somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

খাদ্য অপচয় করবেন না

১৩ ই অক্টোবর, ২০১০ বিকাল ৩:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
খাদ্য অপচয় করবেন না


১) বিশ্বব্যান্কের হিসেবে প্রতিদিন ৪০,০০০ শিশু মারা যায় শুধুমাত্র অনাহারে।

২) অনাহারে শিশু মৃত্যুর সংখ্যা ম্যালেরিয়া যক্ষা ও এইডসের চেয়েও বেশি।

৩) বিশ্বে প্রায় ৭৮০ মিলিয়ন মানুষ ক্ষুধায় কষ্ট করে জীবন যাপন করে।

৪) বিশ্বে যত মানুষ অনাহারে মারা গিয়েছে, তা যুদ্ধে মৃত লোকসংখ্যার চেয়ে অনেক গুন বেশি।

আপনার পর্যাপ্ত আছে, তাই হয়তো বেশি খাবেন, কিন্তু আপনি যদি কোন ভুখা শিশু কিংবা বৃদ্ধার কথা চিন্তা করে প্রতি বেলাতে একমুঠু ভাত কম খান তাহলে আপনার কোন ক্ষতি হবে না, বরং যে মানূষিক প্রশান্তি পাবেন তা আপনি কোটি টাকা দিয়েও কিনতে পারবেন না।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ও খাদ্যাভ্যাস : একটি প্রশ্ন


বর্তমান সময়ে জলবায়ু পরিবর্তন ও এর সম্ভাব্য প্রভাব বাংলাদেশসহ বিশ্বে একটি বহুল আলোচিত বিষয়। তবে আমাদের দেশে আরো বেশি আলোচিত এজন্য, দেশের অবস্থান ও ভৌগলিক কারণে এর প্রভাবে আমাদের বেশি তিগ্রস্ত করবে। ফলে খাদ্য নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন েত্ের মানুষের জীবন ও জীবিকার ওপর আঘাত হানার আশঙ্কা রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে কৃষি উৎপাদন হ্রাস পাওয়ার কারণে বিশ্বব্যাপী খাদ্যাভাব দেখা দিতে পারে। ২০৫০ সন নাগাদ বাংলাদেশে ধানের উৎপাদন কমবে প্রায় ৮% ও গমের উৎপাদন কমবে প্রায় ৩২%। ফলে খাদ্য নিরাপত্তায় দেখা দেবে এক অনিশ্চয়তা। আশার কথা হলো জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় আমাদের সরকার ইতোমধ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। এর সাথে খাদ্য নিরাপত্তার ভবিষ্যৎ ঝুঁকি মোকাবেলায় খাপ খাওয়ানোর কৌশল নির্ধারণ, ফসলের জাত নির্বাচন ও উৎপাদন পদ্ধতিতে প্রয়োজনীয় পরিবর্তনবিষয়ক বিভিন্ন গবেষণা কার্যক্রম নেয়া হয়েছে এবং তা অব্যাহত আছে। তবে এ কথাও ঠিক, গবেষণা কার্যক্রমের পাশাপাশি যদি আমাদের দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাসে কিছু পরিবর্তন এনে খাপ খাওয়ানোর এ কৌশলটিও বাস্তবায়ন করা যায় তাহলে এটিও খাদ্য নিরাপত্তায় কিছুটা হলেও ধনাত্মক অবদান রাখবে বলে মনে করি। আর সে কৌশলটি হলো খাদ্যের অপচয় রোধে কোনো অনুষ্ঠানে প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাদ্যের আয়োজন না করা।

পুরোনো একটি প্রবাদ বাক্য আছে, ‘বাঁচার জন্য খাওয়া, খাওয়ার জন্য বাঁচা নয়’। কিন্তু অনেক েত্েরই আমাদের দৈনন্দিন, পারিবারিক, সামাজিক ইত্যাদি অনুষ্ঠানে আপ্যায়নকালে খাদ্য সরবরাহের তালিকা দেখলে মনে হয় খাওয়ার জন্যই বাঁচা। তবে আমরা ঐতিহ্যগতভাবেই ভোজন বিলাসী। কারণ আমাদের দেশে একটা সময় গোলা ভরা ধান, গোয়াল ভরা গরু এবং পুকুর ভরা মাছ ছিল। ফলে তখন থেকেই ভোজন বিলাসীর প্রসার লাভ করতে থাকে। যা বর্তমানে এসে খাদ্য সঙ্কট ও আর্থিক অপচয়ে অন্যতম একটি সহায়ক ভূমিকা পালন করছে বলে আমি মনে করি। আমাদের বর্তমান সমাজে প্রায়ই দেখা যায় যে, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে হরেক রকম খাদ্য বিতরণ করা হয়। অনেক েত্েরই অতিরিক্ত আইটেম থাকার কারণে পছন্দের সব খাবার খাওয়া সম্ভব হয় না। এতে খাবারের অপচয় অনেক হয়। একটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি আরো পরিষ্কার হবে। ধরা যাক একটি জন্মদিনের অনুষ্ঠান অথবা বিয়ের অনুষ্ঠান, যেখানে অতিথি নিমন্ত্রণ করা হয়েছে আনুমানিক ১০০০ জন। ঐ অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ধরনের খাবার, পানীয় ও মিষ্টান্নের ব্যবস্থা করা হয়। প্রথমত সবাইকে শরবত দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়। পরবর্তী তালিকায় রাখা হয় পোলাও ও ভাত। তার সাথে রাখা হয় রকমারি সালাদ, কাবাব, মুরগি ঝালফ্রাই, খাসি এবং গরু রেজালা, মাছ ও ডাল। আরো থাকে বোরহানি, ড্রিংকস, মিষ্টি, দধি এবং সবশেষে পান। বিষয়টি সত্যিকারভাবে ভাবার প্রয়োজন যে একটি অনুষ্ঠানে এত কিছু খাওয়ার প্রয়োজন আছে কী? পোলাও দেয়ার পর ভাতের কি প্রয়োজন আছে? অথবা ভাত দেয়া হলে পোলাও এর কি প্রয়োজন আছে? মুরগির মাংস থাকলে আবার খাসি বা গরুর মাংসের কি প্রয়োজন? খাসির মাংস থাকলে গরুর মাংসেরও প্রয়োজন থাকার কথা নয়। বোরহানি থাকলে অন্য কোনো ড্রিংস এর কি প্রয়োজন আছে? এত কিছু খাওয়ার পর মিষ্টি এবং দধি উভয়ই থাকার প্রয়োজন আছে কী? অথচ একই অনুষ্ঠানে সাদা ভাত অথবা পোলাও এবং এক প্রকার মাংস ও ডাল হলেই খাওয়া পরিপূর্ণ হয়ে যাওয়ার কথা। তেমনি মিষ্টির েত্েরও যে কোনো একটি মিষ্টি হলেই চলে।

এও ঠিক যে, মানুষ তার নিজ গৃহে অথবা পারিবারিক ঘরোয়া পরিবেশে খাবারে অবশ্যই খাদ্য তালিকার স্বাধীনতা থাকবে। কারণ স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে মানুষের খাদ্যের উৎসকে মূলত যে চারটি গ্রম্নপে ভাগ করা হয়েছে খাদ্য তালিকায় অবশ্যই যেন ৪টি গ্রম্নপের সংমিশ্রণ থাকে তার উপদেশ দেয়া হয়েছে। কারণ স্বাস্থ্যের জন্য সুষম খাদ্যের প্রয়োজন আছে। তবে পারিবারিক ঘরোয়া পরিবেশ ব্যতীত অন্যান্য অনুষ্ঠানে আমাদের একেবারে সুষম খাদ্য খাওয়ার বাধ্যবাধকতা না থাকলেও চলে। ওই পর্বগুলোতে যদি আমরা ২-১টি আইটেম কম খাই তাতে স্বাস্থ্যের কোনো তি হবে না। এতে একদিকে যেমন মেহমানদারিতে হরেক রকমের খাদ্য সরবরাহের প্রতিযোগিতা থেকে রেহাই পাওয়া যাবে, তেমনি খাদ্য ও অর্থ অপচয় হতে মুক্ত হওয়া যাবে। এমনি প্রোপটে আমার প্রস্তাবটি হলো বিভিন্ন অনুষ্ঠানে খাদ্য তালিকায় ‘দুই তরকারির বেশি সরবরাহ না করা এবং শুধু ভাত অথবা পোলাও, যে কোনো একটি সরবরাহ করা। এ েত্ের ডাল, ডিম ও নিরামিষকেও তরকারি হিসেবে গণ্য করতে হবে। উদাহরণস্বরূপ একটি অনুষ্ঠানে যদি ভাত অথবা পোলাওর সাথে মাছ অথবা মাংস তরকারি ও ডাল থাকে তাহলে অবশ্যই খাওয়া অসম্পূর্ণ থাকার কথা নয়। অথবা এমন হতে পারে শুধু মাছ ও মাংস তরকারি থাকতে পারে। সে েত্ের ডাল থাকবে না। তেমনি মিষ্টির েত্েরও যে কোনো একটি আইটেম থাকবে। দধি থাকলে শুধু দধিই দেয়া যাবে সে েত্ের অন্য কোনো মিষ্টি দেয়া যাবে না। আবার মিষ্টি থাকলে শুধু মিষ্টি, দধি দেয়া যাবে না। দুই তরকারির প্রস্তাবটি যে যে েত্ের প্রয়োগ করা যায় তা হলো :
ক) সরকারি পর্যায়ে রাজস্ব বাজেট দ্বারা যে কোনো সভা, সেমিনার, ওয়ার্কশপ ইত্যাদিতে আপ্যায়নের ব্যবস্থা করা হলে (বিদেশী অতিথিদের জন্য সরকারি পর্যায়ে আপ্যায়নের ব্যবস্থা করা হলে কিছুটা ছাড় দেয়া যেতে পারে)।
খ) সরকারি কর্মকর্তারা কোনো সরকারি ভ্রমণে অথবা কোনো সভায় গেলে এবং সেখানে আপ্যায়নের ব্যবস্থা থাকলে।
গ) বিয়ের অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানের আগেই নির্দিষ্ট কর্তৃপ থেকে খাদ্য সরবরাহের বিষয়ে অনুমতি সংগ্রহ করতে হবে।
ঘ) অন্যান্য যে কোনো সামাজিক বা পারিবারিক অনুষ্ঠান যা কোনো কমিউনিটি সেন্টার বা অডিটোরিয়ামে আয়োজন করা হলে।
ঙ) বনভোজন, শিা সফর ইত্যাদি (কর্তৃপ থেকে অনুমতি নেয়ার আগে অঙ্গীকারনামা দিতে হবে)।
প্রস্তাব মতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে খাদ্যাভ্যাসের এ পরিবর্তন করা গেলে যে যে উপকার হতে পারে, তা হলো :
ক) জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশে কৃষির ওপর যে বিরূপ প্রভাবের আশঙ্কা করা হচ্ছে এতে খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে। ফলে খাদ্য নিরাপত্তায় যে ঝুঁকি আসবে প্রস্তাবটি বাস্তবায়িত হলে জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত কারণে ‘খাপ খাওয়ানো কৌশল’ হিসেবে প্রয়োগ হবে।
খ) অনুষ্ঠানটি সরকারি অথবা ব্যক্তিগতই হোক খাদ্য তালিকা নিয়ন্ত্রণে থাকলে আর্থিক অপচয় থেকে যেমনি রা পাওয়া যাবে তেমনি খাদ্য অপচয় থেকেও অনেকাংশে রেহাই পাওয়া যাবে।
গ) অনাকাঙিত খাদ্য সঙ্কট মোচনে কিছুটা হলেও ভূমিকা রাখতে পারে।
ঘ) প্রতিযোগিতার হাত থেকে রা পাওয়া যাবে। কারণ নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর লোক সঙ্গতি না থাকা সত্ত্বেও টাকা-পয়সা ধার করে হলেও সামাজিক প্রতিযোগিতার কারণে কোনো অনুষ্ঠানে অনেক আইটেম রাখতে বাধ্য হন।
ঙ) দুই তরকারির সাংস্কৃতিটি সরকারি, বড় বড় অনুষ্ঠান ও পর্বে চালু হলে পরে পারিবারিক ঘরোয়া পর্যায়েও চালু হওয়ার জন্য একটি সহায়ক হিসেবে কাজ করবে। /:)
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে কোন প্রজন্ম সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত? ১৯৭১ থেকে একটি সংক্ষিপ্ত ভাবনা

লিখেছেন মুনতাসির, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৩

বাংলাদেশে দুর্নীতির প্রশ্নটি প্রায়ই ব্যক্তি বা দলের দিকে ছুড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু একটু গভীরে গেলে দেখা যায়, এটি অনেক বেশি প্রজন্মভিত্তিক রাজনৈতিক - অর্থনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে যুক্ত। ১৯৭১ এর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

×