আমি যাব বঙ্গে, (আমার) কপাল যাবে সঙ্গে অঙ্গে গেরুয়া বসন যতই পরি না
ঢাকায় এসে চাকরিতে জয়েনের পর একমাস অফিসের ডাইনিংয়ে ছিলাম। এরপর মালিবাগে সরকারি কোয়ার্টারে ওঠি। খরচ বেশি হলেও আর সব সুবিধা আছে। তখনও লিফট চালু হয়নি, তাই ভবনে উঠানামায় একটু সমস্যা হতো। যাহোক, মানিয়ে নিলাম। কোথাও না কোথাও থাকতে তো হবে।
যার সাথে সাবলেট উঠলাম, আনোয়ার; ওনি একদিন বললেন, ওনার সাথে ডাইনিংয়ে থাকতে।
এত টাকা ভাড়া দিয়ে থাকি, আমি ডাইনিংয়ে থাকব কেন? আপত্তি জানালাম আমি। ওনি বিমর্ষ হলেন। দু’মাস পর ওনি জানালেন, অন্য একটা বাসা ভাড়া নিয়েছেন। ওখানে থাকতে হবে।
কী আর করা। আমি যাব বঙ্গে কপাল যাবে সঙ্গে অঙ্গে গেরুয়া বসন যতই পরি না।
ফ্যামিলি বাসা। এক রুমে উঠলাম তিন জন। আমি, রোকন আর আনোয়ার। সমস্যা হলো, কিচেন ব্যবহার করতে গেলে গৃহকর্তী বিরক্ত হন। আমার অবশ্য সমস্যা ছিল না। অফিসের নিচে খাওয়ার ব্যবস্থা করেছিলাম। কিন্তু আমার রুমমেট রোকনের সমস্যা। আনোয়ার মেসে খেত।
কয়েকদিন পর জানলাম আমাদের নাকি কিচেন ব্যবহারের কথা ছিল না। শুধু থাকা। আমি আর রোকন আনোয়ারকে দিতাম ছয় হাজার। সে বলেছিল, ভাড়া নয় হাজার। হঠাৎ শুনি সে ভাড়া সাত হাজার দিত। মানে এক হাজার টাকায় সে থাকত।
একদিন খুব কথা শোনালাম আনোয়ারকে। সে যদি কম টাকায়ই থাকবে, বলে নিতে তো পারত। আমরা তো রাগারাগি করতাম না। তার মাধ্যমেই তো এখানে উঠেছি। এ রকম প্রতারণারই কী দরকার ছিল?
সরকারি কী একটা পদে চাকরি করত সে। টাকার সমস্যা নেই, কিন্তু পরত ছেঁড়া লুঙ্গি। কোনোদিন এক পয়সা খরচ করতে দেখিনি, আবার আমরা কিছু খাবারদাবার আনলে সে খেত না। যদি আবার আমাদের দিতে হয়! শুধু ভাবতাম, এই লোক টাকা দিয়ে কী করবে!
২
কোয়ার্টার ছেড়ে এক মেসে ওঠেছি। চাকরি নেই তখন। একটা কোচিংয়ে মাসে সাত হাজার টাকা পাই। তা দিয়ে কোনোমতে চলি।
মেসে উঠে তো পড়লাম মহাবিপদে। যেহেতু উপার্জন কম, তাই কম পয়সার মেসে ওঠেছিলাম। এখন দেখি ছাড়পোকার জ্বালায় থাকতে পারি না। এমনিতে নেই গায়ে রক্ত। এরমধ্যে ছাড়পোকা কামড়ে শরীর চাক চাক করে ফেলল। কিন্তু কিছু করার নেই। অন্য জায়গায় যে যাব, সে সামর্থ্য নেই। বাধ্য হয়ে এখানেই থাকতে হলো।
খাবারের মান এত জঘন্য যে, এক প্লেট ভাত খাওয়াও অসম্ভব। বেশি করতাম। একসময় এখানে খাওয়া বাদ দেওয়ার চিন্তা করি। কিন্তু তবুও বুয়ার বিল দিতে হবে। অন্যান্য বিলও দিতে হবে।
শুধু শুধু টাকা দেব? তাই একবেলা কোনোমতে খেতে লাগলাম। অন্য বেলা টিউশনিতে খেতাম। এরমধ্যে মেস ম্যানেজার এক্সট্রা চার্জ চেয়ে বসল। হাতে টাকা নেই। ম্যানেজ করে টাকাটা দিতেই হলো।
৩
টিউশনি আর কোচিং করে চলা কঠিন। অন্য কিছুর চেষ্টা করছিলাম। সিভি দেওয়া ছিল নানান জায়গায়। হঠাৎ এক জায়গা থেকে ডাক এলো। অফিসে যাই। পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করি। এখানে ওখানে পাঠায়, কিন্তু আসল কাজ শুরু হয় না। শুধু কালক্ষেপণ।
এরমধ্যে এই চাকরির কারণে কোচিংও বাদ দিয়েছি। কারণ, কোচিংয়ের শিডিউলের সাথে চাকরির শিডিউলের সমস্যা হয়। মুগদার একটা টিউশনিও বাদ দিয়েছিলাম কম পয়সা দেয় বলে।
বাদ তো দিলাম। কিন্তু যার অধীনে কাজ করছি, তার মতিগতি ভালো ঠেকছে না। ভাবলাম মাসটা যাক। মাস গেল বটে। বেতন চাইলাম। কিন্তু তালবাহানা করে। আজ কাল করতে করতে দশ-বারো বার ঘোরাল। তাও এক পয়সাও দিল না। এরমধ্যে দুই মাস কেটে গেছে। কীভাবে চলি তাকে অবগত করি। কিন্তু সে পাত্তা দেয় না।
অন্য একটা চাকরির সুযোগ আসে। একটু সময় নিই, যাতে আগের চাকরির টাকাটা পাই। কিন্তু সবই বৃথা যায়।
নতুন চাকরির ইন্টারভিউতে গেলে জিগ্যেস করেছিল, কার অধীনে কাজ করেছি। নাম বললাম তালাত ইকবাল। ক্যাবল টিভির বিজনেস করে। সিইও চিনতে পারলেন। বললেন, “খুব ভালো লোকের অধীনে কাজ করছেন। আপনার ভবিষ্যৎ উজ্জল।”
আমার আশা ছিল দুই মাস যেহেতু ছিলাম, কিছু না কিছু টাকা তো পাবই। এবার সে আশাও শেষ হয়ে গেল। বুঝতে পারি বুড়ো বাটপারের পাল্লায় পড়েছি।
ছবিঃ নেট
পদে পদে প্রতারণা