একজনরে আক্রান্ত ও মৃত্যু
দেশে করোনা সংক্রমণে গত ২৪ ঘণ্টায় (শনিবার সকাল ৮টা থেকে আজ রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত) ২৪১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময়ে নতুন করে ১০ হাজার ২৯৯ জনের দেহে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। করোনা সংক্রমণে গত শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে আজ শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৬১ জনের মৃত্যু হয়েছে। দেশে করোনায় দৈনিক মৃত্যুর হিসাবে এটা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এর আগে গত বৃহস্পতিবার আগের ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড ২৬৪ জনের মৃত্যু হয়েছিল।
করোনার ডেলটা ধরনের দাপটে দৈনিক সংক্রমণ ও মৃত্যু কয়েক গুণ বেড়েছে। গত জুলাই মাসে দেশে করোনায় মৃত্যু হয়েছে ৬ হাজার ১৮২ জনের। প্রায় দেড় বছর ধরে চলা এই মহামারিতে এর আগে কোনো মাসে এত মৃত্যু দেখেনি বাংলাদেশ। এর আগে বেশি মৃত্যু হয়েছিল গত এপ্রিলে ২ হাজার ৪০৪ জনের।
২৪ ঘণ্টায় সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে ইন্দোনেশিয়ায় ১ হাজার ৬৩৫ জনের। তারপরে মৃত্যু হয়েছে ব্রাজিলে ১ হাজার ১৭৫ জনের। তৃতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যু হয়েছে রাশিয়ায় ৭৯২ জনের। এই তালিকায় ১২ নম্বরে রয়েছে বাংলাদেশ।
এ সময় সবচেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে ৯১ হাজার ৬৪৮ জন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রোগী শনাক্ত হয়েছে ভারতে ৪৪ হাজার ৬৪৩ জন। রোগী শনাক্তের তালিকায় তৃতীয় স্থানে রয়েছে ব্রাজিল, ৪০ হাজার ৭১৬ জন।
দেশের টিকা কেন্দ্রগুলোতে অস্বাস্থ্যকর ভিড় উদ্বেগ কমাচ্ছে না। টেকসই পরিকল্পনা ও টিকার অভাব ভোগাচ্ছে খুব। মৃত্যুর ঝুঁকি কমেনি।
করোনা মোকাবেলায় দেশের চিকিৎসা-ব্যবস্থা কি যথেষ্ট???
দেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ব্যাপক হারে বাড়ছে। এ কারণে আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। চিকিত্সার অভাবে করোনা রোগীরা মারা যাচ্ছে। রেকর্ডের পর রেকর্ড ভাঙছে মৃত্যু। হাসপাতালে সিট নেই। ধারণক্ষমতার তিন থেকে চার গুণ রোগীর ভিড়। অক্সিজেন নেই। দিনের পর দিন অপেক্ষায় থেকেও মিলছে না আইসিইউ। সব মিলিয়ে করোনার চিকিত্সা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। দেশে করোনায় মৃত্যুর হার বৃদ্ধির অন্যতম কারণ চিকিৎসা না পাওয়া। দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে ৩৬ জেলায় আইসিইউ নেই। এসব জেলায় কেউ করোনায় আক্রান্ত হলে চলে আসছে ঢাকায়। আবার যেসব জেলায় আইসিইউ আছে, সেসব জেলায়ও দায়িত্ব না নিয়ে চিকিত্সকরা রোগীকে ঢাকায় পাঠিয়ে দিচ্ছেন। অনেক রোগী আবার নিজের ইচ্ছায় ঢাকায় চলে আসছে।
ঢাকায় মৃত্যু ও শনাক্তের হার বেশি। ১০ মাস আগে প্রধানমন্ত্রী প্রতিটি জেলা সদর হাসপাতালে আইসিইউ ইউনিট স্থাপনের নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু এত দিনেও ৩৬ জেলায় আইসিইউ ইউনিট তৈরি হয়নি। হাসপাতালে রোগী রাখার ঠাঁই নেই। চোখের সামনে রোগী বিনা চিকিত্সায় মারা যাচ্ছে।
দেশের মানুষ যুদ্ধে আছে। যুদ্ধে যা করতে হয়, করোনা যুদ্ধে তাই করতে হবে। করোনা যুদ্ধে জয়ী হতে হলে সবার স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে, মানাতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে কোন কিছু চলা যাবেনা।
বাংলাদেশে ৬৫৪টি সরকারি এবং ৫০৫৫টি বেসরকারি হাসপাতাল রয়েছে। সারা দেশে সরকারি বেসরকারি মিলে আইসিইউ বেড আছে ১২৫০টি। সারা দেশে করোনা রোগীদের জন্য নির্ধারিত শয্যা রয়েছে ১৩ হাজার ৯৬৪টি। এর মধ্যে আইসিইউ ১২৫০টি এবং কিডনি ডায়ালাইসিস ১০৬টি। রাজধানীতে ৭ হাজার ২৫০টি শয্যা রয়েছে। এর মধ্যে আইসিইউ ১৩৭টি, কিডনি ডায়ালাইসিস শয্যা ১০১টি। অথচ আজ নতুন করে ১০ হাজার ২৯৯ জনের দেহে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে এবং মোট শনাক্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ১৩ লাখ ৫৩ হাজার ৬৯৫ জনে।
আশংকার ব্যাপার হল, বিধিনিষেধ শিথিল হওয়ায় আগামী বুধবার(১১ আগস্ট) থেকে ট্রেন চালুর প্রস্তুতি নিয়েছে রেলওয়ে। এবার আর অর্ধেক আসন ফাঁকা রেখে নয়, আসন পূর্ণ করেই সব ট্রেন চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ।
আশাব্যঞ্জক উদ্যোগ
দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ ও অক্সিজেন সহায়তাব্যবস্থা গড়ে তুলতে গত মঙ্গলবার দুটি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি। বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের সহায়তায় প্রকল্প দুটি বাস্তবায়ন করা হবে। সদ্য অনুমোদন পাওয়া প্রকল্পের কাজ শেষ হতে বেশ সময় লাগবে। তবুও প্রশ্ন থেকেই যায়, করোনা মোকাবেলায় এই ধরনের বড় বড় উদ্যোগ আরও আগে নেওয়া উচিত ছিল, তাই নয় কি??? মানুষ চিকিৎসা পেত, মৃত্যুহার কমত।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই আগস্ট, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:২৩