ডাক আসে ঠিকই কিন্তু চিঠি আসে না
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
শের শাহ সর্বপ্রথম এ উপমহাদেশে ‘ঘোড়ার ডাক’ এর প্রচলন করেন। ছোটবেলায় যখন এটা পড়েছি, তখন মনের ভেতর একটাই প্রশ্ন ছিল- আচ্ছা এর আগে কী এখানকার ঘোড়াগুলো ডাকতে পারতো না? পরে জেনেছি এই ডাক- সেই ডাক নয়। এ হলো চিঠি-পত্রের ডাক। এসএমএস, ইমেইল আর সেলফোনের মধুর অত্যাচারে চিঠি তার যৌবন হারিয়েছে বহু আগেই। এখন কেবল দু’টাকার সচল নোট এর মতো প্রবীণ অতীতটা বয়ে বেড়াচ্ছে। অবশ্য আর কত? সেই ঘোড়ার ডাক অথবা তারও আগে থেকে শুরু। এরপর কত হাতি- কত ঘোড়া গেল তল! আর এখনকার নতুন নতুন প্রযুক্তি এসে বলে দেখিতো এখানটায় কত জল! প্রাযুক্তিক আগ্রাসনে এখন ডাক ঠিকই আসে কিন্তু চিঠি আর আসে না।
চিঠির আদ্দিকালের কথা এলে পাখি সমাজের নাম না নিলে অদেখা ইতিহাস কিংবা দেখা সিনেমার সেই বিখ্যাত চিঠি চালাচালির স্টাইলটাকে অস্বীকার করা হবে। বিশ-তিরিশ পুরুষ আগে পাখিরাইতো চিঠি আদান-প্রদানের মহান দায়িত্বটা পালন করতো! অথচ এখন তাদের কোন নাম গন্ধই নাই! এ নিয়ে পাখিদেরও মন খারাপ। এক জ্ঞানী পাখি সঙ্গীটাকে বলছে-
: পৃথিবীর মানুষগুলো ভীষন খারাপ, তাই না?
: এতো পুরান কথা। এটা নতুন করে বলার কী আছে?
: না, হঠাৎ মনে পড়লো। সামনেই নাকি ডাক দিবস। অথচ আমাদের নামটা পর্যন্ত নিচ্ছে না ওরা। আমাদের চিঠি সংক্রান্ত অবদান নিয়ে কোন দিবসও নাই।
: ঠিক বলেছো। অথচ আমাদের পূর্ব পুরুষরা চিঠি চালাচালি নিয়ে কতো কষ্টই না করেছে!
: শুধু কী তাই? মোবাইলের মেসেজ অথবা ইন্টারনেটের চিঠিতেও আমাদের কোন ছাপ নেই। ছবি, লোগো কিচ্ছু নেই। কেবল রঙ বেরঙের ডাক বাক্স বসানো।
: হু.. মানুষগুলো আসলেই স্বার্থপর। আচ্ছা, এর কী কোন বিহিত করা যায় না।
: না। তবে একটা উপায় আছে
: কী সেটা?
: আসামের আত্মহত্যাপ্রবণ পাখিদের মতো আত্মহত্যা করা!
এরপর সেই পাখিদের কথোপকথন আর জানা যায়নি। পাখিরা হঠাৎ করে এতো ইমোশনাল হয়ে পড়লো কেন সেটা অবশ্য একটা গবেষণার বিষয় হতে পারে। তবে আমার এক স্বঘোষিত পাখি বিশেষজ্ঞ বন্ধুর মতে চিঠি চালাচালির কাজে বহুদিন ধরেই পাখিদের ব্যবহার করা হচ্ছে না। ফলে চৌদ্দপুরুষ ধরে ওরা ললনাদের আদর সোহাগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আর সেই দু:খে আত্মহত্যা করার ইচ্ছা ওদের জাগতেই পারে!
আত্মহত্যার খপ্পরে আমিও পড়েছিলাম। তবে বেঁচে গেছি। তখন আমি নাইন কী টেনে পড়ি। কাঁচা বয়স। এক কাসমেটকে মনে ধরে গেল। ব্যস, লিখে ফেললাম প্রেমপত্র- ‘আমার ভালোবাসা গ্রহণ না করলে আমি আত্মহত্যা করবো।’ কিন্তু সেই চিঠিটা নিজের হাতে তুলে দেয়ার সাহস ছিল না। ওর কাজিনকে দিয়ে পাঠিয়ে দিলাম। সময়মতো জবাবও এলো। কিন্তু সেটা দেখে আমার চু চড়কগাছ না হয়ে ধুতরা গাছ হবার যোগাড়। মেয়েটা লিখেছে- ‘আত্মহত্যা করলে অবশ্যই দিনে করবেন। কারন আপনার যা সাহস তাতে করে রাতে আত্মহত্যা করতে গেলে ভয়ের চোটে আপনার হার্ট অ্যাটাক হয়ে যেতে পারে।’ চিঠি পড়ে হাসবো না কাঁদবো বুঝতে পারছিলাম না। পরে যে করেই হোক আত্মহত্যার দূরদর্শী সিদ্ধান্ত থেকে ফেরত এসেছিলাম বলেই হয়তো এখন বেঁচে থাকার বোনাসটা উপভোগ করতে পারছি। পরে জেনেছি মেয়েটি চিঠির চাইতে সরাসরি ‘আই লাভ ইউ’ থিওরীতে বিশ্বাসী ছিল। কিছু হয়নি বলে আর কখনো প্রেমের চিঠিই লিখিনি।
যদিও এখনো অনেকে চিঠি লিখে, তবুও একথা নিশ্চিত চিঠির সেই স্বর্ণযুগ এখন আর নেই। চিঠি এখন আনুষ্ঠানিকতা কিংবা প্রাযুক্তিক উৎকর্ষতার সস্তা মোড়কে বন্দী। আগের সেই আবেগ, রোমাঞ্চ, শিহরণ, বিশ্বাস কোনটাই এখন আর নেই। কিন্তু সব সময় সবকিছুকে অবিশ্বাস করা যৌক্তিক নাও হতে পারে। প্রাসঙ্গিক একটা কৌতুক দিয়েই শেষ করা যাক-
এক ছেলের অনেক দিনের শখ সে একটা সাইকেল কিনবে। কিন্তু কিছুতেই সেই শখটা পূরণ হচ্ছিল না। উপায় না দেখে সাইকেল কেনার জন্য সৃষ্টিকর্তার কাছে পাঁচ হাজার টাকা চেয়ে চিঠি লিখলো সে। ঘুরতে ঘুরতে চিঠি এসে পড়লো ডাক বিভাগের এক কর্মকর্তার টেবিলে। চিঠিটা পড়ে তার খুব মায়া হলো। তিনি ছেলেটার জন্য আড়াই হাজার টাকা পাঠালেন। কিছুদিন পরেই সৃষ্টিকর্তার নামে আরেকটা চিঠি এলো। ছেলেটা লিখেছে-
‘সৃষ্টিকর্তা, তোমাকে ধন্যবাদ। তুমি আমার জন্য টাকা পাঠানোতে আমি খুব খুশি। কিন্তু আমার মনে হয় ডাক বিভাগের লোকজন অর্ধেক টাকা মেরে দিয়েছে। কারন আমি মাত্র আড়াই হাজার টাকা পেয়েছি!’
লেখাটি ঘোড়ার ডিমে প্রকাশিত।
লিংকি
৮টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন্যায়ের বিচার হবে একদিন।

ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন
আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন
মিশন: কাঁসার থালা–বাটি
বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন
আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন
J K and Our liberation war১৯৭১


জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।