গান হচ্ছে আত্মার খোরাক। বিরহ মন সঙ্গীতে শান্তি খুঁজে। সুখী মন অবসর খুঁজে গানের মিষ্টি কথায় ও সুরে। তাই সংস্কৃতির বিভিন্ন শাখা-প্রশাখার মধ্যে মানুষের কাছে গানের গ্রহণ যোগ্যতাই সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। জ্ঞানীরা তাই সঙ্গীতকে আত্মার খোরাক বলে অভিহিত করে গেছেন। প্রশ্ন হল কোন ধরনের সঙ্গীত আত্মার খোরাক হতে পারে? সহজ উত্তর হচ্ছে যে সঙ্গীত শ্রোতাদের মনে প্রশান্তি আনে সেই সঙ্গীতই আত্মার খোরাক। এ ধরনের সঙ্গীতচর্চা কি বর্তমানে আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে হচ্ছে? এ প্রশ্নে দুই ধরনের উত্তর আসবে। একদল বলবে কিছুটা হচ্ছে আর অন্যদল বলবে একেবারেই হচ্ছে না। যুক্তি-তর্কে ভালো গান হচ্ছে বলে হয়তো জয়ী হওয়া যাবে; কিন্তু অদৌ কি ভালো গান হচ্ছে? আর হলেও সেগুলো হারিয়ে যাচ্ছে কেন? কেনই বা সে গানগুলোকে আমরা স্থায়িত্ব দিতে পারছি না। এর কারণ হিসেবে অনেকেই আমাদের সঙ্গীত জগৎ একটি উদ্ভট উটের পিঠে চলছে বলে দায় এড়িয়ে যাচ্ছেন। সঙ্গীতাঙ্গন যে দিকভ্রান্ত নাবিকের মতো চলছে এ ব্যাপার হয়তো দ্বিমত নেই কারও। মূলত পরস্পরের প্রতি বিশ্বাসের অভাবের কারণেই সঙ্গীতাঙ্গন পার করছে অস্থির সময়। এখানে যেন কেউ কাউকে বিশ্বাস করতে পারছে না। কণ্ঠশিল্পী বিশ্বাস করছে না প্রযোজনা সংস্থাকে। আবার গীতিকার ও সুরকার বিশ্বাস করছে না কণ্ঠশিল্পীকে। যার কারণে দুঃসময়টা ক্রমেই জেঁকে বসছে সঙ্গীতে। অথচ বাংলা গানের এমন একটি সময় গেছে যখন সঙ্গীতশিল্পী, গীতিকার, সুরকার ও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ের জন্য কী মুগ্ধতা ছড়ানো গান তৈরি হয়েছে। যে গান এখনও আমাদের মনে প্রশান্তি জোগায়। গানের দুনিয়ার মানুষরা সবাই এখন নিজের মতো করেই যেন পথচলার চেষ্টা করছেন। কী লক্ষ্যে এগোচ্ছে তার সবই যেন তাদের অজানা। সমন্বয়হীনতার কারণে একটি গান তৈরি হওয়ার পর জনপ্রিয়তা পেলে সেটিকে নিয়েই যেন কাড়াকাড়ি লেগে যায় গীতিকার, শিল্পী, সুরকারও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে। এ ক্ষেত্রে কণ্ঠশিল্পী বলছেন আমি গান গেয়েছি তাই গানটি আমার। অডিও প্রযোজনা সংস্থা বলছে আমরা টাকা দিয়েছি তাই গানটি আমার। আর মেধাস্বত্ব আইনের দোহাই দিয়ে গীতিকার ও সুরকার বলছে গানটি তাদের। ফলে যা হওয়ার তাই হচ্ছে। তবে গানের মালিকানা সবাই দাবি করলেও এর ফলটি খাচ্ছে কিন্তু একজনই। সে হল প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান। নানা কারণ ও অজুহাত দেখিয়ে শিল্পী এবং গীতিকারদের ঠকিয়ে লাভ তুলছে বর্তমানের অডিও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলো। এত কিছুর পরও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের মালিকরা বলছেন, আমরা তো কিছুই পাচ্ছি না। কণ্ঠশিল্পীরাই এ থেকে লাভবান হচ্ছেন। আবার নিজেদের প্রাপ্য টাকাই পাচ্ছেন বলে অভিযোগ তুলছেন শিল্পীরা। মাঝখানে গানের আসল কারিগর তথা গীতিকার ও সুরকাররা পড়ে যাচ্ছেন বিপদে। অনেক সময় গানের মূল প্রাপ্যটুকুও পাচ্ছেন না তারা। এসব মিলিয়ে চরম অস্থিরতার মধ্যে দিয়ে পার হচ্ছে বর্তমান সঙ্গীতাঙ্গন। অ্যালবাম বিক্রির দিন শেষ হয়ে এসেছে। তাই বলে শ্রোতারা গান শুনছেন না এটি কিন্তু বলা যাবে না। বরং তারা আগের চেয়ে আরও বেশি গান শুনছেন এখন। তবে গান শোনার ধরনটা পাল্টে গেছে কিছুটা। শ্রোতারা এখন ডাউনলোড করে অথবা ইউটিউবে গিয়ে শুনে নিচ্ছেন কিংবা দেখছেন প্রিয় কণ্ঠশিল্পীর পচ্ছন্দের গানগুলো। গানের ব্যবসাটা এখন ইউটিউব আর ওয়েলকাম টিউননির্ভর হয়ে পড়েছে। অডিও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলো এখন অ্যালবাম বিক্রির চেয়ে ওয়েলকাম টিউন, ডাউনলোড আর ইউটিউবকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছেন। কারণ মুনাফাটা এসব খাত থেকে বেশি আসছে। এখানেও কণ্ঠশিল্পী, গীতিকার, সুরকার, অডিও কোম্পানিগুলো একে অপরের সঙ্গে যেন আলো-আঁধারীর খেলা খেলে যাচ্ছেন। কারও মধ্যেই স্বচ্ছতা দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সামান্যতম স্বচ্ছতা থাকলেই অন্যরকম হতো আমাদের সঙ্গীতাঙ্গন। গানের গীতিকার, সুরকার, কণ্ঠশিল্পী ও অডিও প্রযোজনা সংস্থার মধ্যে কোনো ধরনের সমন্বয় নেই। তাই অস্থিরতা বৃদ্ধি পেয়েই যাচ্ছে। অথচ সবাই একটু সমন্বয় করে কাজ করলেই বদলে যেত আমাদের সঙ্গীতাঙ্গন। হয়তো হবে একদিন। কিন্তু বিড়ালের গলায় ঘন্টা বাঁধবে কে?
সঙ্গীতাঙ্গনে চলছে অস্থিরতা: সমন্বয় নেই কোথাও
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১:০৮
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes
শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন
রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!
রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।
আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!
এই... ...বাকিটুকু পড়ুন
বাঁচতে হয় নিজের কাছে!
চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু। লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা
২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন
সামুতে আপনার হিট কত?
প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন