somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্নিগ্ধ ভালোবাসা

০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১২ রাত ৯:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


"শিউলী ফোটা স্নিগ্ধ সকালে একটা শিশুর জন্ম হল"
হঠাৎ ই মনে পড়ে গেল ছেলে হলে ওর নাম নির্মল রাখবে বলে ঠিক করেছিলো স্নিগ্ধা। সজীব এক দৌড়ে কাটাবন গিয়ে এক থোকা রজনীগন্ধা আর গোলাপ কিনলো। কিন্তু শান্তি পাচ্ছিলো না- আজ ওকে যে করেই হোক শিউলী জোগার করতেই হবে। ওর মনে পরে গেলো ছাত্র জীবনের সেই দিনটির কথা- বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রথম জন্মদিনে স্নিগ্ধা ওকে এক গুচ্ছ শিউলী ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছিলো। এখনও চোখ বন্ধ করলে তার চেয়ে সুখকর কিছু বা শান্তির মূহুর্ত মনে পরে না সজীবের।
ছোটোবেলাটা খুব খারাপ কেটেছে সজীবের- জেনেটিক্যালি সেক্স লিঙ্কড ইনহেরিটেড একটা রোগ ছিলো ওর। ল্যাক অফ ফ্যাক্টর -৮, বুঝিয়ে বললে কেটে গেলে রক্ত বন্ধ না হওয়ার অসুখ। তাই কোনো খেলাধুলাও করতে পারে নাই। সংসারেও অভাব ছিলো- বাবা মারা গিয়েছিলো সজীব যখন ক্লাস ফোর এ।
তাই অনেক বিবেচনা বোধ কাজ করতো ওর অনেক ছোটো বয়স থেকেই। ওর কোনো খেলনা ছিলো না কোনো দিনও। ক্লাস ফাইভ এর একটা ছেলে সজীব তার মা'র কাছ থেকে একটা ঘুড়ি উড়ানোর সুতা কেনার ৫ টাকা ৫ মাসে ১ টাকা করে চেয়ে নিয়েছিলো মা'র কষ্ট হবে ভেবে।
গ্রামের স্কুলে প্রথম বৃত্তি পেয়ে সবার আকাঙ্ক্ষা কয়েক ধাপ এগিয়ে দিয়েছিলো। আজ অনেকটাই সফল সে। বাবার নামে একটা হাসপাতাল করার অনেক দিনের স্বপ্ন এ বছরই বাস্তবায়ন করলো ও।
একে একে সব বন্ধুকে ফোন দিতে লাগলো সজীব- কার কাছে শীউলি ফুলের খোঁজ পাওয়া যাবে? ওর গ্রামের বাড়িতে অনেক শিউলি গাছ। সেই জন্মদিনে স্নিগ্ধার কাছ থেকে শিউলী পাওয়ার পর ও বাড়ি গিয়েই শিউলী গাছ লাগিয়েছিলো। তারপর এক এ এক এ আরও অনেক শিউলী গাছ লাগিয়েছে। দরকার পরলে আজ বাড়ি গিয়েই শিউলী নিয়ে আসবে। তবুও শিউলী ফুল ছাড়া আজ ও স্নিগ্ধার কাছে যাবে না।
ওর এই পাগলামী স্বভাব টা একদিনের না- স্নিগ্ধার পছন্দের এক প্যাকেট চকলেট কেনার জন্য এক মাস নাস্তা না করে টাকা জমিয়েছিলো ও, স্নিগ্ধার পছন্দের একটা টেডি বেয়ার কেনার জন্য পরীক্ষার মদ্ধ্যেও ৬/৭ টা টিউশনী করাতো ও, রাতের পর রাত না ঘুমিয়ে স্নিগ্ধার জন্য নোট তৈরি করত ও (যদিও ভার্সিটিতে ওরা এটাকে "চোঁথা" বলত) ।চাইলেই সজীব এখন আরচাইজ বা সানন্দা গিফট শপ ধরে কিনে দিতে পারে স্নিগ্ধাকে কিন্তু পায়ে হেঁটে রিক্সা ভাড়া জমিয়ে কিংবা টিউশনি করিয়ে একটা কার্ড দিয়ে যে শান্তি পেত তা কখনই পাওয়া যাবে না।
স্নিগ্ধাকে প্রথম দেখেছিলো সজীব টিয়া রঙের একটা ড্রেস- এ , দেখেই "অ্যন্ড্রয়েট গ্রীন" নামে একটা কবিতা লিখেছিলো। তারপর থেকে কবিতা লেখাটাই ওর একমাত্র প্রতিভা বলে মনে হতো- যদিও সেগুলো আদৌ কবিতা ছিলো কিনা বা হতো কি না সে নিয়ে ওর অনেক সন্দেহ ছিলো। অবশ্য বোধসম্পন্ন যারা দেখত তাদের কাছে ওর কবিতা মানসম্পন্নই মনে হত।

সজীব বরাবরই অনেক বন্ধুবৎসল একটা ছেলে। বন্ধুদের কোনো বিপদে নিজেকে ঠিক রাখতে পারত না, ঝুঁকি থাকলেও নিজেকে জড়িয়ে ফেলতো। এ নিয়ে স্নিগ্ধার সাথে মাঝে মাঝেই ঝগড়া হতো ওর। স্নিগ্ধা চাইতো সজীব শুধু ওকে নিয়েই ব্যাস্ত থাকবে ।কিন্তু সজীব কিছুতেই তা পারত না।দেখা যেতো বন্ধুদের অনুরধে সারারাত না ঘুমিয়ে কার্ডের আই,বি এর লিড দিয়ে যখন ক্লান্ত হয়ে ভোড়ে ঘুমাতে যাবে তখন স্নিগ্ধা কোনো এসাইনমেন্ট নিয়ে চিল্লা-পাল্লা শুরু করে দিয়েছে সজীব এর সাথে।
কি আর করা স্নিগ্ধা কে দেখার পর থেকেই না শব্দটা ভূলে গিয়েছিলো সজীব। হলের সামনের দোকান থেকে এক কাপ করা রং চা খেয়ে শুরু করে দিত এসাইনমেন্ট।
সজীবের পাগলামী দিনে দিনে মাত্রাতিরিক্ত আকার ধারন করতে লাগলে বন্ধুরা ওকে বোঝাতে শুরু করলো। স্নিগ্ধার মত মেয়ে কখনও সজীবের হতে পারে না। ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটিতে ভর্তির পর থেকেই স্নিগ্ধার ভালো ভালো প্রপজাল আসা শুরু হয়ে গিয়েছিলো। কেউ হয়ত আম্যেরিকা-অস্ট্রেলিয়ায় সেটেল্ড ইঞ্জিনিয়ার বা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কেউবা এফ.সি.পি.এস. করছে, নয়তো সেনা কর্মকর্তা, কিছু না হলে অন্তত বি সি এস ক্যাডার তো হবেই। আসবেই বা না কেন? স্নিগ্ধাই কম কিসে-? শুধু যে সুন্দরী আর হবু প্রকৌশলী তাই নয়- ওর আরো কত বহুমাত্রিক প্রতিভা! নাচতে পারে, গাইতে পারে, আবৃত্তিতেও চাম্পিয়ন।
এত প্রতিভার তোপে সজীব যেন দুমরে-মুচরে যেত। ও তো এতকিছু জেনে বুঝে স্নিগ্ধাকে ভালোবাসে নি। এত প্রতিভার তো ওর দরকার নেই। ওর শুধু মনে হতো স্নিগ্ধার চোখে এক ফোটা জল দেখলে ওর চেয়ে বেশী কষ্ট পৃথিবী’র কারো হয় না, কেন জানি মনে হত ওর হাতটা না ধরলে স্নিগ্ধা পা পিছলে পরে যাবে। পৃথিবীটাকে, পৃথিবীর নোংরা দিকগুলো দেখলেই সজীব এর মনে হত- এই বুঝি স্নিগ্ধাও এমন কোনো বিপদে পরলো। এই নাম না জানা আশঙ্কায় ও দিনে দিনে অন্য রকম হয়ে যাচ্ছিলো। বাহ্যিক দৃষ্টিতে ওকে ছ্যাবলা মনে হতো হয়ত। বন্ধুরা ওকে সাবধান করত ‘তুই ইউসড হচ্ছিস না তো’? কিন্তু কে শোনে কার কথা। এভ্রিথিং ইজ ফেয়ার ইন লাভ। সেই সজীব আজ নির্মল জন্মের আনন্দে স্নিগ্ধার জন্য শিউলী যোগার করতে দৌড়াচ্ছে… দৌড়াচ্ছে… হাঁপাতে হাঁপাতে ক্লান্ত হয়ে আবার দৌড়াচ্ছে… বাবার মৃত্যুর দিন থেকে সজীবের শ্বাসকষ্টের সমস্যা- তাই দৌড়াতে গেলে দম বন্ধ হয়ে আসে… তবুও এক থোকা শিউলী নিয়ে স্নিগ্ধার কাছে যাবে বলে দৌড়াচ্ছে… দৌড়াচ্ছে…

হঠাৎ--
পিঠের উপর সজোরে আঘাত পেয়ে সজীবের ঘুম ভাংলো-
বন্ধুরা পিঠের উপর থাপরাচ্ছে আর গায়ে পানি ঢেলে দিয়েছে- আর বলছে “ শালা তোর স্নিগ্ধারে পরানোর সময় তো গুনি মাস্টার হইয়া যাস আর এখন আমরা কয়ডা মেকানিক্স এর প্রব্লেম বুইঝা লমু আর তুই ভোঁট এর মতন ঘুমাইতাছস- ওঠ শালা ওঠ”

১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জেনারেল রাও ফরমান আলী ছিল ইন্ডিয়ান 'র'-এর এজেন্ট

লিখেছেন ধূসর সন্ধ্যা, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:২২



জেনারেল রাও ফরমান আলী ছিল ইন্ডিয়ান 'র'-এর একজন এজেন্ট। এই তথ্য কেউ জানতো না। তার ফ্যামিলিও জানতো না। ১৯৪১ সালে বর্ডার ক্রস করে সে ঢুকেছিল পাকিস্তান। তারপর আস্তে আস্তে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৫

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

বন্ডাই সৈকতের হামলাস্থল। ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সৈকত এলাকায় ইহুদিদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমবেত মানুষের ওপর দুই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অতর্কিতে গুলি চালিয়েছে। এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমাণ নন বলা কুফুরী

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪



সূরাঃ ২ বাকারা, ২৫৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৫৫। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।তিনি চিরঞ্জীব চির বিদ্যমাণ।তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না।আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×