somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"যশোর"

১৫ ই মার্চ, ২০২১ রাত ১২:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




"মীম কখনও অভ্রকে ভালবাসে নি। আমি জানি না হামজা মীমকে কিভাবে দেখে তবে হামজা খুবই ভাল একটা ছেলে!" আতিক বললো।
"সেটা আমি জানি, সেদিন বৃষ্টিতে অভ্র আর মীম একসাথেই যাচ্ছিল। আমি তাদের পেছনেই ছিলাম! এক ছাতার নিচে মীম আর অভ্র কিন্তু মীমের বাম কাধ বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছিল যেটা অভ্র একদমই খেয়াল করে নি! ওর শুধু এটা ভেবেই ভাল লাগছিল ওর সাথে মীম আছে!" মিল্লাত জানালো।
আতিক জিজ্ঞেস করল, "পরে?"
"পরে আর কি মীম আর যায় নি ওর সাথে। ফটোকপির দোকানে দারিয়ে গেল আর আমি সেখান থেকে কিছু নোট কিনলাম। পরবর্তীতে হামজা আসলো, বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত নিলে গেল মীমকে। ভাগ্য ভাল অভ্র দেখি নি!"
"ঠিক, নিজের মান সম্মান নিয়ে না ভাবলেও মীমের মান সম্মান চলে যেত!"
মিল্লাত আবারও বলল, "তবে এখানে উল্টো ঘটনা ঘটে গেছে!" "কি রকম?"
"হামজা একটু দুরত্ব রেখে হাটছিল, ফলাফল সে ডানদিকে ভিজে যাচ্ছিল কিন্তু মীমের কোনো সমস্যা হয় নি! ইজ্জত দিতে জানে।"
আতিক বলল, "ভাগ্য ভাল আপনি অভ্র ভাইকে বলেন নাই একথা।" কথাটা শুনে তারা একসাথে হেসে দিল!
"তোকে কে বলছিল ভোরের ফার্স্ট ট্রিপের বাসে টিকেট করতে?" মিল্লাত জিজ্ঞেস করল। আতিক দাঁত ক্যালানি হাসি দিল তখনই দৃষ্টি আটকে গেল দুরের এক চেহারার দিকে! আতিক বলল, "অভ্র ভাইয়ের মত একজনকে দেখলাম! ওই বাস থেকে নামলো!" মিল্লাতও ঘুরে তাকালো। কিন্তু কাউকে দেখতে পেল না! মিল্লাত বলল, "দেখতেই পারিস কারণ বৈজ্ঞানিক মতবাদে এক চেহারা সাতজন মানুষ থাকতে পারে!"



"কেমন লাগতেছে আমাকে দেখতে আব্বা?"
আয়নার সামনে দারিয়ে হামজা জিজ্ঞেস করল। আলম বললেন, "আমাকে যেমন দেখা যায় নি তেমন লাগছে তোকে! আমি কি বলে শুকরিয়া করবো আল্লাহর কাছে আমার ভাষা নেই!"
কথাগুলো বলেই হালকা কেঁদে উঠলেন তিনি! ছেলেকে জড়িয়ে ধরে শুধু দোয়া করতে থাকলেন মনে মনে৷ হুজাইফা এসে বলল, "কাকা বাকি সবাই অপেক্ষা করতেছে, চলেন এবার রওনা দিই?"


বেশ ঘরোয়া পরিবেশে হামজা আর মীমের এনগেজমেন্ট সম্পন্ন হল। ব্রিগ. সাঈদ হামজা আর মীমকে দু'পাশে দুইজনকে রেখে বললেন, "আলহামদুলিল্লাহ, তোমরা বিবাহ বন্ধনের দিকে আরও এক ধাপ এগিয়ে এলে! আল্লাহ তায়ালা আমাদের উদ্দেশ্যে বলেছেন তোমরা বিয়েটাকে সহজ করে দাও।" আজ আমি এখান থেকে শুরু করলাম।"
তিনি আবারও বললেন, "এই আংটির মাধ্যমেই যে তোমরা এক হয়ে থাকবে তা নয়! বরং তোমরা এখন থেকে একে অপরের জন্য হৃদয়, ভালবাসা এবং সম্মান দিয়ে বন্ধন তৈরি করবে৷ মিথ্যা, হিংসা, সন্দেহ এসবের থেকে দূরে থাকবে৷ অটুট বিশ্বাস থাকতে হবে৷ আশা করি তোমরা আমাদের বিশ্বাসকে কায়েম রাখবে৷"
উপস্থিত হামজা, মীম, আতিক, মিল্লাত এবং তাদের কিছু বন্ধু-বান্ধব মিলে দৃঢ়তার সাথে বলল, "আমীন।"


"এর আগে বলেছিলাম না আমি যেদিন ভার্সিটি যাই সেদিনই হামজার নিখোঁজ হওয়ার খবর জানতে পারি?"
"জ্বি!" নাজনীন বলল।
"আমি সাথে সাথে মিল্লাতকে কল করি৷ আমি জিজ্ঞেস করলাম হামজা আর মীমের খোঁজখবর। মিল্লাত জানালো প্রায় মাস দুয়েক হল হামজা নিখোঁজ! খবরটা শোনার পর আমি মীমকে খুঁজতে থাকি। এক সময় পেয়েও যায় কিন্তু দূর থেকেই দেখি, আমি জানি সেসময়ে সে আমাকে একদমই সহ্য করতে পারবে না। মীমের সন্দেহের জন্য আটদিন হাজতে ছিলাম৷ হুজাইফা ছিল ২ দিনের মত! আমি জানতে পারি ওই ঘটনায় হামজার বাবা বাকি সবার কাছ থেকে আলাদা হয়ে যায়! এর প্রায় কয়েক সপ্তাহ পর, আমি মীমের সাথে দেখা করি। অনেক মিনতি করে বলার পর মীম রাজি হয় দেখার জন্য! মীমকে কোনো ভাবেই আমি বিশ্বাস করাতে পারছিলাম না প্রথমে। যে কয়েকদিন মীমের সাথে ছিলাম, একবারের জন্যেও হুজাইফা মীমের সাথে যোগাযোগ করে নি৷!"
নাজনীন বলল, "ট্র‍্যাজেডি গুলো এমনই হয়। হঠাৎ আসা কালবৈশাখী ঝড়ের মতন!"


অভ্রের ফোনে কল এসেছে। কোনোরকম চোখ খুলে দেখে সকাল ৭টা বাজে! এত সকালে কে কল দিতে পারে ভেবে মোবাইল হাতে নিয়ে নিল, দেখলো মীম কল করেছে। রিসিভ করতেই বলল, "কোথায় তুমি?"
অভ্র হাই তুলে বলল, "এইতো বাসায়!"
"দেখা করতে পারবে? ১০টার দিকে?"
অভ্র বলল, "আজ তোমার সকাল এত তাড়াতাড়ি হল কিভাবে?" "হল আরকি, দেখা কর ১০টার দিকে৷ কিছু কথা আছে।"
"জ্বি আচ্ছা!"
তারপর অভ্র আবার ঘুমিয়ে গেল! ঘুম ভাঙলো ঠিক এগারোটায় এবং ফোনে ইতোমধ্যে ১৫টা মিসডকল! অভ্র তাড়াতাড়ি তৈরী হয়ে রওনা দিল মীমের দিকে। নির্দিষ্ট স্থানে পৌছেই দেখে মীম বসে আছে। সে বলল, "এত দেরি হবার কারণ?"
"সরি আসলে ঘুমিয়ে গেছিলাম আবার!"
মীম কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল, "যেহেতু আমাদের বিয়ের আর তেমন দেরি নেই তাই আমি কিছু কথা খোলাসা করতে চাই!"
"যেমন?" মীম জিজ্ঞেস করল, "আচ্ছা সত্যি করে বল, তুমি কি আমার প্রতি লয়াল? আমি কি তোমাকে বিশ্বাস করতে পারি?"
অভ্র হেসে বলল, "তুমি এই জন্য আমাকে ডেকেছো? আর আমি কি সেই পুরানা অভ্র আছি? তোমার বিশ্বাস হয়?"
"এটাই জানতে চাচ্ছিলাম।" এই বলে মীম তার ব্যাগ থেকে একটা টি-শার্ট বের করে অভ্রের হাতে ধরিয়ে দিল! খুব একটা দেরি হল না মীমের চোখজোড়া ভিজে যেতে! অভ্র বলল, "এটা তো আমার, তোমার কাছে এল কিভাবে?"
মীম ছলছল চোখে অভ্রের দিকে তাকিয়ে রইল। অভ্র বলল, "আরে এটা সিরিয়াসলি আমার!"
মীম কাঁদতে শুরু করল এবং বলল, "এটা তোমার? এই হালকা রক্তের দাগ, XL সাইজের গেঞ্জি এটা তোমার? আমাকে বোকা মনে হয়?"
"জান, আমাকে বিশ্বাস..." অভ্রকে থামিয়ে দিয়ে বলল, "ব্যাস, আমার আর কিছু জানার নাই। তুমি মানুষ নও, অমানুষ, মানুষিক রোগী তুমি। তুমি আমাকে পাওয়ার জন্য হামজাকে মেরে ফেলেছো?"
অভ্র কোনভাবেই বিশ্বাস করাতে পারছে না এটা ওর গেঞ্জি! অভ্র ওর গেঞ্জি কোমরের থেকে তুলে বলল, "এই দেখ, এই দাগ আমার, এটা আমার গেঞ্জি!" মীম কোনো কিছুতেই রাজি হচ্ছে না! শেষমেশ বলল, "ঠিক আছে, ফরেনসিকে পাঠাই এটা, ব্লাড/ডিএনএ টেস্টে দেখা যাক তোমার নাকি?"
"আরে আমি হামজাকে কেন মারবো? আমি এটা ভাবতেই পারি না!" অভ্রের কোনো কথাই শুনছে না মীম! চোখ মুছে আবারও ব্যাগে হাত দিল সে। ব্রিগ. সাঈদের রিভলবার বের করে বলল, "এই ধর, এই রিভলবারটা নাও, শ্যুট মি! যেখানে ইচ্ছা। আমি একটা সুইসাইড নোট লিখে এনেছি এবং আমার সাইনও আছে, তোমার কিচ্ছু হবে না, দেখ আসে পাশে কেউ নেই! কেউ দেখবে না! জাস্ট ফায়ার!" অভ্র বলল, "মীম, এমন করে না, রিভলবারটা রেখে দাও!"
অভ্র নিচ্ছে না বলে মীম নিজের দিকে তাক করে নিল! অভ্র কাছে আসতে চাইলো কিন্তু মীম বাধা দিল, বলল, "তোমার সামনে আজ মৃত্যু হবে আমার। আমি জানবো না তুমি তোমার বাকি জীবনটা কিভাবে কাটাবে। আমার মৃত্যু তোমার রাতের ঘুম আর দিনের শান্তি কেড়ে নিবে! অভ্র করিম শেখ, তুমি কাউকে তোমার পাশে পাবে না৷"


তিনদিন পর,
"আপডেট কি ড. নাজনীন? উন্নতি না অবনতি?" ড. কাউসার জিজ্ঞেস করলেন।
"অবনতি স্যার, এই যে রিপোর্ট।"
ড. কাউসার রিপোর্ট দেখা শুরু করলেন৷ একটুপর জিজ্ঞেস করলেন, "কোন ফ্যামিলি মেম্বার, ফ্রেন্ড, কলিগ কেউ এখন পর্যন্ত আসে নি দেখা করতে?"
"না স্যার। আজ দিয়ে উনি সতেরো দিন এডমিট, অনেকটা সুস্থ হচ্ছিলেন কিন্তু শেষ চারদিনে অনেক খারাপ অবস্থা! অনেক কথা শেয়ার করেছেন আমার সাথে।" "ফ্যামেলীর ব্যাপারে কিছু বলে নি?"
"না স্যার, শুধু উনার এক বন্ধু, নাম মিল্লাত  উনার কথাই বলল। কিন্তু উনার ঠিকানা সম্পর্কে কিছু বলে নাই।"

ড. নাজনীন ক্যান্টিনে বসে চায়ের কাপের দিকে তাকিয়ে আছেন। সে বুঝতে পেরেছে অভ্র আর বেশি সময় বাঁচবে না। প্রতিদিনই কেউ কেউ পৃথিবী ছেড়ে চলে যাচ্ছে। বেশ আবেগী হয়ে পরলেন ড. নাজনীন! হঠাৎ নাজনীনের মনে হল অভ্র একটা চিঠি দিয়েছিল। ব্যস্ততায় চিঠিটা এপ্রনের পকেটেই পরে আছে! চিঠিটা বের করার সাথে সাথে আরও একটি কাগজ বের হল যার প্রত্যেক ফাকা ভাজে লেখা আছে "জরুরী!"
কিছুক্ষণ পরেই খবর এল নাজনীনের কাছে অভ্র আর জীবিত নেই! অভ্রকে দেখে অশ্রুসজল হয়ে এল নাজনীনের চোখ। কিছু অজানা বিষয় জানার খুবই আগ্রহ ছিল তার।

এম্বুল্যান্স এনে নিজ উদ্যোগে অভ্রের দাফন, কাপড় আর জানাজার ব্যবস্থা করল। অভ্র বলেছিল তার গ্রামের বাড়ি বগুড়া। নাজনীন তার লোকজন দিয়ে এম্বুল্যান্স পাঠিয়ে দিল অভ্রের গ্রামের বাড়িতে৷
রাতের রাউন্ডে এসে দেখে সাত নম্বর বেডে নতুন পেশেন্ট এসেছে! এক বৃদ্ধ দম্পতি! নাজনীন সালাম জানালেন বৃদ্ধকে। বেডের দিকে তাকাতেই অভ্রের কথা মনে পরে যায় তার! কোনোদিন অপরিচিত কারও সাথে সুখ-দুঃখের কথা শেয়ার করে মনটা হালকা অনুভব করে নি! অনেক কিছু শিখিয়ে দিয়ে গেছে অভ্র।



দুইদিনের ছুটিতে যশোর যাচ্ছে ড. নাজনীন। অভ্রের দেয়া চিঠিটা পড়ে ফেলেছে সে। চিঠিটা ভাজ করে আবার ব্যাগে রেখে দিলেন। মনে মনে বলল, "এখন বুঝতে পেরেছি স্বপ্নের সেই দুই চেহারা কার। হামজা আর মীমের!" সেদিনের সেই রিভলবার মীম নিজের দিকে চালায় নি, চালায় নি অভ্রের দিকেও! সে বলেছিল অভ্রের শেষ দেখবে। মীম ইচ্ছা করলেই ব্রিগ. সাঈদকে বলে অভ্রের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নিতে পারতো কিন্তু সেটাও করে নি। অভ্র তার কর্মফল ভোগ করেছে এর সপ্তাহ দুই পর থেকেই!


ড. নাজনীন ঠিকানা মিলিয়ে দেখলো। সঠিক ঠিকানায় এসেছে। তারপরও শিওর হওয়ার জন্য আশপাশের দোকান আর এলাকার মানুষের কাছে আলম সাহেবের পরিচিত জানতে চাইলেন৷ শুধু দোয়া করছিল সে, যেন আলম সাহেব বেঁচে থাকেন৷
দরজায় টোকা দিল ড. নাজনীন। কিছুক্ষণ পরেই খুব সুন্দর চেহারা এক মেয়ে এসে দরজা খুলে দিল।
"জ্বি কাউকে খুঁজছেন?"
"আমি ড. নাজনীন, আসলে আমির বিন আলম সাহেবকে খুজছি, এটা কি উনার বাসা?"
"জ্বি, ভিতরে বসুন। আমি ডাকছি৷"

একটু পর আলম আসলেন। নাজনীন সালাম দিল তাকে। আলম বললেন, "জ্বি আপনি আমার খোঁজে এসেছেন কিন্তু আমি তো আপনাকে চিনলাম না!"
"জ্বি সঠিক, আমি ড. নাজনীন৷ কিছু জরুরি কাজে এসেছি"
নাজনীনের কথা শুনে তিনি বললেন, "আপনি কি কোনো ভাবে আমার কাছে টাকা পান? দেনা পাওনা বাকি আছে?"
নাজনীন বলল, "আরে না না!"
"আজ পর্যন্ত যারা যারা এসেছে তারা প্রত্যেকেই কিছু না কিছু আমার কাছে পেত! আরও হয়তো পায়!"
নাজনীন বললো, "জ্বি, আমিও আপনার কাছে কিছু নিতে এসেছি কিন্তু আমার জন্য না।"
আলম প্রশ্ন করলেন, "কি নিতে এসেছেন?"
"ক্ষমা!! একজন পাপী, অপরাধীর জন্য! যে আপনার নিকট ক্ষমা চেয়েছেন!"
আলম বিস্ময় হয়ে বললেন, "আমি কেন ক্ষমা করবো? তার পাপ কি? নাম কি তার?"
নাজনীন কিছুটা শান্ত গলায় বলল, "অভ্র করিম শেখ! আপনার বর্তমান অবস্থার জন্য দায়ী ব্যক্তি!"


আলম সাহেব ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে। শরীরে বল না থাকলেও খুব শক্ত হয়ে কদম চালাচ্ছেন তিনি৷ চশমাটা খুলে নিল। এখানেই হামজা সর্বশেষ এসেছিল অভ্রের কথায়! আলম সাহেব দেখতে পাচ্ছেন হামজাকে! ড. নাজনীন ভাবছে এখানে আলম সাহেবকে এনে সে হয়তো ভুলই করেছে! হামজা বলেছিল, "ভাই আপনার ভুল হচ্ছে এখনও!" অভ্র আরও একটা ঘুষি মেরে বলল, "এইদিনের জন্য অপেক্ষা করেছিলাম আমি!"
আলম সাহেব বাধভাঙ্গা কান্নায় জড়িয়ে গেলেন! অভ্রের মার খেয়ে হামজা যখন ভারসাম্যহীন হওয়ার দিকে তখন সে বলল, "আপনি বললেই আমি কখনও মুখ দেখাতাম না!" হামজার কপাল বেয়ে রক্ত পরতে শুরু করল। সে আবারও বলল, "পারবেন মীমের মুখোমুখি হতে?" অভ্র আরও একবার হামজার পেটে লাথি মারলো! হামজা বলল, "পারবেন রাতে ঘুমাতে?"
"আগে তোকে ঘুম পারিয়ে দিই?"
আলম সাহেব পাগলের মত যেখানে সেখানে মাটি খুড়তে লাগলো! একটু পরপর বলে, "হামজা, বাবা আমার কোথায় তুই?"
হামজা শেষ বারের মত বলল, "আমাকে ছেড়ে দেন ভাই, চলে যাবো এই শহর আর ওই ভার্সিটি ছেড়ে, কাউকে কিছুই জানাবো না।"
অভ্র শুনলো না হামজার কথা। হামজার ঠোট কাপছিল, পানির কথা বলছিল সে অভ্র গুরুত্ব দেয় নি! কোনরকম কষ্ট করে বলল, "সত্যের মুখোমুখি হবেন একদিন। বিচার হবে সেই আদালতে। মীম কোনদিনও আপনার হবে না!"
আলম সাহেব হন্যে হয়ে মাটি খুরতে লাগলো! নাজনীন তাকে ধরে বলল, "প্লিজ স্যার আপনি শান্ত হোন৷ আপনার শরীর খারাপ করবে!" আলম কোনো কথা শুনছেন না! বললেন, "আমি পরওয়া করি না৷ আমার হামজাকে নিয়ে আসো। হুজাইফা ঠিক বলছিল৷ হামজা রে...." নাজনীন আসলেই ভুল কাজ করেছে আলম সাহেবকে এখানে এনে!
আলম বললেন, "যে আমার হামজাকে এত কষ্ট দিছে তারে আমি মাফ করি কিভাবে? আচ্ছা আমার হামজা কি তারে মাফ করছিল?" নাজনীন উত্তরে কিছুই বলল না! কারণ সে জানে না! কিছুক্ষণ পর কান্না থামিয়ে আলম বললেন, "ঠিক আছে, আমি তাকে মাফ করে দিলাম। দিলাম মাফ করে! পাষাণ দিলের মানুষে ক্ষমা, মায়া, দয়া থাকে না। আমি এদের মধ্যে কেউ নই! মাফ করে দিলাম।" এই বলে আবারও কেঁদে উঠলেন তিনি!


থানায় বসে পুরানা কেসের ডায়েরিটা খুজে বের করল ডিউটি অফিসার। ধুলা জমে একাকার অবস্থা খাতাটার! অনেক খোঁজাখুঁজির পেয়ে গেলেন কেসটা৷ আলম সাহেব সাইন করে দিলেন। নাজনীন বলল, "স্যার আপনি গাড়িতে বসুন আমি আসছি।" চোখ মুছতে মুছতে বের হলেন তিনি৷ অফিসার বললেন, "আপনার আর কোনো কাজ আছে ড. নাজনীন?"
নাজনীন বলল, "আমি আসলে মীম আর হুজাইফা কোথায় আছে জানতে চাই।" অফিসার ছোট্ট একটা কাগজে মীমের ঠিকানা লিখে সাইন করে দিলেন। ড. নাজনীন দেখে বললেন, "স্যার হুজাইফার ঠিকানাটা?"
অফিসার উত্তর দিলেন, "সরি, আমার ডিউটি শেষ, আমি বের হচ্ছি! আসসালামু আ'লাইকুম!" তিনিও চোখ মুছতে মুছতে বের হয়ে গেলেন!
ড. নাজনীন ঠিকানার নিচের সাইনটা লক্ষ্য করলেন, বেশ স্পষ্ট করে লেখা আছে হুজাইফা, হুজাইফা আমির আব্বাস!


[সমাপ্ত]

ধন্যবাদ সবাইকে যারা ধৈর্য্যের সাথে পড়েছেন এবং সেই সাথে ক্ষমাপ্রার্থী কারণ ঠিকমত গুছিয়ে লিখতে পারি নি। ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই মার্চ, ২০২১ রাত ১২:৪১
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা

লিখেছেন করুণাধারা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৯



এই ধাঁধার নাম সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা; নিচের লিংকে এটার ভিডিও আছে।

স্বৈরশাসকের বন্দী

এই ধাঁধাটি আমার ভালো লেগেছিল, তাই অনেক আগে আমার একটা পোস্টে এই ধাঁধাটি দিয়েছিলাম। কিন্তু সেই পোস্টে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বৃদ্ধাশ্রম।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১৬



আগে ভিডিওটি দেখে নিন।

মনে করেন, এক দেশে এক মহিলা ছিলো। একটি সন্তান জন্ম দেবার পর তার স্বামী মারা যায়। পরে সেই মহিলা পরের বাসায় কাজ করে সন্তান কে... ...বাকিটুকু পড়ুন

টের পেলে

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৫৭

টের পেলে
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

টের পেলে গুটিয়ে যায় লজ্জাবতী/ পরিপূর্ণ যৌবনে যুবতীর নিখুঁত অনুভূতি। আমার চাওয়া, ইচ্ছে, স্বপ্ন! আমার পছন্দ বুঝদার, সুন্দর হৃদয়ের রূপ! সৌন্দর্য সুন্দর যা চিরন্তন সত্য। কিন্তু সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের চার খলিফার ধারাবাহিকতা কে নির্ধারণ করেছেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৭




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ২৬ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৬। বল হে সার্বভৈৗম শক্তির (রাজত্বের) মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) প্রদান কর এবং যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব)... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×