somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অব্যক্ত পঙক্তিমালা

২৮ শে এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



১.
অন্তু আমার ছোট বেলার বন্ধু। বহুদিন পর আজ সে আমায় ডেকেছে। আগের চাইতে ঢের বদলে গেছে। সবুজ শার্ট আর কালো হাফ প্যান্টের বদলে তার গায়ে সাহেবি পোশাক, পায়ে কালো চকচকে শু। সুগন্ধি নাকে এসে ধাক্কা খাচ্ছে রাস্তার ওপাশ থেকেই। আমাকে দেখেই কালবিলম্ব না করে ‘আরে বন্ধু’ বলে ডাক দিলো।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেনির দু’জন ছাত্রের পায়ে জুতা দেখা যায়না। একজনের অভাব, আরেকজনের স্বভাব। সবুজ স্কুল ড্রেসের কাঁধে আলাদা যে কাপড় লাগানো থাকে সাদার মাঝে কালো কাপড়ের ডোরাকাটা চিহ্ন নিয়ে, তার নাম কী জানিনা। জানার ইচ্ছেও মনে জাগেনি কখনও। একজনের শার্টের সে বস্ত্রটুকরো ছিঁড়ে গেছে। যুদ্ধাহত সৈনিকের কাটা হাতের মতোই ঝুলছিলো গতকাল গোল্লাছুট খেলতে গিয়ে। আজ সেটি আবার লাগানো হয়েছে। সবুজ রঙ্গের মাঝে লাল সুতোর সেলাই ভাসছে। মায়ের হাতের সেলাই বুঝতে বাকি নেই।

সেই ছেলেটি আমি। গতকাল টিফিন পিরিয়ডে স্কুলের পেছনের জমিতে গোল্লাছুট খেলার সময় অন্তু আমায় ছুঁতে গিয়ে কাঁধের এপ্যুলেট ধরে টান দেয়। ও হ্যাঁ! জিনিসটির নাম এপ্যুলেট। সেদিন ফেরার পথে স্কুলের ছোট মাঠের কোনায় হাইস্কুল পড়ুয়া বশির ভাই শার্টের এমন হাল দেখে ডেকে জানতে চেয়েছিলেন মারামারি করে এপ্যুলেট ছিঁড়েছি কিনা? তখনই শিখেছি স্কুল ড্রেসের এই অপ্রয়োজনীয় অংশের নাম এপ্যুলেট।

আরেকজনের নাম অন্তু। যে স্বভাবের বশবর্তী হয়েই জুতা পরে স্কুলে আসেনা। তাকে বারংবার জিজ্ঞেস করলাম জুতা না পরে আসার কারণ, উত্তর একটাই – 'এমনিতেই'। স্কুলের পাশের বাড়ি পর্যন্ত এসে পা থেকে জুতা খুলে খড়ের গাদায় লুকিয়ে রেখে দেয়। না বললেও একদিন জানালা দিয়ে তা দেখেছি।

সে অন্তুর সাথে আজ দেখা। অন্তুর কি মনে আছে শৈশবের সে দিনলপির কর্মকাণ্ড? মায়ের মুখে শুনেছি উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশ চলে যাবে। বিলেত ফেরত অন্তু কি চিনবে এই রাশেদকে?

২.
রাশেদ আমার শৈশবের বন্ধু। পঞ্চম শ্রেনি পর্যন্ত আমরা একই স্কুলে পড়েছি।

স্কুলের পাশের বাড়িটিই রাশেদদের বাড়ি। স্কুলে সে জুতা পরে আসেনা। স্যান্ডেলের দু’খণ্ডে দু’রঙের লেইস লাগানো। জুতা ছিঁড়ে যাওয়ায় তার মা কোত্থেকে দু’টো লেইস লাগিয়ে দিয়েছে। অন্যসময় সে সেগুলো পরে বেড়ালেও স্কুলে খালি পায়েই আসে। নিজে চামড়ার জুতো পায়ে দামড়ার মতো দৌঁড়াবো আর রাশেদ খালি পায়ে তা সহ্য করতে কেমন জানি লাগে। ওদিন মন হলো রাশেদ বার বার পায়ের দিকে তাকাচ্ছিল। পকেটে করে একটা বাদাম নিয়ে এলেও তা দু’জনে সমান ভাগ করে খেয়েছি। শুধু একটি জায়গায় রাশেদের সাথে আমি কোনও ভাগ বসাতে পারিনি। স্কুলের হাজিরা খাতার নামের প্রথম ঘরটিতে।

প্রতিদিন মা পরিপাটি করে সাজিয়ে গুছিয়ে স্কুলে পাঠান। রাশেদের বাড়ি গিয়ে ডাক দিলে সে বেরোয়। তারপর এক সাথে স্কুলে গিয়ে ক্লাসরুমের দরজা খোলার আগ পর্যন্ত যুক্তি পরামর্শ করি কোন টেবিল আজ ছুঁবো। যে টেবিল যে সবার আগে ছুঁবে সে টিবেল ওই দিনের জন্য তার। সে যাকে ইচ্ছা তার টেবিলে বসাবে। আমাদের স্বচ্ছ নিরপেক্ষ ও আন্তর্জাতিক মানের অলিখিত সংবিধানের এমন ধারায় আমি আর রাশেদ যতদিন মনে পড়ে এক সাথেই বসেছি। কখনও দেয়ালের সাথে লাগানো সারির প্রথম ব্যাঞ্চে, কখনও মাঝের সারির প্রথম ব্যাঞ্চে। পশ্চিমের দেয়ালের পাশের সারিতে বসিনা। ওই সারি কেবল মাত্র ও শুধুমাত্র মেয়েদের জন্য সংরক্ষিত আসন হিসেবে পরিগণিত।

‘প্রাইমারি শেষ করেছি আমি এখন ক্লাস সিক্সে, রুখবে আমায় কে?’
হাইস্কুলের গেইট সংলগ্ন দেয়ালে সাদা রঙের চুনা মেরে এই কথাটি লিখা হয়েছে। লেখার পাশে চুলে বেণি করা একটা মেয়ে সগৌরবে লাফাচ্ছে। ঘরে ফিরে নির্জনে ওই লাইনটি বলতে বলতে নিজেও একই প্রক্রিয়ায় লাফাতাম। কিন্তু ওই স্কুলে আর অন্তুর সাথে ভর্তি হওয়া হলোনা। প্রাইমারি শেষে আব্বা আমায় শহুরে এক স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেন। আবাসিক স্কুল। সেখানে সব নিয়ে চলে যাই। সাইকেলটিও নিয়ে যাই। বাবা হোস্টেল সুপারকে বলে কয়ে সাইকেলের ব্যাপারে রাজি করালেন। এই সাইকেল আমি আর রাশেদ পালাক্রমে চালাতাম। শুনেছি আমি চলে যাওয়ার দিন কয়েক পর রাশেদও একটা সাইকেল কিনেছিলো। রাশেদের বাপ মানুষটা গরীব হলেও ছেলের জন্য মাঝে মাঝে অবতার হয়ে নেমে আসেন। ছেলে কিছু চাওয়া লাগেনা। ছেলেটাও পরিবারের দরিদ্রতা দেখেই বড় হয়েছে। কখনও আগ বাড়িয়ে আবদার করতে যায়নি।

স্কুল কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে সামনের মাসেই জার্মানিতে চলে যাচ্ছি। তাই বাবা আমায় নিয়ে দাদার কবর যিয়ারত করতে গ্রামে এসেছেন। যিয়ারত শেষে বুক থেকে হাতের বাঁধন খুলে ঘুরে মোচড় দিতেই দেখি রাস্তার ওপাশে রাশেদ দাঁড়িয়ে আছে। পাশে তার বাবা। ছোট বেলার রাশেদ অনেক বদলে গেছে। নেভি ব্লু শার্টের সাথে কালো প্যান্ট, চকচকে কালো শু। বজল চাচার মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে ছেলেকে বিদায় জানাতে এগিয়ে এসেছেন। রাস্তার ধারে বাসের জন্য অপেক্ষা করছেন। এই রাশেদকে এখনই ডাক্তার ডাক্তার লাগছে। চশমাটাও দেখি ধরে ফেলেছে। গত বছরই বাবার মুখে শুনেছি গ্রামের বজল চাচার ছেলে মেডিকেলে চান্স পেয়েছে। বশির ভাই তাকে বিনে পয়সায় কলেজের দু’বছর প্রাইভেট পড়িয়েছেন। তার পাশে বশির ভাইও দাঁড়িয়ে আছেন। গত বছর কোথাও চান্স পেলামনা। আব্বা অনেক কষ্ট পেয়ে বিদেশ পাঠিয়ে দিচ্ছেন। তাঁর ছেলে নাকি শহুরে বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সুদূর জার্মানি কি গ্রাম? সেখানে গিয়ে কি আবার রাশেদের মতো নির্মল মনের সবল বন্ধু পাবো?

মাঝে মাঝে ইদের ছুটিতে এ নবাবপুরের বাড়িতে পাড়ি জমালেও রাশেদকে পেতামনা। ইদের দিন বিকেলেই সে নানু বাড়ি দৌড় দেয়। পরদিন নিজে এসে আবার দৌড় দেই সেই চিরিচেনা ব্যস্ত নগরীতে। দাদীকে দেখতেই আসতাম। এখন দাদীও নেই। দাদার পাশেই শুয়ে আছে। একসাথে দু’জনের কবর যিয়ারত শেষেই রাশেদের সাথে দেখা হয়ে গেলো। আর অপেক্ষা নয়। রাশেদের জড়তা কাটার সময়ও আজ দেবোনা। প্রথম ডাকটা না হয় আমিই দেই – ‘আরে বন্ধু ...’

৩.
নির্বাচনে হেরে সাবেক চেয়ারম্যান জালাল ভাই ছেলেটাকে শহরে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। এলাকায় শত্রুর আনাগোনা তাকে নিশ্চিন্তে থাকতে দিচ্ছেনা। শুনলাম কয়েক দিন বাদে সপরিবারেই চলে যাবেন। ছেলেটার সাথে আমার রাশেদের ভালই খাতির ছিলো। সেই ছেলেবেলা থেকে দু’জন এক সাথে চষে বেড়িয়েছে এ মাঠ ঘাট। চাষার ছেলে বলে অন্তু কখনও রাশেদকে অন্য চোখে দেখেনি। কাঁধে হাত রেখেই চলতে দেখেছি যতদিন সামনে পড়েছে। অত্র এলাকায় বাচ্চাদের নামকরা স্কুল থাকলে এই নবাবপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম আসে সর্বাগ্রে।

একটা এনজিও পাশে দাঁড়ানোয় পায়ের তলার মাটি আরও শক্ত হলো। বাড়ির পেছনের জমিতে ছোটখাটো একটা নার্সারি খুলেছি চারা গাছের । বাড়ির এক পাশে নবাবপুর স্কুল আরেক পাশে রাশু নার্সারি। আমার রাশুর মতো শত রাশেদ পরম সততায় বড় হচ্ছে নবাবপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় নামক ওই নার্সারিতে। আর রাশু নার্সারিতে আমি পরম মমতায় বড় করছি মেহগনি, শিলকড়ই, আম, জাম, লিচুসহ বিবিধ গাছের চারা।

অন্তু চলে যাওয়ায় আমার রাশেদ একা হয়ে গেল। রাস্তায় সাইকেল দেখে কেমন যেন তাকিয়ে থাকে। ছোট ভাইটাকে ‘মিস কল’ দিয়েছি গতকাল। আজও কল আসেনি ওই দিক থেকে। বিদেশে কল দিলে অনেক টাকা গচ্চা যাবে। নইলে সরাসরি কল দিয়েই কথাটা বলে দিতাম।

‘__ কেমন আছেন ভাইজান?’
ফোনের ওপাশ থেকে ছোট ভাই হজলের গলাটা আমায় আজও সিক্ত করে তোলে। কত সুন্দর করে ডাকে ভাইজান বলে। ‘আমরা সবাই ভাল। তুমি কেমন আছো ভাই?’
'ভাল।'
‘একটা কথা কইতে মিস কল দিছিলাম ভাই। কিছু মনে করবানাতো?’
‘আপনি আমার জন্য অনেক খেটেছেন ভাইজান। বাপ মারা যাবার পর নিজে খেটে খেয়ে মানুষ করেছেন আমাদের। বিধিবাম, দোকানটা থাকলে আজ ...’
‘থাক ভাই। ওসব কথা থাক। বলছিলাম কি...’

‘বলেন ভাইজান। কিছু লাগবে আপনার? টর্চ লাইট পাঠাবো একটা? গতবার এসে যেটা দিয়েছিলাম সেটা নষ্ট হয়ে গেছে?’
‘__আমার রাশেদের একটা সাইকেল দরকার। বাড়ি থেকে স্কুলে প্রতিদিন হেঁটে যেতে যেতে ছেলেটার কষ্ট হয়।'

সাইকেলটা অনেক পুরাতন হয়ে গেছে। আজ রাশেদ পরম যত্নে সাইকেলটা মুছে তার মাকে বলে যাচ্ছে ‘মা, মাঝে মধ্যে সাইকেলটা একটু মুছে রেখো। খবরদার, ভাঙ্গারি দোকানে বিক্রি করে দিওনা আবার।' দেখতে দেখতে ছোট্ট রাশেদ উচ্চতায় আমাকেও ছাড়িয়ে গেলো। মেডিকেল ছুটি দেয়ায় বেড়াতে এসেছে। আজ আবার ফিরে যাচ্ছে। ছেলেটাকে একটু এগিয়ে দিয়ে আসি।

আরে রাস্তার ধারে কবরস্থানে কাকে দেখা যায়? জালাল চেয়ারম্যান না!

৪.
এই মানুষটাকে এতদিন ধরে চিনি আমি। অভাবে না খেয়ে মরবে কিন্তু কারও কাছে হাত পাতবেনা। কতবার বলেছিলাম বাপের বাড়ির জমিগুলোর অংশ নিয়ে আসি। সেগুলো দিয়ে হলেও ব্যবসাটা আবার দাঁড় করানো যাবে। ‘আমার রাশেদের জন্য সেগুলো থাকুক’ – বলেই হন হন করে হাটা দেয়।

বৈদ্যুতিক গোলযোগে লাগা আগুনে বাজারের সব দোকানপাট না পুড়লেও যে কয়েকটি পুড়ে ছাই হয়েছে তার মধ্যে রাশেদের বাপের দোকানও আছে। ওই দোকান দেখেই মানুষটার কাছে বিয়ে দিয়েছিলো আমার বাবা।

আমাদের হেলাল আমেরিকা চলে যাচ্ছে। সারাদিন এদিক সেদিক ঘুরে বেড়ানো ছিল যার কাজ সে হেলাল লটারি জিতে আমেরিকা যাচ্ছে। ‘বুবু তোকে ওখান থেকে টেলিফোন করবো। কিছুর অভাব থাকবেনা আর তোর। বজল ভাইয়ের জন্য একটা মোবাইল পাঠাবো।' – যাবার কালে এই ছিলো হেলালের সাথে আমার সর্বশেষ কথা। বছর খানেকের মাথায় একটা মোবাইল পাঠায়। সাথে পাঠায় কিছু টাকা।

এরপর কোথায় যে হারিয়ে গেল আমাদের হেলাল, আমার ছোট ভাই হেলাল! শুনেছি সেখানে কোন বাংলাদেশি মেয়েকে বিয়ে করেছে। দেশের খোঁজ খবর রাখেনা বছর পাঁচেক হলো। ছেলে সন্তান নিয়ে হয়তো সুখেই আছে। শেষবার যখন কথা হয়েছিলো তখন তার ছেলেটা হালকা হালকা কথা বলতে শিখেছে।

রাশেদের বাপের মোবাইল থেকে দুই দুইটা ‘মিস কল’ দিয়েছি। রাশেদ আমায় শিখিয়েছে নাম্বার তুলে সবুজ সুইচে চাপ দিয়ে কানে ধরে রেখে একটা বাঁশি বাজলেই আবার লাল সুইচ টিপে দিলে মিস কল যায়।

‘__কাঁদিসনা বুবু। তোদের ভুলিনি। আমি আসলে পরিস্থিতির শিকার । নাম্বার কোথায় পেলি?’
‘ওইদিন আমাগো বাড়ি গিয়া কামাল ভাই থেকে এনেছি। শোন ভাই, এটা তোর দুলাভাইয়ের নাম্বার। তুই তাকে আবার বলিসনা যে, আমি তোকে মিস কল দিয়েছি।'
‘কিছু বলবি বুবু ?’
‘বাড়ির সামনে পুকুরের ধারে যে জমিটা আছে। সেখানে আমার ভাগটা তুই রেখে দিস ভাই। আমার জমি-টমি লাগবেনা।'
‘আরে এসব কথাতো আগে কখনও বলিসনি, আজ হঠাৎ ?’
‘আমার রাশেদের জন্য একটা...’

রাশেদের ওই ‘কম্পুটার’ মেশিনের ব্যাগটা তার বাবার কাঁধে ঝুলিয়ে দিলাম। এই মেশিনের আরও কী জানি একটা নাম আছে। রাশেদ আমায় অনেকবার শিখিয়েছে। আমি ওসব কঠিন ইংরেজি বুঝিনা। ‘ল্যাট্টপ’ না কী জানি!

৫.
বুবু আজ আমায় ফোন দিয়েছে। নাম্বার দেখেই বুঝেছি এ কল দেশ থেকে এসেছে। দেশে আমার আপন বলতে ভাই আর বোন আছে। কামাল ভাই। আর বুবু। আমি সবার ছোট। এই বুবুর কোলে-পিঠে চড়েই হাটতে শিখেছি। কোলে করে মোল্লাবাড়ি নিয়ে গেছে শুক্রবার দুপুরে বিটিভিতে সিনেমা দেখাতে। ওসব মনে পড়লে নীরবে নিভৃতে চোখের জল ঝরে। ঘরে আমার এখন তিন তিনটি টেলিভিশন। একটা বউ দেখে, আর দু’টো দুই ছেলে মেয়ে। যান্ত্রিকতা আমায় আর ওসবে টানেনা। ছেলেটাকে চেয়েছিলাম দেশি কালচারে বড় করতে। কথাতো শোনেইনা, উল্টো ইংরেজিতে গালাগাল দেয়। ওইদিন শুনলাম কোন বারে গিয়ে শিশা টানছে। এই বয়সে আমরা শিশা বলতে বুঝতাম ওষুধের শিশি।

বুবু রাশেদের জন্য একটা কম্পিউটার চাচ্ছে। ভাঁজ করা যায় যে এমন কম্পিউটার। বিনিময়ে আমায় জমিতে তার ভাগ টুকু দিয়ে দেবে। জমি এত সস্তা হয়ে গেলো? নাকি এই হেলাল পচে গেলো? এক সহস্র কম্পিউটার কিনে দিলেওতো তোর ঋণ শোধ করতে পারবোনা বুবু।

বউকে না জানিয়েই রাশেদের জন্য একটা ভাল মানের ল্যাপটপ কিনে পাঠিয়ে দিলাম বন্ধুর কাছে। ঠিকানা দিয়ে দিয়েছি। নবাব পুর স্কুলের পাশের বাড়িটি চিনতে অসুবিধে হবার কথা নয়।

রাশেদের গায়ে অবহেলার লেশমাত্র না লাগুক। রাশেদের মনে না লাগুক দরিদ্রতার সামান্যতম আঁচড়। বুবুকে বলেছি রাশেদের নামে একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে।
...
রাশেদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে মাসের শুরুতে টাকা যোগ হয়। টাকা প্রাপ্তির খবর রাশেদ মাকে ফোন দিয়ে নিশ্চিত করে। ‘আর কতদিন তোর কথা গোপন রাখবোরে হেলাল?’- ভাবতে গিয়ে আঁচলে চোখের জল মোছেন রাশেদের মা ।

চোখের জল মুছতে মুছতে বাড়ির দরজায় দাঁড়িয়ে ছেলের পানে চেয়ে আছেন হালিমা বেগম। ছেলেটা আবার কবে আসবে। আবার কবে একটু ভাল রান্না করে খাওয়াবে!

ছবিঃ ইন্টারনেট
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ১:৩২
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×