১। যে কোন ভূমিকম্পের শুধুমাত্র মাত্রা একটাই থাকে, অর্থাৎ মাত্রা বলতে যেখানে ভূমিকম্প সৃষ্টি হয়েছে সেখানে কি পরিমান শক্তি রিলিজ হয়েছে বোঝায়, যেটাকে রিখটার স্কেলে প্রকাশ করা হয়। সুতরাং একটি ভূমিকম্পের বিভিন্ন মাত্রার রিখটার স্কেলের ব্যাখ্যা সম্পূর্ণ ভুল। যখনই রিখটার স্কেল দিয়ে বোঝাব অবশ্যই আমরা উৎপত্তি স্থলের শক্তি বুঝব। মাত্রা হচ্ছে উৎপত্তি স্থলে সৃষ্টির সময়ের ক্ষমতার পরিমাপক, যা একটি ভূমিকম্পে বিভিন্ন জায়গায় হিসাব করার সুযোগ নাই। অতএব, গতকালের ভূমিকম্পের ক্ষেত্রে যদি কেউ বলে থাকে মনিপুরে ৬.৮ মাত্রা আর ঢাকায় ৪.৮ ইত্যাদি মাত্রার রিখটার স্কেলে প্রকাশ করে তাহলে বুঝতে হবে ঐ ব্যক্তির ভূমিকম্প সম্পর্কিত জ্ঞান সীমিত এবং নিজেকে জাহির করতে ভুলভাল বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। মনিপুরে ৬.৮ মাত্রার ভূমিকম্প উপন্ন হয়েছে অর্থাৎ মনিপুরের ইম্ফলে ভূমিকম্প উৎপন্ন হওয়ার সময় ৬.৮ রিখটার মাত্রার সমপরিমাণ শক্তি নির্গত হয়েছে।
২। আর হ্যাঁ আমরা যেটি জানতে চাই সেটি হচ্ছে ঐ ভূমিকম্পে আমি যেখানে আছি সেখানে কি পরিমান কম্পন অনুভুত হয়েছে, সেটাকে আমরা "তীব্রতা" বলি্, হ্যাঁ, "তীব্রতা" যা রিখটার স্কেলে প্রকাশ হয় না। তীব্রতাকে আমরা রোমান হরফে I-XII (এক থেকে বার, বড় সংখ্যা মানে অধিক তীব্রতা) প্রকাশ করি MMI (Modified Mercalli Intensity), EMS (European Macro Seismic Intensity) ইত্যাদি স্কেলে প্রকাশ করি। অনেক ক্ষেত্রে বড় বড় গবেষকগণ তাদের ভূমির তীব্রতা মেপে ঐ স্থানে ইকুইভ্যালেন্ট মাত্রা হিসাব করার চেষ্টা করেন তবে তা অনেক বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত এবং জটিল যার ফলে এক কথায় ধুম করে এক স্থানে ভূমিকম্প হলে অন্য স্থানের ভূমিকম্পের মাত্রা বলে দেওয়া বোকামি, আর আমাদের দেশের মত অপ্রতুল প্রযুক্তির দেশে (ভূকম্পন বিদ্যার হিসেবে) বিভিন্ন জায়গার মাত্রা বলে দেওয়াটা গাধামি করা। যখন কেউ রোমান হরফের পরিবর্তে খাঁটি বাংলায় সংখ্যা (চার/পাচ ইত্যাদি বলে), আমরা তার সাথে অধিকন্তু 'রিখটার স্কেল' যোগ করে নেই, এই বিষয়টি বড় ভুল, কারণ রিখটার বললে সেটা তিব্রতা থেকে মাত্রায় হিসাব শুরু হয়! যখন আমরা তীব্রতার বিষয়টি আনব তখন রোমান হরফের তীব্রতা হিসাব করব শুধু, সেটাকে রিখটার স্কেল বলা যাবেনা।
উদাহরণঃ ধরা যাক কোন একটি স্থানে ১০০০ ওয়াট এর একটি বাল্ব জ্বালানো হয়েছে, যার থেকে ১ মিটার কাছে থেকে হয়ত রাতের বেলা একটি সূচে সুতা পরানোও হয়তবা খুবই সহজ কারণ বাল্বের কাছে হওয়ায় আলোর পরিমান অনেক বেশি, অন্যদিকে বাল্ব থেকে ২০ মিটার দূরত্বে বসে পর্যাপ্ত আলোর অভাবে হয়ত দাবা খেলাও ( সূচে সুতা পরানোর চেয়েও তুলনামূলক সহজ কাজ) অসম্ভব। এর মানে হচ্ছে বিভিন্ন স্থানে আলোর পরিমান ভিন্ন ভিন্ন কিন্ত বাল্বের সংখ্যা একটিই। এখানে ১০০০ ওয়াটের বাল্বকে মাত্রার সাথে এবং নিকটবর্বিতী ভিন্ন স্থানে আলোর পরিমানকে তীব্রতার সাথে তুলনা করতে পারি। হ্যাঁ আমরা চাইলেই বলতে পারি আমরা দাবা খেলায় জায়গাই মূল বাল্বটি না থেকে যদি মাত্র ১৫ ওয়াটের বাল্ব থাকত তবে হয়ত সমান পরিমান আলো দিতে পারত, তবে সে হিসাবটি কাল্পনিক।
অতএব, মাত্রা এবং তীব্রতা শব্দ ব্যবহারের ক্ষেত্রে সচেতন থাকা দরকার।