somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মাছরাঙ্গার প্রতিবেদন ও তার পক্ষে বিপক্ষে নানান কথা

০১ লা জুন, ২০১৬ সকাল ৮:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সময়ের আলোচিত ঘটনাগুলোর একটি হল মাছরাঙ্গায় প্রচারিত প্রতিবেদনটি। দুঃখিত, ঘটনাগুলো একটি না, এটাই সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা। এরউপরে আর কী ই বা হতে পারে?

অনলাইনের প্রতিটা কোনায় কোনায় এখন এটা নিয়ে আলোচনা।
শুধু অনলাইন?
হাটে-ঘাটে-মাঠে-বাজারে-মসজিদে(মন্দির, গির্জা এইসবেও হয়তো - ওখানে তো আর যাই না) - প্রতিটা জায়গায় একই বিষয়। চায়ের দোকানে দশমিনিট চুপচাপ বসে থেকে আপনি চা খেলেও - আপনার শিক্ষাবীদ হয়ে বের হওয়ার সম্ভাবনা আছে।

আর অনলাইনে তো ইস্যুই এখন এটা। সবাই এটাকে নিয়ে কিছু না কিছু বলছেই। (আমিও)
কেউ গাল দিচ্ছে শিক্ষা ব্যবস্থাকে (সচেতন ব্যক্তি)
কেউ গাল দিচ্ছে জিপিএ ৫ প্রাপ্তদের (হুজুগে ব্যক্তি)
কেউ গাল দিচ্ছে মাছরাঙ্গাকে (অলটাইম ঘাড়ত্যারা ব্যক্তি)
কেউ আবার সন্তুষ্টি প্রকাশ করছে জিপিএ ৫ না পাওয়া নিয়ে (আ'চুল' সম্প্রদায়)
কেউ আবার মজা করছে (আমি আবার ঐ দলে - মজার মজার উত্তরে মজা করুম না?)

আরো অনেক কিছুই চলছে। কিন্তু, মূল জায়গাটা অনেকেই চিহ্নিতও করেনি। (আমিও এত বড় কুতুব না ভাই, আমিও চিহ্নিত করুম না - আশা কইরা লাভ নাই।)

অবশ্য আমি এই বিষয়ে - আমার নিজস্ব কিছু কথা বলতে চাই।

প্রতিবেদন প্রসঙ্গেঃ
এটা নিয়ে প্রথম প্রশ্ন - এটা কি আসল না নকল?

অনেকের বক্তব্য - আসল। কেন আসল - তার কোন যুক্তি নাই।
অনেকের বক্তব্য - নকল। কেন নকল - যুক্তি হল - এই সহজ প্রশ্নের উত্তরগুলো কেউ না কেউ দিতে পারতোই। খুব একটা কঠিন না।

আমার ধারণা কী এই প্রতিবেদন নিয়ে? এটা আসল-নকল দুটোই।

এটা একটা নাটকের মত। তারা কিছু দৃশ্যায়ন নিয়ে একটা কিছু তুলে ধরার চেষ্টা করেছিল। তারা আসলে কী তুলে ধরতে চেয়েছিল জানিনা। তবে, আমার ধারণা তারা শিক্ষা ব্যবস্থার সাম্প্রতিক অবস্থা নিয়ে তুলে ধরতে চেয়েছিল। তাদের উদ্দেশ্য সঠিক - কিন্তু তাদের পরিবেশন ব্যঙ্গাত্নক।

হয়তো তারা নিজেরাও ভাবেনি - এটা এরকম ব্যঙ্গাত্নক হবে।

এটা নাটক মনে করার কারণ?
প্রতিবেদনের শুরুতে তারা বলেছে - তারা ১৩ জন ভিন্ন শিক্ষার্থীকে কিছু সাধারণ প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেছিল। কিন্তু কেউই সঠিক উত্তর দিতে পারেনি।

আমার খটকা এখানেই। এক লক্ষ দশ এ্+ পাওয়াদের মাঝে ১৩ জনের উদাহরণ কি খুব বড় কোন শঙ্কা প্রকাশ করে?
তারা ঐ ১৩ জনকেই কোথায় খুঁজে পেল যারা সব প্রশ্নের ভুল উত্তর দেয়? তারা তো বলতে পারতো তারা ২০-২৫ জন জিপিএ ৫ পাওয়াদের মাঝে কিছু প্রশ্ন রেখেছিল - তাদের মাঝে কয়েকজন বা বেশির ভাগই সঠিক উত্তর দিতে পারেনি। একটা শতাংশ রাখতে পারতো। তাতে পুরো সংখ্যাটা থেকে একটা আন্দাজ করা যেত। তাদের প্রকাশ ১৩ জনের ১৩ জনই - মানে সামগ্রিকভাবে সব শিক্ষার্থীই এমন।

এটা একটা কারণ। ঐখানে প্রশ্ন করাদের অনেককেই আমার এসএসসি পরীক্ষার্থীর মতই মনে হয়নি। কেন মনে হয়নি বলতে পারব না - তাদের আচরণেই মনে হয়নি। এসএসসি পরীক্ষা দেওয়া একটা ছেলের মাঝে আত্নবিশ্বাস থাকবে - সে যেমনই হোক - উত্তর জানুক বা না জানুক আত্নবিশ্বাসটা দেখা যাবে। সবচেয়ে বড় কথা, চেষ্টা তো করবে উত্তর দিতে। পূর্ববর্তী পরীক্ষার্থীরা ভাবুন তো, আপনারা যখন সদ্য পরীক্ষা দিয়েছিলেন - আপনারা কি এমন অসহায় আত্নসমর্পণের চিন্তা করতেন? আর এটা মিডিয়ায় দেখাবে - সো আত্নবিশ্বাস ঐ বয়স-চিন্তাধারা বিবেচনায় আরো দশগুণ বেশি থাকবে। এই কারণেই মূলত মনে হয়নি - ওরা পরীক্ষার্থী। জাস্ট লোভ দেখিয়ে - একটা সেগমেন্ট করে নিয়েছে।

তারপর, তাদের একজন বলল পিসিতে ফেসবুক চালায় - ফেসবুক চালালে সে জাতীয় দিবসের তারিখ জানবে না? প্রোফাইল পিক চেঞ্জ করতে গিয়েও তো জানবে ওটা। ছুটি থাকে স্কুল - ঐ হিসেবে জানবে। সবচেয়ে বড় কথা - অমনোযোগী ছাত্রছাত্রীই যদি হয় - তাহলে এইসব সাধারণ ছুটির দিনগুলো তারা ভাল করেই জানবে অন্যদের থেকে। এটায় ভুল?

জাতীয় সঙ্গীতের রচয়িতার নাম ভুল করবে? ছোট বেলা থেকে প্রতিটা বাংলা বইয়েই - জাতীয় সঙ্গীতের পঙক্তিমালা ও রচয়িতার নাম লেখা থাকে। সেটাও ভুল করবে? এখনকার বইয়ে এটা বাদ দিয়েছে কিনা জানি না। তবে ২০১৬ এসএসসি ব্যাচ - তারা ক্লাস ওয়ানে ছিল ২০০৫ এর দিকে। তখনের বইগুলোতে কিন্তু লেখাই ছিল।

নেপালের রাজধানী নেপচুন? হয়তো অনেকেই জানেনা এটার রাজধানী কই। প্যাচ লাগাবে থিম্পুর সাথে। আর না জেনে বললেও - মুম্বাই বলবে, দিল্লি বলবে, পারলে বার্মাও বলতে পারে। নেপচুন বলবে এইজন্য? এই শব্দটা কি খুব কমন? খুব প্রচলিত? যদি তারা একেবারেই মূর্খ হয়, কোন জ্ঞানই না থাকে - তাহলে আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি - তারা নেপচুনের নামও জানবে না।

সো - এইরকম কিছু অংশের জন্য এটাকে মিথ্যা মনে হয়। তারা করতে করতে বেশি দূর টেনে ফেলেছিল।

তবে, তাদের প্রয়াসটা একেবারে মিথ্যা ছিল না। আমিও এমন ভুলভাল উদাহরণ দেখেছি।

আমার অভিজ্ঞতাঃ
বিশ্ববিদ্যালয়ের গন্ডিতে আসার পর প্রাইভেট পড়ানো ও কোচিং-এ কাজ করার অভিজ্ঞতা হয়েছে আমার। প্রাইভেট পড়াতে গিয়ে আমার অত বাজে অভিজ্ঞতা না হলেও কোচিং-এর পরীক্ষার খাতায় অনেক কিছ দেখেছি।

বহুবার হাসতে হাসতে গড়াগড়িও খাইছি।

দাঁড়ান উদাহরণ দেই কিছু।

কৃষিশিক্ষা পরীক্ষায় ১ নম্বরের জন্য প্রশ্ন এসেছে, 'রাণীক্ষেত কী?'
একছাত্রীর উত্তরঃ ক্ষেতে খামারে ঘুরলে যে রোগ হয় সেটাই রাণীক্ষেত রোগ।

বাংলা ২য় পরীক্ষায়, এক ছাত্রী রচনা লিখেছিল, তার শুরু ছিল 'উপসংহার' দিয়ে। প্রথমবার কেটে ঠিক করে লিখে দেওয়া হল। পরেরবার আবারো একই ভুল। ধমক দেওয়া হল। সে জানালো - সে জানেনা রচনার শুরুতে কী লিখে। বাড়ি থেকে পড়ে আসেনি। 'সূচনা' শব্দ জানার জন্য বাড়িতে পড়তে হলে তো হইলোই।

ইংরেজীতে ডায়লগ লেখা, জাঙ্ক ফুড নিয়ে দুই বন্ধুর ডায়লগ লিখতে বলা হয়েছিল - সেখানে এক ছাত্র ইংরেজীতে লিখেছে - Let's go friend! I will eat you something.
চল বন্ধু, আমি তোমাকে কিছু খাওয়াবো - এর ইংরেজী নাকি এইটা!!!

আরেকটা, কারিকুলাম ভিটা বা ভাইটা - আগ্রহী ছাত্র - ভিটা তো মনে রাখছে, কারিকুলাম ভুইলা গেছে - তাই লিখে দিছে - Milk vita
চাকরীর জন্য সিভির শুরুতেই দুধেল শুভেচ্ছা (তেলের যুগ শেষ - দুধের যুগ এখন /:) )

পরীক্ষায় গার্ড দিচ্ছি - ম্যাথ পরীক্ষা - ঐ পীথাগোরাসের উপপাদ্যই - এক ছেলে আরেক ছেলেকে দেখাচ্ছিল - হাতেনাতে ধরলাম - ছেলে সাহসী - সরাসরি উত্তর দিছে, 'ভাইয়া, আমি তেমন কিছু করি নাই। সে আমাকে পীথাগোরাসের সূত্র জিজ্ঞেস করছিল, আমি ঐটাই বলতে গেছিলাম - তখনই আপনি ধরে ফেলছেন।'
পীথাগোরাসের সূত্র!!!! উপপাদ্য হয়ে গেছে সূত্র!!! যাক উপন্যাস তো আর কয় নাই। বুঝার মত ভুল, স্কিপ করে বললাম, 'আচ্ছা, আমার সামনে জোরে জোরেই বলে দাও তাকে।'
বলেছে, 'এ স্কয়ার + বি স্কয়ার = সি স্কয়ার - এইটাই পীথাগোরাসের সূত্র।'
জিজ্ঞেস করলাম, সূত্রের এ বি সি - জিনিসগুলা কী?
আর পারেনা তখন।

শারিরীক শিক্ষা একটা সাবজেক্ট। ঐটার খাতা দেখলে বুঝা যায় ছেলেমেয়েদের সাধারণ জ্ঞান আসলে কতটুকু? ভাগ্য ভাল কোন খেলোয়াড় সেগুলো পড়েনা। পড়লে খেলা ছেড়ে আত্নহত্যা করতো নিশ্চিত।
অনেক অনেক উদাহরণ - মনেও নাই খুব একটা।

একটা মনে আছে, তাদের বইয়েরই প্রশ্ন, 'ক্রিকেটের স্ট্যাম্প কী কাজে ব্যবহৃত হয়?'
উত্তরঃ 'ছক্কা পিডাইতে' /:)

আসলে অভিজ্ঞতার কথা বললে শেষ নাই। অনেকেই যারা এসব লাইনে আছেন - তারা অনেক কিছু দেখেছেন। মজা করে হেসেছেনও হয়তো।

সো এটা স্বাভাবিক বলা যায় - তারা মুখস্থতেই পরীক্ষায় ভাল ফল আনে। কিন্তু খুব কিছু শিখছে তাও না। মুখস্থটা হুট করে ভুলে গেলে নিজের ভাষায় মূল বক্তব্যটা লিখবে বা সঠিক শব্দ ভুলে গেছে তার পরিবর্তে সমার্থক কোন কিছু লিখবে - সেই জ্ঞান নাই। যতক্ষণ মুখস্থ আছে ততক্ষণ রাজা তারা। হুট করে ভুলে গেলেই - নেপালের রাজধানী নেপচুনের মত অবস্থা হয়ে যায়।

তো ভিডিওটার মূল বক্তব্য যে মিথ্যা তা কিন্ত না। সহজ অনেক কিছুই এখনকার অনেক শিক্ষার্থীরাই জানে না। তাদের ফল ভাল - কিন্তু জ্ঞানের ঘর একদম ফাঁকা।

এরকমটার কারণ অবশ্যই শিক্ষা ব্যবস্থা। হালকা বর্ণনা দেই।

শিক্ষা ব্যবস্থাঃ
আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা যে অতীতেও খুব ভাল ছিল তা বলা যাবে না। ৭০/৮০/৯০ দশকের সম্পর্কে আমি জানি না। স্কিপ করলাম। তবে তখন নকলের প্রচলনটা ছিল মাশাল্লাহ। নিজ চোখে দেখি নাই - তবে বুজুর্গদের থেকে শুনছি।

আমি ১০ বছর আগের কথাই বলি। তখনকার প্রশপত্রের ধরণ ছিল - কয়েকটা নির্দিষ্ট প্রশ্ন পড়লেই হইতো। তবে এটা ঠিক যে, নির্দিষ্ট প্রশ্ন পড়তেও খাটনী ছিল। বুঝতে হত ভাল করে। কারণ, মূল পরীক্ষায় - একই প্রশ্ন ভিন্ন ভাবেও আসতে পারতো। মূল বক্তব্য একই রেখে ভিন্ন আঙ্গিকে উত্তর করা লাগতো।
খাটনী ছিল বলতে - শুধু বুঝতে পারাটাই। ইলাবোরেট না করলেও চলতো। তবে কেউ যদি ইলাবোরেট করে পড়তে চাইতো - তাতে অসুবিধা ছিল না। কারণ, যত ইলাবোরেট করবে - ততই জ্ঞান বাড়বে। নির্দিষ্ট প্রশ্নের বাইরের পড়া পড়লে, ঐ নির্দিষ্ট প্রশ্নের উত্তরটাকেই আরো গুছিয়ে লেখা যেত।

সত্যি বলতে মুখস্থ অনেকে করলেও - সাফল্য পেত যারা ভাল করে বুঝতে পারতো। তখনকার এমন রেকর্ডও আছে - সারাদিন রাত অনবরত খাওয়া ঘুম ছেড়ে পড়া ছাত্র-ছাত্রীও এসএসসি বা এইচএসসিতে ফেইল করে বসেছে।

তবে, ঐ সময় ইংরেজী ২য় পত্রের একটা অংশ ছিল আলাদা। যেটার জন্য মুখস্থ না - নিজের অর্জিত জ্ঞানটাই ছিল আসল। সেটারই যাচাই হত। আনসিন কম্প্রিহেনশন টার্মটা। এটা আমার ভাল লাগে। (অবশ্যই যখন ছাত্র ছিলাম তখন শত্রুর মত লাগতো - এখন ভাল লাগে আর কী।)
এটা ভাল ছিল কারণ কিছুটা আনপ্রেডিক্টেবল ছিল। প্রশ্ন কেমন হবে তা কেউ জানতো না। এটায় মুখস্থ করলে হত না আসলেই। এক শব্দের সমার্থক বিপরীতার্থক - সবই জানতে হত। কোন পরিবর্তন করা লাগলে - কোন জায়গায় কিভাবে করা লাগবে - সেটা মুখস্থ করা সম্ভব ছিল না। ইংরেজীতে একটা সময় ফেইল থাকার কারণ ছিল এটা।

এটাই ভাল ছিল। তবে, আরো ভাল ভাবে বললে - এটা কিন্তু সৃজনশীল পদ্ধতিই। মানে এখন যেটা চলছে। ঐ ভালটাকেই হয়তো টেনে তোলার চেষ্টা করেছিল - এই পদ্ধতিই চালু করে। আমি বলব - এই পদ্ধতিটা আসলেই ভাল।

তবে সমস্যা হল - এটার জন্য যে মানের শিক্ষক দরকার তা আমাদের নাই। সত্যি বলতে এই সম্পর্কে জ্ঞানই আমাদের অনেক শিক্ষকের নাই।

আমাদের দেশে না - এই পদ্ধতিটা যে দেশে মানে ফ্রান্সেই প্রথমে চালু হয়েছিল মনে হয়? ওখানেও বন্ধ করে দিয়েছিল - এইসব কারণেই।

কিন্তু আমরা ওতেই পড়ে রইলাম। আমাদের শিক্ষকদের এই বিষয়ে কোন ট্রেনিং নেওয়ানো হল না। কর্মশালায় খুব একটা আয়োজিত হয়নি। মন চাইলো - একটা দুইটা পরীক্ষায় পরীক্ষামূলক ভাবে চালিয়ে দেখে - পূর্ণাঙ্গ ভাবে চালু করে দিলাম। শেষ। শিক্ষা পদ্ধতি সৃজনশীল হয়ে গেল। কাজ খতম।

কিন্তু আদতে হয়েছেটা কী? নামেই সৃজনশীল - কাজে কি সৃজনশীল?

আমাদের অনেক শিক্ষককে সৃজনশীল প্রশ্ন পদ্ধতি ধরণ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে উত্তর দেয়, 'এই পদ্ধতিতে প্রশ্নের শুরুতে একটা অনুচ্ছেদ থাকবে। তারপর সেখান থেকে চারটা প্রশ্ন করা হবে। প্রশ্নগুলোর পূর্নমান - ১,২,৩,৪। সবমিলিয়ে দশ।'
এই শেষ। এটাই নাকি সৃজনশীল।

তারা প্রশ্ন করছে। যা মন চাইলো উদ্ধৃতিতে লিখলো। তারপর সেই আগের ধারার মতই গৎবাঁধা কিছু প্রশ্ন। এক দুই তিন চার করে নম্বর দিল কাজ শেষ।

সৃজনশীলের মানেই যারা বুঝে না - তারা কীভাবে সৃজনশীল ধারাটা চালিয়ে যেতে পারবে সুষ্ঠু ভাবে?

সৃজনশীল কী?
একটা মানুষের নিজের জ্ঞান থেকে কিছু সৃষ্টি করার দক্ষতা।

নিজের জ্ঞান থেকে করলে অবশ্যই নিজের মত করে করবে। তাতে বুঝা যাবে - তার অর্জিত জ্ঞান কতটুকু, সে ওই জ্ঞানকে কতটা ভালভাবে কাজে লাগাতে পারে।

এটা সাধারণ কথায় সৃজনশীল সম্পর্কে বললে।

শিক্ষা ব্যবস্থায় এটাকে আনা হয়েছিল - একটা শিক্ষার্থীর নির্দিষ্ট বিষয়ের উপরে ঠিক কতটা জ্ঞান আছে, এবং ভিন্ন ভিন্ন পরিস্থিতিতে ঐ পুঁথিগত সীমাবদ্ধ জ্ঞানটাকেই কতটা প্রয়োগ করতে পারে।
মানে - শিক্ষার্থীকে একটা নির্দিষ্ট পাঠ্যপুস্তক দেওয়া হবে। সেটাকে তার ভাল করে পড়তে হবে। তার পরীক্ষা হবে ঐ বইয়ের উপর। তাকে ভিন্ন ভিন্ন কয়েকটা ক্যাটাগরীতে আসা কয়েকটা প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে।

তাই মুখস্থ কমবে এবং ব্যবহারিক বাড়বে।

চারটা ভাগও করে দিছে। একটা উদ্দীপকও থাকবে। উদ্দীপকটা তার পুরো বইয়ের থেকে একটা নির্দিষ্ট দিকে ইঙ্গিত দিবে। যাতে সে সবকিছুর চাপে ওভারলোড না হয়ে - ঐ নির্দিষ্ট বিষয়টাতেই আলোকপাত করতে পারে। (আমার মতে আর কী)

প্রথমটা - জ্ঞানমূলক। বইটা থেকে তার জ্ঞানে কত্টা স্টোর হয়েছে সেটা জানা যাবে।
দ্বিতীয়টা - অনুধাবনমূলক। এর আভিধানিক অর্থ বললে বুঝতে পারা মূলক কিছু একটা বুঝায়। এমনই এটা। এটায় আসলে উদ্দীপকের তেমন কোন ভূমিকা নেই। যে কোন প্রশ্নই আসতে পারে। এটার মূল উদ্দেশ্য হল - সে ঐ বইটা থেকে সবকিছু ভালভাবে বুঝেছে কিনা সেটা যাচাই করার জন্য। এই প্রথম দুইটা অংশের উত্তর বই থেকেই পাবে।
তৃতীয়টা - প্রয়োগমূলক। এটায় উদ্দীপকের ভূমিকা আছে। এটায় বইয়ের মুখস্থ বিদ্যা কাজে দিবে না। এটায় জ্ঞানের প্রকাশটা বুঝা যায়। যদিও ছোট গন্ডিতে - তবু এটায় বুঝা যায় কারো ক্ষমতা সম্পর্কে। এটায় কাজটা হল - বইয়ে যা পড়ছে - সেইটা সে ভিন্ন আংগিকে বা ভিন্ন পরিস্থিতিতে প্রয়োগ করতে পারে কিনা। মানে মূল বক্তব্য একই - কিন্তু আশেপাশের দৃশ্য পাল্টেছে। তখন সে কি গৎবাধা ভাবেই প্রয়োগ করবে কিছু না ঐ জ্ঞানটাকেই প্রয়োজনীয় ভাবে সাজিয়ে প্রয়োগ করবে। একটু আগেই তো ইলাবোরেট বলেছিলাম - এটাও একই রকম।
চতুর্থটা - উচ্চতর দক্ষতা। এটাও উদ্দীপকের সাহায্যে দিতে হবে। কারণ, উদ্দীপকে ভিন্ন আঙ্গিক, পরিবেশ, অবস্থা এটারই একটা ছোট অংশ লেখা থাকে। এটাতেও প্রয়োগের ক্ষমতার দিকতো আছেই। সাথে যুক্ত হচ্ছে - তুলনা করার ব্যাপারটা। তার নিজের কী ভাবনা সেটা। বলতে গেলে এটা পাঠ্যপুস্তকের বাইরের প্রশ্ন। এটায় সম্পূর্ণ ভাবে নিজের চিন্তাধারাই আসল। এটার জন্য শুধু পাঠ্যপুস্তক না - সাধারণ জ্ঞানের সম্পর্কেও ধারণা থাকা লাগবে।

এই সম্পর্কে প্রথম আলোতে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যারের একটা লেখা প্রকাশিত হয়েছিল বছর দুই আগে।
লিংক দিয়ে দিচ্ছিঃ এক, দুই

এটা হল আসল সিস্টেম। কিন্তু চলে কী?

প্রথমে, পিচ্চি প্রশ্ন। এক শব্দের বা বাক্যের।
দ্বিতীয়তে, সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন। আধা পৃষ্ঠার।
তৃতীয়তে, সায়েন্সের সাবজেক্টে - অংক। নাহলে - রচনামূলক প্রশ্ন। দুই পৃষ্ঠার। দেড় পৃষ্ঠাও চলবে।
চতুর্থতে, সবচেয়ে বড় প্রশ্নডা। তিন পৃষ্ঠা।

এটাই সৃজনশীল। কোচিং চালানোর অভিজ্ঞতায় জানি - স্কুলের সেরা শিক্ষার্থীরাও কী লিখে - নিন্ম পর্যায়ের গুলাও কী লেখে। তারাই যায় - জিপিএ ৫ পায়। মিষ্টি খাওয়ায়। হয়া গেল সব।

তবে, প্রথম দিকে কঠিন ছিল এটা। কারণ, নমুনা ছিল না প্রশ্নের। শিক্ষকদের ভাবতে হতো প্রশ্ন করতে। এখন তো অনেক নমুনা আসছে। শিক্ষকরা ঐসবই কিছু দিয়া দেয়। স্কুল পরীক্ষার আগে সাজেশন দেয়, বোর্ড পরীক্ষার আগে প্রশ্ন ফাঁস হয় - সৃজনশীল প্রশ্ন পদ্ধতিতে দেশে লাখ লাখ শিক্ষার্থী শিক্ষিত হয়ে উঠছে। পাশের হার, জিপিএ ৫ এর সংখ্যায় তার প্রমাণ হচ্ছে।

কিন্তু কাজের কাজ তো কিছু হল না। সৃজনশীল প্রথম আসার সময় সাজেশন ছিল না। কী সাজেশন দিবে? সাজেশন দিতে গেলে প্রশ্নই বলে দিতে হত। আমি যখন এসএসসি(২০০৮) দেই তখনো সাজেশন পদ্ধতি ছিল - প্রশ্ন কিছু কম পড়তে হত। তবে নেহায়াত কমও ছিল না প্রশ্ন। অনেক পড়তে হত। আর বোর্ড পরীক্ষার সাজেশন ছিল - ইমিডিয়েট আগের বছর আসা প্রশ্ন বাদ দিয়ে পড়া। তবু সাজেশন ছিল - তাই নিয়ে কথাও কম হত। প্রেডিক্টেবল ছিল প্রশ্নগুলো - এমনও কথা উঠছে। ঐটা খারাপ পদ্ধতি।

আমিও মানি ঐটা খারাপ।

সৃজনশীল আসার পর এটা দূর হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু হয়তো নাই ই - উলটো প্রশ্নই ফাঁস হওয়া শুরু করছে। আগে তো কিছু হইলেও বই ঘেটে পড়া লাগতো - এখন ঐ কয়টা পড়লেই হয়ে যায়।

যেমন হওয়ার কথা ছিল - হয়েছে পুরো উল্টোটা। তো - এখনকার জিপিএ ৫ এর দামই বা কতটা? অনেকেই তো প্রশ্ন পায় না - তারা ভাল করছে না?
পরীক্ষার আগে আগে দশ বছর আগেও যেমন সাজেশন পদ্ধতি ছিল - এখনও আছে। আগে সব প্রশ্নই সাজেশনে থাকতো - এখন পরীক্ষায় আসবে নিশ্চিতগুলোই সাজেশনে থাকে। (গুজব শুনেছিলাম - বোর্ডের থেকে প্রশ্ন করার জন্য নির্দিষ্ট কয়েকটা প্রশ্নই বলা থাকে। বিশ্বাস হয়নি।)

তবে প্রশ্ন পদ্ধতি এখনো ত্রুটিপূর্ণ - যেভাবে চিন্তা করে পদ্ধতি চালু হয়েছিল। সেটা পরে আর থাকেনি। প্রশ্নের ধারাও প্রেডিক্টেবল। আর মার্কিং করার ক্ষেত্রে - পুরোপুরি নম্বর কর্তন না করা বিধান। এসব কারণে পাশের হার বাড়ছে। আর, মোটামুটি লিখলেই পূর্ণ নাম্বার - এটার জন্য জিপিএ ৫ বাড়ছে।


যাই হোক - যারা নিজের মেধায় অর্জন করছে - তারা আসলেই মেধাবি। এটা বলতে দ্বিধা নেই।

সমাধানের উপায়ঃ
কোন সমাধান নাই এটার। সত্যি কথা কোন সমাধান নাই। কেন নাই? কারণ, শিক্ষাব্যবস্থার ত্রুটি গৌণ ত্রুটি। মূল ত্রুটি হল আমাদের মূল্যবোধে।

** আমাদের অভিভাবকদের ভাবনা কী তাদের ছেলে মেয়েদের পড়ালেখা নিয়ে?
সারাদিন বইয়ের সাথে লেগে থাকতে হবে। বই থেকে উঠলেই - 'পড় পড়'। মানে আদতে তারাই সন্তানদের মুখস্থের দিকে ঢালছে।
কয়টা বাবা-মা সন্তানদের সাথে বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করে? তাদেরকে সাধারণ জ্ঞান সম্পর্কে ধারণা দেয়? তাদেরকে নিজেদের মত করে ভাবার সুযোগ দেয়? সংখ্যাটা খুবই নগন্য।
ছোট বয়সের বাচ্চারা নিজের ভাবনার কথা জানালে - তাকে বেয়াদব, ঘাড়ত্যাড়া বলে বকাঝকা করা হয়। তো ঐখানেই শেষ।

** আমরা এখন অনেকেই সমস্যা নিয়ে বলছি। হেন করতে তেন করতে। আমরা সমস্যা ধরায় পটু। আমরা প্রতিক্ষেত্রেই এই কাজটা করি।

আমাদের নিজেদের কাছেই আমার একটা প্রশ্নঃ আমাদের মাঝে কয়জনের ইচ্ছা একজন শিক্ষক হওয়ার? শিক্ষা ব্যবস্থা যেটাই হোক - আমাদের কয়জন চাই একটা শিক্ষার্থীকে ভালভাবে সবকিছুর সম্পর্কে জ্ঞানদান করতে?
উত্তরে অনেকেই চায় বলবে।
আচ্ছা, এখন আরো প্রশ্নঃ নিশ্চয় কাজটা করতে কষ্ট কম ও টাকা বেশি চিন্তা করে? অন্যান্য চাকরী পাওয়ার থেকে এই চাকরী পাওয়া সহজ বলে? তাই না? এটাই তো চিন্তা? (সৎ ভাবে বললে - আমার চিন্তাও এর থেকে ব্যতিক্রম না।)

আচ্ছা, পূর্ণ শিক্ষক হওয়ার মত বড়টা নিয়ে ভাবার দরকার নেই। খন্ডকালীন ধরি। মানে প্রাইভেট পড়ানো। তো, অনেকেই প্রাইভেট পড়ান বা কোন কোচিং-এ সুযোগ পেলে সেখানেও ক্লাস নেন। তো,
- প্রাইভেট শুরু করার আগে কয়জন ভাবেন আমি আমার স্টুডেন্টকে কিছু শেখাবো? নাকি ভাবেন এটা থেকে টাকা বেশি আসবে। আর, পারলে একটা ব্যাচ পাওয়া যাবে। তাতে অন্তত মাসে ভাল ভাবে চলে যাওয়া যাবে। তাই তো?

কোচিং-এ ক্লাস নেওয়ার আগে কী ভাবেন? ক্লাসে কিছু শেখাবো? নাকি - ঐ কোচিং-এর ক্লাসে টাকা কম দেয় ভাবেন?

হ্যাঁ - সমাধান করার উপায় নাই। কিন্তু, চাইলে করা যাবে। আমাদের পড়ানোর ক্ষেত্রে কর্মাশিয়াল চিন্তাটা বাদ দিয়ে। কাজ করলে টাকা আসবে। আসবেই। সো, ঐটা নিয়ে দুঃশ্চিন্তা না করে কাজ করে যাওয়াটাই শ্রেয়। যদি এটা করা যায় - তাহলে, হয়তো একসময় এই সমস্যার সমাধান হবে।

(পাক্কা দুই ঘন্টা লাগায়া বক বক করলাম - অনেকদিনের লেখা মনে হয় সব একদিনেই আসলো। :( যারা পড়বেন - তাদের কাছে আমি ক্ষমাপ্রার্থী। যেমন ভাবে ভেবে লিখা শুরু করেছিলাম - তেমনটা বলতেই পারিনি। :( )
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জুন, ২০১৬ সকাল ৮:৪৮
১৩টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস-পরীক্ষার হলে দেরিঃ পক্ষ বনাম বিপক্ষ

লিখেছেন BM Khalid Hasan, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



বর্তমানের হট টপিক হলো, “১ মিনিট দেরি করে বিসিএস পরীক্ষার হলে ঢুকতে না পেরে পরীক্ষার্থীর স্বপ্ন ভঙ্গ।” প্রচন্ড কান্নারত অবস্থায় তাদের ছবি ও ভিডিও দেখা যাচ্ছে। কারণ সারাজীবন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

×