somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তাবলিগ জামাতে দ্বন্দ্ব: তরুণ আলেম সমাজের করণীয়

১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৩:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তাবলিগ জামাতের অভ্যন্তরে বেশ কিছু দিন থেকেই দ্বন্দ্ব ও মতবিরোধের সৃষ্টি হয়েছে। দিল্লির নিজামুদ্দিনে এনিয়ে নানা ঘটন-অঘটনের জন্ম দিয়েছে। এর জের ধরে বাংলাদেশেও নানা ঘটনা ঘটে চলেছে। এবারে এসে তা রক্তারক্তি পর্যায়ে চলে গেল। তাবলিগ একটি বিনয়ী দাওয়াতের পথ। বাংলাদেশে এর অসংখ্য অনুসারী বিদ্যমান। তাই শুধু বাংলাদেশের নিরিখে এর কোনো সমাধান বের করা যায় কি-না, এ লেখাটির এটিই প্রতিপাদ্য। এবং তরুণ আলেম সমাজ কী রকমের ভূমিকার মাধ্যমে ইতিবাচক পরিস্থিতি তৈরি করতে পারেন, তাই খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে।

পূর্বের একটি লেখায় ন্যূনতম পর্যায়ে সমাধানের একটি ফর্মুলা উপস্থাপন করেছিলাম, তা ছিল দিল্লি নিজামুদ্দিনের নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখে। কিন্তু নানা বয়ানের বয়নে যে উত্তেজনার পারদ তৈরি হয়েছে এবং হয়ে চলেছে, তাতে শান্তির ললিত বাণী পরিহাস হিসাবে গণ্য হলেও পরিতাপের কিছু নেই। তবে এবারের লক্ষ্য দিল্লি নয়, শুধু বাংলাদেশ। তবে বর্তমানের লেখাটির ভাগ্যেও একই রকম পরিণতি ঘটতে পারে। কিন্তু সময়ের ডাকে নিজের উপস্থিতির জানান দেওয়াও কম কথা নয়। ইতিহাস এক সময় বিচার করবে, সেই বিচারের একটি সাক্ষ্য হিসাবেই লেখাটি থাকবে। অবশ্য মুসলিম-সমাজের ইতিহাস বা ইতিহাসবোধ বলে কিছু নেই। সে অনুসারে এর মূল্যায়ন না-ও হতে পারে। ঐতিহাসিক সাক্ষ্য-নির্মাণে উপস্থিত মূল্যায়নের প্রত্যাশা একেবারে নগদ লাভের মতো, যা নিতান্ত বেমানান।

ইসলামের দেড় হাজার বছরের ইতিহাসে এ ধরনের অসংখ্য আন্তঃসংঘাত ও ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানের এই তাবলিগি সংকটও ইসলামের অভ্যন্তরীণ মতবিরোধ ও দ্বন্দ্ব-সংঘাতের একটি পরম্পরা মাত্র। ইসলামের ইতিহাসে ‘মুশাজারা-ই-সাহাবা’ নামে যে বিশাল পর্ব রয়েছে, তাতেও কিন্তু ইতি-নেতির নানা সংশ্লেষ আছে। কিন্তু সে সময় ও ইতিহাস জান্নাতের সেই নিষিদ্ধ ফলের মতো, যাকে ছোঁয়ার অনুমতি নেই। তাই সে দিকে পা মাড়ানোর উপায় নেই। যদিও শিয়া-সুন্নি ঘরানা সে সময়ের প্রেক্ষপট অনুসারেই তৈরি। শিয়াদের ভেতরও রয়েছে নানা দল-উপদল। যেমন সুন্নিদের মাঝেও দার্শনিক মতবিরোধসহ ফিকহি মতবিরোধ ও নানা ঘরানা বিদ্যমান। এমনকি একই মাজহাবের অনুসারীদের মাঝেও মতবিরোধ রয়েছে। যেমন ভারতীয় হানাফিদের মাঝেই রয়েছে দেওবন্দি ও বেরেলবি গোষ্ঠী, যারা পরস্পরে সর্বদা বিবদমান। কিন্তু নিকট অতীতের ব্রিটিশ-পর্বে ভারতের দেওবন্দি উলামা-সমাজে যে দ্বিধা-বিভক্তি তৈরি হয়েছিল এবং তাতে দলাদলি ও গালাগালি, এমন-কি হাতাহাতির ঘটনাও ঘটেছে, তা আমাদের এই মুহূর্তে, তথা তাবলিগি দ্বন্দ্ব-সংঘাতের এ সময়ে স্মরণ করা দরকার।

১। ইংরেজ বেণিয়া কর্তৃক ভারত-দখলের প্রথম প্রতিবাদ মুসলিম সমাজ থেকেই আসে। বলা ভালো, তারা ছিলেন মুসলিম সমাজের শিক্ষিত সমাজ, যারা তখন এবং এখনও শুধু ‘আলেম’ নামেই পরিচিত। ভারতে ব্রিটিশ শিক্ষা বিস্তৃতি লাভ করার পর শিক্ষাক্ষেত্রে বিভাজন তৈরি হয়। তখন থেকেই আলেম সমাজ শিক্ষিত হয়েও দ্বিতীয় সারির মর্যাদা পান। অথচ পূর্বে তারাই ছিলেন প্রথম শ্রেণির সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী। সেই আলেম সমাজ ব্রিটিশ দখলদারির বিরুদ্ধে ফোঁসে ওঠেন। এর নেতৃত্বে ছিলেন শাহ ওয়ালি উল্লাহ দেহলবির পরিবার বা অনুসারীবর্গ। শাইখুল হিন্দ মাহমুদুল হাসান এই ধারারই একজন অকুতোভয় নেতা। শাইখুল হিন্দের আধ্যাত্মিক ধারার দূরবর্তী গুরু মৌলবি এমদাদুল্লাহ (মুহাজিরে মক্কি) ছিলেন ইংরেজ-বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা। ইংরেজদের নিপীড়নের ভয়েই তাকে মক্কায় স্বেচ্ছা নির্বাসন বেছে নিতে হয়। কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মিলিয়ে শাইখুল হিন্দ যখন অসহযোগ আন্দোলনে ঐকমত্য প্রকাশ করেন এবং সে মতে ফতোয়া জারি করেন, তখন দেওবন্দের অন্যতম আলেম আশরাফ আলি থানবি এর বিপক্ষে অবস্থান নেন। শুধু তাই নয়, তিনি এর বিপক্ষে ফতোয়া জারি করেন। শাইখুল হিন্দের ফতোয়ার মুসাবিদা করেন শাব্বির আহমদ উসমানি, জোরালো ও তীব্র ভাষায়। কিন্তু মুহাজিরে-মক্কির প্রত্যক্ষ আধ্যাত্মিক শাগরেদ মাওলানা থানবি আরো গোছালো ভাষায় ও বিস্তৃতভাবে ফতোয়া লিপিবদ্ধ করেন ভারতে ব্রিটিশ সরকারের প্রতি সহযোগিতা-করণের পক্ষে। এ-নিয়ে পানি অনেক দূর গড়িয়ে ছিল। তখনই থানবিকে ‘ব্রিটিশ দালাল’ আখ্যা দেওয়া হয়। তার এ কর্মের (নাকি দুষ্কর্মের?) প্রতিবাদ হিসাবে অনেক বিজ্ঞ আলেম তার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছিলন। এ-সব বিষয় নিয়ে থানবি নিজে কঠোর অবস্থানে চলে গিয়েছিলন। মাওলানা আবদুল মাজেদ দরিয়াবাদিকে, _ যিনি ছিলেন মাদানির মুরিদ ও রাজনৈতিকভাবে শাইখুল হিন্দের প্রতি নিবেদিত, কিন্তু জ্ঞানজাগতিক আলোচনায় থানবির সঙ্গে জড়িত, _যে কোনো একটি পক্ষাবলম্বনের নির্দেশ দেন মাওলানা থানবি। তার মতে, তখন নিরপেক্ষতার কোনো সুযোগ নেই। যে কোনো একটি পক্ষ অবলম্বন করতে হবেই।

শাইখুল হিন্দ ও মাদানির ব্রিটিশ-বিরোধী অবস্থানের কারণে দেওবন্দ মাদরাসা ব্রিটিশদের কূপানলে পড়লেও মাওলানা থানবির খানকায়ে এমদাদিয়া ও মাদরাসা কিন্তু ছিল সম্পূর্ণ নিরাপদ। এমন কি ব্রিটিশদের পক্ষ থেকে থানবির খানকায় প্রতি মাসে পাঁচশ টাকা দেওয়া হত। আরেকটি তথ্য হল, শাইখুল হিন্দের বিরুদ্ধে রাষ্ট্র-দ্রোহিতার যে অভিযোগ আনা হয়, সেই অভিযোগের প্রমাণে সবচে বেশি ভূমিকা পালন করেন মৌলবি মুজহির আলী, যিনি মাওলানা থানবির বৈমাত্রেয় ভাই। থানবি স্থিরপ্রাজ্ঞ তীক্ষ্ণধী আলেম, কিন্তু ব্রিটিশদের পক্ষাবলম্বন করায় মাওলানা মাদানি তার সম্পর্কে কোনো নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন বলে এখনো জানা যায় নি। তবে সাধারণ জনতার মাঝে মাওলানা থানবির পরিচিতি ততটা না থাকলেও আলেম ভক্তবৃন্দই তাকে বর্জন করে বসেন।

২। অন্যদিকে, মাওলানা মাদানি অখ- ভারতের নিশান-বরদার। তিনি ভারত-বিভাজনের উত্যুঙ্গ মুহূর্তেও নিজের অভিমত থেকে পিছপা হন নি। এ জন্য তাকেও নানা অভিধা মাথা পেতে নিতে হয়। হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের কংগ্রেসে তো হিন্দু-প্রাধান্য থাকবেই। এটাই স্বাভাবিক। মাওলানা মাদানিসহ অসংখ্য আলেম ছিলেন সেই কংগ্রেসের সমর্থক, তাও আবার ‘জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ’ নামক সংগঠনের মাধ্যমে। তখন তাকে বলা হতো ‘কংগ্রেসি মাওলানা’, প্রায় মাওলানা মাসউদকে শাহবাগী মাওলানা বলার মতোই। তা কংগ্রেসের অখ- ভারত মানে ভারত-বিভাজনের বিরোধিতা। এর অর্থ দাঁড়ায় পাকিস্তানের বিরোধিতা। যে পাকিস্তান মুসলিম সমাজের সকল স্বপ্নের ধারক ও বাহক, তার বিরোধিতা মানে তো ইসলামের বিরোধিতা! এই যুক্তিতেই তো একাত্তরে জামাত-শিবির-নেজামে ইসলাম পার্টি পাকিস্তানের পক্ষাবলম্বন করেছিল! তো মাওলানা মাদানি পাকিস্তানের বিরোধিতা করে ‘হিন্দুদের দালাল’ হয়ে গেলেন। এ-সব অপরাধে (?) আলিগড় কলেজের ছাত্ররা তার প্রতি জুতো ছুঁড়ে মারে, ভারতের সাধারণ মুসলমানগণ তার পেছনে নামাজ পড়তে অস্বীকৃতি জানায়, সৈয়দপুরের সাধারণ মুসলমানরা তার পাগড়ি খুলে ফেলে!

কিন্তু আজ সে ইতিহাস কি কারো জানা আছে? মনে আছে? সে সময়ে ভারতীয় মুসলিম সমাজের, বিশেষত আলেমদের মাঝে কী দ্বিধা-সংকোচ তৈরি হয়েছিল, আমরা কি তা ভাবতে পারি? পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার কারণে এবং আমরা বাঙালিরা এর অন্তর্ভুক্ত হওয়ার দরুণ এবং সর্বশেষ পাকিস্তান থেকে একাত্তরে স্বাধীনতা লাভ করার কারণে সে ইতিহাস অনেকটাই চাপা পড়ে গেছে। উপরন্তু, আমাদের দেশের আলেম-সমাজ ইতিহাস-সচেতন নন, তাই তাদের কাছ থেকে সে ইতিহাসের কোনো বিবরণ পওয়া যায় না। কিন্তু এর ভাঁপ সামান্য পাওয়া যায় তাবলিগ জামাতের তাত্ত্বিক গুরু শাইখুল হাদিস জাকারিয়া রহ. রচিত আল-ইতিদাল ফি মারাতিবির রিজাল বা ইসলামি সিয়াসত নামক উর্দু গ্রন্থে। তিনি দেওবন্দি দুই দিকপালের পরস্পর বিরোধী অবস্থানের মাঝখানে এসে দাঁড়ান। শালিসি করার জন্য নয়, বরং তাদের দু-জনের প্রতি শ্রদ্ধা অটুট রাখার জন্য। তার মতে, থানবি এবং মাদানির দুটি গ্রুপই সত্য, এনিয়ে কোনো প্রশ্ন তোলা যাবে না, এবং কারো প্রতি কোনো বেয়াদবি করা যাবে না। এ সবই তিনি বেশ বিস্তৃতভাবে বর্ণনা করেছেন। সুদীর্ঘ এ গ্রন্থ-পাঠে বোঝা যায়, অনুসারীরা কী এক অসহনীয় সময় পর করেছেন দুই দিকপালের মতবিরোধের কারণে। থানবি-মাদানির এই দ্বন্দ্ব আমাদের এই বাংলাদেশে ৮০ কি ৯০ দশক পর্যন্ত বিরাজমান ছিল, নদী মরে গিয়েও এর রেখা রয়ে যাওয়ার মতো। তা বহিঃপ্রকাশও ছিল বেশ হাস্যকর উপায়ে: পাঁচকুল্লি টুপি আর কিশতি টুপির আদলে। বাংলাদেশ পর্বে এই বিভাজন মেটানোর জন্য ইসহাক ফরিদি ও আবুল ফাতাহ মুহাম্মদ ইয়াহইয়ার অবদান অনেক।

৩। ইতিহাসের আরো অনেক কথা-ই হয়ত চোখের আড়ালে রয়ে গেছে। শাব্বির আহমদ উসমানি ব্রিটিশ-বিরোধী আন্দোলনে মাদানির সমমনা হলেও ভারত-বিভাজনের ক্ষেত্রে তিনি বিপরীত মেরুতে চলে যান। কথিত আছে, মাওলানা শাব্বির আহমদ উসমানির বাগ্মিতা ছিল অসাধারণ। তিনি ধর্মীয় আবরণ দিয়েই তার বক্তব্যের যথার্থতা প্রমাণ করতেন। ভারত-বিভাজন ও পাকিস্তানের পক্ষে জনমত গঠনের জন্য পত্রিকাও প্রকাশিত হত। বিষয়টি যেহেতু ইসলামি রাষ্ট্র বা পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার সঙ্গে জড়িত, তখন সর্বত্র ইসলামি মূল সোর্স তথা স্বপক্ষে কুরআন-হাদিসের ব্যবহার ছিল অবারিত। শোনা যায়, শাব্বির উসমানির লিখনীর জবাব দিতেন তারই ভ্রাতুষ্পুত্র মাওলানা আমের উসমানি। বলা বাহুল্য, তিনিও একই কায়দায় কুরআন-হাদিস ব্যবহার করে নিজ প্রতিপাদ্য প্রমাণ করতেন। শাব্বির আহমদ উসমানির বাগ্মিতার জবাবে ছিলেন আমিরে শরিয়ত আতাউল্লাহ শাহ বুখারি। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, বাগ্মিতায় এই বুখারির তুলনা শুধু তিনি নিজেই। আমির হিসাবে এই বুখারির কাছেই কিংবদন্তিতুল্য শ্রুতিধর ও স্মৃতিধর আনোয়ার শাহ কাশ্মিরী বাইয়াত হন। কিন্তু বুখারি রাজনৈতিক পীর মানতেন একমাত্র মাওলানা আবুল কালাম আজাদকে, যিনি ছিলেন কংগ্রেসের প্রথম সারির নেতা। তাই বুখারিও ছিলেন অখ- ভারতের পক্ষে। তো তৎকালীন বক্তৃতায় সেই বুখারি শাব্বির আহমদ উসমানিকে এ যুগের আবু জাহেল অভিধাসহ আরো নানা অভিধায় অভিহিত করেন! আজ চোখ বন্ধ করে ভাবলে এখনো বুঝতে কষ্ট হয় না যে, বিবদমান উসমানি এবং বুখারির সমর্থকগোষ্ঠী নেতাদের বক্তব্য শুনে রোমাঞ্চিত হত, আবেগে উদ্বেলিত হত। প্রতিপক্ষের প্রতি চরমভাবে উত্তেজিত হত। কিন্তু আজ কোথায় সেই ইতিহাস, কোথা সে আবেগ, কোথা সে উত্তেজনা?

৪। একাত্তর-পর্বে পাকিস্তানের মুফতি মাহমুদ বৃহত্তর উলামাদের বিপক্ষে অবস্থান নেন। পাকিস্তানের বৃহত্তর উলামা সমাজ ছিলেন তখন আওয়ামী লীগের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের বিপক্ষে। অখ- পাকিস্তানের নেশায় তারা ছিলেন পাঞ্জাবি শাসক ও ভুট্টুর পক্ষে। কিন্তু মুফতি মাহমুদ ছিলেন ক্ষমতা হস্তান্তরের পক্ষে। এজন্য তাকেও আলেম-উলামার কাছে তিরস্কারের শিকার হতে হয়েছে। ইতিহাস এখন স্পষ্ট, মুফতি মাহমুদের অবস্থান ছিল ন্যায্যতাপূর্ণ। তাই তার নিন্দুকরাই বরং আজ নিন্দার শিকার। পুরো পাকিস্তান-পর্বে আলেম সমাজের সময়-সচেতনতা ও রাজনৈতিক চেতনা ছিল বলে কোনো প্রমাণ নেই। আর তাই সাধের পাকিস্তানের ক্রান্তি-লগ্নে গ্রান্ড মুফতি অব পাকিস্তান ‘মুফতি শফি’সহ ‘ইউসুফ বিন্নুরি’র মতো ব্যক্তিবর্গের অবস্থান স্পষ্ট নয়। তবে ধর্মচ্ছন্নতা ছিল, এই আচ্ছন্নতা দিয়ে অন্যদের আচ্ছন্ন করার প্রয়াস ছিল পুরোপুরি। মাওলানা মহিউদ্দীন খানের ‘জীবনের খেলাঘরে’ এর প্রমাণ পরতে পরতে তুলে ধরা আছে। সে সময়ে মাওলানা শামসুল হক ফরিদপুরী বা সিরাজুল ইসলাম বড় হুজুরের মতো ব্যক্তিত্ব-সম্পন্ন মানুষ খুব বেশি ছিলেন না। ফরিদপুরী যখন আইয়ুব বিরোধী অবস্থানে, তখন চরমোনাইসহ অপরাপর পীরদের অবস্থান ছিল আইয়ুবের পক্ষে। স্বাধীনতার পর হাফেজ্জী হুজুর যখন তওবার ডাক দিলেন, তখন চরমোনাইসহ অপরাপর পীরগণ ছিলেন নীরব। যুগান্তকরী মানসিকতা নিয়ে ইরান সফরের পর কারা হাফেজ্জি হুজুরকে কাফের বলেছিল ইথারে এখনো তাদের কণ্ঠ ভেসে বেড়ায়! খতিব উবায়দুল হকের সময়ে সম্মিলিত উলামা পরিষদে কারা বাগড়া দিয়েছিল, তা ছলে-বলে-কৌশলে ঢেকে রাখতে চাইলেই কি আর ঢাকা থাকে? মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিকে সজাগ রাখার উদ্দেশ্যে যে হেফাজতের জন্ম, কারা একে কখনো এ-দলে, কখনো সে দলে বেড়ানোর চেষ্টায় মত্ত, তা মুখে না বললেও অজানা নেই কারো। হেফাজতের আমির হিসাবে নবতিপর বৃদ্ধ আহমদ শফি কোনটা বলতে পারেন, আর কোনটা পারেন না, আর কোনটা তার মুখে ধরিয়ে দেওয়া হয়, তাও সাধারণ মানুষ বুঝতে পারে।

৫। এক সময় দেওবন্দ মাদরাসার অভ্যন্তরেও দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। এই দ্বন্দ্ব দেওবন্দ প্রতিষ্ঠানে যে অস্থিরতা তৈরি করেছিল, এর সামান্য ইতিহাস কারো কারো আত্মজীবনী ও জীবনীতে পাওয়া যায়। আত্মজীবনী বা জীবনচরিত তো আত্মপক্ষ-সমর্থন বা ব্যক্তি-মাহাত্ম্য প্রচারের জায়গা। তাই এখানে দ্বন্দ্বের এপিঠ-ওপিঠ পাওয়া যায় না। কিন্তু যা পাওয়া যায়, তা থেকে পরিস্থিতি অনুধাবনে মোটামুটি সাহায্য পাওয়া যায়। সে দ্বন্দ্বে কাশ্মীরীর মতো স্মৃতিধর ব্যক্তি দেওবন্দ ত্যাগের মনস্থির করেন। তিনি নিজ পদে ইস্তফা দিয়ে বাসায় অবস্থান নিতে থাকেন। সে সময় মাওলানা মাদানিকে দেওবন্দের দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। দায়িত্ব নিয়ে মাওলানা মাদানি সরাসরি কাশ্মীরীর বাসায় উপস্থিত হয়ে বলেন, ‘এ দেওবন্দ আপনার এবং আমার: আমাদের দুজনের। একে গড়ার দায়িত্বও আমাদের। তাই কারো সঙ্গে মনোমালিন্য করে একে ত্যাগ করা উচিত হবে না। আপনি আমার সঙ্গে চলুন।’ কাশ্মীরী তখন বলেন, আপনি যেহেতু বলছেন, আমি যাবো! এই হল বুদ্ধি, ব্যক্তিত্ব ও নিষ্ঠার কারিশমা!

আরো আছে, মাদানির জীবদ্দশায় তাবলিগ নিয়ে আলেম ও সাধারণদের মাঝে ভীষণ রকমের ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হয়। আলেমগণ তখন বেঁকে বসেন। কিন্তু মাদানি রহ. তখন বলেন যে, তাবলিগ ও দাওয়াতের মেহনতটি সাধারণ জনতার জন্য বেশ উপকারী। তাই সাধারণ জনতার ভুলের জন্য একে ত্যাগ করা উচিত হবে না। তার এ বক্তব্যে সবাই নড়েচড়ে বসেন এবং সম্বিত ফিরে পান। যারা তাবলিগের বিরুদ্ধে নেমেছিলেন, তারাও নিজেদের হ্রাস টেনে ধরেন। শুধু তাই নয়, থানবি যখন মাদরাসাতুল ইসলাহের বিপক্ষে ফতোয়া ছোঁড়েন, মাদানি তখন মাদরাসাতুল ইসলাহের পক্ষে দাঁড়ান। এবিষয়ে আবদুল মাজেদ দরিয়াবাদিও তখন থানবিকে নমনীয় করার চেষ্টা করেছেন। অর্থাৎ মাদানি নিজ ব্যক্তিত্ব ও কৌশল দিয়ে মানুষকে বা পরিস্থিতিকে সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেছেন; ফতোয়া বা শাস্ত্র-ব্যবহারের মাধ্যমে নয় এবং এ ক্ষেত্রে তিনি সফল।

৬। মাওলানা সাদের বক্তব্য নিয়ে বিতর্ক তো আজকের নয়, অনেক আগের। এই বিতর্ককে সামাল দেওয়ার যে ক্ষমতা দেওবন্দের ছিল, তা ফতোয়ার মাধ্যমে ঢেকে দেওয়া হল। রাবীন্দ্রিক ভাষায় বলা যায়, দেওবন্দ ‘ধুলোরে সব মেরে করে দিল কাদা’। কারণ, দেওবন্দ থেকে নিজামুদ্দিনের দূরত্ব খুব বেশি নয়। এই ফতোয়ার হাল হাকিকত জানার জন্য মাওলানা সাদও যেমন দেওবন্দে এগিয়ে আসেন নি। আবার দেওবন্দও দাওয়াতি মানসিকতা নিয়ে সাদের মুখোমুখি হয় নি। দেওবন্দের দায়িত্বে যেই থাকুন, হিকমত বলে ইসলাম-নির্দেশিত বিষয়টি তার আচরণে অনুপস্থিত। সাদপন্থী বা দেওবন্দপন্থী কেউ মাদানির মতো দারাজ দিল নিয়ে মীমাংসার জন্য একে অপরের কাছে এগিয়ে যান নি।

আর তাই তাবলিগ এখন ভাঙার পথে। এই তাবলিগকে ভাঙার জন্য নানা রকমের চেষ্টা হয়েছে এর বিরোধীদের পক্ষ থেকে। তাদের সকল চেষ্টাই বিফল হয়েছে। বিরোধীদের অপচেষ্টার সময়ে দেওবন্দিরাই তখন এর পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন। অথচ আজ এই দেওবন্দিদের হাতেই তাবলিগের চরম বিনাশের পথ তৈরি হল। এ বিনাশ রোধ করার কোনো চেষ্টাও চোখে পড়ছে না।

পাঞ্জাবি শাসনামলে পশ্চিম পাকিস্তানে চাঁদ উঠলে পূর্ব পাকিস্তানিদের ঈদ-পালনের জন্য বাধ্য করা হত। স্থান-কাল-পাত্রের প্রভেদ তারা মানতে চাইতো না। কেন্দ্রের আনুগত্য চাপিয়ে দিত। তাবলিগ ও কওমি মাদরাসার মূল কেন্দ্রও ভারত বলে এর অনুসারীরা সেখানকার দলাদলি ও মারামারি এখানে আমদানি করতে চাইলে বড় রকমের বোকামি হবে। ইসলামের জন্যই দেওবন্দ বা তাবলিগ, তাবলিগ বা দেওবন্দের জন্য ইসলাম নয়। তাই নিজামুদ্দিন বা দেওবন্দের ইগোকে আঁকড়ে ধরে বসে থাকলে চলবে না। নিজামুদ্দিন ও দেওবন্দের প্রতিনিধিবর্গ খোলা মন নিয়ে পরস্পরকে ডাকতে পারেন নি। তারা আর তা পারবেন না। তা না পারুন, কিন্তু এই দাওয়াত ও তাবলিগের দায় তো শুধু মানসিক জরাগ্রস্ত ও শারীরিক বার্ধক্যগ্রস্ত তথাকথিত প্রতিনিধিদের নয়। তরুণদের দায়ও এখানে কম নয়।

কিন্তু তাবলিগি এই বিভাজন ও দ্বন্দ্বের সময়ে তরুণদের গড্ডল-প্রবাহ সব চেয়ে চোখে পড়ার মত। দিল্লির নিজামুদ্দিনে অনেক আগেই রক্তারক্তি হয়েছে। অবশেষে বাংলাদেশেও রক্তরক্তি অবস্থা। অথচ পাকিস্তানে হয় নি। ভারতীয় আলেমদের সহনশীলতা ও পাকিস্তানি আলেমদের সাংগঠনিক দক্ষতার কথা মানতেই হবে। গত বছর বিশ^ ইজতেমার মাঠে সাদ সাহেবের যোগদান ও উপস্থিতি নিয়ে রাজপথ আগলে দাঁড়ানোর মতো কাঁচা কাজের পরও এ দেশি তরুণ আলেম সমাজের বোধোদয় হয় নি, মনে হয়। আর এজন্যই পরিস্থিতি এতটা ঘোলাটে রূপ ধারন করেছে। এই ব্যর্থতার দায় তরুল আলেম সমাজ কোনোভাবেই এড়াতে পারবেন না। ইতিহাস তাদের কথনোই ক্ষমা করবে না। বর্তমান পৃথিবী যেখানে তরুণদের বশীভূত, সেখানে আমাদের তরুণ উলামা সমাজের বশীকরণের সে জাদুর কাঠি কোথায়? নাকি তাদের কাছে জাদুর কাঠিই নেই? বরং বয়োজ্যেষ্ঠদের মতো তারাও অদক্ষ, অযোগ্য এবং প্রথামত মানসিকতার? তাই সমানতালে তারাও তাবলিগি দ্বন্দ্বের ¯্রােতে গা ভাসিয়ে দিয়েছেন। তবে এখনো সময় আছে লাগাম টেনে ধরার। কিন্তু কীভাবে?

ক- প্রথমেই মুখ সামলাতে হবে। কথায় ও কাজে তাদের সংযত হতে হবে। যে কোনো প্রচার ও যোগাযোগ মাধ্যমে পারস্পরিক রেষারেষির ভাষা ও মন্তব্য পরিহার করতে হবে। পরস্পরের প্রতি সম্মান বজায় রাখতে হবে সর্বত্র ও সর্বদা।
খ- মসজিদি বয়ান, মাঠে-ময়দানের আলোচনা. সাধারণ জনতার সামনে প্রদত্ত / প্রদেয় ভাষণে এ নিয়ে কথা বলার সময় হিকমতের আশ্রয় নিতে হবে। কারণ, বিদ্বেষ ও উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতির তোপ কিন্তু নিজের দিকেও ফিরে আসতে পারে।
গ- বাংলাদেশী তরুণ আলেমগণ এবিষয়ক নীতি ও কর্মকৌশল নির্ধারণের উদ্দেশ্যে এক সঙ্গে বসতে পারেন। এবিষয়ে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য নিজেরাই এগিয়ে আসুন। নিজেরা বসে সাদপন্থী ও দেওবন্দপন্থী কারো প্রতি কোনো অসম্মান না করে কীভাবে অন্তত বাংলাদেশে তাবলিগ ও পারস্পরিক সম্প্রীতি রক্ষা করা যায়, সে পথ তৈরি করতে পারেন।
ঘ- ছাড়ের মানসিকতা থাকতে হবে সবারই। কোনো পক্ষ নয়, মূল দরদ থাকবে ইসলামের প্রতি।

এখন যেভাবে জবরদস্তি করে জয়-লাভের প্রবণতা চলছে, তাতে বিনয়-চর্চার দাওয়াতি মাধ্যম ‘তাবলিগ’টি হয়ত টিকবে না, অতিরিক্ত চাপাচাপিতে মারা যাবে নির্ঘাত। কিন্তু এতে করে যে অমোচনীয় ক্ষত তৈরি হবে বা হচ্ছে, তা হয়ত শুকাবে না কখনোই। যে-সব তরুণরা এর ছায়াতলে আশ্রয় নিত, তারা বিভ্রান্ত হবে। অথচ সময়ের আবর্তনে সবার দোষ ক্ষালন হয়ে যাবে। যেমনিভাবে মাদানি-থানবির দোষ ক্ষালন হয়ে গেছে সেই কবে। এমন-কি শাহবাগী মাওলানা বলে অভিহিত ফরিদ উদ্দীন মাসউদ-এরও কোনো দোষ থাকবে না। কিন্তু দাওয়াতি একটি প্লাটফর্ম নষ্ট হওয়ার জন্য সবাইকেই আক্ষেপ করতে হবে। ইতিহাসের কাঠগড়ায় সবাইকে দাঁড়াতে হবে। এখন এ-পক্ষ, ও-পক্ষ বলে দায় এড়ানোর সময় নয়, এখন উচিত মাদানির মতো ঝুঁকি নিয়ে, সাহস নিয়ে, আত্মসম্মান বলি দিয়ে এ দাওয়াতি মাধ্যমটিকে বাঁচানোর জন্য আত্মনিয়োগ করা, পরস্পরের দরবারে উপস্থিত হয়ে গলাগলি ও কোলাকুলির মাধ্যমে নিজের এখলাসের পরিচয় তুলে ধরা। কিন্তু তরুণরা এগিয়ে আসবে কি? এটাই দেখার বিষয়।
আল্লাহ তায়ালা আমাদের মঙ্গল করুন। আমিন।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৩:০৪
৫টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৫



সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩


বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন

×