somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফাঁসি বহাল

১৯ শে নভেম্বর, ২০০৯ দুপুর ১২:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ঢাকা, নভেম্বর ১৯ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)-ঐতিহাসিক এক রায়ে স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কারাবন্দি পাঁচ আসামি বজলুল হুদা, মহিউদ্দিন আহমেদ, সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান ও এ কে এম মহিউদ্দিনের আপিল নাকচ করে দিয়েছে আপিল বিভাগ।

হত্যাকারীদের ফাঁসি দেওয়ার হাইকোর্টের রায় বহাল রেখেছে আদালত।

বৃহস্পতিবার বিচারপতি মো. তাফাজ্জাল ইসলাম, বিচারপতি মো. আবদুল আজিজ, বিচারপতি বি কে দাস, বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেন ও বিচারপতি এস কে সিনহার সমন্বয়ে গঠিত আপিল বিভাগের বিশেষ বেঞ্চ সকাল ১১টা ৫৬ মিনিটে ঐতিহাসিক এ মামলায় রায় ঘোষণা করে।

কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে আপিল বিভাগের ১ নং বিচারকক্ষে এ মামলার রায় ঘোষণা করে আপিল বিভাগ। রায় ঘোষণার সময় আদালতে তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। আদালত কক্ষের বাইরেও উৎসুক জনতার ভিড় রয়েছে।

মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অন্য আসামি আব্দুর রশিদ, শরিফুল হক ডালিম, এস এইচ এম বি নূর চৌধুরী, মোসলেমউদ্দিন, রাশেদ চৌধুরী ও আব্দুল মাজেদ পালিয়ে আছেন। তাদের গ্রেপ্তার করতে ইন্টারপোলের পরোয়ানা রয়েছে।

পলাতক অবস্থায় আরেক আসামি আব্দুল আজিজ পাশা জিম্বাবুয়েতে মারা যায়।

ঐতিহাসিক এ রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে সুপ্রিম কোর্টে নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বসানো হয়েছে সিসিটিভি, আর্চওয়ে। র‌্যাব, পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকে বিভিন্ন নিরাপত্তা সংস্থার সদস্যরা আদালতে নিরাপত্তায় নিয়োজিত রয়েছে।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সেনাবাহিনীর একদল সদস্য ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িতে হানা দিয়ে বেশ কয়েকজন আত্মীয়-স¡জনসহ তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করে। নিহত হন বঙ্গবন্ধুর ছোট ছেলে রাসেলসহ মোট ২৮ জন।

বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানা বিদেশে অবস্থান করায় বেঁচে যান।

হত্যাকাণ্ডের পর তখন কাউকেই মামলা করতে দেওয়া হয়নি। হত্যাকাণ্ডের বিচারের পথ রুদ্ধ করার জন্য '৭৫ এর ২৬ সেপ্টেম্বর তৎকালীন মোশতাক সরকার ইন্ডেমনিটি (দায়মুক্তি) অধ্যাদেশ জারি করে।

দীর্ঘদিন পর ১৯৯৬ সালের ১২ নভেম্বর ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ সরকার দায়মুক্তি অধ্যাদেশটি বাতিল করলে ওই হত্যাকাণ্ডের বিচারের পথ উন্মুক্ত হয়।

হত্যাকাণ্ডের ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালের ২ অক্টোবর বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত সহকারী আ ফ ম মুহিতুল ইসলাম ধানমণ্ডি থানায় ২৩ জনকে আসামি করে মামলা করেন।

তদন্ত শেষে পুলিশ ১৯৯৭ সালের ১৫ জানুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। ওই বছরের ১২ মার্চ ঢাকায় দায়রা জজ আদালতে শুরু হয় বিচার। একই বছর ৭ এপ্রিল ওই আদালত ২০ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে। মারা যাওয়ায় আসামির তালিকা থেকে বাদ পড়েন খন্দকার মোশতাক আহমেদ, মাহবুবুল আলম চাষী ও মোস্তফা আহমেদ।

১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর ঢাকার দায়রা জজ গোলাম রসুল ২০ আসামির ১৫ জনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে রায় দেন। এর আগেই আব্দুর রশিদের স্ত্রী জোবায়দা রশিদ হাইকোর্টের আদেশে মামলা থেকে অব্যাহতি পান।

এরপর ২০০০ সালের ১৪ ডিসেম্বর হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ এ মামলায় বিভক্ত রায় দেয়। ওই বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. রুহুল আমিন ১০ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন। অন্য বিচারপতি এ বিএম খায়রুল হক ১৫ আসামির ফাঁসির আদেশই বহাল রাখেন।

২০০১ সালের ৩০ এপ্রিল হাইকোর্টের তৃতীয় বিচারপতি মোহাম্মদ ফজলুল করিম তার রায়ে ১২ আসামির মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রেখে তিন আসামি মো. কিসমত হাসেম, আহমেদ শরিফুল হোসেন ও নাজমুল হোসেন আনসারকে খালাস দেন।

মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকা কারাবন্দি চার আসামি বজলুল হুদা, সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান ও মহিউদ্দিন আহমেদ একই বছর আপিল বিভাগে আপিল দায়ের করে।

২০০৭ সালের ১৮ জুন দেশে ফেরত আনার পর ওই বছরের ২৪ জুন ফাঁসির অপর আসামি এ কে এম মহিউদ্দিন আপিলের আবেদন করে।

২০০৭ সালের ২৩ সেপেম্বর আপিল বিভাগ শুনানির জন্য আবেদন গ্রহণ (লিভ মঞ্জুর) করে।

বিগত বিএনপি জামায়াত জোট সরকারের সময় আপিল বিভাগে বিচারপতি সঙ্কটের কারণে দীর্ঘদিন আপিল শুনানি ঝুলে ছিল।

এ বছরের মাঝামাঝিতে চারজন বিচারপতি নিয়োগের পর আপিল শুনানির অচলাবস্থার নিরসন হয়।

গত ৪ অক্টোবর বেঞ্চ গঠনের পরদিন এ মামলার আপিলের শুনানি শুরু হয়। মামলার পেপার বুক উপস্থাপন শেষ হলে ১৫ অক্টোবর থেকে শুরু হয় যুক্তিতর্ক। মোট ২৯ কার্যদিবসের এই শুনানি শেষ হয় ১২ নভেম্বর।

আপিল শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেলকে সহায়তা করতে সরকার ১৮ জন আইনজীবী নিয়োগ দেয়। এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান আইনজীবীর দায়িত্ব পালন করছেন আনিসুল হক।

হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল না করায় পলাতকদের মৃত্যুদণ্ড বহাল রয়েছে। নিয়মিত আপিলের সুযোগ না থাকায় গ্রেপ্তারের পরই তাদের ফাঁসি কার্যকর করা যাবে। তবে আইনি প্রক্রিয়ায় বিলম্বে আপিলের সীমিত সুযোগ থাকছে তাদের। যদিও এধরনের সুযোগ পাওয়ার নজির বিরল।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/এটি/আরএ/এমআই/জিএনএ/১১৫৬ ঘ.
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জেনারেল রাও ফরমান আলী ছিল ইন্ডিয়ান 'র'-এর এজেন্ট

লিখেছেন ধূসর সন্ধ্যা, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:২২



জেনারেল রাও ফরমান আলী ছিল ইন্ডিয়ান 'র'-এর একজন এজেন্ট। এই তথ্য কেউ জানতো না। তার ফ্যামিলিও জানতো না। ১৯৪১ সালে বর্ডার ক্রস করে সে ঢুকেছিল পাকিস্তান। তারপর আস্তে আস্তে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৫

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

বন্ডাই সৈকতের হামলাস্থল। ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সৈকত এলাকায় ইহুদিদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমবেত মানুষের ওপর দুই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অতর্কিতে গুলি চালিয়েছে। এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমাণ নন বলা কুফুরী

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪



সূরাঃ ২ বাকারা, ২৫৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৫৫। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।তিনি চিরঞ্জীব চির বিদ্যমাণ।তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না।আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×