের।

৮) শো-অফ সমাজঃ এদের নিয়া নতুন কইরা বলার কিছু নাই। অমুকে স্টারবাক্স এ কফি খাইয়া ফেইসবুকে ছবি পুস্টাইছে, কালকাই আমি আর তুমি সেইখানে যাইয়া দুই হাতে দুই কাপ কফি নিয়া ফেইসবুকে ছবি পুস্টামু এই নীতিতে চলে। আপনি ছবি তোলার নিয়তেই ধরেন একটা ঢেসলর কিনছেন; আপনার টার সাইজ যদি ছয় ইঞ্ছি লম্বায় হয় তাইলে এরা কমসে কম এক ফুট লম্বা আর আধ ফুট বেড় এর ঢেসলর কিনা দাত ক্যালাইয়া দিনের বেলা ঠাডা রোদ্রের মাঝে অটোমেটিক মুডে ফ্লাশ দিয়া নিজের সেলফি তুইলা ফেইসবুকে ছবি পোস্টাইব উইথ ক্যাপশন "মাই সেলফি বাই মাই ফাস্ট ঢেসলর" আর বউ যদি চ্যাটাশ মারে তাইলে ক্যাপশন হইব "আমার জান এর টা না এত্ত বড়, এত্ত বড় টা দিয়ে আজকে চবি তুলসি" এই টাইপের।

৯) অসামাজিক সমাজঃ এদের কথা কইতে গেলে অভিধান এর সকল চ বর্গীয় গালি ফুরাইয়া যাবে, কিন্তু এদের প্রশংসা আর শেষ হবে না। এরা তারাই যারা বিদেশে এসে তুমি কোন বিশ্ববিদ্যালয়, কোন কলেজ, কোন স্কুল এই টাইপ গ্রুপিং করবে আর নিজেদের বাউন্ডারীর বাইরে এরা অন্য কারও সাথে চলবে না। উইকেন্ড পার্টি কিংবা ফ্যামিলির কোন গেটটুগেদার এর কথা ত বাদ ই দিলাম; ঈদের সময়ও এরা নিজেদের গ্রুপের পোলাপাইন ছাড়া অন্য কাউরেও ডাকে না। আমার এলাকায় ঈদের সময় আমাদের বাড়ির শত্রুর বাসায়ও আমরা সেমাই-পোলাও খাইতে যাইতাম। আর এরা বিদেশে আইসা এইরকম ছ্যাচড়া লেভেলের অসামাজিক কেমনে হয়, সেইটা আমার মাথায় এখনও ঢুকে না। আমরা সাদাদের রেসিস্ট বইলা গালি দেই, আমার ত মনে হয় রেসিজম এ এরা সাদাদেরও ছাড়াইয়া গেছে।

যাই হোক, জগতে ভাল খারাপ দুই ই থাকবে এইটাই নিয়ম। কিন্তু মানুষ তখনই ভাল এর দিকে অগ্রসর হতে পারে যখন সে নিজের খারাপ কোন গুণকে স্বীকার করে নিবে এবং সংশোধন এর জন্য চেষ্ঠা করবে। আমার মা সবসময়ই বলে, অহংকার দিন শেষে কিছুই এনে দেয় না; মানুষের বিনয়ই মানুষকে বড় করে। আর দিনশেষে মানুষ কিন্তু আপনার ভালটার জন্যই আপনাকে শ্রদ্ধা করবে।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৩:৩০
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাজত্ব আল্লাহ দিলে রাষ্ট্রে দ্বীন কায়েম আমাদেরকে করতে হবে কেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:০৬



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ২৬ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৬। বল হে সার্বভৈৗম শক্তির (রাজত্বের) মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) প্রদান কর এবং যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) কেড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তির কোরাস দল

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৫



ঘুমিয়ে যেও না !
দরজা বন্ধ করো না -
বিশ্বাস রাখো বিপ্লবীরা ফিরে আসবেই
বন্যা ঝড় তুফান , বজ্র কণ্ঠে কোরাস করে
একদিন তারা ঠিক ফিরবে তোমার শহরে।
-
হয়তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাইডেন ইহুদী চক্তান্ত থেকে বের হয়েছে, মনে হয়!

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪৮



নেতানিয়াহু ও তার ওয়ার-ক্যাবিনেট বাইডেনকে ইরান আক্রমণের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলো; বাইডেন সেই চক্রান্ত থেকে বের হয়েছে; ইহুদীরা ষড়যন্ত্রকারী, কিন্তু আমেরিকানরা বুদ্ধিমান। নেতানিয়াহু রাফাতে বোমা ফেলাতে, আজকে সকাল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজ ২৫শে বৈশাখ। ১৬৩তম রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে আমার গাওয়া কয়েকটি রবীন্দ্রসঙ্গীত শেয়ার করলাম। খুব সাধারণ মানের গায়কী

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ০৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০৫

আপনারা জানেন, আমি কোনো প্রফেশনাল সিঙ্গার না, গলাও ভালো না, কিন্তু গান আমি খুব ভালোবাসি। গান বা সুরই পৃথিবীতে একমাত্র হিরন্ময় প্রেম। এই সুরের মধ্যে ডুবতে ডুবতে একসময় নিজেই সুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্ব কবি

লিখেছেন সাইদুর রহমান, ০৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৭

বৈশাখেরি পঁচিশ তারিখ
কবি তোমার জনম
দিন,
বহু বছর পার হয়েছে
আজও হৃদে, হও নি
লীন।

কবিতা আর গল্প ছড়া
পড়ি সবাই, জুড়ায়
প্রাণ,
খ্যাতি পেলে বিশ্ব জুড়ে
পেলে নভেল, পেলে
মান।

সবার ঘরেই গীতাঞ্জলী
পড়ে সবাই তৃপ্তি
পাই,
আজকে তুমি নেই জগতে
তোমার লেখায় খুঁজি
তাই।

যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×