somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পত্র দিলাম প্রজন্মকে

২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ দুপুর ২:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



প্রিয় সন্তান শোন, এনেস্থিশিয়ার গন্ধে ঝিমঝিম করছে করিডোর। ভিনগ্রহীদের মতো ছুটাছুটি করছে সাদা পোশাকের নার্স। কেমন একটা অবাস্তব গন্ধের ভিতর তুমি অবতরণ করলে, অনেকটা মাইকেল এঞ্জেলোর দেবশিশুর মতোন! শুধু পাখা নেই! সম্ভবত খুলে স্বর্গের সিন্ধুকে তুলে রেখেছেন ঈশ্বর! তখন ফজরের আজান হতে অনেক দেরী! গীর্জার ঘন্টা বাজা শেষ, মন্দিরে প্রাতপুজার লগ্ন আসেনি! তুমি আসলে পৃথিবীর মতো গোল মুখ নিয়ে! পৃথিবীর জন্ম হলো, হয়তো তুমিই পৃথিবী! নতুন জন্ম মানে নব্য দুনিয়ার উত্থান! কি খবর দিব তোমাকে! জেরুজালেমে তোমার বয়সী একটি শিশু চাপা পড়লো ক্ষেপণাস্ত্রে! ইথিওপিয়ার শস্যক্ষেতে পড়ন্ত বিকালে চালের দানার অভাবে মরে গেলো তোমার মতো আরো কয়েকজন! চিচেন ইতজায় যদিও আর নরবলি হয়না এখন, মৃত পুরোহিতগণ, তবুও আপিমের ক্ষেতে পড়ে থাকে শয়ে শয়ে লাশ! টেলিভিশনের পর্দায় বিবিসি সিএনএনে এসব খবরই হচ্ছে বারবার! কেমন বিচারবুদ্ধি এদের! নবাগত শিশুকে কি কেউ এসব শোনায়? বন্ধ করে দিচ্ছি এখুনি টিভিটা! প্রিয় সন্তান তুমি ঘুমাও এবার!

প্রিয় সন্তান, যখন চোখ মেললে তার প্রায় তিন হাজার বছর আগে, একজন প্রমিথিউস তোমার পিতামহকে দিয়েছিল উপহার- একটা মশাল ভরা আগুন; অগ্নিমীলে পুরোহিতম! সেই অপরাধে স্বর্গীয় নিষ্ঠুর ঈগল আজো ছিড়ে খায় কলিজা তার! যখন প্রথম কাঁদলে আমি কিন্তু কিন্তু ভুলে তোমাকেই ভেবেছিলাম সেই প্রমিথিউস! তারপর তোমার মায়ের চোখ দেখে বুঝলাম তুমি নিতান্তই মানবীর গর্ভজাত! দেববংশী কেউ নও! তবু কি অদ্ভুত বিদ্রোহে ছোট ছোট হাত পা একটানা ছুড়ে গেলে, কার প্রতি ক্ষোভ নিয়ে বলোতো জন্মালে? এতো রাগ ভালো নয়! জানো! ওই যে প্রমিথিউসের দেয়া পবিত্র আগুন ছিল, একদিন সেই আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছি আমরা আমাদের বাড়ি ঘর! না! দুর্ভাগ্য নয়! নিজ হাতে জ্বালিয়েছি সব! আমাদেরো রাগ ছিলো! এখন পৃথিবী পুড়ছে,চারিদিকে ছাই আর ছাই! পোড়া খড়ের গন্ধ, জানিনা আর কতোদিন অক্ষত থাকবে তোমার শোবার ঘর! ভয় পেয়োনা! যতোদিন হাতে আছে ততোদিন আনমনে খেলা করো। এখন এত কিছু না ভাবলেও চলবে, তুমি না হয় আরেকটু বড় হও!


স্নেহের সন্তান, তুমি যখন পা রাখলে সমুদ্রে তখন মস্ত জোয়ার। চুম্বনের বদলে চাঁদ পৃথিবীর গালে কষে দেয় চড়! অক্টোপাসেরা গুটি শুটি মেরে ঢুকেছে শামুকের খোলের ভিতর! মনে রেখো শামুকেরা আর নিরীহ নয়! শরীরে আছে ধারালো শুড়! আসলে ব্যাপারটা আরো জটিল। সালভাদর দালির ছবির মতো খুব পরাবাস্তব, আসলে এখন সব মানুষই শামুক! গুটি গুটি পায়ে হাটে! খুব বেশি কাছে গেলে বের করে শুড়। শোন প্রিয় সন্তান, সাবধান! বুদ্ধিতে অক্টোপাস তোমার চেয়েও অনেক বেশি নিঃখুত! ভেবোনা! ধীরে ধীরে তুমি হয়তো তাদের মতোই হয়ে যাবে একদিন! মানুষ কিই না পারে বলো!

শোন একটা অদ্ভুত ঝড়ে ক্রমশ ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হচ্ছে নর ও নারী! বৃহস্পতির গ্রেট স্পটের চেয়েও তীব্র যদিও উপগ্রহে পড়ে না ধরা! ফ্রয়েডের চুরুটের ধোঁয়ায় ম্লান হয়ে ফিরে গিয়েছেন বৃদ্ধ টলস্টয়। এখন শুধু ঝড়! জলে-স্থলে, ঘরে-বাহিরে, উপকূলীয় নীল বন্দরে। জানিনা আগামী দশকে কোথায় থাকব আমি! অথবা তোমার মা আনা কারেনিনার মতোই হারিয়ে যাবে কিনা! এসব ধাঁধার উত্তর পৃথিবীর সবচেয়ে বড় জ্যোতিষের ও অজানা। এ এক বিপন্ন সময়! যে কোন মুহূর্তে ভেসে যেতে পারে চেনা সব! ভয় পেয়োনা! হরপ্পাও এককালে গিয়েছিল অকস্মাৎ বানে ভেসে। কি করবে এতো ভেবে! যা হবার তাইতো হবে! যদি কেউ নাই থাকে তবু উপকূলে হেঁটো! সমুদ্র খুব লক্ষী মেয়ে! বড় হয়ে একদিন প্রচন্ড একাকী হবে! সেইদিন নোনাজলে হেঁটো, সেই একই জল যেখানে ভিজেছি আমিও!

প্রিয় সন্তান যখন আলোকে চিনলে তখন একটা তীব্র দাবানল খেয়ে নিয়েছে অর্ধেক আমাজন! যদিও সবাই বলে ওটা প্রাকৃতিক! কিন্তু মনে রেখো মানুষেরা যেদিন থেকে ইজারা পেয়াছে পৃথিবীর, সেদিন থেকেই সবকিছু লৌকিক! বন্যা বলো বা টর্নেডো বলো! তো লাল ম্যাকাওয়ের ছানারা তোমার মতোই চঞ্চল ছিল। জাগুয়ারের বাবুটা তোমার চেয়েও অনেক বেশি হাত পা ছুড়তো। ওরা নিসর্গের পুত্র কন্যা ছিল! এখন ওদের অনেকেই বেঁচে নেই! কেউ আগুনে মরেছে! কেউ খাঁচায় পচেছে! অথচ ওদের সাথে তোমার তো খুব বেশি তফাত ছিলোনা কোন! আজকাল আমরা মানুষেরা আর রূপকথা বানাতে পারিনা, তোমারো হয়তো আর সেই সব জীবন্ত গল্প তাই শোনা হবেনা! কাকে নিয়ে গল্প বানাবো? বেঁচে নেই সিংহটা! ফাঁদে পরে মরেছে বাদামী শেয়াল! যারা বেঁচে নেই তাদের নিয়ে তো নতুন গল্প হয়না! তোমার মা বলে তুমি নাকি বড় হয়ে নভোচারী হবেই হবে। তোমার মায়ের বড় শখ! যদি নভোচারী হও, একদিন একটা সবুজ গ্রহ কিনে দিও ওদের। জেনো অপেক্ষায় আছে গন্ডার, হাতি, প্রবীণ কাছিম, নীলগাই। ওরা সবাই তোমার বোন আর ভাই!

প্রিয় সন্তান ভেবেছিলাম তোমার জন্য একটুকরো জমি কিনব, শীতের ফুলকপি কিভাবে শিশিরে ভিজে বড় হয় নিজেই দেখাব। মাটির শরীরে হাত দিলে প্রকৃতি কিভাবে আত্মায় ঢুকে পড়ে সেটাও দেখতে পারতে তুমি! কিন্তু পৃথিবীতে পতিত জমিই নেই! শহর বাড়ছে! বাড়ছে কংক্রিটের ঢাল! এখন পৃথিবী কংক্রিটের গ্রহ! তবু আমি তোমার জন্য একটুকরো জমি চেয়েছিলাম। ওরা সবুজ প্লাস্টিকে মোড়া একটি মৃত এপার্টমেন্ট দিয়ে গিয়েছে আর দশটি ক্রেডিট কার্ডে আমাকেও বেঁধে নিয়ে গিয়েছে! এখন যাকে দেখছ সে আসলে আমার ছায়া! আমার মতোই ঠিক! যদি আটকাই কনজিউমারিজমের জালে ছায়াটাও আর থাকবেনা। একটা ইঁদুর-বিড়াল যুদ্ধ চলছে শখ ও সাধ্যের! থাক এসব নিয়ে তুমি এখন ভেবোনা! আপাতত কিছু তো হলো! তবে বড় হয়ে কখনো তুমি কলে পড়া ইঁদুর হয়োনা। চারিদিকে পাতা আছে বহুবিধ ফাঁদ! তারা বিজ্ঞাপনের মতো সুন্দর! পারলে অরণ্যে গিয়ে একটুকরো মাটি নিও! মাটিই তো জীবন। যদিও অরণ্য নেই আর। অনেক কিছুই থাকবেনা তোমার সময়ে, তবুও তো বাঁচতে হবে তাইনা!

যাই হোক! রাত গুলো ডাবরের মতে হচ্ছে গভীর! এখন ঘুমাও! আরেকটু বড় হলে আগ্রাসী সভ্যতা ঘুমকেও কেড়ে নিবে ঠিক, তুমিও আমাদের মতো ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিবে- ‘আমি এক ইনসমনিক!’ তার চেয়ে বরং এখন ঘুমিয়ে নাও বেশি করে! ঘুমাও এ নিভৃতে।

ইতি এক সংশয়ী প্রজন্ম

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ ইন্টারনেট
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ দুপুর ২:৫৭
৬টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বারবাজারে মাটির নিচ থেকে উঠে আসা মসজিদ

লিখেছেন কামরুল ইসলাম মান্না, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪০

ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার ইউনিয়নে মাটির নিচ থেকে মসজিদ পাওয়া গেছে। এরকম গল্প অনেকের কাছেই শুনেছিলাম। তারপর মনে হলো একদিন যেয়ে দেখি কি ঘটনা। চলে গেলাম বারবাজার। জানলাম আসল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরিবর্তন অপরিহার্য গত দেড়যুগের যন্ত্রণা জাতির ঘাড়ে,ব্যবসায়ীরা কোথায় কোথায় অসহায় জানেন কি?

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৭


রমজানে বেশিরভাগ ব্যবসায়ীকে বেপরোয়া হতে দেখা যায়। সবাই গালমন্দ ব্যবসায়ীকেই করেন। আপনি জানেন কি তাতে কোন ব্যবসায়ীই আপনার মুখের দিকেও তাকায় না? বরং মনে মনে একটা চরম গালিই দেয়! আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯

মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা বলতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×