২০০৬ অথবা ২০০৭ সালের দিকের ঘটনা ; একদিন এক বন্ধু ফোন দিয়ে বলল -সে দুইটা টিকেট কিনেছে তাই ওর সাথে বিকেলে শিল্পকলা একাডেমিতে মঞ্চ নাটক দেখতে যেতে হবে ।
পূর্বে আমি কখনো মঞ্চ নাটক দেখিনি , দেখার প্রতি কোন আগ্রহ নাই । আর কিশোর বয়সে মঞ্চ নাটক দেখার ফিলিংস থাকার কথাও নয় । জিবনে কোনদিন সিনেমা হলে প্রবেশ করনি , আর টিকিট হাতে মঞ্চ নাটক দেখতে যাবো ভাবতেই হাসি পাচ্ছে । তবুও বন্ধুকে খুশী করার জন্য যেতে রাজি হলাম ।
বিকালে চিপস এর প্যাকেট হাতে নিয়ে শিল্পকলা একাডেমি ভবনে প্রবেশ করলাম মঞ্চ নাটক দেখার জন্য । ড্রেসিং রুমে দেখলাম নাটকের অধিকাংশ কাস্ট আমাদেরই ক্লাসমেট । আর ১৫ মিনিট পর নাটক শুরু হবে , সবাই যার যার আসনে বসে পেড়েছে । শুধু মঞ্চ এর লাইট বাদে সমস্ত লাইট নিভে গেল । আমি অবাক হয়ে ভাবছি মঞ্চ নাটক দেখতে এত এত লোক এসেছে ? অথচ আমি আজই প্রথম জানলাম আমার এই ছোট্ট শহরে মঞ্চ নাটক ও হয় ? তাও নাটকের কাস্ট আমারই ক্লাসমেটরা !!! কত কিছু জানা বাকি আছে ।
নাটক শুরু হল কিন্তু নাটকের নাম বললনা । আকর্ষন রেখে দিল । নাটকের কাহিনী এমন …………………..
একদেশে এক রাজা ছিল । রাজা ন্যয়পরায়ন ছিল But দেশে শান্তি ছিল না । রাজ্যের বিভিন্ন এলাকার জমিদাররা প্রজাদের কাছথেকে অতিরিক্ত কর আদায় করতো । আর কোষাগারে জমাদিত কম । অতিরিক্ত কর আদায় করার ফলে প্রজাদের ভিতর খোভ সৃষ্টি হতে থাকে । রাজারা সচারচর রাজমহল থেকে বের হতেন না । রাজার পরেই সেনাপতি ক্ষমতাবান ছিলেন , তারপর উজির ,নাজির , জমিদার । একমাত্র রাজা মহাশয় ব্যতিত আর বাকি সকলেই নীতিভ্রষ্ট ছিল , যা রাজা মহাশয় বুঝতে পারছিলেন না । দেশে অনাহার , অন্যায় অত্যাচার , চুরি ডাকাতি ক্রমেই বেড়ে যাচ্ছে । কিছুতেই থামানো যাচ্ছেনা ।
এমতাবস্তায় রাজা মহাশয় হেকিম ও জ্যোতিসিকে ডেকে পাঠালেন ।
সে সময় হেকিম ও জ্যোতিসির মতামতের খুব গুরুত্ব দিতেন রাজা বাদশারা । এবং সেই পরামর্শ অনুযায়ী অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতেন রাজা বাদশারা ।
রাজা বললেন কি করে এই অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়া যায় ?
হেকিম : আমার কাছে একটি মহাঔষোধ আছে । যার নাম “মন্দ দুর বটিকা” । যেটা কেউকে সেবন করালে সেই ব্যাক্তির সমস্ত খারাপ / মন্দ দিক গুলো ভাল হয়ে যাবে । সে একজন ন্যয় নিষ্ঠাবান ব্যক্তিতে পরিনত হবে ।
রাজা : তাহলে সেই বটিকা রাজ্যের সকলকে খাওয়ানোর ব্যবস্থা করা হোক ।
হেকিম : হুজুর রাজ্যের সকলকে খাওয়ানো সম্ভব নয় । আমার কাছে মাত্র একটি বটিকা আছে , আর এই বটিকা নতুন করে তৈরি করা সম্ভব নয় ।
রাজা : তাহলে কি করা যায় ? তবে কি আমার এই রাজ্য থেকে মন্দ দুর করা সম্ভব নয় ?
হেকিম : একটা উপায় আছে । রাজ্যের এমন একজনকে এই বটিকা সেবন করাতে হবে যার মাধ্যমে সকলের উপকার হওয়া সম্ভব ।
পরেরদিন রাজ দরবারে জরুরী সভা ডাকা হল , যেখানে সেনাপতি , উজির ,নাজির , জমিদার সবাই উপস্থিত হল । রাজা সেনাপতিকে বটিকা টি সেবন করতে বললেন ।
সেনাপতি : হুজুর আম…আমি কেন ? উজির সাহেব খাওক !!
উজির : হুজুর আ..আম…আমি কেন ? নাজির সাহেব খাওক !!
নাজির : হুজুর ইয়ে মানে ইয়ে … আমি কেন ? জমিদার সাহেব খাওক !!
জমিদার : উস খুস উস খুস করতেই রাজা ধমক দিয়ে বললেন …….. থামো … আমি যা বলি তাই করো …… সেনাপতি !!
সেনাপতি : জ্বি হুজুর !
রাজা : সেবন করো বটিকা ।
বটিকা সেবন করার সাথে সাথে সেনাপতি ক্যাড়ব্যাড় করা শুরু করলেন , তাই দেখে উজির সাহেব দৌড়ে এসে সেনাপতি সাহেবকে ধরলেন ।
ধরার সাথে সাথে উজির সাহেব ও ক্যাড়ব্যাড় করা শুরু করলেন । তাই দেখে নাজির সাহেব দৌড়ে এসে উজির সাহেবকে ধরলেন ।
ধরার সাথে সাথে নাজির সাহেব ও ক্যাড়ব্যাড় করা শুরু করলেন । তাই দেখে জমিদার সাহেব দৌড়ে এসে নাজির সাহেবকে ধরলেন । ধরার সাথে সাথে জমিদার সাহেব ও ক্যাড়ব্যাড় করা শুরু করলেন ।
তাই দেখে রাজ্য সভার সকল সদস্য দৌড়ে এসে সেনাপতি ,উজির, নাজির, জমিদার সাহেবকে ধরলেন । আস্তে আস্তে সবই ক্যাড়ব্যাড় করা শুরু করলেন । আত্ব:পর সবাই অচেতন হয়ে মাটিতে ঢলে পড়লেন ।
১০ মিনিট পর ,উজির, নাজির, জমিদার সাহেব ও রাজ্য সভার সকল সদস্য জ্ঞান ফিরে পেলেন এবং গা ঝাড়া দিয়ে উঠলেন ।
১ মাস পর ……. ….. রাজ্যে আবার শান্তি ও সমৃদ্ধি ফিরে এসেছে । রাজ্যে সুশাসন চলছে । প্রজারা সস্তুষ্ট ।
দু:খের বিষয় আমাদের দেশে উক্ত বটিকা থাকলেও সম্ভাব্য ফল পাওয়া সম্ভব নয় । কারন …
• রাজার আমলে রাজ্য সভার সদস্য ছিল কম । আর এখন মন্ত্রীসভা অনেক বড় । তখনকার সময় রাজার পরেই ক্ষমতাবান ছিল সেনাপতি । আর এখন প্রধানমন্ত্রী বড় না রাষ্ট্রপতি বড় ? তার নীচের ক্ষমতাবান কে ? প্রধানমন্ত্রীর পিএ / সরকার দলের সাধারন সম্পাদক / এজিআরডি মন্ত্রী /স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ?? কে কার খালু বোঝা মুশকিল ।
• তখনকার সময় বিরধীরাজা ছিল না । এখন বিরধীদল আছে । তাই বটিকা ২ টা প্রয়োজন ।আমাদের দেশে, ভাগে দেয়া কোরবানির গরুটা ছাড়া বাকি সবকিছুই দুই ভাগ হয়; দেখা যাবে, লীগের কর্মীরা বটিকা খেয়ে ভাল হয়ে গেছে কিন্তু বিএনপি’র কর্মীরা বটিকা না পেয়ে হরতাল ডেকছে ।
• দেখাযাচ্ছে আ:লীগ বিএনপি বটিকা খেয়ে ভাল হয়ে গেছে , কিন্তু বিচারপতিরা পায় নাই । ফলে দেশের মানুষ ন্যয় বিচার পাচ্ছেনা ।
• দেখাযাচ্ছে চায়না কোম্পানি মন্দ দুর বটিকা সাপ্লাই দিচ্ছে , যা খেয়ে কাজ হচ্ছে না ।
• সরকার তৃনমুল পর্যায়ে মন্দ দুর বটিকা সাপ্লাইয়ের কাজ দিছে এমপি বোদির হাতে ; আর বদি মন্দ দুর বটিকার বদলে ইয়াবা সাপ্লাই দিয়ে জাতীকে মাতাল করে ফেলেছে ।
• দেখাযাচ্ছে জামাত স্বাধীনতা বিরধী দল বলে তাদের মন্দ দুর বটিকা দেওয়া হয়নি ; ফলে দেশে ১০০% মন্দ দুর হচ্ছে না ।
• শিক্ষামন্ত্রী বলছেন … আগে তো মন্দ দুর বটিকা মানস্বপন্ন ছিল না । তাই দেশে মন্দ দুর হয়নি ।
* কোটা ভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থার কারনে মন্দদুর বটিকা বিতরনে বৈষম্য সৃষ্টি হয়েছে , তাই বটিকা নিস্ফল ।
হঠাৎ আজ সেই মঞ্চ নাটকের কথা মনে পড়ে গেল । আজ দেশে মন্দ দুর বটিকার সত্যিকারের প্রয়োজন । আজ টাকা ও ক্ষমতার দাপটে কিছু লোকজন মাতাল হয়ে গেছেন । কখন কোথায় কি বলছেন আর কি করছেন সব দিশা হারিযে ফেলছেন ।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে এপ্রিল, ২০১৮ ভোর ৬:০৬