- কিরে কী খবর?
- ভাল।
- আপনার খবর কি?
- ভাল থাকি কেমনে?
- বালের টেরোরিস্ট এটাক ত শান্তিতে থাকতে দিবে না কাউরে।
এইটা নেহায়েত একটা পার্সোনাল ম্যাসেজ, আমার ইনবক্স এ আসা। ফ্রান্সের নৃশংস সন্ত্রাসী হামলায় আমরা সবাই শোকে মুহ্যমান। সেই শোকের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করতে গিয়ে শুনলাম অনেকেই নাকি প্রো-পিক চেইঞ্জ করেছেন। ডাইনিং টেবিলে, উইকেন্ড এ কোন বড় ভাই কিংবা আপুর বাসায় ডিনার কিংবা লাঞ্ছ এর পার্টিতে সবাই কম বেশি আলোচনা করছেন। শোক যে তাদের ছুয়ে গেছে, সেই ছোয়ায় তারা পাথর হয়ে গেছে তা মোটামোটি বুঝাই যায়। আফটার অল কম বেশি অনেকেই পশ্চিমা দেশের বাসিন্দা; লেখাপড়ার পার্ট চুকিয়ে কেউ চাকরী খুজছেন, কেউ আছেন এইচ ওয়ানে আর কেউ এইচ ওয়ান থেকে গ্রীন কার্ড এর স্বপ্ন দেখছেন। স্বপ্ন দেখা ভাল, দোষের কিছু না। নিজের ভাল সবাই চায়। সেইখানে আমার কোন আপত্তি নেই। শুধু সহানুভূতি আর শোক প্রকাশের বেলায়ই সবার ই কেবল শঠতা। প্রতিদিন হাজারো সিরিয়ান নিজের জীবন বাচানোর তাগিদে বিপদসংকুল পথে ইউরোপে পাড়ি জমায়। যাত্রাপথে অনেকেই মারা যায়। এইত কিছুদিন আগেই সমুদ্রের বালুকাবেলায় কোন এক ছোট শিশুর মৃতদেহ সবাইকে নাড়িয়ে দিয়ে গেল। কোন এক ভ্যানে চড়ে বর্ডার পাড়ি দেয়ার সময় প্রায় সত্তরজন মানুষ দমবন্ধ হয়ে মারা গেল। আর কত যে মারা যাওয়া মানুষ খবর এর বাইরে রয়ে গিয়েছে তা আমরা কেউই জানি না। কোনদিন কাউকে ত দেখলাম না, নিজের প্রোফাইল পিকচার টা চেঞ্জ করতে কিংবা কাভার ফটোতে একটা কালো ব্যাজ দিতে। ধর্ম ত অনেক দূরের ইস্যু, মানবতার জন্য ও কোনদিন ত দেখলাম না যে সিরিয়াতে প্রতিদিন মানুষ মারা যাচ্ছে, উদ্বাস্তু মানুষগুলো যে প্রতিদিন বার বার মরছে তাতে কেউ বিন্দুমাত্র সহানুভূতি প্রকাশ করেছে। সহানুভূতি আর শোক প্রকাশে কেনই বা আমাদের এমন শঠতা?
মানবতা হইল একটা বুলশীট। সবাই ভাল মানুষের একটা মুখোশ পরে থাকে। ফ্রান্সের মানুষদের নিয়েও কেউ খুব একটা কেয়ার করে না। নেহায়েত সোমবার এ তাদেরকে অফিসে যেতে হবে, সাদা কলিগ আর বসদের খুশি করার নিমিত্তার্থে কোন এক কথার ফাকে উই স্ট্যান্ড উইথ ফ্রান্স বলতে হবে, কোন স্টাটাস দিতে হবে যাতে করে তাদের বস দেখে এই। আফটারঅল নিজের পিঠ ত বাচাতে হবে। উই স্ট্যান্ড উইথ ফ্রান্স বলাতে আমার কোন সমস্যা নাই, কিন্তু সমস্যা ওইখানেই যখন শোক প্রকাশে শঠতা করা হয়। আপনি যদি উই স্ট্যান্ড উইথ ফ্রান্স বলে ফেইসবুক আর টুইটারে স্টাটাস দিতে পারেন তাহলে উই স্ট্যান্ড উইথ সিরিয়া বলতে আপনার সমস্যা কোথায়? নাহ সেইটা বললে পশ্চিমাদের দেশে আপনার ইমিগ্রেন্ট হওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে বলে সেই কথা বলতে চান না?
পুনশ্চঃ লেখাটা হতাশা থেকে লিখা। আমি ব্যক্তিগত জীবনে কিছু কিছু মানুষকে শ্রদ্ধা করতাম। সেই শ্রদ্ধার মানুষগুলোর শঠতা দেখে এই কথাগুলা লেখা। তারা পড়বে কি না জানি না, কিন্তু মাঝে মাঝে তাদের মত বাকী সবাইকে জিজ্ঞাসা করতে ইচ্ছা করে, শোক প্রকাশে কেন এই শঠতা?