somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার কোনো দোষ নাই, শুধু যুক্তিভিত্তিক মন্তব্য চাই? গালাগাল করলে বা অশ্লীল কথা বললেই ব্লকড--হে হে!!

২২ শে জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১২:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

”বাচ্চু রাজাকারের ফাঁসির” রায় হয়েছে, এমন একটা কাগজ পাওয়া গেছে। খুব খুশির কথা। মিষ্টি খাওয়ার রায়- তাই সবাই দই-মিষ্টি খান। কিন্তু জাতি কি পেলো? সবাইকে রায়টি পড়ে দেখার অনুরোধ করছি। আমি দেখতে পেলামঃ

১. আগেই বলে রাখি, মওলানা আবুল কালাম আযাদ আমার ভাই বা আঙ্কেল লাগে না, বা দলের লোকও নন। সে যদি খুন, ধর্ষন, অগ্নিসংযোগের মত ঘটনা ঘটিয়ে থাকে, তবে একবার নয়, হাজার বার ফাঁসি হোক। কোনো অসুবিধা নাই। তবে সাক্ষ্যপ্রমান নির্ভর বিচারে প্রমানের পরেই বিচারের রায় হতে পারে, তার আগে নয়।

২. আনীত দশটি চার্জের মধ্যে ১টি বাতিল, চার্জ নম্বর ৩, ৪, ৬ নম্বরের জন্য আবুল কালাম আযাদকে ফাঁসি দেয়া হয়েছে এবং ১,৫, ৮ এর জন্য আলাদা করে কারাদণ্ড দেয়া হয়নি। তার মানে, ২ নম্বর চার্জের ভিকটিম আবু ইউসুফ পাখি, ১ নম্বরের রনজিৎ নাথ, ৫ নম্বরের গণধর্ষিত দুই নারী, ৮ নম্বরের নামবিহিন নির্যাতিত এক সংখ্যালঘু তরুণী বিচার পেলেন না। “বাচ্চু নামক একজনকে ফাঁসি” দিতে হবে- এটাই মূল কথা। সেটা ঘোষণা করা হয়েছে।

৩. পরিস্কার দেখা যাচ্ছে, মামলার রায়টি তাত্বিক রায়, সাক্ষ্যপ্রমান নির্ভর নয়। তাত্ত্বিক রায় মানে কারো গবেষণা কর্ম। ওবেয় সাইটের www রেফারেন্সও আছে। লক্ষনীয়, মামলার সংক্ষিপ্ত আদেশের X অংশে 15 15 দফায় বলা হয়েছে “The evidence produced by the prosecution in support of this case is mainly Testimonial.” তার মানে টেষ্টিমোনিয়াল ভিত্তিক রায়! পত্রিকায়্ এসেছে, কোনো চাক্ষুস সাক্ষী বা ভুক্তভোগীর সাক্ষ্য এবং আসামীপক্ষ্যের ছাফাই সাক্ষী ছাড়াই এ মামলার রায় দেয়া হয়েছে। প্রসিকিউশন যে কাগজপত্র সরবরাহ করেছে, তার ভিত্তিতেই মামলার সিদ্ধান্তে এসেছেন বিচারকরা। অবশ্য বাংলাদেশে এরকম একটি “বিচার বিচার খেলা” দেখা গিয়েছিলো ১৯৯২ সালের ২৬ মার্চ যখন জাহানার ইমামের আয়োজনে বর্তমান আইনমন্ত্রী শফিক ছিলো তার বিচারক, আর স্কাইপ কেলেঙ্কারীতে সদ্য বিদায়ী বিচারক নিজামুল হক নাসিম ছিলেন একজন প্রসিকিউটর। এরাই আবার ঘুরে ফিরে ঐ ব্যক্তিরাই সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে হাইকোর্টের পাশের বিল্ডিংয়ে বসে আজকের হুকুম জারী করলো।

৪. মামলার রায়ে কোথাও “War of Independence” বা স্বাধীনতার যুদ্ধ কথাটি নেই। আছে কেবল battle and struggle. কেউ কেউ প্রচারণা করে, ১৯৭১ সালে কোনো যুদ্ধ হয় নাই, কেবল “গন্ডগোল” হয়েছিলো, ওটাই কোর্ট জাস্টিফাই করলো কি না?

৫. এ রায়টি দিলো কারা? আদেশে বলা হয়েছে, Justice Obaidul Hasan, Justice Md Mojibur Rahman Mia, Judge Md Shahinur Islam (ঠাস কইরা জিয়াউদ্দিনের পায়ে পর সেই ব্যক্তি) রায় দিয়েছেন। অথচ হাইকোর্টে Justice নামক পদের কথা সংবিধানে লেখা নাই, কেবল বিচারক বা Judge আছে। রায়ে বলা হয়েছে ২ জন জাস্টিস আর একজন জাজ রায় দিয়েছে। সে হিসাবে শেষের জনের পদবী ঠিক আছে, প্রথম দু’জন কি ভুয়া পদবীর লোক? হাইকোর্টের বিচারকের পদ পদবীর জন্য দেখুন সংবিধানের ৯৫ অনুচ্ছেদ- “অন্যান্য বিচারক কেবল হাইকোর্ট বিভাগে আসন গ্রহণ করিবেন,” বিচারপতি নয়!

৬. বাচ্চু রাজাকারের নিয়োগপত্র কই? মুখে বললেই তো হবে না যে, বাচ্চু নামক কোনো ব্যক্তি রাজাকার ছিলো। সাজা দিতে হলে প্রমান লাগবে।

৭. যাই হোক, খুঁজলে আরো অনেক গোঁজামিল পাওয়া যাবে। যেখানে “আমরা আর মামুরা” মিলে কোর্ট, সেখানে এমন হওয়াই স্বাভাবিক। তবে প্রশ্নটা নৈতিক ও লিগ্যাল: এ রায়ে বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থার কি উপকার হলো, নাকি ক্ষতি? ফরিয়াদীর লেখা কাগজ যদি বিচারের দলিল হয়, আর তার উপর ভিত্তি করেই রায় দেয়া যায়, তবে ভবিষ্যতে এ ফর্মেটে অনেকের খবর আছে। যে কাউকে ফাঁসিতে লটকে দেয়া সম্ভব। বিচারক নিজামুল হক নাসিম একটা ফর্মেটের জন্য জিয়াউদ্দিনের কাছে স্কাইপে ঘুরে ঘুরে অবশেষে ধরা খেলেন। এটা যদি সেই ফর্মেট হয়, তবে বলব, বিচারকদের ও জিয়াউদ্দিনকে একটা অনারারি ডিগ্রি দিয়ে দিন। এটি বেশ ভালো গবেষণাকর্ম। আর ফরমায়েশী রায় দিয়ে জামায়াত নেতাদের ফাঁসি দেয়া যদি এ ফর্মেটের উদ্দেশ্য হয়, তবে কিন্তু খবর আছে- দেশে মারাত্মক অশান্তি হবে।

৮. “বাচ্চু রাজাকার” নামে চিহ্নিত মাওলানা আবুল কালাম আযাদ, সঠিক ব্যক্তি কিনা আমরা জানি না। সেটা প্রমান করা হয়নি। তবে আবুল কালাম আযাদ দীর্ঘদিন ধরে পুলিশি পাহারায় উত্তরার নিজ বাড়িতে ছিলো। নাসিমের কোর্ট যখন হুকুম দিলো, গত বছর ৩ এপ্রিল আদালতে হাজির করার, তখন পুলিশ বাহিনী এক গল্প হাজির করে- আযাদ পুলিশকে ফাঁকি দিয়ে পালিয়েছে। এরপরে বীরবিক্রমে তদন্তে নামে র্যাাব, এবং বাচ্চু রাজাকারের ২ ছেলে, ১ শ্যালক ও হিলি চাপিলা হোটেলের কর্মকর্তাসহ ৪ জনকে আটক করে। পত্রিকায় প্রচার করা হয়, বাচ্চু রাজাকার হিলি সীমান্ত দিয়ে পালিয়েছে ভারতে, সেখান থেকে পাকিস্তানে। এ গল্প কি বিশ্বাসযোগ্য? যেখানে আবুল আলাম আযাদকে “বাচ্চু রাজাকার” হিসাবে ঘোষণা করে হাউজ এরেষ্ট করে রাখা হয়েছে, আর যুদ্ধাপরাধের বিচারের পুরো পরিকল্পনাটি ইন্ডিয়া থেকে আসা, সেখানে ভারতের কাছে আসামীদের তালিকা ও ছবি থাকা খুবই স্বাভাবিক। অথচ “বাচ্চু রাজাকার” ভারত দিয়ে পালিযে গেলো পাকিস্তানে? বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান তিন দেশের পুলিশ ও গোয়েন্দাদের চোখে ধুলো দিয়ে বাচ্চু রাজাকার পালিয়ে গেলো পাকিস্তানে!! এত বড় ক্ষমতা বাচ্চুর? বিস্ময়কর রোমঞ্চকর গল্প বৈ কি!

৯. এর বাইরেও পাবলিকের কাছে একটা রটনা আছে। আর তা হলো, বর্তমান সরকারের প্রবাসী মন্ত্রী খন্দকার মোশারফ হোসেন (ইনি আবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিয়াই) যিনি নিজেই “ফরিদপুরের রাজাকার” হিসাবে পরিচিত, মাওলানা আবুল কালাম আযাদ তার কেয়ারঅফে রেখেছিলো ২০১১ থেকে নিঁখোজ যাওয়া অবধি। শেখ হাসিনা নিজেই স্বীকার করেছেন, তার বিয়াই মোশারফ রাজাকার হলেও যুদ্ধাপরাধী ছিলেন না। আমরা অবশ্য বলছি না, তিনি যুদ্ধাপরাধী, কারন প্রধানমন্ত্রী যাকে বলবেন সে–ই যুদ্ধাপরাধী! আর সেটাই হচ্ছে! তবুও লোকজন বলছে, আবুল কালাম আযাদকে সরকারের বাহিনী আগেই হত্যা করেছে, অথবা হাসিনার বিয়াই “নিজের অপরাধ ঢাকার জন্য” তাকে দেশের বাইরে পার করে দিয়েছেন। কোনটা যে ঠিক, তা কেবল সৃষ্টিকর্তাই জানেন।

১০. তবে, এই রায়ে আবুল কালাম আযাদের (যদি জীবিত থাকে) উপকারই হলো- অন্তত ইয়োরোপ বা আম্রিকায় “রাজনৈতিক আশ্রয় লাভ” কনফার্ম হলো। বিবিসি, রয়টার এএফপির মত প্রভাশালী মিডিয়া সহ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম এ রায়ের খবর প্রকাশ করেছে এভাবে, ”বিতর্কিত ট্রাইব্যুনাল একজন জনপ্রিয় ইসলামী টিভি উপস্থাপককে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে।” জনগন যা বোঝার বুঝে নিয়েছে। তবে, অত্র রায়ে বাংলাদেশের বিচার বিভাগ যে ধংস হলো, তা পরিস্কার। এই কারণে যে, উপযুক্ত সাক্ষীপ্রমান ছাড়া কেবল থিমের উপর ভিত্তি করে ক্যাপিটেল পানিশমেন্ট দেয়ার সিষ্টেম চালু করা হলো। এ বড়ই বিপজ্জনক খেলা। ভবিষ্যতে হাসিনা সহ বহুজনই এ গ্যাড়াকলে পরতে পারে!! সুত্র: কপি পেষ্ট।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১২:২৯
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আইনের ফাঁকফোকর-০৩

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪২

যেকোনো চাকরির নিয়োগের পরীক্ষা চলছে। সেটা পাবলিক সার্ভিস কমিশন, বিভিন্ন সংস্থা, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক বা উপজেলা পর্যায়ের কোনো কার্যালয়ে হতে পারে। এই নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস হতে পারে। একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সিকান্দার রাজার চেয়ে একজন পতিতাও ভালো।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৭

সিকান্দার রাজা কোকের বোতল সামনে থেকে সরিয়ে রাতারাতি হিরো বনে গেছেন! কিন্তু তাকে যারা হিরো বানিয়েছেন, তারা কেউ দেখছেন না তিনি কত বড় নেমকহারামি করেছেন। তারা নিজেদেরকে ধার্মিক বলে দাবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×