somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পৃথিবীর সবচাইতে "সৎ" শহর গুলো!

১৭ ই নভেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ধরুন, ঝকঝকে রৌদ্রজ্জ্বল একটি দিন। ব্যস্ত ভঙ্গিতে আপনি হেঁটে যাচ্ছেন ব্যস্ত রাজপথ দিয়ে। হঠাৎ খেয়াল করলেন আপনার ঠিক সামনেই পড়ে আছে পেটমোটা একটি মানিব্যাগ। মুহূর্তের জন্য আপনি ভড়কে গেলেন। মানিব্যাগে টাকা পয়সা ভালোই আছে বোঝা যাচ্ছে। আপনি একমুহূর্ত ডানে বায়ে দেখে নিলেন কেউ আপনাকে খেয়াল করছে কিনা। মানিব্যাগটা তখন হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাসের মত করে কথা বলে উঠলো- ‘হা করে দেখছিস কিরে হাঁদারাম! তুলে ফেল! তুলে ফেল আমাকে, তারপর ঝটপট পকেটে ভরে নে’।

পথেঘাটে চলাফেরার সময় এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি আমরা অনেকেই কমবেশি হয়েছি। টাকা ভর্তি এমন একটি মানিব্যাগ হঠাৎ পথে কুড়িয়ে পেয়ে আমরা অনেকেই মুহূর্তের জন্য কিংকর্তব্যবিমুড় হয়ে পড়ি। কেউ মানিব্যাগটা উঠিয়ে নিই ফিরিয়ে দেবার অভিপ্রায়ে, কেউবা আবার ঝটপট একটি শপিং লিস্ট বানিয়ে ফেলি মনে মনে… কেউ কেউ তো আবার ভয় পেয়ে মানিব্যাগ ফেলে দিই ভোঁদৌড়।

পথে কুড়িয়ে পাওয়া মানিব্যাগ নিয়ে মানুষের আচরণ পর্যবেক্ষণের অভিপ্রায়ে সম্প্রতি বিশ্বখ্যাত ম্যাগাজিন রিডার্স ডাইজেস্ট চারটি মহাদেশের মোট ষোলটি শহরজুড়ে একটি গবেষণা চালায়।

গবেষণার অংশ হিসেবে শহরের বিভিন্ন পার্ক, শপিং মল কিংবা সাইড ওয়াকে পঞ্চাশ ডলার, সেলফোন নাম্বার, বিজনেস কার্ড আর ফ্যামিলি ফটোগ্রাফ সমেত একটি মানিব্যাগ ফেলে রাখা হয়। উদ্দেশ্য- সে শহরের মানুষগুলোর সততা কিংবা দায়িত্ববোধ সম্পর্কে একটি ধারনা নেয়া।

সমীক্ষায় সবচেয়ে বেশি সততা দেখিয়েছেন ফিনল্যান্ডের হেলসিঙ্কি নগরীর বাসিন্দারা যারা পড়ে থাকা মোট বারোটি মানিব্যাগের এগারোটিই ফেরত পাঠান ব্যাগে থাকা ঠিকানা/ সেল নাম্বারটি ব্যবহার করে।

ধর্ষণ এবং নারী নির্যাতন সংক্রান্ত ইস্যুতে ইমেজ সঙ্কটে ভুগলেও ভারতের মুম্বাই নগরীর বাসিন্দারা সততার তালিকাটিতে দ্বিতীয় স্থানটি দখল করে নেন, যেখানে মোট বারোটি মানিব্যাগের মধ্যে নয়টি মানিব্যাগই স্থানীয়রা প্রাপক বরাবর ফেরত পাঠান।

বন্ধুত্বভাবাপন্ন নয় বলে নিউ ইয়র্ক শহরের নাগরিকদের দুর্নাম থাকলেও সেখানকার নাগরিকরা নিজেদের সততার পরিচয় ঠিকই দিয়েছেন এই সমীক্ষায়। নিউ ইয়র্কের রাজপথে পড়ে থাকা মোট বারোটি মানিব্যাগের মধ্যে আটটিই ফেরত পাঠান এখানকার দায়িত্বশীল নাগরিকরা।

বারোটির মধ্যে ছয়টি মানিব্যাগ ফেরত পাঠান বার্লিন নগরীর মানুষেরা। তালিকায় এরপর যতই সামনে যাওয়া হয়েছে, ততই বেরিয়ে এসেছে বিব্রতকর সব চিত্র। পোল্যান্ডের নাগরিকরা মোট বারোটি মানিব্যাগের মধ্যে পাঁচটি মানিব্যাগ ফেরত পাঠান, বাকিগুলোর আর হদিস পাওয়া যায়নি।

অপ্রত্যাশিতভাবে সুইজারল্যান্ডের জুরিখ শহরের নাগরিকরা মোট মানিব্যাগের থেকে মাত্র চারটি ফেরত পাঠান।
ম্যাঞ্জানারেস নদীর তীরে অবস্থিত মাদ্রিদ নগরী অবস্থানগত কারনেই আন্তর্জাতিক সংগঠকদের কাছে বিশেষ গুরুত্ব পেয়ে থাকে। ‘World Tourism Organization’- এর সদর দপ্তর এ শহরেই অবস্থিত। তবে রিডার্স ডাইজেস্টের পরিচালিত গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী এখানকার সংগঠকদের বেশ বিব্রতই হতে হচ্ছে। মোট বারোটি মানিব্যাগের মধ্যে মাত্র দুটো মানিব্যাগ ফেরত পাঠিয়ে এ শহরের নাগরিকরা শহরের ভাবমূর্তি রীতিমত হুমকির মুখেই ফেলে দিয়েছেন।

পর্তুগালের লিসবনে সমীক্ষাটি চালাতে গিয়ে আয়োজকরা রীতিমত ঘাবড়ে গিয়েছিলেন যখন দেখা গেল- লিসবনের রাজপথে ফেলে আসা বারোটি মানিব্যাগের একটিও ফেরত আসেনি। তবে শেষ মুহূর্তে কোন একজন পর্তুগীজ নাগরিক তার খুঁজে পাওয়া মানিব্যাগটি ফেরত পাঠিয়ে কোনমতে শহরের মুখরক্ষা করেন।
রিডার্স ডাইজেস্টের গবেষণার ফলাফল বিশ্লেষণ করে বিশেষজ্ঞরা মানুষের সাইকলজি সম্পর্কে বেশ কিছু চমকপ্রদ তথ্য আবিস্কার করেন। গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী দেখা গেছে সততার সাথে মানুষের বয়স এবং লিঙ্গের কোন নির্দিষ্ট যোগসূত্র নেই।

এর চেয়েও চমকপ্রদ আবিষ্কারটি হচ্ছে- মানিব্যাগ ফেরত পাঠানোর ব্যাপারটির সাথে সততা বিষয়টিরই সরাসরি কোন সম্পর্ক নেই। মানিব্যাগ ফেরত পাঠানো বেশিরভাগ মানুষই দাবি করেছেন তারা স্রেফ একটি নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে প্রতিক্রিয়া দেখেছেন। এর সাথে সততা’র মত মানবিক গুণাবলীটির কোন সম্পৃক্ততা নেই। তবে রিডার্স ডাইজেস্টের অনেক অনলাইন পাঠকই গবেষণার এই ফলাফলটির সাথে একমত হতে পারেননি।
ডেট্রয়েটের এক রসিক পাঠক তো বলেই ফেললেন- যে ভাগ্যিস সংগঠকরা তার শহরে যায়নি। গেলে হয়তো রাস্তায় মানিব্যাগটি ফেলার আগেই ছিনতাইকারীরা এসে তাদের সর্বস্ব লুটে নিত।

Published on priyo.com Monday, 30 September 2013
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে যেই হত্যাকান্ড শুরু হয়েছে, ইহা কয়েক বছর চলবে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭



সামুর সামনের পাতায় এখন মহামতি ব্লগার শ্রাবনধারার ১ খানা পোষ্ট ঝুলছে; উহাতে তিনি "জুলাই বেপ্লবের" ১ জল্লাদ বেপ্লবীকে কে বা কাহারা গুলি করতে পারে, সেটার উপর উনার অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×