somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

『 পেনপ্যাল 』 - জাপানি অদ্ভুত গল্প #৩০

০৩ রা এপ্রিল, ২০১৯ রাত ৩:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বেশ ক'বছর আগের কথা। গ্রামের কলেজপড়ুয়া একটি মেয়েকে তার জন্মদিনে বাবা মা একটি নতুন মোবাইল ফোন কিনে দিল। সেই উপহার পেয়ে সে যে কত্ত খুশি হল। এখন ওগুলোকে ফ্লিপ-ফোন বলে, কিন্তু তখনকার সময়ে অত বেশি মানুষের হাতে মোবাইল ফোন এসে পৌঁছেনি। তাই বন্ধুবান্ধবের মাঝে শুধু তারই একমাত্র মোবাইল ফোন ছিল।

একদিন হল কি, মেয়েটার মুঠোফোনে একটা মেসেজ আসলো।
মেসেজটা এরকম: “অনেকদিন ধরেই আমি একজন পেন-ফ্রেন্ড খুঁজছি। সেই আশাতেই আমি অজানা এই নাম্বারে মেসেজ লিখছি। যদি কেউ আমার লেখা পেয়ে থাকো, তুমি আমার বন্ধু হবে কি?” মেয়েটি বন্ধুত্বের এই বিশেষ প্রস্তাবে আনন্দে আত্মহারা হয় আরকি। সে সেদিন থেকেই তার অচেনা পেনপ্যালের সাথে প্রতিদিন মোবাইলে মেসেজ বিনিময় করা শুরু করলো।

পেনপ্যাল জানালো যে সে কলেজের দ্বিতীয়বর্ষের ছাত্র। আর যেহেতু দুজনেরই বয়স প্রায় কাছাকাছি, মেয়েটি ছেলেটার সাথে ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করলো। কিন্তু যদিও ছেলেটা টিভি আর স্কুল লাইফ নিয়ে প্রতিদিন অনেক গল্প করতো, সে কখনোই তার নিজেন ঠিকানা দিত না। ছেলেটা ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে কথা বলার আগ্রহও দেখাতো না।
একদিন মেয়েটি খুব সাহস করেই ছেলেটিকে লিখে বসলো, “আমি তোমার কণ্ঠ শুনতে চাই। আমি তোমার সাথে সরাসরি অনেক কিছু নিয়ে কথা বলতে চাই।” ছেলেটা বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে গেল। তবে তারপর সে রিপ্লাই দিল, “আমিও তোমার সাথে কথা বলতে চাই। আজ রাতে তোমাকে কল দেই? রাত ৮টার সময়?”

মেয়েটা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে লাগলো। কি কি নিয়ে কথা হবে সেসব ভাবতে ভাবতে তার খুশি আর ধরে না।
অতঃপর রাত ৮টায় মেয়েটা ছেলেটার কল রিসিভ করলো। এই প্রথম ফোনালাপ চিরস্মরণীয় করে রাখার জন্য কল রেকর্ডার অন করে দিলো মেয়েটা।
ছেলেটার সাথে কথা বলতে এত্ত মজা লাগছিল! এত মজা করে কথা বলতে পারে ছেলেটা! কথা বলতে বলতে তাদের সময়ের দিকে আর খেয়াল ছিল না। মেয়েটা বলল, “ইশ, দেখতে দেখতে সাড়ে নয়টা বেজে গেল। বেশ রাত হয়ে গেছে। আমার যেতে হবে। আচ্ছা, এরপর কোনো এক ছুটির দিনে ফোনে আড্ডা দিতে হবে। তখন আরো বেশিক্ষণ ধরে কথা বলা যাবে।”
এই বলে মেয়েটা ফোনটা রেখে দিল।

ফোন রেখে দেবার পড়েও মেয়েটার মন থেকে খুশির আমেজ গেল না। সে মনে মনে ভাবতে লাগলো, কতই না মজা হলো আজ। প্রথমবার অপরিচিত জনের সাথে কথা বলার ভয়টা একদম মনে বাসা বাঁধতেই পারেনি, প্রাণ খুলে কথা বলা গেছে।

কিন্তু যা কিছু নিয়ে তারা কথা বলেছে তার কিছুই এখন মনে নেই। পুরো সময় জুড়ে ভালো লাগার অনুভূতিটাই তার স্মৃতি মুহূর্তে ঘোলাটে করে দিয়েছে।
অন্যদিকে, একদিনেই এত প্রফুল্লতা তাকে প্রায় কিছুটা ক্লান্ত করে দিয়েছে। ঘুমের সময় হয়েছে। দশটা বাজতে চলল। কাল কলেজে গিয়ে তার বান্ধবীকে সব কিছু বলতে হবে। নাকি না? বলা ঠিক হবে কি? যদি অন্যরা এসব শুনতে পেয়ে ওকে খারাপ মেয়ে ভেবে বসে?
যাইহোক, এখন ঘুমোতে হবে। শোবার পালা।

“কি করছিস তুই??!!।”
হঠাৎ মায়ের বিকট চিৎকারে জেগে উঠলো সে।

ঘরের খোলা জানালা দিয়ে বাইরে পড়ে যাচ্ছিল মেয়েটি, একটু হলেই।

মাথায় কিছু ধরছে না। কি হচ্ছে...

ঘড়িতে সময় রাত দুটো। মায়ের ঘুম ভেঙে যায় আচমকা শব্দে। এত রাতে মেয়ের ঘর থেকে জোরে শব্দ আসছিল কেন দেখতে মা ঘরের দরজা খুলে উঁকি দিলেন।
মেয়েটি নিজেও বুঝতে পারলো না কেন সে ঘুমের মধ্যে জানলা খুলে, রেলিং টপকে উঠতে গেল। সে তো এর আগে কখনো স্লিপ ওয়াকিং করে নি।

তবে হঠাৎ করে তার গা ছমছম করতে লাগলো। সে তার মোবাইল ফোনটা হাতে নিল। ছেলেটার সাথে বলা কথাগুলো সে আবার শুনবে, রেকর্ড করা আছে।

ক্লিক ক্লিক।

“আজ রাত দুটোর সময় তুমি তোমার খোলা জানলা দিয়ে লাফ দিয়ে নিচে পড়বে। আর সঙ্গে সঙ্গে তোমার মৃত্যু ঘটবে। আজ রাত দুটোর সময় তুমি তোমার খোলা জানলা দিয়ে লাফ দিয়ে পড়ে যাবে। আর সঙ্গে সঙ্গে মারা যাবে। আজ রাত দুটোর সময় তুমি তোমার খোলা জানলা দিয়ে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করবে। রাত দুটোর সময় তুমি তোমার জানলা দিয়ে লাফ দেবে। রাত দুটোয় তুমি জানলা দিয়ে লাফ দেবে। রাত দু-"


(গল্পটি ইন্টারনেটে বহুল প্রচারিত জাপানি গল্প থেকে অনূদিত।)
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জুন, ২০২১ রাত ১১:৩০
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×