somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভ্রমনব্লগঃ ঘুরে আসলাম রাঙ্গামাটি

২৭ শে জুলাই, ২০০৯ রাত ৮:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গত সপ্তাহ থেকেই মন মেজাজ খুব খারাপ। এর মূল কারন হলো বাসার তালা ভেংগে কিছু জিনিষ চুরি যাওয়া। এর মাঝে মূল হলো আমার ল্যাপটপ।খুব শখের জিনিষ ছিলো ওটা। খুবই প্রিয়। ল্যাপটপ না হয় আরেকটা কিনে ফেলা যাবে। কিন্তু আমার এতো ডাটা, এতো সফটওয়ার এর কাজ, এতো ট্যুর এর ছবি, এতো গান কালেকশন সব কই পাবো ? অনেকের মাধ্যমে চেষ্টা করলাম , কোনো ভাবে যদি উদ্ধার করা যায়? কিন্তু সব ব্যর্থ। এখনো পাই নাই। (ইস পাইলে যে কি খুশি লাগতো)।

যাক , লিখতে বসেছিলাম অনেকদিন পর একটি ট্যুর নিয়ে। হঠাত করে গত বুধবার রাত এ একটি ট্যুর দিলাম। রাংগামাটি। ট্যুর মেম্বার মোট ১২ জন। ৩ কাপল (জহুরুল-টুম্পা, মাজহার-শার্লী, কাদের-মেঘলা)। আর ব্যাচেলর ৬ জন। আমি, তানভীর, মোস্তফা, আরমান, জাহিদুল, তানভীর (২)। এর মাঝে আমি আর তানভীর সিসিসি। বাকি সব এমসিসি। যাত্রা শুরু বুধবার রাত ১০৩০ এ। অফিস থেকেই বের হলাম ৮ টায়। তারপর কোনোরকমে সময়মত গিয়ে হাজির হলাম কলাবাগান শ্যামলী কাউন্টার এ। যাত্রা শুরু করলাম মিস্টি আর ঝাল মুখ করে। মেঘলা বাসা থেকে পিঠা নিয়ে এসেছিলো দুই রকমের। তাও আবার কাদের-মেঘলা এর হানিমুন ট্যুর। আমরা ওদের হানিমুন এর হাড্ডি। এর পর যাত্রা খারাপ হয় নাই। কিন্তু রাস্তা বা ড্রাইভার এর কারনে খুব বেশি আরামে যেতে পারলাম না। অনেক বেশি ঝাকি।

ভোর বেলায় গিয়ে নামলাম রাংগামাটি সেনানিবাস এ। সেখান এ আগে থেকেই আমাদের জন্য রুম আর গাড়ি রেডি ছিলো। রুম এ গিয়ে ফ্রেশ হয়ে মেস এ নাস্তা। পরোটা। (এই ট্যুর এ কেনো জেনো যেখানেই গেছি পরোটা হাজির হয়ে যেতো)। নাস্তা শেষ করে আমাদের জন্য আর্মি এর বোট রেডি ছিলো। গন্তব্য শুভলং ঝর্না। সময় লাগে ২ ঘন্টার মতো। ভালোই লাগলো লেক দিয়ে যেতে। শুধু রোদ টা যা একটু কষ্ট দিলো। অনেক আশা নিয়ে হাজির হলাম শুভলং এ। কিন্তু বর্ষাকালের তুলনায় পানি একদম ই নাই। তাও সবাই ইচ্ছামতো ভিজলাম। প্রায় ঘন্টাখানেক ধরে। কাপলরা ইচ্ছামতো রোমান্টিক ছবি তুললো। সেখান থেকে রওয়ানা দিলাম আরো সামনে বর্ডারের কাছে এক আর্মি ক্যাম্পে। সেখান এ গিয়ে কিছুক্ষন যাত্রা বিরতি। সেখানে লোকাল মিষ্টি খেলাম সবাই। তখন আবার নামলো বৃষ্টি। সবাই ভিজা কাপড়ে। বেশ ঠান্ডা ঠান্ডা লাগতে লাগলো।পরের গন্তব্য পেডা টিং টিং নামক এক জায়গা। তেমন কিছুই না। লেক এর মাঝে একটি রেস্টুরেন্ট। গলা কাটা দাম সবকিছুর। সেখানের এক স্পেশাল মেনু হলো Bamboo Chicken. চিকেন রেধে বাশ এ করে পরিবেশন করে। শেষে বিল এ bamboo দেয়। যাক, সেখানে শুধু ছবি তুলে আবার সেনানিবাস এ ফিরে আসলাম। আস্তে আরো ঘন্টখানেক।

এসেই সবাই দৌড়ে মেসের ডাইনিং এ । ক্ষুদা এমন ছিলো যে, যা দিলো তাই জটিল লাগলো। খাওয়ার পর সবাই আবার দৌড় সুইমিং পুল এ। সেখানে সবাই ইচ্ছামতো লাফালাফি। যারা সাতার পারে না তারা শিখার চেষ্টা করলো। টুম্পা মনে হয় কিছুটা শিখলোও। কিন্তু শার্লী আর মাজহার মনে হয় না তেমন কিছু শিখতে পারলো। সাতার শেষ ক্রএ এসে আরেক খারাপ খবর। আমাদের যেই কটেজ টা পাওয়ার কথা ছিলো সেটার একটা রুম পাওয়া গেছে। আরেকটা কে জেনো বুকিং করে রেখেছে। কিন্তু একটা রুম দিয়ে তো আর হবে না। এট লিষ্ট হানিমুন কাপল এর তো আলাদা রুম লাগবে। তো আমরা সেনানিবাস থেকে তখনি গেলাম বাইরের হোটেল এ। সেখান এ গিয়ে রেস্ট নিয়ে বিকাল এ গেলাম ঝুলন্ত ব্রীজ এ । সেখান এ সন্ধ্যা পর্যন্ত থেকে, আড্ডা দিয়ে, ছবি তুলে তারপর আবার হোটেল এ ফিরে আসলাম। এসে রাতের খাবার। আবারো সেই পরোটা। সাথে ডিম আর মুরগি। ডিম গুলা এতো বড় ছিলো যে, আরমান ঘোষনা দিলো এগুলো পাহাড়ি ছাগীর (ঃ))।
খাওয়া দাওয়ার পর সবাই হোটেল এর পিছনে লেক এর পাড়ে গিয়ে বসলাম আড্ডা দিতে। সেখান এ মেঘলা বেশ অনেকগুলা গান গেয়ে শুনালো। সুন্দর গলা। সাথে ছিলো আরমানের বেসুরো গান বলা (গান গাওয়া না কিন্তু।)
তারপর বাকি রা রুম এ গেলো । আমি , আরমান আর জাহিদুল গেলাম একটু ঘুরে আস্তে আর চা খেতে। ফিরে এসে দেখি সারাদিনের ক্লান্তিতে তানভীর, তানভীর (২), মোস্তফা আর জহুরুল গভীর ঘুম ।সাথে হানিমুন কাপল ও। আমরা আরো কিছুখন আড্ডা দিলাম। তারপর যখন ঘুমাতে গেলাম দেখি আরেক বিপদ।ভেবেছিলাম লেক এর পাড়ে তেমন গরম লাগবে না। তাই এসি রুম নেই নাই। কিন্তু এখন্ তো লাগে গরম। কি করবো? ১০ সেকেন্ড লাগলো ডিসিশন নিতে (যেটা বিবাহিত হলে লাগতো ৩০ মিনিট) । আরমান কে বললাম রিশেপশন এ গিয়ে একটি এসি রুম জোগাড় করতে। পাওয়া গেলো রুম । সাথে সাথে চলে গেলাম। বাকিদের ঘুম আর নষ্ট করলাম না। (ঃ))

সকাল এ ঘুম থেকে উঠলাম আমরা সবার শেষে। তারপর আবার সেই পরোটা। খেয়ে বোট নিয়ে রওয়ানা হলাম বৌদ্ধ বিহার আর চাকমা রাজা এর বাড়ি দেখতে। যা দেখার জন্য বিশেষ করে টুম্পার আগ্রহ ছিলো অনেক বেশি। (লেখা পড়েই টুম্পা আমাকে একটা মাইর দিতে আসবে)। যাক অসীম রোদের মাঝে দুইটা জায়গাই দেখে ফিরে আসলাম হোটেল এ। তারপর টিকেট কাটা হলো চিটাগাং এর । বাস এ করে সন্ধায় ফিরে আসলাম চিটাগাং এ। আসতে আসতে কোথায় থাকবো সেই চিন্তা চললো। আমি ট্রাই করলাম আমার অফিসের গেস্ট হাউসে। নাহ, খালি নাই। শেষ পর্যন্ত পাওয়া গেলো মেরিন এর গেস্ট হাউজ।
চিটাগাং এ নেমেই সবার খিদায় পেট এ টম আর জেরিরা খেলা করতেছিলো। গেলাম GEC মোড় এ BLUE BELL এ. খাওয়া দাওয়া শেষ করে মেরিন হাউসে গিয়ে উঠলাম। সেখান ফ্রেশ হয়ে আড্ডা দিতে দিতে হঠাত শার্লী খুব গুরুত্বপূর্ন এক ঘোষনা দিলো। পরেরদিন টুম্পাদের ১ম বিবাহ বার্ষিকী। সর্ব সম্মতিতে ঠিক হলো পিজ়া হাট এ যাওয়া হবে। যাক, পিজা হাট এ পার্টি টা ভালোই হলো। সাথে যাবার সময় একটি কেক নিয়ে গেলাম।

যাক পার্টি শেষে মাজহার আর শার্লীকে বাস এ তুলে দিলাম। আমরা চলে গেলাম গেস্ট হাউস এ। সেখান এ রাত ৪ টা পর্যন্ত আড্ডা দিয়ে ভোর এ আমি ,আরমান, জাহিদুল আর তানভীর ঢাকার পথে রওয়ানা হলাম । বাকিরা আসবে রাতে। সব মিলিয়ে খারাপ হয় নাই ট্যুর টা।
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×