বিঃদ্রঃ বিগত কয়েকবছরের ভূমিকম্প পরবর্তীকালে ফেইসবুকাসক্ত বাঙ্গালী জাতির কর্মকান্ড দেখে, তা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে কাল্পনিক লেখা।
১)ব্যাঙ্গের ছাতার মত গজিয়ে উঠা টিভি চ্যানেলের বসঃ
(মনে মনে) ভালাই হইছে ঝাকি দিয়া গেছে। এই সাতদিনের টক-শো এর লাইগা কোন টপিক খুইজা পাইতেছিলাম না। পাইছি আইজকা। আগামী সাতদিন নো টেনশন। বানাও টপিক, আর নামাও প্রোগ্রাম।
২) টক-শো এর টকমারানীরাঃ
ওয়াও ভূমিকম্প। যাউকগা ঝাকির উপর দিয়া গেছে, ভালাই হইছে। আগামী সাতদিন ট্যাকাটুকার কোন চিন্তা নাই। যামু আর টকামু। যাই পুরান চোথা পত্র ঘাইটা দেখি, রিভাইস মারতে হইব। না পাইলে আবার বিপদ।
৩) টক-শো এর উপস্থাপিকারাঃ
(একে অন্যের সাথে ফোনে) উফ একে ত রেগুলার শো এর জ্বালায় অস্থির, তার উপর আজকে আবার ভূমিকম্প। রেগুলার শো ত বাতিল হয়ে যাবে। অফিসের গোব্দা বাবলুরে একটু তেল মেরে সবকিছু রেডি করেছিলাম; দেখা যাবে অফিসে গেলেই বস টক শো এর টপিক চেইঞ্জ করে দিবে। এত অল্প সময়ে কিভাবে সবকিছু আবার রেডি করব, বাবলুটা ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ হলেই হয়।
৪) ফেইসবুকের ফেইসহোররা/ফ্রেস্টিটিউটরাঃ
(লুল পুং লিঙ্গের স্টাটাস)ঃ শীট ম্যান! এমন টাইমে ভূমিকম্প হয় নাকি। শালার পুরাই গভীর ঘুমে আছিলাম। ঘুমটাও ঠিক টাইমে ভাংগল না। পাশের ফ্ল্যাটের মালটারে ঠিকঠাক দেখা হইল না, শালী আমার আগেই নীচে নাইমা গেছে। আর ঘুম ঘুম চোখে এই ভীড়ের মাঝে সখিনারে আর দেখলামই মা। ফিলিং মিসড এভিরিথিং।
(লুতুপুতু স্ত্রী লিঙ্গের স্টাটাস)ঃ গাইজ এন্ড বেইবজঃ এইটা ভূমিকম্পের কোন টাইমিং হল বল ত তোমরা। দিনের বেলায় হবে, নইলে রাতের বেলা হবে তাই বলে ভোর বেলা। একটুও মেকাপ ছিল না চেহারাতে, মেকাপ ছাড়া ঘর থেকে বের হইতে হইছে। আমার ডার্ক স্পট আর ব্রণ সবগুলা ভিজিবল ছিল। ফীলিং স্যাড।
সেই স্ত্রী লিংগের লুতুপুতু বয়ফ্রেন্ড (টেম্পোরারি বডিগার্ড) এর কমেন্টঃ জাআআআআন, মন খারাপ করে না। এরপর থেকে হাল্কা একটু মেকাপ করে ঘুমাইও।
৫)দূর্যোগ কমিটির হর্তা-কর্তারাঃ
আয় আজকা, আরও আয়। আজকেই মন্ত্রীরে কইয়া ফান্ড বাড়াইতে হইব। তারপর উদ্দারকর্মের জিনিসপাতি কিনার নামে চায়না ট্যুর। আহা কি আনন্দ ভূমি-ই-ইর কম্পে কম্পে।
৬) বিরোধী দল এর জনৈক ব্যাক্তিঃ
(মনে মনে) আহ আজকে টপিক পাইছি, চাপা পিটানোর। বিকালের ভাষণে কী কমু খুইজা পাইতেছিলাম না। নিশ্চয়ই সরকার দুর্যোগ পরবর্তী সময়ের জন্য ভাল কোন পদক্ষেপ নেয় না। আজকাই এক গুলিতে সরকাররে কাইত করতে হইব। সব সরকারী দলের গভীর ষঢ়যন্ত্র, নিজেগো কোন কিছু নাই। পরে কিছু হইলে ইন্ডিয়া থেকে লোক আনব। দেশটা ইন্ডিয়ারে বেইচা দিলরে।
৭) বাংলাদেশের সকল বাড়িওয়ালাঃ
আয় হায়! ভূমিকম্প। তিন তলার ফাউন্ডেশন এ ছয় তলা তুলছিলাম, ঘাড়ের উপর ভাইঙ্গা না পড়লেই হয়। ইয়া মাবুদ বাচাইয়া দাও, কথা দিতেছি এই বছরে সাত তলা তুলার জন্য যেই রড আর সিমেন্ট এর বুকিং দিয়া আসছিলাম তা আজকেই বাতিল করুম।
পুনশ্চঃ লেখাটা ব্যাক্তিগত হতাশা থেকে লিখা। একেত আমাদের দেশে পরিকল্পিত ভাবে কোন কিছুই তৈরি হয় নি, তার উপর ভূমিকম্পের মত দুর্যোগ সামাল দেবার ক্ষমতা বাংলাদেশের নেই বললেই চলে। রানা প্লাজার ঘটনার পর তা হাড়ে হাড়ে টের পাওয়া গেছে। আছে শুধু চ্যানেলের টি আর পি বাড়ানোর জন্য কিছু টকশো, টকমারানীদের বড় বড় কথা, আর ভূমিকম্প হতে না হতেই ফেইসবুকে প্রসব করা কিছু স্টাটাস। এই মুহূর্তে ঢাকাকে রক্ষা করার জন্য কিছুই করার নেই। শুধু আমরা উপরওয়ালারেই ডাকতে পারি, আমাদের নিরাপদের রাখার জন্য। ওয়েট ওয়েট উপরওয়ালা সে আবার কে? সে ত অন্ধকারাচ্ছন্ন, কূপমন্ডুক, সংকীর্ণচিন্তার অধিকারী, অশিক্ষিত, মূর্খ, ক্ষ্যাত মানুষদের কল্পনা প্রসূত জিনিস। সেই যখন নাই, তখন সে আবার বাচাবে কেমনে? আর মোল্লারা নাকি কয় এই ধরনের প্রাকৃতিক দূর্যোগ নাকি পাপাচারে লিপ্ত হওয়া সীমা লঙ্ঘঙ্কারী জনপদের জন্য সঙ্কেত। গন্ডমূর্খের দলগুলা কী কখনও সিসমিক এক্টিভিটি, টেকটোনিক প্লেটস এর নাম শুনছে।
পুনশ্চ পুনশ্চঃ পৃথিবীর ইতিহাসে বহু জাতি ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। পুরা আদ জাতি কে আল্লাহ বায়ু দ্বারা ধ্বংস করেছিলেন। সায়েন্স সেখানেও ছিল, শুধু সেই ঝড়ের পিছনে যার ইশারা ছিল তাকে আমরা আজকেও ঠিকঠাক রিকগনাইজ করি না।
নুহ (আ) এর কওম ও ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল, প্রচন্ড বৃষ্টিতে মহাপ্লাবন হয়েছিল। সেইখানেও সায়েন্স ছিল, শুধু এই ধরনের লাগামহীন বৃষ্টি যার ইশারাতে হয়েছিল তার কথা আমরা ভূলে গিয়েছি।
ভূমিকম্পের জন্যও একটা জনপদ ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। সেইখানেও সিসমিক এক্টিভিটি থাকবে, শক ওয়েভ থাকবে, টেকটোনিক প্লেটের নড়াচড়া থাকবে। শুধু সেই প্লেট এর মালিক এর হুকুম এর কথা বললে লোকজন আবার মজা নিবে।
Allah says: "And how many a generation We have destroyed before them who were stronger in power than they. And (when Our Torment came), they ran for a refuge in the land! Could they find any place of refuge (for them to save themselves from destruction)?" [Surah Qaf, 50: 36]