- বাবা, আমার মেয়ের জন্য একটা ছেলে দেইখ ত। ধার্মিক হইতে হবে।
প্রাক বিবাহ ইন্টারভিউ এর সময় এঃ
- আরে এই ছেলে দেখি ঘুষ খায় না, ঘুষ না খাইলে সংসার চালাবে কেমনে?
(এই গল্পটা ফেইসবুক থেকে নেয়া)
- বাবা, বুঝলা সবসময় সত্য কথা বলবা।
- জী আঙ্কেল।
-----------------------------------
- তোমাকে কে বলতে বলছে যে ওনার ছেলে মদ খায়, তোমার জন্য তার ছেলের বিয়ের ভেঙ্গে গেছে।
- কেন আংকেল আপনিই না বললেন, সত্য কথা বলতে।
- সত্য কথা বুঝে শুনে বলতে হয়।
(এই গল্পটা আমার বন্ধুর। সত্যি কথা বলাতে তারে রীতিমত কথা শুনতে হইছিল)
-নাহ আমার ব্যাঙ্কে কোন সেভিংস একাউন্ট নাই? এমনকি ইসলামী ব্যাঙ্ক এ ও না। সুদ গ্রহণ করা যাবে না এইটা স্পষ্টতই মানা করা আছে।
- আরে এই সুদ ত সেই সুদ না। ( যে বলতেছিল সে আবার পাচ ওয়াক্ত নামাজী)
(এই গল্পটাও আমার বন্ধুর)
- কী ভাই, যাকাত দিবেন না এইবার।
- আরে যাকাত আবার কি জিনিস? সরকাররে ত ট্যাক্স দেই। ওইটা না দিলে যাকাত দিতাম।
- (মনে মনে) জী ভাই যারা যাকাত দেয় তারা ট্যাক্সও ঠিকমত দেয়।
(এই গল্পটা আমার)
- আচ্ছা জিজ্ঞাসা কর ত, খাবারে কোন পর্ক আছে কিনা।
- না ভাই নাই।
- ওকে
- (সেই ভাই ফোনে) আজকে রাতে কিন্তু পার্টি হবে পার্টি। মিনিমাম ২০% থাকা লাগবে, নাইলে আসলে জমে না।
তাদের থিওরীতে পর্ক হারাম, আর ২০% হালাল।
এরপর আসি কাল্পনিক গল্প এঃ
- স্যার আজকে মাসের পনের তারিখ, অথচ আমার বেতনটা এখনও দিলেন না।
- আরে রাখ তোর বেতন, আগে কাজ কাম ঠিক মত কর। দুইদিন পর এসে নিয়ে যাইস। আমি যেন নামাজ পইড়া আইসা দেখি তোর গাড়ি ধোয়া শেষ হইছে।
কোথায় জানি বলা আছিল, "তোমার অধীনস্তদের ঘাম শুকানোর আগে তার মজুরি দিয়ে দাও"। ঘাম শুকাইছে আজ মাসের পনের দিন হইছে।
- থাক মা, না পারলে খেতে হবে না। মর্জিনা এই মর্জিনা নেহ ছোট এর এই খাবার এর সাথে এর একটু ভাত বেড়ে নিয়ে তুই খেয়ে ফেল।
- আর বাকী খাবার গুলা ফ্রীজে তুলে রাখবি। এই বার যদি আবার তরকারী চুরি করে খাইছিস, তবে মেরে তোর পিঠের চামড়া তুলে ফেলব।
কোথায় জানি বলা ছিল, তুমি নিজের জন্য যা পছন্দ কর অধীনস্তদের বেলায় ও তা পছন্দ কর।
এইরকম অসংগতি নিয়ে হাজারও কাল্পনিক গল্প লিখে ফেলা যাবে। হাজী সাহেব প্রতি বছরই হজেই যান, শুধু বছর শেষে অন্যায়ভাবে ভাড়াটিয়াদের ভাড়া কোন কারণ ছাড়াই বাড়িয়ে থাকেন। করিম সাহেব অফিসের জি এম; নিজের বেতনটা প্রতি বছরই হর্তা কর্তাদের পায়ে ধরে ঠিকঠাক বাড়িয়ে নিলেও যাদের ঘামে কারখানা চলে তাদের বেতন টা ঠিক মত দেন না। মুন্সী সাহেব কথায় কথায় ধর্মের বুলি আওড়ে বেড়ান, অথচ নিজের স্ত্রী একবেলা ঠিকমত রান্না না করলে তিনি তার সাথে যা তা বলে খারাপ ব্যবহার করেন। অথচ মুন্সী সাহেবের আল্লাহ এইটা ভালভাবে বলে দিয়েছেন, বিচার দিবসে নামাজের কথা সবার আগে জিজ্ঞাসা করা হলেও মীযান এর পাল্লায় নিজের স্ত্রীর সাথে কিরূপ ব্যাবহার তিনি করেছিলেন সেইটা সবার আগে মাপা হবে। জমিলা বিবি সেইদিন পাশের বাসার ভাবীর মেয়েরা কেন হিজাব পড়ে না সেইটা নিয়ে নিতান্তই রূঢ় ভাষায় যা তা শুনিয়ে এলেন, অথচ তার স্বামীর হক তিনি ঠিকমত আদায় করেন না।
এইটা নিতান্তই একজন অন্ধকারাচ্ছন্ন, কুসংস্কারভাবাপন্ন, অন্ধ মানুষের লেখা। গল্পগুলা নেহায়েত কাল্পনিক না, খানিকটা অবজারভেশন এর খানিকটা কল্পনা মিশিয়ে লেখা। তবে কমবেশি এই রকম ই ঘটে। এই কথাগুলা বলার জন্য আমারেও জীবনের কোন এক সময়ে নাস্তিক গালি খাইতে হইছিল। কারণ মানুষের দ্বৈত আচরণ নিয়ে কথা বলেছিলাম।
এইবার যারা কলম চলবেই বলে, চাপাতী চলবেই এই মতবাদে বিশ্বাসী; কিংবা বিশ্বাসী না হলেও যারা মনে করেন যা হইছে ঠিক হইছে তাদের জন্য বলিঃ
কোন একবার মক্কার কাফিররা আবু বকর (রা) এর সামনে হযরত মুহাম্মাদ (সা) কে যা তা বলে অভিশাপ দিচ্ছিল। এমন কোন বাজে কথা নাই তারা বলে নাই। একসময় আবু বকর সিদ্দীক (রা) তা সহ্য করতে না পেরে, প্রতিবাদ করতে দাড়িয়ে যান। ঠিক সেই সময় রাসুল (সা) সেই জায়গা থেকে উঠে চলে যান। আবু বকর (রা) তখন দৌড়ে গিয়ে মহানবী (সা) এর কাছে যান এবং তার উঠে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলেন। মহানবী (স) তাকে বললেন, যতক্ষণ পর্যন্ত তুমি চুপ ছিলে ততক্ষণ পর্যন্ত সেইখানে ফেরেশতারা ছিল, আর বলছিল আবু বকর হক এর উপর আছে। কিন্তু যেই তুমি তোমার ধৈর্য হারিয়ে প্রতিবাদ করতে গেলে তখনই ফেরেশতারা সেই স্থান ত্যাগ করল। আর সেই সাথে আমি ও প্রস্থান করলাম। এই ঘটনার শিক্ষা ছিল এইটাই, মানুষ আজেবাজে কথা বলবে, বিষেদাগার করবে। কিন্তু তার জবাব ধৈর্য এবং উত্তম আচরণের মাধ্যমে দিতে হবে।
এই প্যারাটা জ্ঞানী গুণী আইন্সটাইন সম্প্রদায়ের জন্য না। আম জনতার জন্য, যারা কোয়ান্টাম মেকানিক্স বুঝেন না, নিজের বিশ্বাসরে সম্ভাব্যতার সূত্র দ্বারা প্রমাণ করতে সচেষ্ট হোন না। এইটা প্যারাটা তাদের জন্য যারা জানেন, এই দুনিয়ার সকল কৃতকর্মের জন্য পরকালে কোন একজনের কাছে জবাবদিহি করতে হবে। এই প্যারাটা তাদের জন্য যারা একাউন্টিবিলিটিতে বিশ্বাস করেন। আফটারঅল মানুষের সকল ক্রিয়াকলাপের যদি কোন একাউন্টিবিলিটিই না থাকে তাহলে সুবিধামত মানুষ খুন করাটাও হালাল করে নেয়া যায়।
যাই হোক আমার লেখা কারও লুঙ্গী খুলে দেয়ার জন্য না। কারণ আমাদের বেশিরভাগ মানুষের পরনের লুঙ্গীটাই নাই। মানুষ ধর্মকে ব্যাবহার করে এখন নিজেদের সুবিধামত। সুতরাং বাংলাদেশের মত দেশে আম জনতা চাপাতীওয়ালাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করবে এইটা আশা করা বোকামী।
এই রকম অন্যায় এর প্রতিবাদ করতে ধর্ম ধারী হওয়া লাগে না, মানুষ হওয়া লাগে। ধর্ম আমাদের মানুষ হইতে শিখাইছিল। সেইটাও আমরা হইতে পারি নাই। আগে তবে মানুষ হোন, তারপর তথা অন্যকিছু।