somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমি যাব বঙ্গে, (আমার) কপাল যাবে সঙ্গে অঙ্গে গেরুয়া বসন যতই পরি না

২০ শে ডিসেম্বর, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আমি যাব বঙ্গে, (আমার) কপাল যাবে সঙ্গে অঙ্গে গেরুয়া বসন যতই পরি না
ঢাকায় এসে চাকরিতে জয়েনের পর একমাস অফিসের ডাইনিংয়ে ছিলাম। এরপর মালিবাগে সরকারি কোয়ার্টারে ওঠি। খরচ বেশি হলেও আর সব সুবিধা আছে। তখনও লিফট চালু হয়নি, তাই ভবনে উঠানামায় একটু সমস্যা হতো। যাহোক, মানিয়ে নিলাম। কোথাও না কোথাও থাকতে তো হবে।

যার সাথে সাবলেট উঠলাম, আনোয়ার; ওনি একদিন বললেন, ওনার সাথে ডাইনিংয়ে থাকতে।

এত টাকা ভাড়া দিয়ে থাকি, আমি ডাইনিংয়ে থাকব কেন? আপত্তি জানালাম আমি। ওনি বিমর্ষ হলেন। দু’মাস পর ওনি জানালেন, অন্য একটা বাসা ভাড়া নিয়েছেন। ওখানে থাকতে হবে।

কী আর করা। আমি যাব বঙ্গে কপাল যাবে সঙ্গে অঙ্গে গেরুয়া বসন যতই পরি না।

ফ্যামিলি বাসা। এক রুমে উঠলাম তিন জন। আমি, রোকন আর আনোয়ার। সমস্যা হলো, কিচেন ব্যবহার করতে গেলে গৃহকর্তী বিরক্ত হন। আমার অবশ্য সমস্যা ছিল না। অফিসের নিচে খাওয়ার ব্যবস্থা করেছিলাম। কিন্তু আমার রুমমেট রোকনের সমস্যা। আনোয়ার মেসে খেত।

কয়েকদিন পর জানলাম আমাদের নাকি কিচেন ব্যবহারের কথা ছিল না। শুধু থাকা। আমি আর রোকন আনোয়ারকে দিতাম ছয় হাজার। সে বলেছিল, ভাড়া নয় হাজার। হঠাৎ শুনি সে ভাড়া সাত হাজার দিত। মানে এক হাজার টাকায় সে থাকত।

একদিন খুব কথা শোনালাম আনোয়ারকে। সে যদি কম টাকায়ই থাকবে, বলে নিতে তো পারত। আমরা তো রাগারাগি করতাম না। তার মাধ্যমেই তো এখানে উঠেছি। এ রকম প্রতারণারই কী দরকার ছিল?

সরকারি কী একটা পদে চাকরি করত সে। টাকার সমস্যা নেই, কিন্তু পরত ছেঁড়া লুঙ্গি। কোনোদিন এক পয়সা খরচ করতে দেখিনি, আবার আমরা কিছু খাবারদাবার আনলে সে খেত না। যদি আবার আমাদের দিতে হয়! শুধু ভাবতাম, এই লোক টাকা দিয়ে কী করবে!


কোয়ার্টার ছেড়ে এক মেসে ওঠেছি। চাকরি নেই তখন। একটা কোচিংয়ে মাসে সাত হাজার টাকা পাই। তা দিয়ে কোনোমতে চলি।

মেসে উঠে তো পড়লাম মহাবিপদে। যেহেতু উপার্জন কম, তাই কম পয়সার মেসে ওঠেছিলাম। এখন দেখি ছাড়পোকার জ্বালায় থাকতে পারি না। এমনিতে নেই গায়ে রক্ত। এরমধ্যে ছাড়পোকা কামড়ে শরীর চাক চাক করে ফেলল। কিন্তু কিছু করার নেই। অন্য জায়গায় যে যাব, সে সামর্থ্য নেই। বাধ্য হয়ে এখানেই থাকতে হলো।

খাবারের মান এত জঘন্য যে, এক প্লেট ভাত খাওয়াও অসম্ভব। বেশি করতাম। একসময় এখানে খাওয়া বাদ দেওয়ার চিন্তা করি। কিন্তু তবুও বুয়ার বিল দিতে হবে। অন্যান্য বিলও দিতে হবে।

শুধু শুধু টাকা দেব? তাই একবেলা কোনোমতে খেতে লাগলাম। অন্য বেলা টিউশনিতে খেতাম। এরমধ্যে মেস ম্যানেজার এক্সট্রা চার্জ চেয়ে বসল। হাতে টাকা নেই। ম্যানেজ করে টাকাটা দিতেই হলো।


টিউশনি আর কোচিং করে চলা কঠিন। অন্য কিছুর চেষ্টা করছিলাম। সিভি দেওয়া ছিল নানান জায়গায়। হঠাৎ এক জায়গা থেকে ডাক এলো। অফিসে যাই। পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করি। এখানে ওখানে পাঠায়, কিন্তু আসল কাজ শুরু হয় না। শুধু কালক্ষেপণ।

এরমধ্যে এই চাকরির কারণে কোচিংও বাদ দিয়েছি। কারণ, কোচিংয়ের শিডিউলের সাথে চাকরির শিডিউলের সমস্যা হয়। মুগদার একটা টিউশনিও বাদ দিয়েছিলাম কম পয়সা দেয় বলে।

বাদ তো দিলাম। কিন্তু যার অধীনে কাজ করছি, তার মতিগতি ভালো ঠেকছে না। ভাবলাম মাসটা যাক। মাস গেল বটে। বেতন চাইলাম। কিন্তু তালবাহানা করে। আজ কাল করতে করতে দশ-বারো বার ঘোরাল। তাও এক পয়সাও দিল না। এরমধ্যে দুই মাস কেটে গেছে। কীভাবে চলি তাকে অবগত করি। কিন্তু সে পাত্তা দেয় না।

অন্য একটা চাকরির সুযোগ আসে। একটু সময় নিই, যাতে আগের চাকরির টাকাটা পাই। কিন্তু সবই বৃথা যায়।

নতুন চাকরির ইন্টারভিউতে গেলে জিগ্যেস করেছিল, কার অধীনে কাজ করেছি। নাম বললাম তালাত ইকবাল। ক্যাবল টিভির বিজনেস করে। সিইও চিনতে পারলেন। বললেন, “খুব ভালো লোকের অধীনে কাজ করছেন। আপনার ভবিষ্যৎ উজ্জল।”

আমার আশা ছিল দুই মাস যেহেতু ছিলাম, কিছু না কিছু টাকা তো পাবই। এবার সে আশাও শেষ হয়ে গেল। বুঝতে পারি বুড়ো বাটপারের পাল্লায় পড়েছি।

ছবিঃ নেট

পদে পদে প্রতারণা
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জুন, ২০২৪ দুপুর ১:৫৪
১৩টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিকল্প খুজতে গিয়ে একি হাল?

লিখেছেন অনুপম বলছি, ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ২:৪৭

একটি লাল ফ্যাসিবাদী গল্প:

এক বার সাহিত্যিক সৈয়দ মুজতবা আলি একটি স্টেসনারি দোকানে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ‘ডায়মন্ড বল পেন আছে?’
সেলসম্যান মুখের উপর বলে দিল, “নেই” ।

চলে যাচ্ছেন । নিজেই ফিরলেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাছের মানুষ

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ৩:১৮

সংসার জীবন থেকে সন্যাস নিয়ে যেদিন ঘর থেকে বের হয়ে যাচ্ছিলাম
সেদিনই কিছু কাছের মানুষ ঘরে এসে হাজির।
সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ঘরের দরজা পার হওয়ার আগেই দেখলাম-
সবাই আমার জিনিসপত্র নিজেদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

খাও তবে কাঁচকলা, খাও তবে ঘন্টা। (ফেসবুকীয় রঙ্গ)

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৫৪


(সুপ্রিয় ব্লগার ডঃ এম আলী ১৭ ই জুলাই, ২০২৪ রাত ১:৪২ শেষবার মন্তব্য করেছিলেন। তারপর আর উঁনাকে ব্লগে দেখা যাচ্ছে না- আশা করি উঁনি সুস্থ ও ভাল আছেন।)
বুভুক্ষুদের খাদ্য তালিকায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতের ৬০ কিলোমিটারের মধ্যে ঢুকে পড়েছে চীন, স্বাধীনতার পথে হাটছে মনিপুর

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:০৪



ভারতের ৬০ কিলোমিটারের মধ্যে ঢুকে পড়েছে চীন। অন্যদিকে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে সেভেন সিস্টারস এর অন্যতম সিস্টির মনিপুর। ভারতের পতাকা নামিয়ে তারা ইতিমধ্যে নিজেদের সাত বর্ণের পতাকা উত্তলন করেছে।

বাংলাদেশের স্বৈরাচার... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি কলা খাই না!

লিখেছেন জটিল ভাই, ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭

♦أَعُوْذُ بِاللهِ مِنَ الشِّيْطَانِ الرَّجِيْمِ (বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহ্'র নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি)
♦بِسْمِ ٱللَّٰهِ ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ (পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহ্'র নামে)
♦ٱلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ (আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক)


(ছবি নেট হতে)

সম্প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×