somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মহান মুক্তিযুদ্ধে বাঙালিদের বিদেশী বন্ধু (জর্জ হ্যারিসন) পর্ব- ২

১০ ই ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ১:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



তখন বিশ্বজুড়ে সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্যান্ড দল বিটলস। আর জর্জ হ্যারিসন ছিলেন বিশ্বের অন্যতম সেরা জনপ্রিয় তারকা। ইতিহাসে তিনি একজন প্রতিভাবান গিটারিস্ট ও শিল্পী হিসেবে স্মরণীয় হয়ে আছেন। তবে বাংলাদেশের মানুষের কাছে হ্যারিসন এক পরম বন্ধুর নাম। যার নামের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ভালোবাসার অন্য রকম এক কীর্তি।

সময়টা ছিল ১৯৭১। পাকিস্তানি বাহিনীর তাণ্ডবে বিধ্বস্ত গোটা বাঙালি। বাঙালিদের দুরবস্থা ছুঁয়ে গিয়েছিল নানা শ্রেণী-পেশার নানা দেশের মানুষদের। এদেরই একজন ভারতের বিখ্যাত পণ্ডিত রবি শঙ্কর। তিনি তার অবস্থান থেকে বিধ্বস্ত এই জাতির জন্য কিছু করতে চাইলেন। পণ্ডিত রবিশংকর মুক্তিযুদ্ধের প্রতি বিশ্ব জনমত গড়ে তুলতে ও শরণার্থীদের আর্থিক সহায়তা দেওয়ার জন্য বিশ্বখ্যাত ব্যান্ড বিটলেসর শিল্পী জর্জ হ্যারিসনের সঙ্গে একটি কনসার্ট আয়োজনের বিষয়ে আলাপ করেন। হ্যারিসন তার প্রস্তাবটি সাদরে গ্রহণ করেন এবং 'দ্য কনসার্ট ফর বাংলাদেশ' আয়োজনের জন্য কোমর বেঁধে লেগে পড়লেন। কিন্তু বিষয়টি মোটেও সহজ ছিল না। কারণ দুনিয়া কাঁপানো গানের দল বিটলসের সদস্যদের মধ্যে কোনো বনিবনা ছিল না। কিন্তু এরপরও মানবতার জন্য হ্যারিসন তার দলের সদস্য বন্ধুদের ম্যাডিসন স্কোয়ার গার্ডেনের অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্য আমন্ত্রণ জানান। পাঁচ সাপ্তাহের মধ্যে অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়। বিটলসের পল ম্যাকার্টনি কনসার্টে আসার ব্যাপারে সরাসরি অস্বীকৃতি জানান। আরেক কিংবদন্তি জন লেনন অনুষ্ঠানে আসতে রাজি ছিলেন, কিন্তু আদালতে স্ত্রীর সঙ্গে সন্তানের ব্যাপারে আইনি লড়াইয়ের কারণে শেষ পর্যন্ত আসতে পারেননি। আর মিক জ্যাগার তখন ছিলেন দক্ষিণ ফ্রান্সে। ভিসা সংক্রান্ত জটিলতার কারণে তার পক্ষেও আসা সম্ভব হযনি। শেষ পর্যন্ত বিটলসের একমাত্র রিঙ্গো স্টার তাদের সঙ্গে যোগ দেন। সঙ্গে আরও ছিলেন কিংবদন্তি তারকা বব ডিলান, এরিক ক্ল্যাপটন, বিলি প্রিস্টন, হ্যারিসনের নতুন দল ব্যাড ফিঙ্গারের যন্ত্রী দল ও আরও অনেকে। ১৯৭১ এর ১ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের ম্যাডিসন স্কয়ারে আয়োজিত হলো 'কনসার্ট ফর বাংলাদেশ'।

বিটলস ভেঙে যাওয়ার পর এটাই ছিল হ্যারিসনের সরাসরি অংশগ্রহণ করা প্রথম অনুষ্ঠান। এরিক ক্ল্যাপটনও এ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে প্রায় পাঁচ মাস পর কোনো সরাসরি অনুষ্ঠানে গান গাইলেন এবং বব ডিলানও ১৯৬৯ সালের পর প্রথমবারের মতো শ্রোতা-দর্শকদের সামনে আসেন। তাই এই কনসার্ট নিয়ে দর্শকদের মধ্যে বাড়তি উন্মাদনা ছিল। প্রথমে পরিকল্পনা ছিল, একটি কনসার্ট হবে। কিন্তু সে দিন এত বিপুল সাড়া জাগিয়েছিল কনসার্টটি যে পরে অনুষ্ঠানসূচি ঠিক রেখে, একই দিনে আরও একটি অনুষ্ঠান করতে হয়েছিল 'দ্য কনসার্ট ফর বাংলাদেশ'-এর। মূল অনুষ্ঠানে জর্জ হ্যারিসন শুরুতেই হাজার হাজার শ্রোতাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, 'ভারতীয় সংগীত আমাদের চেয়ে অনেক গভীর।' তারপর পণ্ডিত রবিশংকর ও ওস্তাদ আলী আকবর খান এবং সহশিল্পীদের পরিচয় করিয়ে দেন। কনসার্টটির শুরুতেই পণ্ডিত রবিশংকর এক সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বলেন, 'প্রথম ভাগে ভারতীয় সংগীত থাকবে। এর জন্য কিছু মনোনিবেশ দরকার। পরে আপনারা প্রিয় শিল্পীদের গান শুনবেন। আমাদের বাদন শুধুই সুর নয়, এতে বাণী আছে। আমরা শিল্পী, রাজনীতিক নই। বাংলাদেশে অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা ঘটছে। বাংলাদেশের পল্লীগীতির সুরের ভিত্তিতে আমরা বাজাব 'বাংলা ধুন'।' তিনি 'বাংলা ধুন' নামের একটি নতুন সুর সৃষ্টি করেছিলেন। সেটি দিয়েই আলী আকবরের সঙ্গে যুগলবন্দিতে কনসার্ট শুরু হয়েছিল। তবলায় ছিলেন ওস্তাদ আল্লা রাখা এবং তানপুরায় ছিলেন কমলা চক্রবর্তী।

দ্য কনসার্ট ফর বাংলাদেশ-এর বড় আকর্ষণ ছিলেন বব ডিলান ও জর্জ হ্যারিসন। অসাধারণ গিটার বাজিয়েছিলেন এরিক ক্ল্যাপটন। জর্জ হ্যারিসন আটটি গান গেয়েছিলেন। এর একটি ছিল বব ডিলানের সঙ্গে। বব ডিলান গেয়েছিলেন পাঁচটি গান। রিঙ্গো স্টার ও বিলি প্রেস্টন একটি করে গান করেছিলেন। লিওন রাসেল একটি একক এবং ডন প্রেস্টনের সঙ্গে একটি গান করেছিলেন।

এই কনসার্টে জর্জ হ্যারিসনের আন্তরিক ভূমিকা বাংলাদেশি মানুষের কাছে হ্যারিসনকে সত্যিকারের তারকায় পরিণত করেছিল। কনসার্ট ফর বাংলাদেশের সর্বশেষ পরিবেশনা ছিল জর্জ হ্যারিসনের অবিস্মরণীয় গান 'বাংলাদেশ বাংলাদেশ'। ১৯৭১ এর ১ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের ম্যাডিসন স্কয়ারে ওঠা সেই 'বাংলাদেশ-বাংলাদেশ' ধ্বনি সমগ্র বিশ্বজুড়ে প্রতিধ্বনিত হতে লাগল। এই কনসার্ট থেকে সংগৃহীত ২ লাখ ৫০ হাজার ডলার ইউনিসেফের মাধ্যমে বাংলাদেশের বিপন্ন মানুষের জন্য দেওয়া হয়েছিল। এই আয়োজনের ক'দিন পরই ১৯৭১ সালেই এর অডিও সংকলন বের হয়। ১৯৭২ সালে এই অনুষ্ঠানের চলচ্চিত্রও বের হয়। ২০০৫ খ্রিস্টাব্দে ওই চলচ্চিত্রটিকে একটি তথ্যচিত্রসহ নতুনভাবে ডিভিডি আকারে তৈরি করা হয়। এই কনসার্ট এবং তার বিখ্যাত গান 'বাংলাদেশ'-এর জন্য তিনি ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

(সংগৃহীত)
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ১:৫১
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাজত্ব আল্লাহ দিলে রাষ্ট্রে দ্বীন কায়েম আমাদেরকে করতে হবে কেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:০৬



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ২৬ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৬। বল হে সার্বভৈৗম শক্তির (রাজত্বের) মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) প্রদান কর এবং যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) কেড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তির কোরাস দল

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৫



ঘুমিয়ে যেও না !
দরজা বন্ধ করো না -
বিশ্বাস রাখো বিপ্লবীরা ফিরে আসবেই
বন্যা ঝড় তুফান , বজ্র কণ্ঠে কোরাস করে
একদিন তারা ঠিক ফিরবে তোমার শহরে।
-
হয়তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাইডেন ইহুদী চক্তান্ত থেকে বের হয়েছে, মনে হয়!

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪৮



নেতানিয়াহু ও তার ওয়ার-ক্যাবিনেট বাইডেনকে ইরান আক্রমণের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলো; বাইডেন সেই চক্রান্ত থেকে বের হয়েছে; ইহুদীরা ষড়যন্ত্রকারী, কিন্তু আমেরিকানরা বুদ্ধিমান। নেতানিয়াহু রাফাতে বোমা ফেলাতে, আজকে সকাল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজ ২৫শে বৈশাখ। ১৬৩তম রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে আমার গাওয়া কয়েকটি রবীন্দ্রসঙ্গীত শেয়ার করলাম। খুব সাধারণ মানের গায়কী

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ০৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০৫

আপনারা জানেন, আমি কোনো প্রফেশনাল সিঙ্গার না, গলাও ভালো না, কিন্তু গান আমি খুব ভালোবাসি। গান বা সুরই পৃথিবীতে একমাত্র হিরন্ময় প্রেম। এই সুরের মধ্যে ডুবতে ডুবতে একসময় নিজেই সুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্ব কবি

লিখেছেন সাইদুর রহমান, ০৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৭

বৈশাখেরি পঁচিশ তারিখ
কবি তোমার জনম
দিন,
বহু বছর পার হয়েছে
আজও হৃদে, হও নি
লীন।

কবিতা আর গল্প ছড়া
পড়ি সবাই, জুড়ায়
প্রাণ,
খ্যাতি পেলে বিশ্ব জুড়ে
পেলে নভেল, পেলে
মান।

সবার ঘরেই গীতাঞ্জলী
পড়ে সবাই তৃপ্তি
পাই,
আজকে তুমি নেই জগতে
তোমার লেখায় খুঁজি
তাই।

যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×