ইদানিং পত্র পত্রিকা খুললেই মনে হচ্ছে, বাংলাদেশ এবং ভারত তাদের সম্পর্কের সর্মশ্রেষ্ঠ অবস্থা পার করছে, মানে দুই দোস্ত এখন চরম ভাবে আছে। ভারতীয় পত্রিকার সূত্রে ব্লগে কিছু খবর দেখলাম, বাংলাদেশ নাকি তার কিছু ভূ-খন্ডই ভারতকে উপহার হিসেবে দিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু সেই ভারতের আমাদের সাথে এ কেমন আচরণ? পড়ুন গতকাল প্রথম আলোয় পাঠকের চিঠিপত্র বিভাগে প্রকাশিত এক চিঠিতেঃ
বাংলাদেশ নিষিদ্ধ!
আমরা দুই বন্ধু ভারতে গিয়েছিলাম গত আগস্ট মাসে। সে সময় আমরা বেছে নিয়েছিলাম বিশ্বের নানা দেশের পর্যটকের মিলনমেলা লাদাখ। হিমালয়ের দীর্ঘ, ক্লেশকর, ঝুঁকিপূর্ণ, দুর্গম পথ পেরিয়ে নানা দেশের নানা ভাষার শত শত পর্যটক এসেছিলেন। লাদাখ হলো ভারতের জম্মু-কাশ্মীর রাজ্যের অন্তর্গত একটি অঞ্চল, যা হিমালয়ের ১২ থেকে ১৮ হাজার ফুট উচ্চতায় অবস্থিত। লাদাখের পর্যটকপ্রিয় স্থানগুলো হলো: শতাব্দীপ্রাচীন কয়টি বৌদ্ধমন্দির, প্যালেস ও লে থেকে ২৫০ কিলোমিটার দূরবর্তী সোমোরিরি লেক, ১৫০ কিলোমিটার দূরবর্তী প্যাংগাংলেক ও ২৫০ কিলোমিটার দূরবর্তী পার্বত্য মরুভূমি নুব্রাভেলি। নুব্রাভেলি যেতে অতিক্রম করতে হয় পৃথিবীর সর্বোচ্চ উচ্চতায় অবস্থিত মোটরপথ খারদুং লা (লা অর্থ পাস)। তবে এই এলাকাগুলোতে যেতে বিদেশি নাগরিকদের বিশেষ অনুমতিপত্র নিতে হয়, যা ইস্যু করে থাকেন লের ডিস্ট্রিক্ট কমিশনার বা ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট। সরকার অনুমোদিত কোনো ভ্রমণ সংস্থার মাধ্যমে তা সংগ্রহ করতে হয়। চারজন পর্যটক মিলে একটি অনুমতিপত্র দেওয়া হয়। আমরা দায়িত্ব দিলাম লে-এর অতিপরিচিত ভ্রমণ ব্যবস্থাপত্র সংস্থা ‘ইন্দাস ভেলি ট্রাভেল এজেন্সি’কে। সার্ভিস চার্জ দিতে হলো প্রতি পাসপোর্টের জন্য ১৫০ টাকা। চারজন মিলিয়ে নিতে আমাদের যুক্ত করা হলো একজন ইতালীয় ও একজন ইসরায়েলি নাগরিকের সঙ্গে। একটি সরকারি ছাপানো দীর্ঘ ফরমও পূরণ করে পাসপোর্টসহ আমাদের তা জমা দিতে হলো। কিন্তু ডেপুটি কমিশনার অফিস আমাদের অনুমতিপত্র দিল না। ইন্দাস ভ্যালির প্রধান আন্তরিকতার সঙ্গে দুঃখ প্রকাশ করে আমাদের কাছ থেকে নেওয়া সার্ভিস চার্জ পুরোটাই ফেরত দিলেন। তিনি জানালেন, লাদাখের এই তিব্বতীয় অংশে চীন, পাকিস্তানসহ মোট আটটি দেশের নাগরিকদের যেতে দেওয়া হয় না। তার মধ্যে যে বাংলাদেশের নামও আছে, এটি তাঁদের কখনো জানা ছিল না। আমরা খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম, ২০১০ সালে বাংলাদেশ হাইকোর্টের একজন বিচারপতি লে-তে গিয়েছিলেন। তিনি নাকি নিজেই লে-তে গিয়ে ডিসি সাহেবের সঙ্গে দেখা করেছিলেন, কিন্তু তার পর তাঁকেও এই অনুমতিপত্র দেওয়া হয়নি। চীন-পাকিস্তানের সঙ্গে ভূখণ্ড নিয়ে ভারতের কয়েকবার যুদ্ধ হয়েছে। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের হিমালয় নিয়ে কোনো দ্বন্দ্ব-বিরোধ নেই। তাহলে সুদূর লাদাখে ভারত বাংলাদেশকে কেন তার শত্রুরাষ্ট্র হিসেবে তালিকাভুক্ত করে রেখেছে?
আনিস উল হক
আইনজীবী সমিতি, নীলফামারী
[email protected]
হায়রে বাংলাদেশ ! হায়রে বাংলাদেশের বন্ধু !!