ভূমিকা :
লায়লা ফারজামি। কবি। জন্ম ইরানের তেহরান। জন্মসাল জানা না গেলেও এটুকু জানা যায়, গত শতাব্দির নব্বই দশকে ইরান-ইরাক যুদ্ধের সময় ছিলেন কিশোরী। ঐ সময়েই পরিবারের সাথে আশ্রয় নেন আমেরিকায়। দীর্ঘদিন ধরে কবিতা লিখছেন আর অনুবাদ করছেন কবিতা। আমেরিকায় থাকলেও নিজের মাতৃভাষা ভুলেননি তিনি। ‘সাত সমুদ্র, একফোঁটা শিশির’ আর ‘স্বীকারোক্তির চিঠি’ Ñএরকম শিরোনামে পারস্যভাষায় দুইটি কবিতার বই ছাপা হয়েছে তার। ইংরেজিতেও কবিতার বই করার কথা ভাবছেন তিনি। কারনামেহ, স্যাঙ, বারান, ম্যাক্স, গোহারান প্রভৃতি জনপ্রিয় পারস্য সাহিত্য ম্যাগাজিনে নিয়মিত কবিতা লিখেন লায়লা। শৈশবে দেখা যুদ্ধের বীভৎসতা, নিজ দেশ নিজ জন্মশহর ছেড়ে দূরের দেশে পাড়ি জমানো, সেই দূরদেশ আমেরিকার জীবনগতির সঙ্গে একজন ইরানি-মেয়ে হিসেবে নিজেকে ঠিকঠাক মানিয়ে নিতে না পারার, মেনে নিতে না পারার যন্ত্রণা তার কবিতায় বারবার উঁকিঝুকি করে।
জাতিসংঘের প্রতিনিধি হিসেবে শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করতে গিয়ে উত্তর আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য আর ইউরোপের নানাদেশ ঘুরেছেন কোমল আবেগী এই কবি। এখন যুক্তরাষ্ট্রের দণি ক্যালিফোর্নিয়ায় অবহেলিত ও পরিত্যক্ত শিশু-কিশোরদের মানসিক ও শৈল্পিক চিকিৎসা করে সময় কাটাচ্ছেন।
এখানে তার ‘দ্য বেস্ট হাজবেন্ড আই হেভ এভার হ্যাড’ [আমি ও আমার শ্রেষ্ঠ স্বামী], ‘এ লেটার টু ফাদার’ [বাবার কাছে চিঠি] ও ‘এ সিটি ইন ফায়ার’ [আগুন-শহর] কবিতা তিনটির অনুবাদ ছাপা হলো।
অনুবাদ : রুদ্র আরিফ
খিলক্ষেত, ঢাকা; ডিসেম্বর ২০০৭
কবিতা - ১ : আমি ও আমার শ্রেষ্ঠ স্বামী
বিবাহিত মেয়ে আমি। আমার স্বামী হচ্ছেন_ ‘মুত্যু’! আমার স্বামী, মানে মৃত্যু, কাজে যাবার আগে প্রতিবার নিয়ম করে চুমু খান, আমার ঠোঁটে। তারপর শোকসংবাদ-ভর্তি সুটকেসটা হাতে নেন। আজরাঈল সৃষ্টির শুরু থেকে যে ভয়ানক ব্যস্ত, প্রতিবেশীরা যেন শুনতে না পায় তার হৃস্পন্দন, আর টের না পায় নিজ মৃত্যুবার্তা_ সে ব্যাপারে সচেতন আমার স্বামী আলতো করে বেজিয়ে দরজা বেরিয়ে পড়েন।
মৃত্যু আমাকে হারিয়ে দেন না, এমনকি ঘুষও দেন না কোনো। তিনি তো ভালোই জানেন, আমি কখনো ডিভোর্স দেবো না তাকে। এমনকি দ্বিতীয় স্বামীও বেছে নেবো না কোনো। আমার দাঁত, আমার মাথার খুলি ও প্যাচানো পাগলাটে মগজটা খুব ভালোবাসেন তিনিÑ এ কথা বলেছেন অনেক। হারিয়ে যাওয়া উড়ন্ত ডাইনোসরের মতো আমার কোমল বাহু ও চোয়ালকে আগলে রাখতে চান তার আরসব ভালোবাসার মানুষদের সাথে, তার অনেক যতেœর প্রতœ জাদুঘরে।
মৃত্যু খুবই বিশ্বস্ত স্বামী আমার। আমাকে ফেলে আর কোনো বউ বানাবেন না তিনি। কখনোই না। এতই উদার তিনি, আবদারের প্রতিটা টুকরো এনে মেলে দেন সামনে আমার।
পৃথিবীতে এই বেঁচে থাকা নিয়ে আমি যখন নস্টালজিক খুব, মৃত্যু আমাকে আহাদ করে ঝুলিয়ে দেন দরজার ফলকে; আর ফিসফিসিয়ে বলেন_ ডানা মেলে দাও...
কবিতা - ২ : বাবার কাছে চিঠি
বাবা,
মায়াবী বাতাসের টানে থতোমতো হাত থেকে আমার যারা উড়ে গেছে, সেই বেলুনদের গুডবাই জানাতে এ চিঠি। এলকোহল আর আফিম পোড়ার ছাই রাখার দুর্গন্ধময় থালাটা পড়ে গিয়ে ভূমিকম্পের মতো যে বিস্ফোরণ ঘটেছিল দাদার শিরার গভীরে, আর লাল হয়ে গিয়েছিল মাটিÑ সেই বিস্ফোরণকে এ চিঠি। তোমার ছেড়া জুতাকে প্রত্যাখ্যান করে পায়ের আঙ্গুলে যে বরফকুচি ঢুকে পড়েছিল, এ চিঠিটা তাদের জন্যেও।
এই চিঠি সেই তুষারপাতকে, যে দূরবর্তী নিষ্পাপকে ঐশ্বরিক ছদ্মবেশে তোমার শরীরে জড়িয়ে দিয়েছিল তোমার শৈশবে; আর ক্রমশ টেনে নিয়ে গেছে সৈনিকের ছেড়া ইউনিফর্ম, আকাঙ্খা, আবিষ্কার ও শত্রুহত্যার গলিতে। যুদ্ধের বারান্দায় যে গলে পড়েছে, তবু নেভায়নি তোমার হৃদয়ে জ্বলা লকলকে আগুনÑ এই চিঠি সেই তুষারকে।
জমাট অন্ধকার থেকে কুত্সত সাপগুলোকে বের করে আমায় বীভত্স ভয়ের গুহায় আটকে দিতে উস্কে দেওয়া ভয়ের জালকে এ চিঠি।
তোমায় বেঁধে ফেলতে হুমড়িয়ে পড়া জলপ্রবাহকে আটকে দিতে তোমার দিকে দু'হাত বাড়িয়ে রাখা যে মেয়েটা কোনোদিনই নুইয়ে পড়েনিÑ এই চিঠিটা লিখছে তোমাকে, সেই মেয়ে। বাবা, আমাদের ঘরের সবচেয়ে বয়স্ক কণ্ঠধ্বনির যে উত্তরাধিকারী, তার দাফন দিতে এ চিঠি।
এই চিঠিটা আজকের : যেদিন আমি পেয়েছি মা
কবিতা-৩ : আগুন-শহর
সকালটা ডেকে আনল বুলেটবৃষ্টির গান আর সালফারের উষ্ণ ঘ্রাণÑ গতরাতের। সৈন্যদের রোবট-দেহ হেঁটে যাচ্ছে : যেন একদল প্রশিতি কফিন মার্চ করে যাচ্ছে গোরস্থানের দিকে; আর ঝপছেÑ
ল্যাফ্ট-রাইট
ল্যাফ্ট-রাইট
ল্যাফ্ট-রাইট...
আর আকাশ, তার জলজ বৃত্ত নিয়ে মিলিয়ে যাওয়ার আগে একফোঁটা হলুদ পানি ফেলে দিল শহর-রক্ষা বাঁধে
যুদ্ধের প্রথমদিন, পকেট ক্যালেন্ডার বের করে আমি তার বুক থেকে আমার জন্মতারিখ মুছে দিয়েছি
আলোচিত ব্লগ
সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা
এই ধাঁধার নাম সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা; নিচের লিংকে এটার ভিডিও আছে।
স্বৈরশাসকের বন্দী
এই ধাঁধাটি আমার ভালো লেগেছিল, তাই অনেক আগে আমার একটা পোস্টে এই ধাঁধাটি দিয়েছিলাম। কিন্তু সেই পোস্টে... ...বাকিটুকু পড়ুন
বৃদ্ধাশ্রম।
আগে ভিডিওটি দেখে নিন।
মনে করেন, এক দেশে এক মহিলা ছিলো। একটি সন্তান জন্ম দেবার পর তার স্বামী মারা যায়। পরে সেই মহিলা পরের বাসায় কাজ করে সন্তান কে... ...বাকিটুকু পড়ুন
টের পেলে
টের পেলে
সাইফুল ইসলাম সাঈফ
টের পেলে গুটিয়ে যায় লজ্জাবতী/ পরিপূর্ণ যৌবনে যুবতীর নিখুঁত অনুভূতি। আমার চাওয়া, ইচ্ছে, স্বপ্ন! আমার পছন্দ বুঝদার, সুন্দর হৃদয়ের রূপ! সৌন্দর্য সুন্দর যা চিরন্তন সত্য। কিন্তু সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন
ইসলামের চার খলিফার ধারাবাহিকতা কে নির্ধারণ করেছেন?
সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ২৬ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৬। বল হে সার্বভৈৗম শক্তির (রাজত্বের) মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) প্রদান কর এবং যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব)... ...বাকিটুকু পড়ুন
প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭
ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।
এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন