somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কুপ্রস্তাব

১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ৮:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

"উনি আমার মেয়েকে সরাসরি কুপ্রস্তাব দিয়েছেন।" ভরা মজলিশে মহিলা কথাটা এত আত্মবিশ্বাসের সাথে বললেন, কেউ অবিশ্বাস করতে পারলো না। যার বিরুদ্ধে অভিযোগ, সেই মিহিরও বিশ্বাস করে ফেললো। কোন মা কি তার মেয়েকে নিয়ে এমন মিথ্যাচার করতে পারে? তাছাড়া মিহিরের সাথে তাদের ব্যক্তিগত বিরোধও তো থাকার কথা না। মিহিরকে কেন ফাঁসাবে?

সবাই একে অপরের মুখ চাওয়া-চাওয়ি করছে। মিহির এমন কাজ করতে পারে সবার ধারণার বাইরে ছিল। এই কয়েকমাসে তাকে সবাই ভালোভাবেই চেনে। নর-নারী সবার সাথেই তার সখ্য। তার এমন চারিত্রিক ত্রুটি কারও চোখে পড়ে নি।

কয়েকমিনিটের জন্য পুরো ঘর চুপচাপ হয়ে গেল। কারও মুখে কোন কথা নেই। দু'য়েকজন কথা বলতে গিয়েও থেমে যাচ্ছে, মুখ ফুটে কেউ কিছু বলতে পারছে না। দমবন্ধ পরিবেশ।
মিহিরই নিরবতা ভাঙলো। মহিলাকে জিজ্ঞেস করলো, "আপনি কি সজ্ঞানে এ কথা বলছেন?"
উনার মুখায়বয়ব বদলে গেল মনে হলো। কিছু বললেন না। মিহির বললো, "আপনার মেয়ের সামনে এ কথা বলতে পারবেন? আমি কিন্তু আপনার সন্তানের বয়সীই। বুঝেশুনে বলুন।"
এখনও মহিলার মুখে কোন রা নেই।


"ক্লাসে দু'জনকে পড়া জিজ্ঞেস করেছিলাম, পারে নি। আপনার মেয়ে বলতে গিয়েও বলে নি। সে পারত। কীভাবে বললাম? ও যখন বলছিলো, বাকিরা ইশারায় নিষেধ করছিলো।
ও তো মোটামুটি ভালো ছাত্রী। আমি যে প্রশ্নটা করেছিলাম, ওটা ওর না পারার কোন কারণ নেই।"

একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো মিহির। তারপর বলতে লাগলো, "আমি ওর সাথে এ ব্যাপারে একা কথা বলতে চেয়েছিলাম, ও আপনাকে এ কথা বলেছিলো। আপনি বলেছিলেন, শিক্ষকের সাথে একা কোন কথা নেই। যাহোক, আমি কথা বলেছিলাম। কী কথা বলেছিলাম? বলেছিলাম, বন্ধুত্বের সময় বন্ধুত্ব আর পড়ালেখর সময় পড়ালেখা। একটার জন্য আরেকটা ত্যাগ করা সমীচীন নয়। আমার মনে হয়, ওরা তোমার ভালো চায় না। সতর্ক থেকো।
আমি তাকে কোন কুপ্রস্তাব দেই নি।

সেদিন আপনাকে ডেকে নিয়ে কথা বললাম। ওটা ভুল বোঝাবুঝি এড়ানোর একটা প্রচেষ্টা ছিল। আপনার মেয়েকে কোনদিন ক্ষমা করবো না বললাম। কেন করবো না, সেটা জানতেও চান নি।
ও ওর বান্ধবীদের সাথে সমস্বরে বলেছিলো, "আমাদের ব্যাপারে নাক গলাবেন না।"

শিক্ষক কি শিক্ষার্থীদের ভালো-মন্দ বলতে পারেন না? আপনার মেয়েকে তো সহজ-সরল মনে হয়, আর সহজ-সরলদের প্রতি সবারই একটা সহজাত টান থাকে; এটা কি দোষের?"

"উনি বলেছেন, আমার মেয়ে কোনদিনও কিছু করতে পারবে না।" সহকারী প্রধান শিক্ষকের দিকে তাকিয়ে মহিলা কথাটা বললেন। উনি মনে হয় বিশ্বাসও করলেন। করবেনই না কেন- মহিলা স্কুল প্রতিষ্ঠার সময় বড় অঙ্কের অর্থ সহায়তা দিয়েছিলেন। এখনও সহায়তা দেন। উনি কি মিথ্যে বলতে পারেন?

"আমি আসলে ৮ম শ্রেণিতে মেজাজ হারিয়ে ফেলেছিলাম। ৯ম শ্রেণিতে গিয়ে আমি ওদের সম্পর্কেই বলেছিলাম। এত আহ্লাদী ছেলেমেয়ে, একেবারে মাথায় ওঠে বসে আছে। এসব আর কী। আপনার মেয়েকে অভিশাপ দেবো কেন?"
"আপনি বলেছেন, ওকে কখনো ক্ষমা করবেন না।"
"ও কি ক্ষমা চেয়েছে? তাছাড়া ও যে বেয়াদবিটা করেছে; এর কি ক্ষমা আছে? ও তো ক্ষমা চায়ও নি। আমি কি এমনিই সব ভুলে যাবো?"
"ভুল করবে, আপনারাই তা শুধরে দেবেন।"
"ও বাচ্চা না। অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমা চাইলে হয়তো করতাম। ওর মধ্যে ন্যূনতম অনুশোচনা নেই।"

একটু দম নিয়ে মিহির বললো, "প্রতিটা শিক্ষার্থীকে আপনজন হিসেবেই দেখি। কে ক্লাস করছে না, পরীক্ষা দিচ্ছে না, বেতনাদি নিয়ে কারও কোন সমস্যা হচ্ছে কী না দেখি অথচ..."

"তা বেতন নেন কেন? সব দিয়ে দিলেই তো পারেন।" মহিলা তাচ্ছিল্যের স্বরে বললেন।
"তাই দিতাম। কিন্তু নিজেরও তো চলতে হবে।"


এ মহিলা যে দজ্জাল টাইপ, ছোটন নামের জনৈক স্যার আগেই বলেছিলেন। উনি এই মহিলার সাথে কথা বলতেই নিষেধ করেছিলেন। মিহির শোনে নি। সে তো তার মেয়েকে মন্দ কথা বলে নি। তাহলে উনি কেন তার সম্পর্কে বাজে ধারণা পোষণ করবেন?

তাছাড়া কোন একদিন ঐ মহিলা সামান্যতম ভদ্রতাও ভুলে তার সম্পর্কে অহেতুক অযাচিত কথা বলেছিলেন। ক্লাসে পড়া না পারায় কয়েকজনকে আটকে রাখা হয়েছিল। এ আটকে রাখা নিয়েই বিভ্রান্তি। প্রধান শিক্ষকের উপদেশ মোতাবেক যে এ কাজটি হয়েছিলো, এটা উনি বুঝতেই চাচ্ছিলেন না।

শিক্ষক অফিসকক্ষে আসার সুযোগে ছেলেরা পালিয়েছিলো। মহিলার আপত্তি হলো, শুধু মেয়েদেরই আটকে রাখা হলো কেন? উনি বুঝতে চাচ্ছিলেন না, পালিয়ে যাওয়ায় ছেলেদের পরেরদিন কঠিন শাস্তি দেওয়া হয়েছিলো।
মহিলা যে একটা ভুল ধারণা নিয়ে বসে আছেন, সেটা জানানো জরুরি ছিল।

এখন মিহিরের মনে হচ্ছে, বিপত্তি আরও বাড়লো। ঐ দিন উনার সাথে কথা না বললেই ভালো হতো। উনার সাথে কথা বলে তো পাত্তাই পাওয়া যায় নি। মিহিরকে তো কথা বলারই সুযোগ দেন নি। মনে মনে সাপের মতো ফুঁসছিলেন। তারই প্রতিক্রিয়ায় আজকের ঘটনা। এ যে গোদের ওপর বিষফোঁড়া।


দুপুরে যখন এলেন, বোঝাই যাচ্ছিলো আজকে মিহিরকে হেস্তনেস্ত করেই ছাড়বেন। হাতে ছিল প্রগতিপত্র। কী এক অদ্ভুত কারণে সব নাম্বারে গোলমাল। কাকতালীয় ব্যাপার বৈকি। অভাগা যেদিকে চায় সাগর শুকিয়ে যায়।

উনি ধরেই নিয়েছিলেন মিহির ইচ্ছে করেই এমনটা করেছে। উনাকে বলা হলো, কাজটা অন্য এক ম্যাডাম করেছেন, ভুলটা আসলে উনারই (উনি ইচ্ছে করেই করেছেন কী না কে জানে। জগৎ-সংসারে একে অপরকে হেয় করে কেউ কেউ তো সুখ পায়। মিহিরের বিশ্বাস করতে একটু কষ্ট হলো। উনি পারবেনই না যদি কেন নিলেন?)। সব শুধরে দেওয়া হবে।
সবারই প্রগতিপত্রে ভুল। মিহির যদি ইছে করেই করত, সবাইকেই নিশ্চয় ভুল নাম্বার দিত না?

মহিলাকে কোনমতে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হলো। প্রধান শিক্ষক রগচটা স্বভাবের। উনি চলে এলে এখানে লঙ্কাকাণ্ড বেঁধে যাবে। কিন্তু সবার মাঝে অবিশ্বাসের যে দেয়াল দাঁনা বেঁধে উঠল, তা কি কখনও ভাঙা যাবে?

৩ মাঘ ১৪২৫ বঙ্গাব্দ
গাজীপুর।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ৮:২০
১২টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×